মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন, ২০০৩
মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন, ২০০৩ বাংলাদেশের একটি শিক্ষাকে সংস্কার করার জন্য গঠিত একটি কমিশন। এই কমিশনের প্রধান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিয়া, তার নামেই এই কমিশনের নাম পরিচিতি পেয়েছে। তবে এই কমিশনকে বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন, ২০০৩ নামেও অভিহিত করা হয়। এই কমিশনের উদ্দেশ্য ছিলো এম এ বারী শিক্ষা কমিশনকে হালনাগাত করা, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অন্যতম সংস্কার সাধনের লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা।[১] এটি ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে গঠন করা হয়। কমিশনটি তাদের নিজেদের মত গবেষণা ও অনুসন্ধান করে ২০০৪ সালের মার্চ মাসে সরকারের নিকট রিপোর্ট পেশ করে।[২]
পদক্ষেপসমূহ
সম্পাদনাএই শিক্ষা কমিশন তাদের রিপোর্টকে (ক) সাধারণ শিক্ষা (খ) পেশাগত শিক্ষা (গ) বিশেষায়িত শিক্ষা নামে তিন ভাগে বিভক্ত করে। এই তিনটি ভাগে শিক্ষার সার্বিক ক্ষেত্রে মোট ৮৮০টি সুপারিশ করা হয়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশসমূহ:[৩]
মাধ্যমিক শিক্ষার প্রস্তাব
সম্পাদনা- কমিশন ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়, লিঙ্গ, আর্থিক অবস্থা ও ভৌগোলিক অবস্থানের পার্থক্য নির্বিশেষে সকলের জন্য শিক্ষালাভের সমান সুযোগ সৃষ্টির প্রস্তাব দেয়।
- অনুন্নত এলাকায় সরকারি অর্থায়নে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার অধিকতর সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করে।
- কমিশন সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করার প্রস্তাব দেয়
- একমুখী মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে
- শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত হ্রাসের সুপারিশ করে
- শিক্ষকদের যোগ্যতা আপগ্রেড করার পরামর্শ দেয়
- কারিকুলাম ও শিক্ষাদান পদ্ধতির সংস্কারের সুপারিশ দেয়।
- মাধ্যমিক স্তরে মূল্যায়ন ও পরীক্ষা পদ্ধতির উৎকর্ষের সুপারিশ করে।
- কমিশন এর রিপোর্টে একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কমিশনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত সকল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নির্বাচনের সুপারিশ করে।
- শিক্ষকদের বেতন স্কেল, পদোন্নতির মানদন্ড এবং চাকরির শর্তাবলী এমনভাবে নির্ধারণ করার কথা বলে, যাতে সমাজে শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
- প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দেয়, এই ক্ষেত্রে একটি টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেয়। এছাড়াও কমিশন উল্লেখ করে এই টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক স্তরসহ শিক্ষার ধারা অব্যাহত রাখা যাবে।
- মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে এমন পদ্ধতিতে গড়ে তোলার রুপরেখা দেয়, জীবিকা অর্জনের জন্য তারা শিক্ষা থেকে ঝড়ে না পরে।
- মানবসম্পদের যথার্থ ব্যবহারের এমন জাতীয় নীতি রূপদান করা প্রয়োজন যাতে শিক্ষিত বেকারত্বের সৃষ্টি না হয়।
উচ্চ শিক্ষার প্রস্তাব
সম্পাদনাপাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষার কোনো কোনো বিষয়ে ‘সেন্টার অব এক্সিলেন্স’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে; প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করতে হবে। পেশাগত শিক্ষা, যেমন কৃষি, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, প্রকৌশল প্রভৃতির ক্ষেত্রে গবেষণার যথাযথ সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়াও কমিশন মনে করে, সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লক্ষ্য করে একটি ভাষা সম্পর্কিত জাতীয় নীতি গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। বাংলাদেশে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক জাতীয় নীতি গ্রহণ প্রয়োজন রয়েছে, এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা দ্রুত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা উচিত হবে। এই কমিশন সরকারি কোষাগারের অর্থায়নে কৃষিভিত্তিক, চিকিৎসা ভিত্তিক, প্রযুক্তি ভিত্তিক একমুখী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকে উৎসাহ প্রদান করেনি, যুক্তি হিসাবে তারা দেখিয়েছে এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা তুলনামূলক ব্যয়বহুল। বরং এই ধরনের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেসরকারিভাবে গড়ে তোলা যায়। তবে এই বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষার মান সংরক্ষণে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই কমিশন মাধ্যমিক ও কলেজ সেকশনের শিক্ষার জন্য প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণের পরামর্শ দেয়। এমনভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রশাসন গঠন করতে হবে, যাতে একক ব্যক্তির নিকট প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীভূত না হয়ে যায়। এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অর্থ বা ক্ষমতা সংক্রান্ত দ্বন্দ না তৈরি হয়। এসবের জন্য সরকার কর্তৃক নজরদারির ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
এছাড়াও এই কমিশন বলেছে, বাংলাদেশে একটি স্থায়ী কমিশন গঠন করা দরকার, যারা শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ গুলো পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা, বাস্তবায়ন, উদ্যোগ গ্রহণ প্রভৃতি দেখ-ভাল করবে। এবং তারা শিক্ষাক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করবে, এবং শিক্ষার ব্যপারে পরামর্শ দিবে।[৪]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "নীতিনির্ধারকদের ভাবতে বলছি"। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৩।
- ↑ "শিক্ষা কমিশন - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৩।
- ↑ "মনিরুজ্জামান মিয়া কমিশন -২০০৩, শিক্ষা মন্ত্রণালয়"। www.moedu.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৩।
- ↑ "প্রেক্ষিতঃ বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ইতিবৃত্ত"। দৈনিক আমাদের ফোরাম (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-১০-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-১৩।