রাণী ভিক্টোরিয়া

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ২০ জানুয়ারি ১৮৩৭ সাল থেকে ২২শে জানুয়ারি, ১৯০১ সাল পর্যন্ত রাণী
(মহারাণী ভিক্টোরিয়া থেকে পুনর্নির্দেশিত)

রানি ভিক্টোরিয়া (ইংরেজি: Queen Victoria) (জন্মনাম: আলেকজান্ড্রিনা ভিক্টোরিয়া; ২৪ মে ১৮১৯-২২ জানুয়ারি ১৯০১) যুক্তরাজ্যব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রানি ছিলেন। তিনি অভিষিক্ত হন ২০ জুন ১৮৩৭ সালে। তিনি ১ মে ১৮৭৬ সালে ভারত সম্রাজ্ঞী উপাধি ধারণ করেন।

রানি ভিক্টোরিয়া
Photograph of Queen Victoria, 1882
১৮৮২ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার ছবি
ব্রিটিশ রানি
রাজত্ব২০ জুন ১৮৩৭-২২ জানুয়ারি ১৯০১
রাজ্যাভিষেক২৮ জুন ১৮৩৮
পূর্বসূরিচতুর্থ উইলিয়াম
উত্তরসূরিসপ্তম এডওয়ার্ড
Prime MinistersSee list
ভারতের সম্রাজ্ঞী
রাজত্ব১ মে ১৮৭৬-২২ জানুয়ারি ১৯০১
সাম্রাজ্যিক দরবার১ জানুয়ারি ১৮৭৭
পূর্বসূরিTitle created
উত্তরসূরি৭ম এডওয়ার্ড
ভাইসরয়See list
জন্ম(১৮১৯-০৫-২৪)২৪ মে ১৮১৯
কেনসিংটন প্যালেস, লন্ডন
মৃত্যু২২ জানুয়ারি ১৯০১(1901-01-22) (বয়স ৮১)
Osborne House, Isle of Wight
সমাধি৪ ফেব্রুয়ারি ১৯০১
দাম্পত্য সঙ্গীPrince Albert of Saxe-Coburg and Gotha
বংশধর
বিস্তারিত
পূর্ণ নাম
আলেকজান্ড্রিনা ভিক্টোরিয়া
রাজবংশHouse of Hanover
পিতাPrince Edward, Duke of Kent and Strathearn
মাতাPrincess Victoria of Saxe-Coburg-Saalfeld
স্বাক্ষররাণী ভিক্টোরিয়া স্বাক্ষর

জন্ম ও বেড়ে ওঠা সম্পাদনা

১৮১৯ সালের ২৪ মে লন্ডনের কেনসিংটন (Kensington) প্রাসাদে তার জন্ম হয়। পুরো নাম আলেকজান্দ্রিনা ভিক্টোরিয়া, মা ডাকতেন দ্রিনা বলে। তিনি ছিলেন ডিউক অব কেন্ট এডওয়ার্ডের একমাত্র সন্তান। এই এডওয়ার্ড ছিলেন রাজা তৃতীয় জর্জের চতুর্থ পুত্র। ১৮২০ সালে ভিক্টোরিয়ার বয়স যখন একবছরও পূর্ণ হয়নি তখন বাবা এডওয়ার্ড মারা যান। এরপর মা একাই তাকে বড় করে তোলেন। ভিক্টোরিয়া কখনো স্কুলে যাননি। তার জন্য একজন জার্মান গৃহশিক্ষিকা রাখা হয়েছিল। ছোট থেকেই জার্মান এবং ইংরেজি দু’ভাষাতেই পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি। ভিক্টোরিয়াকে কখনোই একা থাকতে হয়নি। কিন্তু তবু তিনি ছিলেন একা, সমবয়সী কারো সাথে মেশার সুযোগ তার কখনো হয়নি। প্রাসাদে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বেড়ে ওঠা রানির একান্ত সময় বলে কিছু ছিল না। রাজকর্মকর্তা জন কনরি ভিক্টোরিয়ার শৈশবকে দুর্বিষহ করে তুলেছিলেন। রানির মুকুট মাথায় দেওয়ার পর ভিক্টোরিয়ার প্রথম নির্দেশ ছিল এক ঘণ্টা একা থাকতে দাও। মা’কে দূরের একটি কক্ষে থাকার ব্যবস্থা করেন আর জন কনরিকে নিষিদ্ধ করেন।

বিবাহ সম্পাদনা

ভিক্টোরিয়ার ১৭তম জন্মদিনে জার্মানি থেকে তার আত্মীয়রা বেড়াতে আসে। তাদের মধ্য ছিলেন তার খালাতো ও মামাতো ভাই-বোনেরা। এদের মধ্যে অ্যালবার্টকে খুব পছন্দ করেছিলেন ভিক্টোরিয়া। এই অ্যালবার্টকে রানি হওয়ার পর ভিক্টোরিয়া বিবাহ করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রথা ভেঙে রানিই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কারণ কারো পক্ষে ব্রিটেনের রানিকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া সম্ভব ছিল না। অ্যালবার্ট কখনোই ব্রিটেনের রাজা হননি। ভিক্টোরিয়া তাকে পছন্দ করলেও অ্যালবার্ট কখনো ব্রিটেনে জনপ্রিয় হতে পারেননি। তিনি মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়তেন। ১৮৬১ সালে ৪২ বছর বয়সে মারা যান। ভিক্টোরিয়া ভীষণ ভেঙে পড়েন। তিনি মানুষের সাথে সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেন। সে সময় ব্রিটেনের লোকেরা শোকের প্রতীক হিসেবে কিছুদিন কালো পোশাক পরত। কিন্তু রানি ভিক্টোরিয়া বাকি জীবনের পুরো সময় কালো পোশাক পরে কাটিয়েছেন এবং অ্যালবার্টের কক্ষ তার জীবিতাবস্থায় যেভাবে ছিল সেভাবেই রেখে দিয়েছিলেন।

সিংহাসনে আরোহণ সম্পাদনা

১৮৩৭ এর জুনে রাজা চতুর্থ উইলিয়াম মারা যাওয়ার পর খুব সকালে ভিক্টোরিয়াকে বলা হয় তিনি এখন ব্রিটেনের রানি। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ রানির সাথে দেখা করেন। ২৮ জুন ছিল রানির সিংহাসনে বসার দিন। প্রথা অনুযায়ী ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানির মাথায় মুকুট পরিয়ে দেওয়া হয়। উপস্থিত জনতা "রানি দীর্ঘজীবী হোক" বলে স্লোগান দিতে থাকে। পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলেছিল এ অনুষ্ঠান।

ভিক্টোরিয়ার শপথ গ্রহণের দু’বছর বছর পর ১৮৩৯ সালে মামাতো ভাই অ্যালবার্ট ব্রিটেনে যান। অ্যালবার্ট অবশ্য ভিক্টোরিয়াকে বিয়ে করতে মুখিয়ে ছিলেন। কিন্তু ভিক্টোরিয়া তখন ব্রিটেনের রানি, তাকে তো আর বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া যায় না। ভিক্টোরিয়া নিজেই প্রস্তাব দেন আর পরের বছর অর্থাৎ ১৮৪০ সালে তারা বিয়ে করেন। বিয়ের পর প্রতিদিন একসাথে কাজ করতেন তারা। তাঁদের ডেস্কগুলো ছিল পাশাপাশি। প্রতিদিন ব্রিটিশ সরকারের প্রচুর কাগজপত্র দেখতে হত রানিকে। ১৮৪১ সালে রানির প্রথম সন্তান ভিকির জন্ম হয়। মোট নয় ছেলেমেয়ের জন্ম হয়েছিল তাদের ঘরে।

তারা বড়দিনের অনুষ্ঠান বেশ ঘটা করে উদ্‌যাপন করতেন। খ্রিস্টমাস ট্রি এবং মোমবাতি ছিল অ্যালবার্টের খুব পছন্দ। তাদের দেখাদেখি ব্রিটেনের বহু বাড়িতে বড়দিনের অনুষ্ঠান খ্রিস্টমাস ট্রি দিয়ে সাজানো শুরু হয়ে যায়। বড়দিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা কার্ড পাঠানো, প্রাসাদের ভৃত্যদের উপহার দেওয়া এবং বিশেষ রান্নার চল শুরু হয়ে যায়।

অ্যালবার্টের উৎসাহে ১৮৫১ সালে লন্ডনের হাইড পার্কে সে সময়কার সবচেয়ে বড় কাচের ভবন ক্রিস্টাল প্যালেসে বিশাল এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। কাঁচের এ ভবনের ভেতর গাছপালা জন্মানোর ব্যবস্থা করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা বিস্ময়কর উদ্ভাবনী যন্ত্রপাতি এখানে প্রদর্শিত হয়।

ব্রিটেনের আইন প্রণীত হত ব্রিটিশ সংসদে। সরকার কি করতে চলেছে তা জানাতে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীরা রানির সাথে দেখা করতেন। সব প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্য রানি পছন্দ করতেন না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন ডিজরেইলিকে সবচেয়ে পছন্দ করতেন রানি ভিক্টোরিয়া। শুরুর দিকে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের সাথে কাজ করতে হলেও রানি সবসময় চাইতেন তাকে যেন ছোট মেয়ে হিসেবে না দেখে রানি হিসেবেই দেখা হয়।

ক্রিমিয়ার যুদ্ধ সম্পাদনা

১৮৫৪ থেকে ১৮৫৬ সময়কালে রাশিয়া ও তার তুর্কি মিত্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ব্রিটেন ও ফ্রান্স প্রধানত রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়ায় এ যুদ্ধ হওয়ায় এটি ক্রিমিয়ার যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধে হতাহত হওয়া ছাড়াও প্রচণ্ড শীত সৈনিকদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সে সময় সামরিক প্রসঙ্গে নাক গলানোর ক্ষমতা ব্রিটেনের রাজপরিবারের ছিল না। তবু রানি ভিক্টোরিয়া সৈন্যদের শীত থেকে বাঁচাতে মোজাসহ নানা সাহায্য উপকরণ পাঠান। তিনি যুদ্ধে স্বামী হারানো নারীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েও চিঠি লেখেন। এছাড়া সৈন্যদের সম্মানিত করতে পদক চালু করেন।

ভারতের রানি হওয়া সম্পাদনা

ভারতে ১৮৫৭ সালের সিপাহী যুদ্ধে বহু ইউরোপীয় মারা যাওয়ার প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ সরকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে সরাসরি ভারতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ১৮৭৭ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রয়েল টাইটেল অ্যাক্ট পাশের মাধ্যমে ভারতের সম্রাজ্ঞী হন রানি ভিক্টোরিয়া। উপনিবেশ ভারতকে রানির খুবই পছন্দ হয়েছিল। গর্বের সাথে ভারতকে মুকুটের মণি বা রত্ন হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

হত্যা চেষ্টা সম্পাদনা

১৮৪০ সালে এডওয়ার্ড অক্সফোর্ড নামে এক ১৮ বছর বয়সী তরুণ লন্ডনের রাস্তায় রানির ঘোড়ার গাড়ি লক্ষ্য করে দু’টি গুলি ছোঁড়ে। বিকৃত মস্তিষ্কের যুক্তিতে সে তরুণ ছাড়া পেয়ে যায়। ১৮৪২ সালে জন উইলিয়াম নামে আরেক তরুণ দু’বার রানিকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। সে তরুণও আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায়। ১৮৪৯ সালে এক ক্ষুব্ধ আইরিশ নাগরিক রানির ঘোড়ার গাড়ির ওপর হামলা চালায়। পরের বছর রবার্ট পেট নামে এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা লাঠি নিয়ে রানির ওপর হামলা চালান। ১৮৮২ সালে স্কটল্যান্ডের এক বিখ্যাত কবি রানির ঘোড়ার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়েন। এটি ছিল রানিকে হত্যার লক্ষ্যে তার তৃতীয় প্রচেষ্টা। তাকেও মস্তিষ্ক বিকৃতির অভিযোগে রেহাই দেওয়া হয়। এসব হত্যা প্রচেষ্টা বরং রানির জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছিল।

মৃত্যু সম্পাদনা

স্বামী অ্যালবার্টের মৃত্যুর পর সরকারি দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন রানি। এমনকি সংসদ অধিবেশন ডাকতেও অস্বীকৃতি জানান। পত্রপত্রিকা রসিকতা করে লিখতে শুরু করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে টু-লেট ঝুলছে। পরে অবশ্য রানি সরকারি দায়িত্ব পালন শুরুর মাধ্যমে আবার মানুষের আস্থা অর্জন করেন। ১৯০১ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে রানি ভিক্টোরিয়া মারা যান আর এরপর তার বড় ছেলে এডওয়ার্ড সিংহাসনে বসেন।

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

প্রকাশিত প্রাথমিক উৎস সম্পাদনা

  • Benson, A.C.; Esher, Viscount (editors, 1907) The Letters of Queen Victoria: A Selection of Her Majesty's Correspondence Between the Years 1837 and 1861, London: John Murray online edition
  • Bolitho, Hector (editor, 1938) Letters of Queen Victoria from the Archives of the House of Brandenburg-Prussia, London: Thornton Butterworth
  • Buckle, George Earle (editor, 1926) The Letters of Queen Victoria, 2nd Series 1862–1885, London: John Murray
  • Buckle, George Earle (editor, 1930) The Letters of Queen Victoria, 3rd Series 1886–1901, London: John Murray
  • Connell, Brian (1962) Regina v. Palmerston: The Correspondence between Queen Victoria and her Foreign and Prime Minister, 1837–1865, London: Evans Brothers
  • Duff, David (editor, 1968) Victoria in the Highlands: The Personal Journal of Her Majesty Queen Victoria, London: Muller
  • Dyson, Hope; Tennyson, Charles (editors, 1969) Dear and Honoured Lady: The Correspondence between Queen Victoria and Alfred Tennyson, London: Macmillan
  • Esher, Viscount (editor, 1912) The Girlhood of Queen Victoria: A Selection from Her Majesty's Diaries, 1832–40, London: John Murray online edition; vol 2 online
  • Fulford, Roger (editor, 1964) Dearest Child: Letters Between Queen Victoria and the Princess Royal, 1858–61, London: Evans Brothers
  • Fulford, Roger (editor, 1968) Dearest Mama: Letters Between Queen Victoria and the Crown Princess of Prussia, 1861–64, London: Evans Brothers
  • Fulford, Roger (editor, 1971) Beloved Mama: Private Correspondence of Queen Victoria and the German Crown Princess, 1878–85, London: Evans Brothers
  • Fulford, Roger (editor, 1971) Your Dear Letter: Private Correspondence of Queen Victoria and the Crown Princess of Prussia, 1863–71, London: Evans Brothers
  • Fulford, Roger (editor, 1976) Darling Child: Private Correspondence of Queen Victoria and the German Crown Princess of Prussia, 1871–78, London: Evans Brothers
  • Hibbert, Christopher (editor, 1984) Queen Victoria in Her Letters and Journals, London: John Murray, আইএসবিএন ০-৭১৯৫-৪১০৭-৭
  • Hough, Richard (editor, 1975) Advice to a Grand-daughter: Letters from Queen Victoria to Princess Victoria of Hesse, London: Heinemann, আইএসবিএন ০-৪৩৪-৩৪৮৬১-৯
  • Jagow, Kurt (editor, 1938) Letters of the Prince Consort 1831–61, London: John Murray
  • Mortimer, Raymond (editor, 1961) Queen Victoria: Leaves from a Journal, New York: Farrar, Straus & Cudahy
  • Ponsonby, Sir Frederick (editor, 1930) Letters of the Empress Frederick, London: Macmillan
  • Ramm, Agatha (editor, 1990) Beloved and Darling Child: Last Letters between Queen Victoria and Her Eldest Daughter, 1886–1901, Stroud: Sutton Publishing, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৬২৯৯-৮৮০-৬
  • Victoria, Queen (1868) Leaves from the Journal of Our Life in the Highlands from 1848 to 1861, London: Smith, Elder online edition
  • Victoria, Queen (1884) More Leaves from the Journal of Our Life in the Highlands from 1862 to 1882, London: Smith, Elder

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা