মাদার বখশ

বাঙালি রাজনীতিবিদ
(মাদার বখ্শ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মাদার বখশ একজন বাংলাদেশী রাজনীতিক ও ভাষা সৈনিক। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।[১]

মাদার বখশ
জন্ম১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯০৭
স্থাপনদীঘি,সিংড়া, নাটোর
মৃত্যু২০ জানুয়ারি ১৯৬৭
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষাকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশারাজনিতীবিদ, শিক্ষাবিদ,আইনজীবী
পরিচিতির কারণভাষাসৈনিক, রাজনিতীক

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

মাদার বখশ ১৯০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন রাজশাহীর নাটোর মহকুমার (বর্তমান নাটোর জেলার) সিংড়া উপজেলার স্থাপনদীঘি নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

মাদার বখশ ১৯২২ সালে নিজ এলাকা সিংড়ার চৌগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯২৪ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯২৬ সালে বিএ পাস করেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে ইতিহাসে এমএ এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯২৯ সালে আইন শাস্ত্রে বিএল ডিগ্রি লাভ করেন।

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

ব্রিটিশ উপনিবেশ শাসনামলের শেষদিকে তিনি মুসলিম লীগের হয়ে ব্রিটিশবিরোধী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৪৬ সালে রাজশাহীর (আত্রাই, বাগমারা ও মান্দা) এলাকা থেকে বঙ্গীয় আইন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫০ সালে তিনি রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন৷ দেশ বিভাজনের পর ১৯৪৭-৫৪ পর্যন্ত পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি ১৯৫০-৫৪ সালে তিনি রাজশাহী পৌরসভার (বর্তমানে সিটি করপোরেশন) প্রথম নির্বাচিত পৌর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

স্বল্প সময়ের রাজনৈতিক জীবনে তিনি তার দল মুসলিম লীগের বিরুদ্ধাচরণ করে জেলেও গিয়েছিলেন। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারক ও সরকারের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থানের কারণে মুসলিম লীগ নেতৃত্বের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয় এবং রাজনীতি থেকে ক্রমেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অবদান সম্পাদনা

 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রাখার কারণে বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্র হলের নাম তার সম্মানে "মাদার বখশ হল" নামকরণ করা হয়েছে।

ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন আগ থেকেই মূলত রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়৷ এই আন্দোলনের সাথে একাত্ব হন তৎকালীন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য আইনজীবী মাদার বখশ৷ [২] ১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারি ৬ ভুবন মোহন পার্কে আরও একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাদার বখশ সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না হয় তবে উত্তরবঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব৷ মাদার বখশের এই বক্তব্যে সাড়া পড়ে দেশের সুধী মহলে এবং সাথে সাথে টনক নড়ে সরকারেরও৷ অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়।

প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষিত ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্তদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যুক্ত করেন। তিনি নিজেও আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে অবৈতনিক শিক্ষক ছিলেন। নতুন উপাচার্য প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকে সঙ্গে নিয়ে মাদারবখশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন।[৩]

১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার মরহুম মাদার বখশের প্রতি সম্মানার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত আবাসিক ছাত্র হল মাদার বখশ হল নামে নামকরণ করে।

মৃত্যু সম্পাদনা

১৯৬৭ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি পরলোক গমন করেন৷[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "মৃত্যুবার্ষিকী মাদার বখশ"প্রথম আলো। ২০ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২০ 
  2. "শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক অবদান তার"যুগান্তর। ২০ জানুয়ারি ২০১৯। ১২ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২০ 
  3. "নবীনদের জন্য তথ্য, ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে নবীন বরন উপলক্ষে প্রকাশিত"। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। 
  4. "প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব"রাজশাহী জেলা তথ্য বাতায়ন। রাজশাহী জেলা প্রশাসক। ৮ এপ্রিল ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা