মঈন-উল-হক

ভারতীয় প্রশাসক

সৈয়দ মোহাম্মদ মঈন-উল-হক (হিন্দি: मोइन-उल-हक; জন্ম: অজ্ঞাত, মৃত্যু: ১৯৭০) ব্রিটিশ ভারতের পাটনায় জন্মগ্রহণকারী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন। মঈন সাব নামেই তিনি সর্বত্র পরিচিত ছিলেন। ভারতীয় ক্রীড়া ও শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি। ভারতে অলিম্পিক আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিলেন। ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য সারা জীবন ব্যয় করেন তিনি।

মঈন-উল-হক
জন্ম
মৃত্যু১৯৭০
জাতীয়তাভারতীয়
অন্যান্য নামসৈয়দ মোহাম্মদ মঈনুল-হক, মঈন সাব
পেশাঅধ্যাপক[১]
নিয়োগকারীবিহার ক্রিকেট সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সহঃ সভাপতি, বিহার ন্যাশনাল কলেজের অধ্যক্ষ ও ভারত অলিম্পিক সংস্থার (আইওএ) মহাসচিব

কর্মজীবন সম্পাদনা

পাটনায় অবস্থিত বিহার ন্যাশনাল কলেজে (বি এন কলেজ) ১৯৩৫ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপক ও পরবর্তীতে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন।[১] তিনি ছাত্রদেরকে পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে ক্রীড়াক্ষেত্রেও অংশ নেবার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন।

১৯৫৩ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন তিনি। মুজাফফরপুরে বি আর আম্বেদকর বিহার বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পর ভাগলপুরের টি.এন.বি কলেজে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সম্মেলনে তাকে সভাপতিরূপে ঘোষণা করা হয়।[২]

ক্রীড়া সংগঠক সম্পাদনা

ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার (আইওএ) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।[৩] ১৯৫১ সালে ভারতের নতুন দিল্লিতে এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী আসরটি বসে। ঐ আসরের প্রধান সংগঠকের ভূমিকায় ছিলেন তিনি। লন্ডন এবং হেলসিঙ্কিতে যথাক্রমে ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের অলিম্পিকে ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার পক্ষ থেকে শেফ-দ্য-মিশনের দায়িত্বে ছিলেন।

বোম্বেতে অনুষ্ঠিত ১৯৫০ সালের ভারতীয় জাতীয় ক্রীড়াসহ জাতীয় পর্যায়ের অনেক প্রতিযোগিতায় ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৩৬ সালে কে এ ডি নওরোজি'র পার্শ্বে থেকে জামশেদপুর-বিহারে প্রতিষ্ঠিত বিহার ক্রিকেট সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সহঃ সভাপতি মনোনীত হন।

মূল্যায়ন সম্পাদনা

তিনি শুধুমাত্র ক্রিকেট বা ফুটবলের সাথেই সম্পৃক্ত ছিলেন না; বরং টেনিস, স্কোয়াশ, ব্যাডমিন্টন খেলায়ও পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। লেখক ও অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস কর্মকর্তা সুধীর কুমার ঝা তার 'পাটনা রিইনকার্নেটেড: এ নিউ ডন' শীর্ষক গ্রন্থে লিখেছেন যে, ব্রিটিশ লোক ও তাদের স্থিতিশীলতায় তিনি অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন।[৪]

পাটনাভিত্তিক প্রখ্যাত ক্রীড়া সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ধারাভাষ্যকার শাবাব আনোয়ার মঈন-উল-হকের জীবন ও কীর্তিগাঁথা সম্পর্কে লিখেছেন। তার মতে, মঈন সাব পাটনার ক্রীড়াঙ্গনে অভিভাবকের ন্যায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আন্তরিকভাবে প্রথমে মহাবিদ্যালয় ও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদেরকে সকল ধরনের ক্রীড়াসহ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানাতেন। বস্তুতঃ বিহারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় ক্রীড়া কোটায় ছাত্রদের ভর্তি কেবলমাত্র তার প্রচেষ্টায় সম্ভব হয়েছিল।

প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটের স্বাদ নেয়া গবেষক সুজিত মুখোপাধ্যায় তার 'অটোবায়োগ্রাফী অব এন আননোন ক্রিকেটার' শীর্ষক গ্রন্থে মঈন-উল-হকের উচ্ছসিত প্রশংসা করেন।[৫] ... প্রায় অমর হয়ে থাকা অধ্যক্ষ মঈন-উল-হক জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন পরিচালনা সংস্থার দায়িত্বে ছিলেন। এরফলে তিনি বিভিন্ন ক্রীড়ায় তার দক্ষতা রয়েছে। ফলশ্রুতিতে পাটনায় ঐ ক্রীড়াগুলোর প্রসার ও সমর্থনে তার জুড়ি মেলা ভার ছিল।

সম্মাননা সম্পাদনা

তার মৃত্যুর পর ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় ও সম্মানার্থে বিহারের তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী আব্দুল গফুর ১৯৭০-এর দশকে পাটনার রাজেন্দ্র নগর স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে মঈন-উল-হক স্টেডিয়াম নামে নামাঙ্কিত করেন।[৬] ১৯৭০ সালে ক্রীড়াক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত হন তিনি।[৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "INTRODUCTION"06/01/2014। ৫ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৬  Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)
  2. "About L.N.M.U.T.A."। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৬  Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. "Indian Olympic Association"। ১০ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১৬ 
  4. Sudhir Kumar Jha (২০০৫)। A new dawn: Patna reincarnated 
  5. Sujit Mukherjee (১৯৯৬)। Autobiography of An Unknown Cricketer। Ravi Dayal Publisher। আইএসবিএন 81 7530 001 9 
  6. "Remembering Moin-ul-Haq: An administrator par excellence"। The Times of India। ১৩ আগস্ট ২০১২। ১ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৪ 
  7. "Padmashri Shri Syed Mohd. Moinul Haq"। ২০১৪-০১-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৬  Authors list-এ |প্রথমাংশ1= এর |শেষাংশ1= নেই (সাহায্য)