মহাসিদ্ধ

বজ্রযানী বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য

মহাসিদ্ধ (সংস্কৃত: mahāsiddha, "মহান তাত্ত্বিক"; তিব্বতি: གྲུབ་ཐོབ་ཆེན་པོওয়াইলি: grub thob chen po) এমন একজন ব্যক্তির জন্য ব্যবহৃত একটি শব্দ যিনি "পরিপূর্ণতার সিদ্ধি" আত্মস্থ ও প্রসার করেন। এরা হলেন এমন একধরনের যোগিন/যোগিনী যারা বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের মধ্যে স্বীকৃত। মহাসিদ্ধগণ তন্ত্রের অনুশীলনকারী বা তান্ত্রিক ছিলেন, যাদের গুরু বা তান্ত্রিক শিক্ষক হওয়ার মত যথেষ্ট ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা ছিল। এই সিদ্ধ হলেন একজন ব্যক্তি, যিনি সাধনার মাধ্যমে সিদ্ধি, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি এবং ক্ষমতা অর্জন করেন। ভারতীয় উপমহাদেশহিমালয় জুড়ে তাদের ঐতিহাসিক প্রভাব বিপুল ছিল এবং তারা পৌরাণিক পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন যা তাদের চর্যাগীতি ও সাহিত্যে, বা নামধর্মী গানে সংমিশ্রিত, যেগুলির বেশিরভাগই তিব্বতি বৌদ্ধ নীতিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে। মহাসিদ্ধগণ বজ্রযান ঐতিহ্যের এবং ডজগেন ও মহামুদ্রার মত বংশসূত্রের প্রতিষ্ঠাতা। মহাসিদ্ধদের অনেকেই অঘোরী সম্প্রদায়ভূক্ত ছিলেন।[]

মহাসিদ্ধ ঘণ্টাপা, সিতু পঞ্চেন এর থাংকা সেট থেকে, যা ১৮ শতকের আটজন মহান তান্ত্রিক বিশেষজ্ঞকে চিত্রিত করে।

রবার্ট থুরম্যান তান্ত্রিক বৌদ্ধ সম্প্রদায়সমূহ এবং বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের (যেমন: নালন্দা, যা একই সময়ে উদ্ভূত) মধ্যে মিথোজীবী সম্পর্ক ব্যাখ্যা করেছেন:

প্রথম সাধারণ যুগের সহস্রাব্দের (এবং সম্ভবত এরও আগের) দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের তান্ত্রিক সম্প্রদায়গুলি বৌদ্ধ মঠের "বিশ্ববিদ্যালয়"-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত "উন্নত গবেষণা প্রতিষ্ঠান"-এর মত ছিল। সেগুলি আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় (অধ্যাত্মবিদ্যা) উচ্চ ফলনশীল, সাফল্যের সাথে স্নাতক সম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের জন্য গবেষণা কেন্দ্র ছিল, যাদের মধ্যে কিছু এখনও একেশ্বরবাদী এবং বিশ্ববিদ্যালয় (বিদ্যালয়) থেকে "স্থল" (পথ)-এ সরে গিয়ে থাকতে পারেন, ...[]

চুরাশীতি-সিদ্ধ-প্রবৃত্তি

সম্পাদনা

একাদশ বা দ্বাদশ শতকে অভয়দত্ত শ্রী কর্তৃক সংকলিত উত্তর-ভারতীয় সংস্কৃত গ্রন্থ চতুরাশীতি-সিদ্ধ-প্রবৃত্তি (সিএসপি), "দ্য লাইভস অফ দ্য লিস্ট অফ দ্য এইট্টি-ফোর সিদ্ধাস্", বিহারের আধুনিক জেলায় অবস্থিত প্রাচীন নগর-রাজ্য চম্পায় প্রচলিত একটি ঐতিহ্য থেকে জন্মলাভ করে। এই সংস্কৃত গ্রন্থের কেবলমাত্র তিব্বতি অনুবাদই বেঁচে আছে বলে মনে হয়। এই গ্রন্থটি তিব্বতি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল মোন গ্রাব স্যাশ রাব দ্বারা এবং এটি গ্রাব থোব ব্রজ্ঞ্যাড কার্টসা জী লো গাস বা "দ্য লেজেন্ডস অব দি এইট্টি-ফোর সিদ্ধাস্" নামে পরিচিত। এটি প্রস্তাব করা হয়েছে যে, অভয়দত্ত শ্রী মহান ভারতীয় পণ্ডিতব্যক্তি মহাপণ্ডিত অভয়করগুপ্তর (একাদশ শতকের শেষ — দ্বাদশ শতকের শুরুর দিক) সাথে অভিন্ন, যিনি মূর্তিতাত্ত্বিক সংক্ষিপ্তসার বজ্রাবলী, নিষ্পন্নযোগাবলী, ও জ্যোতির্মঞ্জরীর সংকলন করেছিলেন।

অন্য প্রধান তিব্বতীয় ঐতিহ্যটি উত্তর-ভারতের বিহারে অবস্থিত বুদ্ধগয়ার (তিব্বতি: ডো জি ডান) সঙ্গে অভিন্ন বজ্রসনের রত্নাকরগুপ্ত রচিত চতুরাশীতি-সিদ্ধাভ্যর্থনায় (সিএসএ) থাকা তালিকায় অবস্থিত। তিব্বতি অনুবাদটি গ্রাব থোব ব্রজ্ঞ্যাড কার্টসা জী সোল 'দেবস্ হিসাবে পরিচিত, যেটি ডো জে ডান পা কর্তৃক রচিত। বজ্রাসন গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে মহাসিদ্ধদের তালিকার অনেক তিব্বতি সংস্করণ উপস্থিত রয়েছে। তিব্বতীয় গ্রন্থগুলি ভারতীয় মহাসিদ্ধদের নামের তিব্বতি প্রতিলিপিগুলির সাথে অনেক ক্ষেত্রেই ভিন্ন।[]

চুরাশি মহাসিদ্ধ

সম্পাদনা

হিন্দু ও তিব্বতি উভয় বৌদ্ধ ঐতিহ্যে প্রথাগতভাবে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ও শিক্ষণযুক্ত চুরাশিজন মহাসিদ্ধ আছেন, দুটি তালিকার মধ্যে কিছুক্ষেত্রে গরমিল নিয়ে। ভারতীয় ধর্মগুলিতে সিদ্ধি বা আধ্যাত্মিক শক্তির সংখ্যার সাথে সংখ্যাটি যথাযথ। তিব্বতি বৌদ্ধ শিল্পে, তাদেরকে প্রায়ই একসাথে এমন একটি সৃষ্টিকর্মে মিলিত সেট হিসাবে (যেমন: থাংকা চিত্রসমূহ) দর্শানো হয়, যেখানে তাদেরকে যৌথভাবে একটি কেন্দ্রীয় চরিত্রের চারপাশের সীমানা প্রসাধনরূপে ব্যবহার করা যেতে পারে। এরা ৭৫০ খ্রীস্টাব্দ থেকে ১১৫০ খ্রীস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে জীবিত ছিলেন বলে মনে করা হয়।

প্রত্যেক মহাসিদ্ধকে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ও শিক্ষার জন্য পরিচিত করা হয়েছে, যা তাদের শিক্ষামূলক ব্যবহারকে সহায়তা করে। সর্বাধিক প্রিয় মহাসিদ্ধদের মধ্যে একজন বিরূপা, যাকে শাক্যপা সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে এবং লাম্রেই (তিব্বতী: লাম 'ব্রাস) শিক্ষাসমূহের প্রতিষ্ঠাতা। বিরূপা (বিকল্প শব্দবিন্যাস: বীরুপা/বিরুপা) নবম শতকের ভারতে বসবাস এবং তার মহৎ অর্জনসমূহের জন্য পরিচিত ছিলেন।

মহাসিদ্ধের কিছু পদ্ধতি ও প্রথা তন্ত্র নামে পরিচিত বৌদ্ধ পুঁথিতে লিপিবদ্ধ ছিল। ঐতিহ্যগতভাবে এই পদ্ধতি ও চর্চাগুলির চূড়ান্ত উৎস ঐতিহাসিক বুদ্ধ শাক্যমুনি হতে ঘটে থাকে, কিন্তু প্রায়ই এটি বুদ্ধ বা দেবতা বজ্রধর বা সামন্তভদ্রের একটি প্রতি-ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি, যিনি প্রশ্নে সরাসরি মহাসিদ্ধের কাছে একটি দর্শনে বা তাদের স্বপ্ন দেখার বা সমাধিস্থ থাকার সময়ে তন্ত্র প্রকাশ করেন। দেবতার এই রূপটি একটি সম্ভোগকায়া প্রকাশ রূপে পরিচিত। স্বপ্নযোগ উপাসনা, ডজোগেন ঐতিহ্যে (যেমন: খাম) যেভাবে অনুশীলন করা হয়, সেরকমভাবে মহাসিদ্ধ নগগপা ও বনপো থেকে হিমালয়ের তান্ত্রিক ঐতিহ্যের মধ্যে প্রবেশ করে। স্বপ্নযোগ বা "মিলাম" (তিব্বতি: রমি-লাম; সংস্কৃত: স্বপ্নদর্শন), নারোপার ষড়যোগের মধ্যে একটি। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

চুরাশি মহাসিদ্ধের মধ্যে চারজন মহিলা আছেন।[] তারা হলেন:

  • মণিভদ্রা, "যথার্থ স্ত্রী"
  • লক্ষ্মীঙ্করা, "দুর্নিবার জ্ঞানের যুবরাজ্ঞী"
  • মেখলা, "দুজন মুণ্ডবিহীন বোনের বড়'
  • কণাখলা, "দুজন মুণ্ডবিহীন বোনের ছোট"

মহাসিদ্ধসমূহের তালিকা

সম্পাদনা
     
নাগার্জুন এবং ৩০ জন মহাসিদ্ধ বজ্রধর এবং ২৫ জন মহাসিদ্ধ অতীশ দীপঙ্কর এবং ২৮ জন মহাসিদ্ধ

বজ্রযান বৌদ্ধধর্মের মধ্যে চুরাশীজন মহাসিদ্ধ রয়েছেন। নিচের তালিকায় তাদের নাম এবং তাদের উপাধি অন্তর্ভুক্ত। নামের পরে তারকাচিহ্ন (*) একজন মহিলা মহাসিদ্ধকে নির্দেশ করছে:

  1. অচিন্ত্য, "অবাধ্য মুনি";
  2. অযোগী, "প্রত্যাখ্যাত অকর্মণ্য";
  3. অনঙ্গপা, "সুদর্শন মূর্খ";
  4. আর্যদেব (কর্ণরিপা), "এক-চক্ষুবিশিষ্ট";
  5. বভহ, "মুক্ত প্রেমিক";
  6. ভদ্রপা, "অদ্বিতীয় ব্রাহ্মণ";
  7. ভাণ্ডেপা, "ঈর্ষান্বিত ঈশ্বর";
  8. ভীক্ষণপা, "দ্বি-দন্তবিশিষ্ট সিদ্ধ";
  9. ভুসুকুপা (শান্তিদেব), "অলস সাধু";
  10. চর্মরীপা, "স্বর্গীয় চর্মকার";
  11. চম্পক, "ফুলের রাজা";
  12. চর্বরীপা (চর্পতি) "প্যাট্রিফায়ার";
  13. চত্রপা, "ভাগ্যবান ভিক্ষুক";
  14. চৌরঙ্গীপা, "বিভাজিত সতীনপুত্র";
  15. চেলুকপা, "পুনর্জাগরিত পুংসধুপ";
  16. দাড়িকপা, "মন্দির-গণিকার দাসরাজা";
  17. ডেঙ্গীপা, "নগরবধূর ব্রাহ্মণ দাস";
  18. ঢহুলীপা, "ফোস্কা পড়া দড়ি-নির্মাতা";
  19. ধর্মপা, "চিরন্তন ছাত্র" (৯০০ খ্রিঃ);
  20. ঢিলীপা, "প্রমোদপ্রিয় বণিক";
  21. ধোবীপা, "জ্ঞানী ধোপা";
  22. ঢোকরীপা, "পাত্র-বাহক";
  23. ডোম্বীপা হেরুক, "ব্যাঘ্র আরোহী";
  24. দুখণ্ডী, "মেথর";
  25. ঘণ্টাপা, "অকৃতদার ঘণ্টা-বাদক";
  26. ঘর্বরী বা ঘর্বরীপা, "অনুতপ্ত পণ্ডিত"
  27. গোধূরীপা, "পক্ষী বন্দীকারী ";
  28. গোরক্ষ, "অমর গোরক্ষক";
  29. ইন্দ্রভূতি, "আলোকপ্রাপ্ত সিদ্ধ-রাজা";
  30. জলন্ধর, "ডাকিনীর নির্বাচিত একজন";
  31. জয়ানন্দ, "কাক প্রভু";
  32. যোগীপা, "সিদ্ধ-তীর্থযাত্রী";
  33. কলপা, "সুদর্শন পাগল";
  34. কম্পরীপা, "কর্মকার";
  35. কম্বল (লভপা), "কালো-কম্বল-পরিহিত যোগিন";
  36. কণাখলা*, কনিষ্ঠা ছিন্নমস্তা বোন;
  37. কাহ্নপা (কৃষ্ণাচার্য্য), "কৃষ্ণাঙ্গ সিদ্ধ";
  38. কঙ্কণ, "সিদ্ধ-রাজা";
  39. কঙ্করীপা, "প্রণয়পীড়িত বিপত্নীক";
  40. কন্তলীপা, "ন্যাকড়াধারী-দর্জি";
  41. কপালপা, "মাথার খুলি বাহক";
  42. খড়্গপা, "নির্ভীক চোর";
  43. কিলকিলপা, "নির্বাসিত বাক্যবাগীশ";
  44. কিরপলপা (কিলপা), "অনুতপ্ত বিজয়ী";
  45. কোকিলীপা, "আত্মসন্তুষ্ট কলাবিদ্যাবিশারদ";
  46. কোটালীপা (বা টগ শে পা, "কৃষক গুরু");
  47. কুচীপা, "গলগণ্ড-গ্রীবাযুক্ত যোগিন";
  48. কুক্কুরীপা, (অন্ত্য নবম/দশম শতক), "সারমেয় প্রেমিক";
  49. কুম্ভরীপা, "কুমোর";
  50. লক্ষ্মীঙ্করা*, "পাগল রাজকন্যা";
  51. লীলপা, "রাজকীয় আনন্দবাদী দার্শনিক";
  52. লুচিকপা, "পলায়নপর";
  53. লুইপা, "মৎস্য-অন্ত্র ভক্ষণকারী";
  54. মহীপা, "মহান";
  55. মণিভদ্রা*, "সুখী গৃহবধূ";
  56. মেধিনী, "ক্লান্ত কৃষক";
  57. মেখলা*, জ্যেষ্ঠা ছিন্নমস্তা বোন;
  58. মেকোপা, "ভীতিপ্রদ-দৃষ্টি গুরু";
  59. মীনপা, "মৎস্য-সংগ্রাহক";
  60. নাগবোধি, "লাল-শিংযুক্ত চোর'";
  61. নাগার্জুন, "দার্শনিক ও রসায়নবিদ";
  62. নলীনপা, "আত্মবিশ্বাসী যুবরাজ";
  63. নির্গুণপা, "আলোকপ্রাপ্ত নির্বোধ";
  64. নারোপা, "নির্ভীক";
  65. পচরীপা, "ময়রা";
  66. পঙ্কজপা, "পদ্ম-জাত ব্রাহ্মণ";
  67. পুতলীপা, "ভিক্ষাজীবী মূর্তি-বাহক";
  68. রাহুল, "পুনঃশক্তিপ্রাপ্ত বৃদ্ধ";
  69. সরহ, "মহান ব্রাহ্মণ";
  70. সকর বা সরোরুহ;
  71. সমুদ্র, "মুক্তা ডুবুরী";
  72. শান্তিপা (বা রত্নাকরশান্তি), "আত্মসন্তুষ্ট ধর্মপ্রচারক";
  73. সর্বভক্ষ, "পেটুক";
  74. শবরীপা, "শিকারি", Drukpa Künleg রূপে অবতীর্ণ;
  75. শিয়ালীপা, "শিয়াল যোগিন";
  76. তান্তেপা, "জুয়ারি";
  77. তান্তিপা, "জরাগ্রস্ত তাঁতি";
  78. ঠগনপা, "বাধ্যতামূলক মিথ্যাবাদী";
  79. তিলোপা, "মহান আত্মত্যাগী"
  80. উধিলীপা, "পক্ষী-মানব";
  81. উপনহ, "জুতোনির্মাতা";
  82. বীণাপা, "সঙ্গীতজ্ঞ";
  83. বিরূপা, "ডাকিনী প্রভু";
  84. ব্যালীপা, "বারাঙ্গনার রসায়নজ্ঞ"।

অভয়দত্ত শ্রী ঐতিহ্য অনুযায়ী নামসমূহ

সম্পাদনা

উলরিচ ভন শ্রোডারের মতে, তিব্বতে মহাসিদ্ধদের বিভিন্ন ঐতিহ্য রয়েছে। এই ঐতিহ্যের মধ্যে দুটি বিশেষত জনপ্রিয় ছিল, যথা অভয়দত্ত শ্রী তালিকা এবং তথাকথিত বজ্রসন তালিকা। মহাসিদ্ধদের সংখ্যা চুরাশী ও অষ্টাশির মধ্যে পরিবর্তিত হয় এবং উভয় তালিকাতে মাত্র ছত্তিশটি নাম পাওয়া যায়। তাই বৌদ্ধ ধর্মে মহাসিদ্ধদের সংখ্যা চুরাশি বলে দাবী করাও ভুল। তাই যথাযথ শিরোনামটি অভয়দত্ত শ্রী ঐতিহ্য অনুযায়ী ৮৪ জন মহাসিদ্ধের নাম হওয়া উচিত। এটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত যে, এই সংস্কৃত পাঠের কেবল তিব্বতি অনুবাদ চুরাশীতি-সিদ্ধ-প্রবৃত্তি (সিএসপি) বা দ্য লাইভস অফ দ্য এইট্টি-ফোর সিদ্ধাস্ টিকেছিল বলে মনে করা হয়। এর মানে হলো, অভয়দত্ত শ্রী ঐতিহ্যের অনেক সংস্কৃত নাম পুনর্গঠন করা হয়েছিল এবং সম্ভবত সর্বদা নির্ভুলভাবে নয়।

সনাক্তকরণ

সম্পাদনা

তিব্বতি নামে খ্যাত মহাসিদ্ধদের সনাক্তকরণের জন্য উলরিচ ভন শ্রোডারের মতে ভারতীয় নামগুলি পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন। এটি একটি অত্যন্ত কঠিন কাজ কারণ তিব্বতিদের ভারতীয় ব্যক্তিগত নামগুলির প্রতিলিপি বা অনুবাদ খুব অসঙ্গত এবং সেইজন্য অনেকগুলি বানান বিদ্যমান। মহাসিদ্ধদের ওপর বিভিন্ন তিব্বতি গ্রন্থের তুলনা করলে, আমরা দেখতে পাই যে তিব্বতের ভাষায় ভারতীয় গুরুদের নামের প্রতিলিপি বা অনুবাদ অসঙ্গত এবং বিভ্রান্ত। সবচেয়ে অসংযমী উদাহরণটি হল মঙ্গোলিয়া থেকে মহাসিদ্ধদের একটি চিত্রিত তিব্বতি ব্লক মুদ্রণ, যেখানে পাঠের বানানগুলি জ্যোয়ালোগ্রাফের শিরোনাম থেকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়।[] কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হল, কঙ্করীপা [সংস্কৃত] নামের একটি নাম: কাম ক লি/কংগা লা পাও; গোরক্ষ [সংস্কৃত]: গো রাও/গৌ রকি; তিলোপা [সংস্কৃত]: তি লা ব্লো বা/তি ললা পা; দুখণ্ডী [সংস্কৃত]: দো খাঁ দি পি/দওয়া কনটি; ধোবিপা [সংস্কৃত]: টম ভা পা/ধু পাই রা; ডেঙ্গিপা (সিএসপি ৩১): দিগ গিপ/টিংগি পেরো; ধোকরীপা [সংস্কৃত]: ধো কাহার/দের কি আর পাও; চর্বরীপা (চর্পটি) [সংস্কৃত]: সাসা বা রি পাব/তাস্ রায় পাই পিএ; সকর [সংস্কৃত]: ফু রিটস গা'/কা রায়া; পুত্তলিপা [সংস্কৃত]: পু-তাহা/বুয়া লি, ইত্যাদি। একই চিত্রিত তিব্বতি পাঠে আমরা অন্য অসঙ্গতি খুঁজে পাই: অনুবাদ ও অনুবাদের বিকল্প ব্যবহার। উদাহরণস্বরূপ, নাগার্জুন [সংস্কৃত]: না গাই জু না/ক্লু স্রুব; আর্যদেব (কর্ণরীপা) [সংস্কৃত]: ক না নাগে/'ফাগা পাপা লহ; এবং ঘণ্টাপা [সংস্কৃত]: ঘান্ড পা/ডো রেজ রিল বু পা — এমন কয়েকটি নাম।[]

সমন্বয় তালিকা

সম্পাদনা

পৃথক মহাসিদ্ধের সনাক্তকরণের জন্য উলরিচ ভন শ্রোডার কর্তৃক প্রকাশিত সমন্বয় তালিকা প্রত্যেক পণ্ডিতের জন্য দরকারী সরঞ্জাম। তার বইয়ের পরিশিষ্টে প্রকাশিত সমন্বায়ক তালিকাটি মূলত ভারতীয় নামের পুনর্গঠনের জন্য, তারা নির্বিশেষে একই ঐতিহাসিক ব্যক্তির প্রকৃতভাবে প্রতিনিধিত্ব করেন কিনা বা করেন না। তার বইয়ের সূচকটি মহাসিদ্ধ নামগুলির ১০০০-এরও বেশি তিব্বতি বানানকে অন্তর্ভুক্ত করে।[]

অন্যান্য মহাসিদ্ধ

সম্পাদনা

বিভিন্ন বংশসূত্রের তিব্বতি শিক্ষকদেরকে প্রায়শই মহাসিদ্ধ বলা হয়। এদের মধ্যে মারপা, একজন তিব্বতি অনুবাদক যিনি বৌদ্ধ গ্রন্থসমূহকে তিব্বতে নিয়ে আসেন এবং মিলারপা। বৌদ্ধ প্রতিমূর্তিতে, মিলারপা প্রায়ই তার ডান হাত দিয়ে তার কানে কাঁটা দেওয়া অবস্থার প্রতিনিধিত্ব করেন, সমস্ত প্রাণীর চাহিদাসমূহ শুনতে। চিত্ররূপটির আরেকটি ব্যাখ্যা হল যে, শিক্ষকটি একটি গোপন যোগব্যায়ামে (যেমন, লুকাং) সমর্পিত। (দ্রষ্টব্য: মারপা এবং মিলারপা ঐতিহাসিক অর্থে মহাসিদ্ধ নন, অর্থাৎ তারা ৮৪ ঐতিহ্যবাহী মহাসিদ্ধের ২ জন নন। তবে, এটি তাদের সিদ্ধি সম্পর্কে কিছুই আলোকপাত করে না।) স্বপ্নযোগ সাধনার অগ্রপুরুষ লওয়াপা ছিলেন একজন মহাসিদ্ধ।

আরও দেখুন

সম্পাদনা

পাদটীকা

সম্পাদনা
  1. সেন, সৌহার্দ্য (২৫ অক্টোবর ২০১৯)। "পৌরাণিক ইতিহাস: আঘোরী/অঘোরী (পর্ব- ১)"দ্য বেংগালি মিরর। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২৫ 
  2. David B. Gray, সম্পাদক (২০০৭)। The Cakrasamvara Tantra: The Discourse of Śrī Heruka (Śrīherukābhidhāna)। Thomas F. Yarnall। American Institute of Buddhist Studies at Columbia University। পৃষ্ঠা ix–x। আইএসবিএন 978-0-9753734-6-0 
  3. von Schroeder (2006)
  4. "Names of the 84 Mahasiddhas"Yoniversum.nl। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-০৩-২১ 
  5. Egyed (1984)

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

আরও পড়ুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা