মহাদেব সরকার

বাঙালি বিপ্লবী

মহাদেব সরকার (৫ই আগস্ট, ১৯০৯ — ২৭শে জুলাই, ১৯৭৮) একজন বাঙালি সশস্ত্র বিপ্লববাদী ও সমাজকর্মী।

মহাদেব সরকার
জন্ম৫ই আগস্ট, ১৯০৯
মামজোয়ান, নদীয়া
মৃত্যু২৭ জুলাই ১৯৭৮(1978-07-27) (বয়স ৬৮)
জাতীয়তাভারত ভারতীয়
পেশাহোমিওপ্যাথি ডাক্তারি, সশস্ত্র বিপ্লববাদী এবং সমাজকর্মী

সশস্ত্র বিপ্লবে সম্পাদনা

মহাদেব সরকার নদীয়ার মামজোয়ানে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ সরকার। কৃষ্ণনগর সি.এম.এস স্কুল থেকে ১৯২৪ সালে প্রথম শ্রেণীতে বৃত্তি সহ ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১২ বছর বয়েসে গুপ্ত রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছিলেন। ১৪ বছর বয়েসে বোমা তৈরি করার সময় বিস্ফোরণ ঘটে ডান হাতটি হারান এই বিপ্লবী। কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজে পড়ার সময় বিপ্লবাত্মক কাজের জন্যে জেলে যেতে হয়। জেলবণ্দী অবস্থায় অনার্সসহ বি.এ এবং আইন পাশ করেন। ১৯২৩ এ নদীয়া জেলা সমবায় ও দরিদ্র ভান্ডার তার প্রতিষ্ঠা। ১৯২৪/২৫ সাল নাগাদ দক্ষিণেশ্বর বোমা মামলায় দণ্ডিত হন ও ২ বছর জেল খাটেন। ১৯২৭ সালে আবার দেড় বছর কারাবাস হয় ছাত্রনেতা হিসেবে রাজদ্রোহিতার অভিযোগে। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে সর্বভারতীয় বয়েজ স্কাউট আন্দোলনে নদীয়া জেলার প্রধান ছাত্রনেতা হয়েছিলেন। তিনিই প্রথম এই দলে ছাত্রপ্রতিভূ হিসেবে পূর্ন স্বাধীনতার দাবি তুলেছিলেন। ১৯৩০ সালে লবণ সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দান ও চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের সাথে যুক্ত এই অভিযোগ আট বছর কারাদণ্ড হয়। ১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন।[১]

সামাজিক আন্দোলন সম্পাদনা

জেল থেকে মুক্তি পেয়ে নতুন উদ্যমে কাজ চালিয়ে যান মহাদেব সরকার। জেলায় জেলায় বিপ্লবী কর্মীদের ঐক্য সাধনের চেষ্টা করেন। একাজে কংগ্রেসী জুলুম ও বাধার সৃষ্টি হলে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে ১৯৪৬ সালে দাংগার সময় প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে গ্রামের মানুষদের নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের অনুরূপ এক সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন সামাজিক ও জনকল্যাণকর কাজের হেতু। এ ব্যাপারে বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায় ছিলেন তার পথপ্রদর্শক।[১]

চিকিৎসক সম্পাদনা

স্বাধীনতার পরে ১৯৫৯ সালে হোমিওপ্যাথি ডাক্তারি পরীক্ষায় অনার্স ডিগ্রি পান। হোমিও চিকিৎসক হিসেবেও বিশেষ সম্মান পেয়েছেন।

সাহিত্য সম্পাদনা

মহাদেব সরকার লেখালিখি ও পুস্তক প্রকাশনার কাজে যুক্ত ছিলেন। তার নিজস্ব ছাপাখানায় রাজনৈতিক ও জাতীয়তাবাদী পুস্তক প্রকাশ হত। তার কলকাতার বাড়িতে বুদ্ধিজীবীদের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। তার রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থ হল 'আকাশ মাটি' ও 'কান্না হল গান'।

মৃত্যু সম্পাদনা

১৯৭৮ সালের ২৭শে জুলাই মারা যান অকৃতদার এই বিপ্লবী।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৪০৪। আইএসবিএন 81-85626-65-0