মঞ্জুলিকা চাকমা
মঞ্জুলিকা চাকমা (জন্ম ২৬ অক্টোবর ১৯৪৪) একজন বাংলাদেশী কারুশিল্পী এবং তাঁত বস্ত্র ব্যবসায়ী। তিনি বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রথম নারী উদ্যোক্তা।[১] কারুশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।[২]
মঞ্জুলিকা চাকমা | |
---|---|
জন্ম | |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
পেশা | কারুশিল্পী |
পুরস্কার | বাংলা একাডেমি ফেলো (২০১৮), বেগম রোকেয়া পদক (২০২০) |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনামঞ্জুলিকা ১৯৪৪ সালের ২৬ অক্টোবর রাঙ্গামাটিতে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার জন্ম নাম মঞ্জুলিকা খীসা। তার পিতা কালী রতন খীসা এবং মাতা পঞ্চলতা খীসা। কালী রতন সরকারি চাকরিজীবী ও পঞ্চলতা একজন তাঁত শিল্পী ছিলেন। তার মাতা ‘অল পাকিস্তান উইমেনস অ্যাসোসিয়েশনের’ সদস্য ছিলেন। স্থানীয় ‘বাজার ফান্ড কোয়ার্টার’ নামক স্থানে তার শৈশব কাটে। ছোটবেলায় পরিবার থেকে তিনি কাপড় বোনার কাজে আগ্রহী হন। চার বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে মঞ্জুলিকা ছিলেন তৃতীয়।[১]
মঞ্জুলিকা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে রাঙ্গামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। দশম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে উচ্চ মাধ্যমিক ও বিএ সম্পন্ন করেন।[১]
কর্মজীবন
সম্পাদনামঞ্জুলিকা ১৯৬১ সালে রাঙ্গামাটি শাহ বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন।[৩] এ সময় তিনি তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবেও স্বীকৃতি লাভ করেন।[৩] ১৯৬৫ সালে শিক্ষকতার পাশাপাশি আদিবাসী বস্ত্রশিল্পের উন্নয়নে ‘বেইন টেক্সটাইল’ নামে আদিবাসী তাঁত বস্ত্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।[৩] ১৯৭৬ সালে শিক্ষকতা পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায়ে মনোযোগ দেন।[১] ১৯৬৮ সালে তিনি ও তার স্বামীর সাথে আরো একজন কর্মী নিয়োগ করেন। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে দুটি কারখানা গড়ে তোলেন যাতে তখন ৫০-৬০ জন কর্মী কাজ করত।[১]
মঞ্জুলিকা ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত রাঙ্গামাটি সমবায় সমিতির প্রথমে সভাপতি পরে সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।[১] ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জাতীয় মহিলা সংস্থার সম্পাদক ছিলেন।[১] তিনি রাঙ্গামাটির রোটারি ক্লাবের সভাপতি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রাফট কাউন্সিলের সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশনের রাঙ্গামাটি শাখার সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর চট্টগ্রাম পাহাড়ী ট্রাস্ট উন্নয়ন ফ্যাসিলিটির জেলা কমিটির সদস্য, রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক, চিটাগাং ওম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক, সমবায় ব্যাংকের পরিচালকসহ বিভিন্ন সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলেন।[১]
সম্মাননা
সম্পাদনাআদিবাসী বস্ত্রের উন্নয়নে অবদান ও নারী উদ্যোক্তার স্বীকৃতিস্বরুপ তিনি বেশ কিছু সম্মানা পেয়েছেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- শিলু আবেদ পুরস্কার (২০০১)
- ডেইলি স্টার-ডিএইচএল উইমেন্স এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাওয়ার্ড (২০০৩)
- বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট উইমেন্স ফেডারেশন সম্মাননা (২০১৩)[৪]
- বাংলা একাডেমি ফেলো (২০১৮)
- বেগম রোকেয়া পদক (২০২০) [৫]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ "আসল পাইওনিয়ার কিন্তু আমার মা"। কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ "বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ ও পুরস্কার পেলেন ১১ বিশিষ্টজন"। চ্যানেল আই। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ ক খ গ "আদিবাসী বস্ত্র এখন সমাদর পাচ্ছে"। প্রথম আলো। ২০২০-০২-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ "ছয় নারীকে সম্মাননা"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
- ↑ "রোকেয়া পদক পেলেন পাঁচজন"। দৈনিক প্রথম আলো। ০৯ ডিসেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুন ২০২১। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)