ভারত শাসন আইন, ১৯৩৫

পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ সরকারের শেষ সংবিধান
(ভারত শাসন আইন থেকে পুনর্নির্দেশিত)

১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে লন্ডনে তৃতীয় গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কংগ্রেস যথারীতি ওই বৈঠকে যোগদান করেনি। অন্যান্য দল ও সম্প্রদায়ের অনেক কম সংখ্যক প্রতিনিধি এই বৈঠকে যোগদান করেছিলেন। তাঁরা ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রে কয়েকটি প্রগতিশীল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাইলে ব্রিটিশ সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। তবে এই বৈঠক এবং পরবর্তী আলোচনা সমূহের ফলশ্রুতি হিসাবে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন বিধিবদ্ধ হয়। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্যদের নিয়ে গঠিত জয়েন্ট সিলেক্ট কমিটির রিপোর্ট, ব্রিটিশ সরকারের প্রকাশিত শ্বেতপত্র বা সরকারি দলিল প্রভৃতির সুপারিশ ও আলোচনার ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন রচনা করেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন প্রত্যাহারের পর ১৯৩০ ও ১৯৪০ -এর দশকে ভারতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দুটি ধারায় চলতে থাকে। একটি কংগ্রেসের নেতৃত্বে জাতীয় আন্দোলন, অপরটি বামপন্থীদের নেতৃত্বে বামপন্থী আন্দোলন। কংগ্রেস নিয়ম তান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের পক্ষপাতি ছিলেন এবং বামপন্থীরা গণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশের শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষের বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের ব্যাপারে সচেষ্ট ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের সন্তুষ্ট করার জন্য ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করেন।

ভারত শাসন আইন ১৯৩৫ ছিল ব্রিটিশ সরকার রাজের পরাধীন ভারতের শেষ সংবিধান। এই আইনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিক ছিল:

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো (Federative Structure)

সম্পাদনা

ভারত শাসন আইন অনুসারে ভারতে ব্রিটিশশাসিত প্রদেশ, দেশীয় রাজ্য এবং চিফ কমিশনার শাসিত প্রদেশ গুলিকে নিয়ে এক সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পরিচালক হন গভর্নর জেনারেল। গভর্নর জেনারেল তাঁর মনোনীত তিনজন সদস্য নিয়ে একটি গভর্নর বোর্ড গঠন করেন। এই তিন সদস্য বিশিষ্ট পরিষদের সাহায্যে গভর্নর জেনারেল ভারতবর্ষের প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক নীতি, খ্রিস্টধর্ম সংক্রান্ত বিষয় পরিচালনা করতেন। অন্যান্য বিষয়গুলি পরিচালনার জন্য একটি মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। মন্ত্রীগণ তাঁদের কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকতেন। কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা ইত্যাদি ব্যাপার গভর্নর জেনারেল, লেফটেন্যান্ট গভর্নর জেনারেল মন্ত্রিসভার পরামর্শ গ্রহণ নাও করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা দুটি পরিষদ নিয়ে গঠিত হবে। উচ্চকক্ষের নাম হবে রাষ্ট্রীয় বোর্ড বা রাজ্যসভা (Council of States and National Assembly) এবং নিম্নকক্ষের নাম হবে ব্যবস্থাপকসভা (Federative Assembly)। রাষ্ট্রীয় বোর্ড বা রাজ্যসভা একটি চিরস্থায়ী সংসদ হবে এবং এর এক তৃতীয়াংশ সদস্যের প্রতি তিন বছর অন্তর কার্যকাল শেষ হবে এবং সেই জায়গায় নতুন করে সরকারি ও রাজকীয় গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা সদস্য নেওয়া হবে। অবসরগ্ৰহীতা সদস্যরা পুনরায় নির্বাচিত ও মনোনীত হতে পারবেন। রাষ্ট্রীয় বোর্ডের সদস্য সংখ্যা হবে অনধিক ২৬০। এঁদের মধ্যে ১৫৬ জন ব্রিটিশ শাসিত ভারত থেকে নির্বাচিত হবেন এবং অনধিক ১০৪ জন স্বাদেশীয় রাজ্যের গভর্নরদের দ্বারা মনোনীত হবেন। নিম্নকক্ষ ব্যবস্থা বোর্ড বা মৈত্রীসভা (Federative Assembly) পাঁচ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হবে বলে ঠিক হয়। এর সদস্য সংখ্যা হবে অনধিক ৩৭৫। ব্রিটিশ শাসিত ভারত থেকে ২৫০ জন এবং স্বাদেশীয় রাজ্যগুলি থেকে ১২৫ জন সদস্য বোর্ডের জন্য নির্বাচিত হবেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা