বাংলা উইকিপিডিয়ায় স্বাগতম সম্পাদনা

সিরাজুদ্দিন কাশেমপুরী সম্পাদনা

চিত্র:সিরাজুদ্দিন কাশেমপুরী.jpg

লোকসাহিত্য চর্চায় যে ক’জন সাহিত্য গোষ্ঠীর আবির্ভাব হয়েছিল তাদের মধ্যে লোকসাহিত্য বিশারদ মরহুম সিরাজুদ্দিন কাসিমপুরী অন্যতম। পন্ডিত সিরাজ উদ্দিন কাসেমপুরী ১৯০১ সনে (১৩০৮ বাংলা সনে) নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া থানার মদনপুর ইউনিয়নের কাসিমপুর গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নিজ গ্রাম কাসিমপুরের সংগে নিজের নামটি যুক্ত করে কাসেমপুরী হিসেবে পরিচিত হন।

সিরাজুদ্দিন কাসিমপুরীর বাল্য শিক্ষা শুরু হয় নিজ গ্রামের মক্তবে। সেখান থেকে কোরান শিক্ষা করার পর তাকে পাশের গ্রাম নরেন্দ্রনগরে তাঁর মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। নরেন্দ্রনগর পাঠশালায় তিনি বাংলা শিক্ষা শুরু করেন। তৃতীয় শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই পিতৃবিয়োগ ঘটে। পিতৃবিয়োগের পর তাঁর মা মেহেরজানও কিছু দিনের জন্য নরেন্দ্রনগরে তার পিত্রালয়ে চলে যেতে বাধ্য হন। এভাবে ধীরে ধীরে সিরাজুদ্দিন মামার আশ্রয়ে বড় হতে লাগলেন। দুরন্তপনা সিরাজুদ্দিনের হৈ-চৈ আর লাফালাফিতে কেটে যায়। পিত্রবিয়োগের কয়েকটি বছর। আর সেই সঙ্গে চলতে থাকে গ্রাম্য নাট্যাভিনয় পালা গান ও কেচ্ছার আসরে নিয়মিত যোগদান। কয়েক বছর বিদ্যায়ের পড়াশোনার সঙ্গে একরূপ সংশ্রম বর্জিত হয়েই ছিলেন। সেই সময় নরেন্দ্রনগর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘মাইনর স্কুল’ সেখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হত। মাইনর স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষকদের অন্যতম মহিউদ্দীন এবং প্রধান শিক্ষক বিপিনচন্দ্র ভট্টাচার্য উদ্যোগী হয়েই সিরাজুদ্দিনকে ভর্তি করে নেন। ‘মাইনর’ পরীক্ষা পাশ করার পর আর পড়াশোনা করার কোন সুযোগ রইল না।

কাসিমপুর থেকে পাঁচ মাইল দূরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একটিমাত্র স্কুল জয়নাথ চক্রবর্তী ইনস্টিটিউশন আশুজিয়া ১৮/১৯ বছর বয়সে তিনি আশুজিয়া জয়নাথ চক্রবর্তী ইনস্টিটিউশনে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তি হন। এই পিতৃহীন ও দরিদ্র্য কৃষক সন্তানের পক্ষে হাইস্কুলে ভর্তি হওয়া কিছুতেই সম্ভব হতো না যদিনা এই স্কুলের ছাত্র বৎসল শিক্ষক জয়চন্দ্র রায়ের সক্রিয় সহযোগিতা না পেতেন। সিরাজুদ্দিনের চেতনা ও স্বদেশপ্রীতি সঞ্চারে জয়চন্দ্র বাবুর প্রভাব খুবই গবীরভাবে কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু অভাব ও দারিদ্র সিরাজুদ্দিনের পড়াশোনায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েই তিনি বাধ্য হলেন স্কুল ছেড়ে দিতে। বেড়িয়ে পড়েন রোজগারের সন্ধানে।