ব্রাডফোর্ড ওয়াশবার্ন

হেনরি ব্রাডফোর্ড ওয়াশবার্ন, জুনিয়র (ইংরাজী: Henry Bradford Washburn, Jr.) (জুন ৭, ১৯১০ – জানুয়ারী ১০, ২০০৭) ছিলেন একজন আমেরিকান অভিযাত্রী, পর্বতারোহী, আলোকচিত্রী, এবং কার্টোগ্রাফার। তিনি বোস্টন মিউজিয়াম অফ সায়েন্স প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৩৯-১৯৮০ সাল থেকে পরিচালক হিসাবে তার দায়িত্বভার পালন করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে একটানা তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সম্মানিক পরিচালক (আজীবন অ্যাপয়েন্টমেন্ট) হিসাবে এর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ব্র্যাডফোর্ড ১৯৪০ সালে বারবারা পোলককে বিয়ে করেন। মধুচন্দ্রিমায় তাঁরা আলাস্কায় একসাথে প্রথম বার্থা পর্বত শীর্ষে আরোহণ করেন। [১]

ব্রাডফোর্ড ওয়াশবার্ন
জন্ম
হেনরি ব্রাডফোর্ড ওয়াশবার্ন, জুনিয়র

(১৯১০-০৬-০৭)৭ জুন ১৯১০
মৃত্যুজানুয়ারি ১০, ২০০৭(২০০৭-০১-১০) (age 96)
মাতৃশিক্ষায়তনহার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
দাম্পত্য সঙ্গীবারবারা ওয়াশবার্ন

ওয়াশবার্ন বিশেষত চারটি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য খ্যাত।

  • তিনি ১৯২০ এর দশক থেকে ১৯৫০ এর দশকে শীর্ষস্থানীয় আমেরিকান পর্বতারোহণকারীদের অন্যতম একজন ছিলেন। আলাস্কার বেশিরভাগ প্রধান চূড়ার তিনিই ছিলেন প্রথম আরোহণকারী এবং নতুন নতুন পথের সন্ধানে ছিলেন পথিকৃৎ। তাঁর স্ত্রী বারবারা ওয়াশবার্ন প্রায়ই তাঁর অন্যতম সহগামীনী হতেন। তাঁর স্ত্রী বারবারা ছিলেন মহিলা পর্বতারোহণকারীদের পথপ্রদর্শক এবং ডেনালি (মাউন্ট ম্যাককিনলে) শীর্ষে তিনিই প্রথম মহিলা হিসাবে আরোহণ করেছিলেন। [২]
  • তিনি পাহাড় বিশ্লেষণ এবং পর্বতারোহণ অভিযান পরিকল্পনার ক্ষেত্রে এরিয়াল ফটোগ্রাফি ব্যবহারের সূচনা করেছিলেন। তাঁর হাজার হাজার আকর্ষণীয় কালো-সাদা ছবির বেশিরভাগই ছিল আলাস্কান শৃঙ্গ এবং হিমবাহের বিষয়ে। সে সব তথ্যবহুল বিশদ ছবি তাদের শৈল্পিকআবেদনের জন্যও ছিল বিশেষ পরিচিত। এই চিত্রগুলি আলাস্কার আরোহণের পথ নিরূপণে রেফারেন্স স্ট্যান্ডার্ড হিসাবে গ্রহণীয় হয়েছে। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
  • তিনি ডেনালি, এভারেস্ট পর্বত এবং নিউ হ্যাম্পশায়ার এর প্রেসিডেন্সিয়াল রেঞ্জ সহ বিভিন্ন পর্বতমালার মানচিত্র তৈরির কাজ দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন।[৩]
  • বোস্টন মিউজিয়াম অফ সায়েন্স-এ নেতৃত্ব দান করেছিলেন। [৪]

এর মধ্যে ওয়াশবার্ন ৭০ এবং ৮০ এর দশকে বেশ কয়েকটি কৃতিত্ব অর্জন করেন। যেমন এভারেস্টের মানচিত্র এবং পরবর্তী সময়ে এভারেস্টের উচ্চতা এবং ভূতত্ত্ব সম্পর্কে বহু কাজ সম্পন্ন করে ছিলেন। [তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

জীবনী সম্পাদনা

ওয়াশবার্ন ১৯১০ সালের ৭ জুন ম্যাসাচুসেটস এর কেমব্রিজ-এ বোস্টন অভিজাত পরিবারে জন্মে ছিলেন। পরিবারটির শিকড় হিসাবে মেফ্লাওয়ার যাত্রী এল্ডার উইলিয়াম ব্রিউস্টার এর নাম খুঁজে পাওয়া যায়। ব্রিউস্টার ছিলেন অভিবাসী উপনিবেশের নেতা এবং প্লাইমাউথ কলোনির আধ্যাত্মিক প্রবীণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর বাবা ভেরি রেভ. হেনরি ব্র্যাডফোর্ড ওয়াশবার্ন, সিনিয়র একজন কেমব্রিজের এপিস্কোপাল থিওলজিকাল স্কুল এবং এডিথ বাকিংহাম হলের ডিন ছিলেন। তাঁর ছোট ভাই ছিলেন শেরউড লার্নড ওয়াশবার্ন য়াঁর ডাকনাম ছিল "শেরি"। শেরি ছিলেন শারীরিক নৃতত্ত্ববিদ এবং প্রাইমাটোলজির একজন পথিকৃত ব্যক্তিত্ব।

১৯৫৬ সালে ওয়াশবার্ন আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস-এর ফেলো নির্বাচিত হন।[৫] তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং সেখানেই তিনি হার্ভার্ড মাউন্টেনিয়ারিং ক্লাবের সদস্য হন। ১৯৬০ সালে তিনি ভূতত্বভূগোল বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের জন্য হার্ভার্ডে ফিরে আসেন।

ওয়াশবার্ন ছিলেন একজন আগ্রহী পাইলট এবং ১৯৩৪ সালে সিয়াটেল-এর বোয়িং ফিল্ড-এ ফ্লিট বাইপ্লেইন-এ তাঁর প্রথম একক উড়ানটি সম্পন্ন করেন। ঠিক পরের বছর লং আইল্যান্ড-এর রুজভেল্ট ফিল্ড-এ তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ফ্লাইং লাইসেন্স অর্জন করেন।

১৯৩৭ সালে ওয়াশবার্ন একটি উল্লেখযোগ্য অভিযান শুরু করেন ইউকন-এর ১৭,১৪৭ ফুট (৫,২২৬;মিটার) উঁচু লুশানিয়া পর্বত-এ। এর জন্য তাঁকে এবং তাঁর আরোহণের অংশীদার রবার্ট বেটিসকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,৭৫০ ফুট (২,৬৭০ মিটার) ওয়ালশ গ্লেসিয়ারে পৌঁছতে হয়েছিল। তিনি বিখ্যাত আলাস্কান বুশ পাইলট বব রিভকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। পরে ওয়াশবার্নকে তারের জবাবে তিনি জানান, "আপনি যেখানেই আরোহণ করতে চাইবেন, সেখানেই আমি উড়ে যাব"।[১][৬] স্কি-সজ্জিত ফেয়ারচাইল্ড এফ-৫১ নিয়ে মে মাসে কোনও রকম দুর্ঘটনা ছাড়াই হিমবাহের অবতরণ ক্ষেত্রে যাত্রাটি বেশ সফলতার সঙ্গেই সম্পন্ন হয়। কিন্তু জুনে ওয়াশবার্ন এবং বেটসের সাথে অবতরণ করার সময় বিমানটি অসময়ের গলিত তুষারে (স্ল্যাস) ডুবে যায়। বিমানটিকে বাইরে বের করার জন্য ওয়াশবার্ন, বেটস এবং রিভ পাঁচ দিন ধরে কঠোর পরিশ্রম করেন। রিভ শেষ পর্যন্ত সমস্ত অতিরিক্ত ওজন অপসারণ করে এবং একটি খাড়া ড্রপ সহ একটি মসৃণ বরফের সহায়তায় বিমানটিকে ফের বাতাসে ভাসাতে সক্ষম হন। লুশানিয়ায় প্রথম আরোহণের জন্য ওয়াশবার্ন এবং বেটসকে পায়ে হেঁটে যাত্রা করতে হয়। এরপর এক মহাকাব্যিক অবতরণের মাধ্যমে সভ্যতার দিকে তাঁদের যাত্রা শুরু হয়।[৭] মরুভূমির মধ্য দিয়ে ১৫০ মাইলের বেশি পথ হেঁটে অবশেষে বুরুশ ল্যান্ডিং এর ছোট্ট শহরের সুরক্ষার মধ্যে তাঁরা এসে পৌঁছোন। [৮]

ওয়াশবার্ন তাঁর কেরিয়ারের সময়কালে নয়টি সাম্মানিক ডক্টরেটস সহ অনেক পুরস্কার লাভ করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল ১৯৮০ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি (এনজিএস) প্রদত্ত আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল পদক,[৯][১০] শতবর্ষ পুরস্কার (ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি প্রদত্ত), এবং কিং আলবার্ট মেডেল অফ মেরিট। তিনি তাঁর স্ত্রী বার্বারার সাথে ভাগাভাগি করে পেয়েছিলেন এনজিএস পুরস্কার। প্রসঙ্গত বার্বারা ছিলেন ডেনালির শীর্ষে অবতরণকারী প্রথম মহিলা। ১৯৮৮ সালে তিনি রয়েল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটির চেরি কেয়ারটন পদক এবং পুরস্কার-এ ভূষিত হন। [১১]

ওয়াশবার্ন ম্যাসাচুসেটস এর লেক্সিংটন-এ তাঁর অবসরকালীন বাসভবনে ৯৬ বছর বয়সে, ১০ জানুয়ারী, ২০০৭-এ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। [১২] স্ত্রী ছাড়াও তিনি রেখে যান এক ছেলে, এডওয়ার্ড এবং দুই কন্যা ডরোথি এবং এলিজাবেথকে। [১৩]

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. Borneman, Walter R. (২০০৩)। Alaska : saga of a bold land (1st সংস্করণ)। New York, NY: HarperCollins। পৃষ্ঠা 320–325। আইএসবিএন 0-06-050306-8 
  2. The Accidental Adventurer: Memoir of the First Woman to Climb Mt. McKinley by Barbara Washburn, লিউ ফ্রিডম্যান and Bradford Washburn, Epicenter Press, May 2001.
  3. The Last of His Kind: The Life and Adventures of Bradford Washburn, America's Boldest Mountaineer by ডেভিড রবার্টস, উইলিয়াম মোরো পাবলিশার্স, June 2009.
  4. The Last of His Kind: The Life and Adventures of Bradford Washburn, America's Boldest Mountaineer by David Roberts, William Morrow Publishers, June 2009.
  5. "Book of Members, 1780–2010: Chapter W" (পিডিএফ)আমেরিকান একাডেমি অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১১ 
  6. Miller, Debbie (১৯৯৩)। "A Pioneer Visit: Mard Murie and the Arctic Refuge"। Alaska Geographic20 (3): 45। 
  7. Venables, Stephen (২০০৬)। Voices from the Mountains। Pleasantville, NY: Reader's Digest। পৃষ্ঠা 40–43আইএসবিএন 0-7621-0810-Xওসিএলসি 68417016 
  8. Anchorage Daily News. "Climber's exploits earned little recognition" by Craig Medred. October 7, 2007. আর্কাইভইজে আর্কাইভকৃত জুলাই ২৯, ২০০৭ তারিখে
  9. "Bradford and Barbara Washburn, Climbers"। National Geographic Society। সংগ্রহের তারিখ টেমপ্লেট:Format date  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  10. David Braun (টেমপ্লেট:Format date)। "Nat Geo awards Alexander Graham Bell Medals to GIS pioneers"। National Geographic Society। ২৪ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ টেমপ্লেট:Format date  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য) "Bradford and Barbara Washburn ... received it in 1980 for their contributions to geography and cartography".
  11. "Medals and Awards" (পিডিএফ)Royal Geographical Society। ২ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  12. Obituary: "Henry Bradford Washburn, Jr." New York Times. January 16, 2007 .
  13. "Bradford Washburn, father of modern Museum of Science, dies at 96"The Boston Globe। জানুয়ারি ১১, ২০০৭।