ব্রাউঞ্জভিল, টেক্সাস

ব্রাউঞ্জভিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ক্যামেরন কাউন্টির একটি শহর। এটি দক্ষিণ টেক্সাসের পশ্চিম উপসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত। শহরের আয়তন ২১১.১৫৭ বর্গকিলোমিটার। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী এর জনসংখ্যা ১,৮২,৭৮১। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ১৩১তম বৃহত্তম ও টেক্সাসের ১৬তম বৃহত্তম শহর। শহরটি ব্রাউঞ্জভিল-মাতোমোরোস পৌরপুঞ্জের অংশ।

১৮৪৮ সালে চার্লস স্টিলম্যান ব্রাউঞ্জভিল শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন। মেক্সিকান আমেরিকান যুদ্ধের বীর মেজর জ্যাকব ব্রাউনের নামানুসারে এর নাম হয় ব্রাউঞ্জভিল। পরিবহন খাতে শহরটি প্রভূত উন্নতি লাভ করেছে। ব্রাউঞ্জভিল বন্দরের মাধ্যমে এটি বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করে। ইস্পাতশিল্পের প্রগতির ফলে ১৯০০ এর দশকে এর জনসংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। ব্রাউঞ্জভিলে দারিদ্র্যহার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।

আমেরিকান গৃহযুদ্ধের অনেক বিখ্যাত যুদ্ধ (ব্রাউঞ্জভিলের যুদ্ধ ও পালমিতো সৈকতের যুদ্ধ) এখানে সংঘটিত হয়েছে। টেক্সাস বিপ্লব ও মেক্সিকান-আমেরিকান যুদ্ধের সাথেও শহরটির ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। এখানে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য-ও বিদ্যমান।

ইতিহাস সম্পাদনা

১৭৮১ সালে স্পেনীয় সরকার হোসে সালভাদর দি লা গ্রাজা-কে ৫৯ লিগ (৪০৮.২৪৩ বর্গমাইল) ভূমি মঞ্জুর করেন। তিনি এই ভূমি ব্যবহার করে এ এলাকার উত্তর-পশ্চিমে র‍্যাঞ্চ দান করেন। ১৮০০ এর দশকে শহরটি লস তেহিদোস (তৃণভূমি) নামে পরিচিত ছিল। [১] ১৮৩৬ সালে টেক্সাস মেক্সিকো থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করার সময় এখানে এখানে কেউ কেউ বসতি স্থাপন করেছিলেন। ১৮৪৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জেমস কে পোল্ক জাচারি টেলর-কে ব্রাউঞ্জভিল যাত্রার নির্দেশ দেন। টেলর এখানে আসার পর টেক্সাস দুর্গ নির্মাণ করেন। টেক্সাস দুর্গ দখলের সময় নিহত সৈনিক মেজর জ্যাকব ব্রাউনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এর নামকরণ করা হয় "ব্রাউন দুর্গ।"[২]

চার্লস স্টিলম্যান ১৮২৮ সালে কানেটিকাট থেকে মাতামোরোস আগমন করেন। গুয়াদালুপে হিদালগো চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৮৪৮ সালে ব্রাউঞ্জভিল টেক্সাসের অংশ হয়। স্যামুয়েল বেনডেন ও সাইমন মুসিনার সাথে একত্রে স্টিলম্যান ব্রাউঞ্জভিল টাউন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।[৩] ১৮৪৯ সালের ১৩ জানুয়ারি এটি ক্যামেরন কাউন্টির সদর দপ্তর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৮৫০ সালের ২৪ জানুয়ারি একে স্থানীয় শাসনের আওতাভুক্ত করা হয়। ১৮৫২ সালের ১ এপ্রিল এই শাসন প্রত্যাহার করা হয় ও ১৮৫৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পুনর্বহাল করা হয়। ব্রাউঞ্জভিলের ভূমি নিয়ে বিবাদ উপস্থিত হলে ১৮৭৯ সালে সুপ্রিম কোর্ট স্টিলম্যানের পক্ষে রায় দিয়ে বিবাদ মীমাংসা করে।

১৮৪৬ সালের ২৫শে এপ্রিল ক্যাপ্টেন সেথ বি থর্নটন রিও গ্রান্দে নদী দিয়ে মেক্সিকান সেনাবাহিনীর আমেরিকান ভূখণ্ড অনুপ্রবেশের খবর পান। তখন থর্নটন সেখানে অগ্রসর হলে মেক্সিকান জেনারেল আনাস্তাসিও তোরেজন আমেরিকান বাহিনীর উপর হামলা করেন। ১১ জন সৈন্য মারা যান, থর্নটনসহ ৪৫ জন আটক হন। ১৩ মে কংগ্রেস মেক্সিকোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।[৪]

জাচারি টেলর ১৮৪৬ সালের ১ মে সৈন্যসহ টেক্সাস দুর্গ থেকে পালিয়ে যান। মেক্সিকান জেনারেল ম্যানুয়েল আরিস্তা দুর্গ দখল করতে শুরু করেন।[৫] ৩ মে আরিস্তা ও মেক্সিকান বাহিনী দুর্গ দখল করে নেন। আমেরিকান বাহিনীর সপ্তম রেজিমেন্ট তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। জাচারি টেলর পালানোর সময় আরিস্তার বাহিনীর সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়। ব্রাউঞ্জভিলের ৫ মাইল উত্তরে পালো এলতো শহরে তাদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যেটি মেক্সিকান আমেরিকান যুদ্ধের প্রথম প্রত্যক্ষ সংগ্রাম।[৬]

১৮৫৯ সালের ১৩ জুলাই হুয়ান কর্তিনা ব্রাউঞ্জভিলের পুলিশপ্রধান রবার্ট শিরসকে একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে প্রহার করতে দেখেন। কর্তিনা ক্ষুব্ধ হয়ে রবার্ট শিরসকে হত্যা করেন।[৭] হুয়ান কর্তিনা পরবর্তীতে আরো চারজন ইংরেজ-বংশোদ্ভূত আমেরিকানকে হত্যা করেন।

আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময় ব্রাউঞ্জভিল চোরাচালানের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ১৮৬৩ সালের নভেম্বরে ইউনিয়ন বাহিনী ব্রাউন দুর্গে আগমন করেন।[৮] ব্রাউঞ্জভিল যুদ্ধের পর কনফেডারেট সৈন্যরা ৩,৬০০ কেজি বিস্ফোরক ব্যবহার করে দুর্গ উড়িয়ে দেয়। ১৮৬৪ সালে ক্যাপ্টেন জন স্যালমন ফোর্ডের নেতৃত্বে কনফেডারেট বাহিনী পুনরায় ব্রাউঞ্জভিল দখল করে নেয়। ফোর্ড শহরটির মেয়র পদে অধিষ্ঠিত হন।[৯]

১৮৬৫ সালের ১৫ মে রবার্ট ই লি-র আত্মসমর্পণের ৩৪ দিন পর স্যালমন ফোর্ডের বাহিনী ও কনফেডারেটদের মধ্যে পুনরায় যুদ্ধ হয়, যা "পালোমিতো র‍্যাঞ্চের যুদ্ধ" নামে পরিচিত। এটি গৃহযুদ্ধের শেষ লড়াই নামে পরিচিত। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি ইউলিসেস সিম্পসন গ্রান্ট ফ্রেডেরিক স্টিলকে ব্রাউঞ্জভিল শহরে মেক্সিকান-আমেরিকান সীমানা টহল দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।[১০]

১৯০৬ সালের ১৩ এপ্রিল স্থানীয় পানশালার একজন শ্বেতাঙ্গ কর্মী ও শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। শহরের বাসিন্দারা ব্রাউন দুর্গের কৃষ্ণাঙ্গ সৈন্যদের এজন্য দায়ী করেন। থিওডোর রুজভেল্ট তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই চাকরিচ্যুত করেন। সত্তরের দশকে তারা নির্দোষ প্রমাণিত হন। ১৯৪৫ সালে ব্রাউন দুর্গ সামরিক কাজে ব্যবহার করা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৮ সালে ব্রাউঞ্জভিল শহর ব্রাউন দুর্গের মালিকানা পায়।[১১]

ভূগোল সম্পাদনা

ব্রাউঞ্জভিল শহরের আয়তন ৮৪.৮৬৭ বর্গমাইল। এর ৮১.৫২৮ বর্গমাইল স্থল ও ৩.৩৩৯ বর্গমাইল জল।

ব্রাউঞ্জভিলের জলবায়ু আর্দ্র উপক্রান্তীয় ধরনের। এখানে কদাচিৎ তুষারপাত হয়। নভেম্বর থেকে এপ্রিল শুষ্ক মৌসুম। শহরে গড়ে ২৭.৪৪ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়।

জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা হয় ৬১.১ ও আগস্ট মাসে তাপমাত্রা ৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট। ২০১৮ সালে ফোর্বস ১২টি মুক্ত বায়ুর শহরের মধ্যে ১টি হিসেবে ব্রাউঞ্জভিলকে স্বীকৃতি দেয়।[১২]

জনমিতি সম্পাদনা

২০১০ এর আদমশুমারি অনুযায়ী ব্রাউঞ্জভিলের জনসংখ্যা ১,৭৫,০২৩। শহরে বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৪১,০৪৭ । শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৪৩.৬ জন। বাসিন্দাদের ৮৮% শ্বেতাঙ্গ, ০.৪% আফ্রিকান আমেরিকান, ০.৭% এশীয়। হিস্পানিক ও লাতিনোরা জনসংখ্যার ৯৩.২%।

শহরের পরিবারগুলোর গড় আয় ২৬,১৮৬ ডলার। পুরুষদের গড় আয় ২১,৭৩৯ ও নারীদের গড় আয় ১৭,১১৬ ডলার। শহরের মাথাপিছু আয় ৯,৭৬২ ডলার। ৩১.৬% পরিবার ও ৩৫.৭% বাসিন্দা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদের ৪৮.৪% এর বয়স ১৮ এর নিচে ও ৩১.৫% এর বয়স ৬৫ এর উপরে। [১৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Main Page - Texas Archive of the Moving Image"texasarchive.org। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  2. "TSHA | Brown, Jacob"www.tshaonline.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৪ 
  3. "The Texas Land Frauds.; BRANCH OF THE WATROUS IMPEACHMENT CASE."The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮৬০-০৮-১৮। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৪ 
  4. Brownsville, Mailing Address: 600 E. Harrison Street Room 1006; Us, TX 78520 Phone:541-2785 x333 Contact। "Rancho de Carricitos - Palo Alto Battlefield National Historical Park (U.S. National Park Service)"www.nps.gov (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৪ 
  5. "TSHA - Fort Brown"www.tshaonline.org। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  6. Brownsville, Mailing Address: 600 E. Harrison Street Room 1006; Us, TX 78520 Phone:541-2785 x333 Contact। "Palo Alto Battlefield - Palo Alto Battlefield National Historical Park (U.S. National Park Service)"www.nps.gov (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৪ 
  7. "Do you know Juan Cortina, the 'Robin Hood of the Rio Grande?' Today's his birthday"NBC News (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৪ 
  8. "Battle of Palmito - Lower Rio Grande Valley - U.S. Fish and Wildlife Service"www.fws.gov। ২০১৯-০১-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৪ 
  9. Ford, John Salmon। "A Guide to the John Salmon "Rip" Ford Papers, circa 1836-1896"legacy.lib.utexas.edu (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৪ 
  10. Thompson, Jerry (২০০৭-০৬-২৫)। Cortina: Defending the Mexican Name in Texas (ইংরেজি ভাষায়)। Texas A&M University Press। আইএসবিএন 978-1-58544-592-9 
  11. "The Cavalry Building, which served as barracks at Fort Brown in Brownsville, Texas, until World War I"Library of Congress, Washington, D.C. 20540 USA। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৪ 
  12. Feinberg, Lexi (২০১০-০৬-২৮)। "America's cleanest cities"msnbc.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৪ 
  13. Bureau, US Census। "Census.gov"Census.gov (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-২৪