বাংলা উইকিপিডিয়ায় স্বাগতম সম্পাদনা

--অভ্যর্থনা কমিটি বট (আলাপ) ১৫:৪৯, ২৭ নভেম্বর ২০২০ (ইউটিসি)উত্তর দিন

শাহাবুব আলী

আমার পিতা মুন্সি মোজাহার আলী, শেষ জীবনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুরীদদের মাঝে ফুরফুরা শরীফের ধর্মীয় দাওয়াত দিয়ে বেড়াতেন । 

(বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুব আলীর পিতা মোজাহার আলী, কলকাতাঁর দমদম এয়ারপোর্টে চাকরি করতেন; তাঁর সাক্ষাৎ হয় এক পীরের সাথে, তিনি ফুরফুরা শরীফের পীরের মুরিদ হন। তাঁরপর এয়ারপোর্টে চাকরি ছেড়ে দিয়ে দ্বীন-ইসলামের দাওয়াতের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেন।)

ইংরেজদের রাজত্বে দাদা হাজী কফিল উদ্দিন নদীয়া জেলার অধীন কুষ্টিয়া সদরে অর্থাৎ কুষ্টিয়াতে পদ্মা নদীর তীরে গড়ে ওঠা ছোট্ট একটা শহর (এখন নদীগর্ভে বিলীন), নদীপথে এ শহরের যোগাযোগ | কুষ্টিয়ার থেকে জগতি পর্যন্ত রেলপথ ছিল এবং রেল যোগাযোগের কারণেই কুষ্টিয়ার এই শহরের পতন হয়। অনেকের মত আমার পরিবারও সেই সময়ে চৌড়হাস গ্রামে এসে বসবাস করতে থাকে। প্রায় পাঁচ বিঘা জমির উপরে আমাদের যৌথ পরিবারে বাড়িতে পাকা প্রবেশ গেট ও পুকুরসহ বাগান ছিল। আমার বাবা ছিল তখনকার কুমারখালীর পৌর শহরের অধিবাসী। আমার জন্ম হয় কুমারখালীতে নানার বাড়িতে। বাবা ব্যবসা বা চাকরি না করায় যৌথ পরিবারে আমরা অবহেলার পাত্র পরিণত হয়েছিলাম। যৌথ পরিবার আমাদেরকে এক টুকরো জমিতে একটি আলকাতরা দেওয়া কাল টিনের ঘর দিয়ে আলাদা করে দেন। তাই শিশুকালেই আমি দারিদ্রতার সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম। আমার ছোট চাচা ছিল ডাক্তার এবং একটি দোকানের মালিক সেখানেই দোকানদারি আর খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। আবার স্কুল যাওয়ার সুযোগ ছিল না ঠিকই কিন্তু দোকানে পাশের ঘরের চাচাতো ভাই ও বোনেরা স্কুলে যেতে ও শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ত। ওদের স্কুলে যাওয়া দেখে আমারও খুব স্কুলে যেতে ইচ্ছা করতো সেই সুবাদেই আমি পড়াশোনা করতে খুব আগ্রহী ছিলাম আমারও খুব ইচ্ছা করতো আমি পড়ালেখা শিখি কিন্তু আমার বয়স বাড়তে থাকে দ্বিতীয় শ্রেণির পূর্বে আমি বাড়িতে একা একাই পড়াশোনা করি। চাচার দোকানদারি দিনে দিনে দায়িত্ব পালনে আমি বিদ্রোহ করে ভাই-বোনদের সাথে স্কুলে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। দোকানদারি ভালো লাগত না। আমার জ্ঞান যাচাই করে আমাকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়।
(তাঁর সমবয়সী মামাতো ভাই স্কুলে যেত। রাতের বেলা সেই স্কুলের বইগুলো তিনি নিজে নিজেই পড়তেন, তাঁরও একদিন বাসনা হয় স্কুলে যাবার। তিনি মামার দোকান ছেড়ে দিয়ে জগতী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, বয়সে বেশি হওয়ার কারণে তাকে প্রথমে ভর্তি নিতে চাচ্ছিল না, পরে তিনি বললেন আমি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়তে চাই। তখন স্কুলের শিক্ষকরা অবাক হয়ে বলে দ্বিতীয় শ্রেণি তুই কি দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়া পারিস? তিনি তখন দ্বিতীয় শ্রেণীর সব কবিতা বলে দেন।) 

প্রাইমারি থেকেই আমি পত্রপত্রিকায় আসক্ত হয়ে দেশবিদেশের খবর জানার খুব ইচ্ছা ছিল। কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে আমি অষ্টম স্থান অধিকার করেও আমাকে ভর্তি না করায় আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। আমার অপরাধ ছিল আমি বয়সে বড়, দরিদ্র, শীর্ণকায় অতি সাধারণ এক বালক। তথাকথিত ভদ্র সমাজের জন্য আমি ছিলাম খুব বেমানান । স্কুল থেকে বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলে জেলার মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করি তখন জিলা স্কুলের হেড স্যার আমাকে খুঁজে বের করে ভর্তি করেছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণীতে থেকে আমি স্কুল ছুটির পর পাবলিক লাইব্রেরীতে যেতাম নিয়মিত পত্রপত্রিকা পড়তাম। ( 1968, অষ্টম শ্রেণীতে তিনি ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান এবং অধ্যায়নকালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একটি রচনা প্রতিযোগিতায় তিনি সমগ্র পাকিস্তানের ভিতরে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ততকালীন সরকারের সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক তাকে সোনার মেডেল দেওয়া হয়। যুদ্ধ কালীন ট্রেনিং এ কলিকাতায় এক স্বর্ণের দোকানে সেটি বিক্রি করেছেন। তিনি স্কুলে ২ বার বৃত্তি ও পেয়েছিলেন। শাহাবুব আলী ছিলেন মেধাবী শিক্ষার্থী, তিনি সেকালে ম্যেট্টিকুলান ও ইন্টারমিডিয়েট এ ফাস্ট ডিভিশনে পাশ করেছিলেন |তাঁরপর শাহাবুব আলীর নেতৃত্ব আরো বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে এবং সকলেই তাকে চিনতে থাকে কুষ্টিয়ার গর্ব হিসেবে তিনি পরিলক্ষিত হন, লেখালেখিও করতেন ক্লাসের মনিটর ছিলেন। প্রতিটি ক্লাসে তাঁর রোল ১ ছিল জানা যায় ক্লাস টু থেকে মাস্টার্স পাশ পর্যন্ত তাঁর পড়াশোনার খরচ হয়েছিল মাত্র 12 টাকা, তিনি যখন ক্লাস টেনে পড়তেন তখন এইট নাইন এর শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন এবং প্রাইভেট পড়াতে খুব সুনাম অর্জন করেছিলেন এই শিক্ষাবিদ। এভাবেই তাঁর মেধাবী এবং রাজনৈতিক একটি পরিচয় ফুটে ওঠে তাঁর নেতৃত্বে সকলেই তাকে পছন্দ করতেন। তিনি ছিলেন ছোটবেলা থেকেই পরোপকারী। তাঁরপর মুক্তিযুদ্ধ চলে আসে| মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি রণাঙ্গনের সংগীদের সাথে তাঁর দক্ষ ও সুকৌশলে কুষ্টিয়ার অন্যতম যুদ্ধ বংশীতলা যুদ্ধের কমান্ডার সামসুল হাদীর অনুপুস্থিতিতে তিনি একজন কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে বংশীতলা যুদ্ধে বিজয় লাভ করেন। এছাড়াও বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন। একবার এক যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয় তাঁর পাশেই ছিল শাহাবুব আলী। অন্যান্য সকল মুক্তিযোদ্ধারা সেখান থেকে পলায়ন করে কিন্তু তিনি যুদ্ধ করতে করতে সেই মুক্তিযোদ্ধা কে পিঠে করে নিয়ে আসেন এবং যতক্ষণ ওই মুক্তিযুদ্ধা জীবিত তাকে তিনি পিঠে করে নিয়ে আসেন, তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। সকল মুক্তিযোদ্ধা বলেছিল যে তোর এত সাহস, ভয় না করে একজন আহত মুক্তিযোদ্ধা কে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে গিয়েছিলে, এইজন্য বলে কণক বলে ডাকা হতো। কণক অর্থ সোনা।) বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের সময় ১৯৬৯ ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের জিলা স্কুলের প্রতিনিধি হিসেবে জেলা সংগ্রাম কমিটিতে আমি জেলার নেতাদের বাঙালি জাতির রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মুক্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র যোদ্ধা হিসেবে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। স্বাধীনতাঁর পর এর কারণ উপলব্ধি হচ্ছে দেশ স্বাধীন হলেও শোষিত দারিদ্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য, ঝুলে থাকা কৃষক-শ্রমিক সাধারণ মানুষের সন্তান মুক্তিযোদ্ধা হয়েছিল তারাই। মুক্তিযুদ্ধের পর নিজেদের মুক্তি তথা অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষার অধিকার পূরণের স্বপ্ন ছিল উচ্চবিত্তদের। তাদের সন্তানেরা মৃত্যুঝুঁকি নেয়নি কিন্তু স্বাধীনতাঁর পর রাজনীতিতে ক্ষমতাবান হলো সুবিধাবাদীরা। সুবিধা বঞ্চিতদের পক্ষে সন্তান হিসাবে আমরা বিপ্লব রাজনৈতিক শক্তি গড়ার সংগ্রামে অংশ নিলাম। বিকল্প শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা ছিল তখন আমরা মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পাশাপাশি চক্রান্ত করেছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে সামরিক বিপর্যস্ত করে তোলে জিয়ার আমলে সবচেয়ে বেশি। জাসদ নেতা কর্মীকে হত্যা করা হয় এবং বিধ্বস্ত করা হয় এই সময় টা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় আমি সামরিক জান্তার কাছে জীবন বাঁচানোর জন্য অন্য অনেকের মতো আত্মসমর্পণ না করে জিয়ার রাজনৈতিক শক্তির কাছে মাথা নত না করে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে আদর্শ পেশায় বিবেচনা করে কৌশলে জীবনকে রক্ষা করি। আমার জন্য অনেক আকর্ষণীয় ও লোভনীয় পদের সুযোগ ছিল কিন্তু আমি লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমাজে অবদান রাখার জন্য শিক্ষাকে আদর্শ পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছি। সেই সময়টিতে সরকারি গোয়েন্দা রিপোর্টে কুষ্টিয়া জেলায় আমি ছিলাম অন্যতম মোস্ট ওয়ান্টেড পারসন। আমি আমার নিজ গ্রামে তৎকালীন মুকুল সংঘ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও সরকারি অনুমোদনের ব্যবস্থা করি এক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা ফোটিক ভাইয়ের সহযোগিতা ও অবদান ছিল ব্যাপক। এরপর আমি ১৯৮১ইং সালে ঢাকাতে টিকাটুলির শহীদ নবী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করি। আমরা কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ব্যাচ ১৯৭২

                                         ----  শাহাবুব আলী

যারা মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধপূর্ব গণআন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে গৌরব অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলাম আমরাই তাঁর জন্য নিজেদের ধন্য মনে করি। আমাদের পূর্ববর্তী কয়েকটি ব্যর্থ এই ধরনের গৌরবের থাকি তাঁর প্রতিটি জাতির জীবনে এমন কিছু স্বর্ণময়ী সময়ে তাদের জীবনে আসে যা সদ্ব্যবহারে তারা ইতিহাসের সোনার মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় গৌরব এর বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে আমরা গর্বিত সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা আমাদের আমরা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রায় সকল শিক্ষার্থী ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে অংশ গ্রহণের সুযোগ গ্রহণ করে ধন্য হয়েছে সেজন্য 'পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি' বইটি আমাদের বাধ্যতামূলক পাঠ্যবই করে আমাদেরকে বাঙালি নয় পাকিস্তান বানানোর অপচেষ্টা করা হয়েছিল আমরা এই সময়ের সূর্য সৈনিক হিসাবে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর উদ্যোগ প্রত্যাখ্যাত করে আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাঙালি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলাম যদি রাজপথে আবার মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম মুক্তিযুদ্ধ উত্তম বাংলাদেশের প্রথম নাগরিক হিসেবে আমরা এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী ও পূর্ববর্তী সকলকে শুভেচ্ছা জানাই স্মৃতির পাতায় মনে পড়ছে, স্কুলের প্রধান শিক্ষকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে টাকা দিয়ে রাজপথে স্লোগানে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তৃতীয় শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। ইতিহাস হয়েছে আজকে আহসান চৌধুরি মামুন ভাই স্কুলের দাঁড়িয়ে রাজপথে মিছিল আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন তখনকার ভাই এবং রাশেদুল ভাই তাদের সহপাঠী বন্ধুরা আমাদের সংগ্রামে উৎসাহিত করেছিলেন ৬৯-এর সফলতা চৈত্রের বাঙালি নির্বাচনে বিজয়ের ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি সহ আমাদের ব্যাচ-৭২ এর যারা দেশের জন্য স্বাধীনতাঁর জন্য জীবন দিতে গিয়েছিলাম তাদের পরিচয় প্রিয় শিক্ষাঙ্গনে সুবর্ণজয়ন্তীর এই দিনে আগামী দিনের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কে যারা নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় দিতে গর্বিত। আমি ভারতের বিহার রাজ্যের চাকুলিয়া প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। বাংলা মহিতে কুষ্টিয়া

           ----  শাহাবুব আলী
আমরা যারা কুষ্টিয়া জেলার মানুষ তাদের রয়েছে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য। শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমাদের জেলার শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে কুষ্টিয়া সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে স্বীকার করেছেন অনেক জ্ঞানী-গুণী সাহিত্যিক, আলোচক, ইতিহাস গবেষক সহ দেশি, বিদেশি সকল স্তরের মানুষ। কুষ্টিয়ার উপর দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গার-পদ্মা গড়াই কুষ্টিয়ার ভূখণ্ড জলরাশিতে গৃহহীন করেছে নদীতীরের মানুষদেরকে, দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে মানুষ দুর্দশা গঙ্গা-পদ্মা অভিযুক্ত করেনি বরং গঙ্গা পুজো দিয়েছে টিকে থাকার সাহস সঞ্চয় করে নতুন করে নদীর তীরে বাউল এর জীবনী গানে একতারার সুর, নবান্নের উৎসবে মেতে ওঠা এ অঞ্চলের মানুষের উৎসবে আনন্দ গানে বেদনাই পল্লী প্রকৃতির শ্যামল প্রান্তর দক্ষিণের মনজোড়ানো বাতাস উত্তরের হিমালয় ছুঁয়ে আসা মৌসুমী বাতাসের সংস্পর্শে যে প্রকৃতি-পরিবেশ মানুষের মনে সৃষ্টি করেছে তাতে এ অঞ্চলের মানুষের কবিতা সাহিত্যিক যাত্রাপালা, নাচ-গান সংস্কৃতির কর্মকাণ্ডে হিসাবে একটু আলাদা- অগ্রসর হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। কুষ্টিয়া সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে কুষ্টিয়ার স্বীকৃতি যথার্থ তাঁরই প্রকাশ।
                  ------------ ------------ ------------ ------------ 

বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুব আলী এই লেখাটি আর শেষ করতে পারেনি। তিনি যখন এই লেখাটি লিখতে শুরু করেছিলেন তখন তাঁর সহযোদ্ধা বন্ধু মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাসিম উদ্দিন মারা যান তাঁরপর তিনি তাঁর বন্ধু নাসিম উদ্দিন কে নিয়ে একটি লেখা লেখেন তাঁর নিজের জীবনের ঘটনাগুলি আর লেখা হলো না। শাহাবুব আলী'র স্বরণ

              ---- বিলু কবীর 

১৪ নভেম্বর ২০১৯, মানে মাত্র তিন-চার দিন আগে। তখন বেলা ১১টা হবে। কুষ্টিয়া থেকে ফোন। কাজ করছিলাম অফিসে। পল্টনে। শাহাবুব ভইয়ের ফোন। হ্যালো- শাহাবুব ভাই। কাঁপা কণ্ঠেই- দৃঢ় স্বরে তাঁর বড় ছেলে বাবার মৃত্যু সংবাদ দিল। মানে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুব ভাই আর নেই। ততক্ষণে মাহদি ফোন রেখে দিয়েছে। মৃত্যুর এক মিনিট আগেও অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুব ভাই পুরো সুস্থ ছিল। হাঁটছিল সে। তখন হঠাৎ পড়ে যায়, এবং মৃত্যুকে অলিঙ্গন করে। বছর দুই আগে শাহাবুব ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাঁর হার্ট অ্যাটাক করেছিল। ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউতে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু কোথাও বেড খালি নেই। মেঝে বা বারান্দায় তাকে বিছানা দেয়া হয়েছিল। পরে ইনু ভাই নাকি ফোন করেছিলেন, হাসপাতালঅলারা তখন সম্ভব দ্রুত তাকে একটা ওয়ার্ডে বেডে ঠাঁই করে দেন। সে তুলনায় ডায়াবেটিসজনিত এ অসুস্থতা কিছুই না, সামান্যই অথচ তাতেই খুট করে তাঁর মহাপ্রয়াণ। ভাই হিসেবে তাঁর সঙ্গে আমার যে পারিবারিক বন্ধন, তাকে উপচে যাবার মতো সামাজিক সম্পর্কও যে ছিল। সেই কারণে শহরের অনেকই জানেন না যে, আমরা কাকাতো সহোদর। শাহাবুব ভাই জাসদের রাজনীতি করতো। ব্যক্তি জীবনে ছিল ইসকুলের হেডমাস্টার। শিক্ষক-রাজনীতিরও সে নেতা। সেটা ১৯৮০ সাল। আমাকে নিয়ে শাহাবুব ভাই ঢাকায় আসলেন। এসএম হলে মঞ্জু সাত্তার ভাইয়ের রুমে উঠলাম। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের অ্যাডমিশন টেস্ট দিতে এসেছি। ওই দিন সন্ধ্যার পর হেঁটে শাহাবুব ভাইয়ের সাথে গেলাম পিজি হাসপাতালে। বীর উত্তম খেতাব না পাওয়া একমাত্র সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল তখন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকেই দেখতে যাওয়া। কুষ্টিয়ার পান মেজর জলিলের খুব পছন্দ। তো শাহাবুব ভাই তাঁরই একটা বান্ডিল এনেছে। তাঁর তখনকার নেতাঁর জন্য। আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মেজর জলিলকে একেবারে হাতে ছুঁয়ে সে-ই প্রথম দেখলাম। পরদিন ডাকসু ভবনে নিয়ে গেলেন আমাকে। এখন মান্না ভাই জনপ্রিয়তাঁর শীর্ষছোঁয়া ছাত্র নেতা। তাঁর সাথেও সেই প্রথম দেখা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কুষ্টিয়ায় প্রথম দফায় সব পাকসেনা, জনতাঁর রুদ্ররোষে মৃত্যুবরণ করে। তাঁর পর শত্রুরা যখন জ্বালাও-পোড়াও, হত্যাযজ্ঞ চালাতে চালাতে কুষ্টিয়ায় ঢোকে, তাঁর আগে হাজার হাজার পরিবারের মতো আমরাও কুষ্টিয়া শহর ছেড়ে কুমারখালীতে পালিয়ে যাই। আমাদের সেই এ শরণার্থী জীবনের একটি রাত পোহাতে জানা গেলো শাহাবুব ভাই উধাও। বাবা-কাকারা জানতেন যে শাহাবুব ভাই মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছে। সম্ভবত দর্শনা দিয়ে তারা বর্ডার ডিঙিয়ে ছিলো। সেই সমগ্র জীবনে একবারই বাবা-কাকারা আমাদের একটা মিথ্যে বলা শিখিয়ে দিয়ে ছিলেন। ঠিক মিথ্যাও না, আবার সত্যকেও চেপে যাওয়া। সেই শেখানো পড়ানোটা হলো : কেউ যদি শাহাবুব ভাই বিষয়ে জিজ্ঞেস করে যে- সে কোথায়? তখন ধরি মাছ না ছুঁই পানি গোছের একটা জবাব কীভাবে দিতে হবে। সে যে মুক্তিযুদ্ধে গেছে সে কথাতো বলা যাবে না, সেটা শত্রুদের কাছে ফাঁস হলে সর্বনাশ। আমাদের শাহাবুব ভাই তখন ইশকুলে উপরের ক্লাসের ছাত্র। কুষ্টিয়া জিলা স্কুল। সেটা সম্ভবত ১৯৬৭-৬৮র কথা। সারা ইস্ট পাকিস্তান জুড়ে জাতীয় পর্যায়ে কি একটা রচনা-প্রতিযোগিতা হয়েছিল। শাহাবুব ভাই তাতে ফার্স্ট হয়ে সোনার মেডেল পেয়ে ইস্কুলে বাড়িতে, পাড়ায় জেলায় একটা মোটামুটি হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। দেশ স্বাধীন হবার পর শাহাবুব ভাইয়ের কাছে গল্প শুনেছি- যুদ্ধে যাবার সময় সে ওই মেডেলটি সঙ্গে নিয়েছিল। ভারতে যেয়ে ট্রেনিং শুরু হবার আগেই সে মেডেলটি বিক্রি করার জন্য এক স্বর্ণকারের দোকানে হাজির হয়। সেকড়া ভদ্রলোকতো বুঝতে পেরেছেন- জয় বাংলার লোক। শাহাবুব ভাই তখন তরুণ। এখনকার মতো নয়, সে আমলের প্রতিভার স্বীকৃতি একটা স্বর্ণপদকের ঢের সম্মান এবং ভাবমূল্য ছিল। তো সেই স্বর্ণকার বলেছিলেন- বাবু, এটা না বেচলেই কি নয়? শাহাববু ভাই বলেছিল, সে নিরুপায়। তিনি না নিলে সে অন্যত্র এটা বেচে দেবে। একেবারে শুরুর দিকে এ ঘটনা। এখনও শরণার্থী শিবির, ট্রেনিং এসবের ব্যবস্থা হয়নি। তো সেই স্বর্ণকার লোকটা শাহাবুব ভাইকে উপযুক্ত দাম দিয়ে মেডেলটা নিয়ে বলেছিলেন- শোনো, এটা আমি বহুদিন রেখে দেব। তুমি কখনো ফেরৎ নিতে এলে পেয়ে যাবে। তাঁরপর নয় মাস যুদ্ধ। দেশ স্বাধীন হলে সেই মেডেলের আর খোঁজ করা হয়নি। ও, এই মাত্র চার পাঁচ দিন আগে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা কীভাবে মারা গেলেন সেটা তো বলা হয়নি। সুস্থ মানুষ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ছিল বলেই তারা জানা। পথে হাঁটতে হাঁটতে পড়ে গেছে। তাঁরপর মৃত্যু। নিজে ভোগা নয়, কাউকে ভোগানো নয়, স্মার্টলি মৃত্যু যাকে বলে। মাত্র মিনিট দশকের মধ্যে সব শেষ! রোগী হয়ে কারো বোঝা ও বিড়ম্বনার কারণ সে হয়নি। টুপ করে, নিষ্ঠুরের মতো, আমাদের রেখে বউ-ছেলেপুলোকে ফেলে তাঁর এই চির চলে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না। যেতে হবে জানি। তাই বলে এইভাবে, এত দ্রুত? সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে বাছাই করে যাদের দেরাদুনে নিয়ে বিশেষ ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল, শাহাবুব ভাই ছিল তাদেরই একজন। কুষ্টিয়ার সবচেয়ে বড়ো যে সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছিল বংশীতলায়, সেই যুদ্ধ শাহাবুব ভাইয়ের দৃঢ় এবং সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল। এতে আটজন মুক্তিসেনা শহীদ হন। অনেক পাকসেনা নিহত হয়। এছাড়াও এলাকার অনেকগুলো গেরিলা আক্রমণে সে হয় অংশগ্রহণ করে, না হয় নেতৃত্ব দেয়। দুটো ঘটনার কথা আজ খুব মনে পড়ছে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কুমারখালীর রাজাকাররা শাহাবুব ভাইয়ের আব্বাকে ধরে নিয়ে যায়। তাঁর ছেলে মুক্তিযুদ্ধে গেছে এ কথা অবশ্যি ওরা জানতো না। শাহাবুব ভাইয়ের বাবা মানুষটা ছিলেন পরহেজগার। সত্য বলতে ভয় পেতেন না। পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে যায় এমন কোন কথা কিছু তিনি কোনো এক ধর্মীয় বক্তৃতাঁর আয়োজনে বলেছিলেন। ব্যাস, আর যায় কোথায়। ক্যাম্পে নিয়ে রাজাকাররা তাকে এমন মার মেরেছে, যে মানুষটার আঙুলগুলো ভেঙে, কবজিগুলো ফুলে একাকার। সারা জীবনে তাঁর আঙুলগুলো আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেনি। পরে রোড অ্যাক্সিডেন্টে তিনি মারা যান। এই গেলো শাহাবুব ভাইয়ের বাবার করুণ ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের পরে শাহাবুব ভাইয়ের ইতিহাসও কম করুণ নয়। জাসদ করার ‘অপরাধে’ তাকে রক্ষী বাহিনীর ভাইসাহেবরা পাকড়াও করে নিয়ে যায় তাদের ক্যাম্পে। সেখানে তাকে, যাকে বলে আচ্ছাছে ধোলাই করা হয়। শেষ পর্যন্ত নির্দোষ হিসেবে সে ছাড়া পায়। কিন্তু তখন তাঁর যে শরীরের হাল, মরে যাবারই কথা। কিন্তু কোনোক্রমে জানটা ধরতে রাখতে সক্ষম হয়। তবে সেই যে তাঁর শরীর ভেঙে পড়ে, সেটার রিকভারি সে সারা জীবনে করতে পারেনি। মানে কেমন দুঃখের অভিজ্ঞতা আমাদের পরিবারের! বাপকে মারে রাজাকার, মুক্তিযোদ্ধা ছেলেকে মারে রক্ষী বাহিনী। মানে- ‘না গেলে রাবন মারে গেলে মারে রাম। অত্যাচারের শাঁখের করাত চলে অবিরাম।’ পরে আরেকটা ঘটনা হয়। সে ক্ষেত্রেও অপরাধ হলো শাহাবুব ভাই ডাকসাইটে মুক্তিযোদ্ধা তো তাতে কী? দোষ হলো সে জাসদ করে। পুলিশরা তাকে, জাফরি ভাইকে আর মজমপুরের মুকলু ভাইকে গ্রেফতাঁর করে। তাদের কাছে নাকি একটা পিস্তল এবং সাইক্লোস্টাইল করা কিছু পোস্টার-লিফলেট পাওয়া গেছে। এ নিয়ে যদ্দুর মনে পড়ে বছর দেড়েক ধরে বিচার চলে কুষ্টিয়ার ডিসি কোর্টে। পুরো সময়টা তারা বন্দী ছিল জেলা কারাগারে। বিনা পারিশ্রমিকে তাদের মামলা লড়েন অ্যাডভোকেট নকিব উদ্দিন চাচা আর অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান চাচা। সে মামলাতেও শেষ পর্যন্ত তারা বেকসুর মুক্তি পায়। দুবারই প্রমাণ হয়েছে তারা শাস্তি পাবার মতো কোন অপরাধ করেনি। বা হয়তো কোনো অপরাধই করেনি। কিন্তু ওদিকে রক্ষী বাহিনীর হাতের ভয়ঙ্কর-নিষ্ঠুর প্রহার তাকে সহ্য করতে হয়েছে। আবার নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও জেলখানায় তাদের বন্দী থাকতে হয়েছে দেড়টা বছর। কিন্তু নির্দোষ মুক্তিযোদ্ধাদের এভাবে পেটানো এবং নাজেহাল করার জন্য না রক্ষা বাহিনী, না পুলিশ বাহিনীর কোনো দোষ হলো! কী আশ্চর্য? মুক্তি সেনা হয়ে শাহাবুব ভাইরা কি এতোটাই অপরাধ করেছিল? শাহাবুব ভাই যখন নির্দোষ প্রমাণ হয়ে জেলখানা থেকে মুক্তি নিয়ে বাড়ি ফিরল, তখন বাড়িতে পাড়ায় একটা আনন্দ বয়ে যাবার কথা ছিল। কিন্তু সেটা না হয়ে একটা বেদনাবিধুর করুণ দৃশ্যের অবতাঁরণা হলো। ঘটনা হলো, যখন বিচারাধীন অবস্থায় শাহাবুব ভাই কারাবন্দী, তখন তাঁর সবচেয়ে ছোটো যে ভাই, শিশু বয়েসী আরাফাত চৌড়হাস মোড়ে রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। সেই কথা বন্দী অবস্থায় থাকার কারণে শাহাবুব ভাইকে জানানো হয়নি। এখন জেল থেকে বেরিয়ে সে বাড়িতে এলো- আজ কে কীভাবে তাকে এ দুঃসংবাদটি দেবে, তাই নিয়ে আমাদের বাড়িতে মহা বিপদ। একসময় সবাইকে দেখতে দেখতে শাহাবুব ভাই হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো- আরাফাত কোথায়, ওকেতো দেখছি না? এই প্রশ্ন শোনার সাথে সাথে আমরা সব্বাই নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না। এক জোটে হাউমাউ করে কেঁদে ফেললাম। শাহাবুব ভাই বিচক্ষণ, ঘটনা বুঝতে তাঁর বিলম্ব হলো না।

আমাদের শাহাবুব ভাই খুব ভালো ছাত্র ছিল। কথার কথা বলতে যে ‘ভালো ছাত্র’, ব্যাপারটা ঠিক সেই রকমের নয়। সত্যিই খুব ভালো। কেমন ভালো, তাঁর একটা উদাহরণ দেই। সে বৃত্তি পেয়েছিল ফাইভে এবং এইটে। যখন সে মেট্রিক পরীক্ষার্থী। তখনই সে নিজের ক্লাসের ছেলেমেয়ে বেশ কয়জনকে প্রাইভেট পড়াতো। শিক্ষক-ছাত্র একই ক্লাসের। তো শাহাবুব ভাই ফার্স্ট ডিভিশন পেলো, তাঁর ছাত্রছাত্রী সব্বাই সেকেন্ড ডিভিশন। কিন্তু এরই মধ্যে রাজনীতির ন্যায়সঙ্গত ডাকে সে সাড়া দিল। লেখাপড়া করার চাইতে ‘জাসদ’ আর ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র তাঁর কাছে বড়ো হয়ে দেখা দিল। তাঁর ভেতর দিয়েও সে ইন্টারমিডিয়েটও ফার্স্ট ডিভিশন পেলো। কিন্তু বিএ ক্লাসের রেজাল্টটা অতো ভালো হলো না। তাঁর পরে হলো না আর লেখাপড়াটাও। চৌড়হাস মোড়ে সে এবং অন্যান্যরা গড়ে তোলে একটা হাই স্কুল। সেখানেই সে প্রধান শিক্ষক। কিন্তু রাজনীতি আর স্থানীয় কোন্দল হলে নিজের গড়া স্কুলে তাঁর আর থাকা হলো না। তাঁরপর ঢাকার শহীদ নবী স্কুলের হেডমাস্টারের চাকরি। বহু বছর পরে আবার কুষ্টিয়ায় ফেরা। তাঁরপর খাদিমপুরের একটা স্কুলে প্রধান শিক্ষকের কাজ। এর মধ্যে কিন্তু চুটিয়ে জসদের রাজনীতির রীতিমতো জেলা এবং কেন্দ্রের নেতা। শিক্ষকদের আন্দোলনের পুরোভাগে সে। বলে না? ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। তবে যেখানেই হোক ধান ভানার কাজটা যে তুচ্ছ নয়, সেটা শাহাবুব ভাই সারা জীবনে রাজনীতির একাগ্রতা দিয়ে প্রমাণ করেছে।

শাহাবুব ভাইরা যখন পুরোদমে জাসদ করছে তখনকার দিনের একটা ঘটনা বলি। হাদি ভাই, জাফরি ভাই এরা তখন রীতিমতো আন্ডারগ্রাউন্ডে। আমাদের চৌড়হাসের বাড়িটার সামনে একটা ঘাট বাঁধানো পুকুর ছিল। তাঁর পাশে একটা খেলার মাঠ। সেই মাঠের পশ্চিমে আমাদের বাইরের ঘর। সেই ঘরটায় আমি থাকতাম। তো মাঝে মাঝেই গভীর রাতে কোত্থেকে যেন হাদি ভাই আসতেন। তাঁরপর তিনি আর শাহাবুব ভাই বহুক্ষণ ধরে সেই ঘাটের সিঁড়িতে বসে কি সব আলাপ-আলোচনা করতো। তাঁরপর একসময় আরো গভীর রাতে হাদি ভাই এসে আমার পাশে ঘুমাতেন। আর খুব ভোরে চলে যেতেন। নাস্তা না করে। রাতেও যে আসতেন অনির্ধারিত। অতএব তাঁর জন্য আমার রুমে তাঁর খাবার ব্যবস্থা শাহাবুব ভাই কখনো রাখতো, কখনোবা রাখতো না। সেই হাদি ভাইও আজ কেবলই স্মৃতি। সেই জাফরি ভাইও আজ নেই। আমাদের বাড়ি এবং পরিবার ঘিরে এইসব স্মৃতিও হয়তো তুচ্ছ। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণের জন্য সেও যে জীবনের সামান্য অর্জনও সেই কথাটাই বলা। সত্যিকারের সমাজ পরিবর্তন বলতে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের বাস্তবতা যদি কোনোদিন এ দেশে আসে, তাহলে এ স্মৃতি মূল্যবান বলে বিবেচিত হতেও তো পারে।

যাই হোক, শেষ কথাটা এই যে, শাহাবুব ভাই কয়েক মনিটের মধ্যে অসুস্থ হওয়া থেকে মরে যাওয়ার কঠিন কাজগুলো শেষ করে চিরবিদায়। তাঁরপর তাকে বাড়িতে নিয়ে জানাজা পড়া হয়। তাঁরপর সরকারি পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার। তাঁরপর শহরের আরেকটি মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা। তাঁরপর পৌর গোরস্তানের মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে কবর। সব শেষ। এ যেনো সব পাখি ঘরে ফিরলো। সব নদী মিটালো জীবনের সব লেনদেন। শাহাবুব ভাই ভালো থেকো। দেখা হবে। তোমার প্রিয় স্লোগানটি আজ খুব মনে পড়ছে ‘বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
এই মানবহিতৈষী, দেশপ্রেমিকের জন্মঃ জুন ১৩, ১৯৫৬ সাল, মৃত্যুঃ নভেম্বর ১৪, ২০১৯ সাল। 

বাবার নামঃ মুন্সি মোজাহার আলী, মাতাঃ রাবেয়া খাতুন, সহধর্মিণীঃ শাহানারা খাতুন ( অবশর প্রাপ্ত সরকারি চাকুরিজীবী) , জ্যেষ্ঠ পুত্রঃ মাহাদী আলম ( ব্যাংক কর্মকর্তা) , কনিষ্ঠ পুত্রঃ আহসানুল ইসলাম স্বজন (শিক্ষার্থী)।

শাহাবুব আলীর নিজের কোন বাড়ি-গাড়ি, ধনসম্পদ ছিল না। ব্যক্তগত জীবনের তিনি নিজের ক্যারিয়ার কিংবা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা চিন্তা করতেন না; এইজন্য তার কোন আক্ষেপও ছিল না। তিনি খুব অল্পতেই খুশি থাকতেন। খুবই সাদাসিধা জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত ছিলেন। তাঁর আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাপন অপছন্দ ছিল। তিনি ছিলেন খুবই মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তার বজ্রকন্ঠে ছিল মায়াবী ভাব। কাউকেই তিনি মিথ্যা কথা বলতেন না। কারোর সাথে ওয়াদা খেলাপ করতেন না। যা তিনি সুপারিশ করতে পারবেন না, তা সোজাসাপ্টা বলেদিতেন 'না'। আর যদি কোন কিছু করবেন বলে মনে করতেন তাহলে তিনি তা করেই ছাড়তেন। নেতৃত্ব তিনি চিলেন বলিষ্ঠ, আর বিচারবোধে কঠোর চিত্তের মানুষ। তিনি অত্যন্ত সাহসী, নির্লোভী আর সৎ মানুষ ছিলেন । তিনি অত্যন্ত পরোপকারী ছিলেন। তিনি বহুবার নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে মানুষের বিভিন্ন কাজে ঢাকায় গিয়েছেন ৷ তাঁর সান্নিধ্যে অনেকেই চাকুরী, পড়াশোনা, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, স্কুল প্রতিষ্ঠা, বিয়ের অনুদান সহ অনেক সেবা পেয়ে ধন্য হয়েছেন। অনেকে বিনিময় দিতে চেয়েছিল তিনি তা গ্রহণ করেন নি। এর স্বাক্ষী আমি নিজে।
তাঁর মনটা ছিল পানির মত স্বচ্ছ। ভালো কাজে হিমেল বাতাসের মত আর খারাপ কাজে বরফের মতো শক্ত, কঠোর প্রতিবাদী। আমি তাকে যেকোনো দেশাত্মবোধক গান শুনলে তার চোখ দিয়ে বহুবার অশ্রু ঝড়তে দেখিছি। তিনি ব্যক্তিগত জীবনে দানশীল ও উদ্যোগী সংগঠক ছিলেন। তাঁর হাসি ছিলো অনেক সুন্দর। খুবই আন্তরিক ও মনোমুগ্ধকর ব্যবহার দিয়ে সকলকে জয় করে নিতেন। তাঁর চেহারা ছিল বিপ্লবী নেতার মাধুর্য। সর্বপরি তিনি ছিলেন এক বীর্যবান মহাপুরুষ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুব আলী প্রত্যুষে ঘুম থেকে উঠে ক্যানালের ধারে হাঁটাহাঁটি করে বাজার করতেন। বাসায় এসে ভাত চুলায় দিয়ে, চা বানিয়ে সবাইকে ঘুম থেকে উঠার জন্য ডাকতেন।মাঝেমধ্যে কাপড়চোপড় ধোঁত করতেন। তারপর তিনি সমাজসেবায় বেরিয়ে পড়তেন। প্রতিদিন রারে বাসায় এসে টেলিভিশন দেখতেন, ক্রিকেট খেলা থাকলে দেখতেন। রাত ১১টা অব্দি বিভিন্ন টকশো দেখতেন।সব সময় বলতেনঃ হাই দেশের কি অবস্থা! দেশাত্মবোধক গান শুনলে তার চোখ দিয়ে পানি পড়ত। তিনি অনেক কিছু জানতেন; অনেক লোককে চিনতেন। যা বিসিএস পরীক্ষার্থী ও জানতেন না। তাঁর দৈনিন্দ কাজ ছিল।তিনি ছিলেন একাধারে বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, সমাজকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক ও আত্মত্যাগী নেতা । 
শাহাবুব আলী মৃত্যুর দিন তাঁর স্ত্রীকে সকালবেলা নিজ হাতে দুধ চা বানিয়ে খাওয়ার জন্য তিনবার বলেছিল "চা ঠান্ডা হয়ে যাবে, দেখো কেমন হয়েছে? " তিনি তাঁর নিজের কাজ নিজে করতেন, নিজের কাপড়চোপড় নিজেই ধোঁত করতেন অন্য কাউকে ধোঁত করতে দিতেন না। মাঝে মাঝে রান্না করতেন। এমনি এমনি বসে থাকতে পারতেন না অত্যন্ত পরিশ্রমী ছিলেন। সেদিন সকালে ভাত রান্না করেছিল আর তাঁর স্ত্রীকে বলেছিল "টেবিলে ভাত রাখা আছে, আমি একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছি, ভাত খেয়ে নাও" তিনি ছিলেন অত্যন্ত মিশুক এবং হাস্যজ্জল মায়াময় মুখের অধিকারী অনেক সুন্দর করে কথা বলতেন। তিনি যেদিন প্রয়াত, হন বাসা থেকে সবকিছু ঠিকঠাক করে দোতলা থেকে নিচে নামার পর তাঁর মনে হলো মোবাইলটা নিয়ে আসা হয়নি, আবার দোতলায় উঠে মোবাইলটা নিলে নিয়ে একটু হাঁপিয়ে উঠলেন, রেস্ট না নিয়ে আবার দোতলা থেকে নিচে নামলেন আর তাঁর স্ত্রীকে বললেন " গেটটা বন্ধ করে দাও, তোমার ছোট ছেলে তো এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি পারলে ওর বিয়ে দিয়ে দিও না হলে মানুষ হবে না" তাঁর হাতে অনেকগুলি পোস্টার ছিলো। বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন আহমেদ না ফেরার দেশে চলে গেছেন। গত 09/10/2019 মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সকাল দশটা ত্রিশ মিনিটে নিউইয়র্কে নথ সেন্ট্রাল হসপিটালে স্টক জনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। নাসিম কাকুর মৃত্যুর  পিভিসি পোস্টার অনেক ভারি ছিল, গুলো নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো উনার। মাঝেমধ্যে একটু হাঁপিয়ে যাচ্ছিলেন।

এটা ছিল তাঁর শেষ যাওয়া

১ মাসের ব্যবধানে ২ বন্ধুর মৃত্যু পাশাপাশি কবর । বন্ধুর মৃত্যুর গার্ড অফ অনার এ ধারাভাষ্য দেওয়া কতযে কষ্টের কাজ! আমার বাবার বন্ধু ও অগ্রজ সহযোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম আঙ্কেলের প্রতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম আঙ্কেল ছিল কুষ্টিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার আমার বাবা ছিল অর্থ কমান্ডার এবং আমার বাবা ছিল মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির কুষ্টিয়া জেলা কমান্ডার। আমার বাবা এবং নাসিম আংকেল সবসময় দেশ ও দশের জন্য কাজ করে গিয়েছেন। আমার বাবার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন তিনি। তিনি মারা যাওয়ার একমাস পরেই আমার বাবাও মারা যান। নাসিম আংকেল যেদিন মারা যান আমার বাবা সেদিন তাঁর গার্ড অফ অনারের ধারাভাষ্য দেন। আংকেল মারা যাওয়ার পরে আবার বাবা ঠিকমতো ঘুমাতে পারতেন না সব সময় নাসিম আঙ্কেলের কথা মনে করতেন এবং নাসিম আংকেল কে নিয়ে অনেক লেখা লিখেছিলেন। নাসিম আঙ্কেলেরকে নিয়ে একটি দোয়ার অনুষ্ঠানে তাকে নিয়ে রচিত আমার বাবার লেখাটি দেয়া হয়েছিল কিন্তু তখন আমার বাবার বেঁচে ছিল না দুই বন্ধুর কবর পাশাপাশি। নাসিম আঙ্কেলের কবরের পাশে সমাহিত করা হয় আমার বাবাকে । দুই বন্ধু পাশাপাশি চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে আছেন।

নাসিম আঙ্কেল মারা যাবার পর থেকে প্রতিদিনই তিনি তাঁর লাইব্রেরীতে বসে নাসিম আংকেল কে নিয়ে অনেক কথা লিখতেন। আমি দেখেছি, লিখতে লিখতে তাঁর চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল । নাসিম কাকুর শোক সভা পালন করার জন্য উনি ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন । সেই শোকসভার আয়োজনে দায়িত্বে তিনি ছিলেন কিন্তু সমস্ত প্রস্তুতি শেষ হলেও সেই শোক সভা অনুষ্ঠানের আগেই নিজেই নাসিম কাকুর কাছে চলে গেলেন । তিনি নাসিম কাকুকে অনেক ভালোবাসতেন ।

তিনি তার নিজের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উৎসর্গ করেছেন মানুষের জন্য দেশের জন্য। যে দিন তিনি মৃত্যুকে আলিংগন করেন তখন তার হাতেছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিম আংকেলের স্মৃতিচারণ মূলক ব্যানার ও শোক সভার অনেক পোস্টার। তা বহনে তিনি হাঁপিয়ে উঠছিলেন। তারপরই রাস্তায় মুখ থুবড়ে পারে গিয়ে শ্বাসকষ্ট মৃত্যুকে আলিংগন করেন।

একজন বাবার গল্প: এই বাবা টি আর কেউ নয়, আমারই বাবা শাহাবুব আলী'র গল্প। আমি যখন খুবই ছোট আমরা সপরিবারে ঢাকা টিকাটুলিতে থাকতাম। আমার বাবা শহীদ নবী বিদ্যালয়ে শিক্ষাকতা করতেন। আমাদের সেই সময় কোন টেলিভিশন ছিল না। কিন্তু আমি কার্টুন দেখতে খুব পছন্দ করতাম। একদিন এক ঘটনা ঘটলোঃ ঢাকাতে আমরা যে বাসায় ভাড়া থাকতাম আমি বাড়িয়ালার ঘরে টিভি দেখার জন্য গিয়েছিলাম কিন্তু বাড়িয়ালা আমাকে টেলিভিশন না দেখতে দিয়ে বেড় করে দিয়েছিল। আমি খুব কান্নাকাটি করেছিলাম। সেদিন আব্বু যখন বাড়িতে আসেন আম্মু আব্বুকে বলেন যে বাবু টিভি দেখতে পছন্দ করে কার্টুন দেখে কিন্তু ওরা তাড়িয়ে দিয়েছে আজ একটা টিভি কিনে নিয়ে এসো তারপরে বাবা অনেক কষ্ট করে একটা সাদাকালো ন্যাশনাল টিভি কিনে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর কাছে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না আমার জন্য জমানো একটা মাটির ব্যাংক ভেঙে কিছু টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সেই সময়ে বাবার বেতন বেশি ছিল না। টেলিভিশন কেনার কারণে অনেক কষ্ট করতে হয়ে ছিল। বড় হয়ে আমি যখন চাকরি পেয়েছিলাম, ২০১৩ সালে কুষ্টিয়ার ভেতর সব চাইতে বড় ৪৪" টেলিভিশন ছিল আমি ৮৪ হাজার ৬০০টাকা দিয়ে কিনে ছিলাম । আব্বু টিভির খবর ও টক শো দেখতে খুব পছন্দ করতেন। তাই সবসময় টিভিটি আব্বুর ঘরে আমি রেখে দিতাম কিন্তু ছোট বেলার ঘটনাটি আমি জানতে পারি টিভি কেনার পরে। তখন বুঝতে পারি আমার এই দামি রঙিন টিভিতে সেই সময়ের সাদাকালো টিভি অনেক মূল্যবান ছিল। আমি স্কুল পালাতে শুরু করলাম স্কুল পালিয়ে একটি ভিডিও গেম খেলতে যেতাম একদিন একটি দোকানে ভিডিও গেম খেলতে খেলতে অনেক সময় পার হয়ে যায়, তারপরে বাড়ি ফেরার সময় তখন আমি আমার বাড়ির পথটা ভুলে যায় | এমনি করে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় কেটে যায় ইতোমধ্যে আমার বাবা মার মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি শুরু হয়ে গেছে যে বাবু এখনো কোথায় গেল, বাবুকে এখনো পাওয়া যাচ্ছে না | তারা স্কুলে এসে অনেক খোঁজাখুঁজি করে আমাকে | অবশেষে রেল লাইনের ধারে আমি হাঁটছিলাম, তখন আমার বাবা মাকে খুঁজে পাই | তখন বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে বুকের ভিতর wb‡q বলে: Ò তুই কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি ,আমরা তোকে কতক্ষণ ধরে খুঁজছি।Ó আরেকটা ঘটনা খুব মনে পড়ছেঃ একবার আমি আব্বুর টাকা না জানিয়ে একটি দামি সাইকেল কিনে ছিলাম। বাবার বেতনের প্রায় অর্ধেক টাকা দিয়ে কিনে ছিলাম। আব্বু সে দিন খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। কিন্তু শত কষ্টের পরও সেই সাইকেলটি বিক্রি করেননি। সাইকেল কেনার কারণে মুদিখানার দোকানে ২ মাসের বাকি দেনা ছিল। আমি তখন বুঝিনি কিন্তু আজ বুঝতে পারছি কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন। আমি যখন জীবনে প্রথম মোটরসাইকেল কিwb তখন তিনি আমাকে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। এই টাকা ছিল তার একটি ব্যাংকে এফডিআর করা জমানো টাকা এই টাকা ছাড়া তার কাছে আর কোন টাকা ছিলনা। তিনি এমনি করে দিন কাটাতেন; অনেকদিন ছেঁড়াফাটা একই স্যান্ডেল পড়তে দেখেছি, বলেছি আব্বু স্যান্ডেল চেঞ্জ করেন, তিনি একই জামা কাপড় প্রতিদিন পড়তেন, আব্বুকে বলেছি চেঞ্জ করেন । প্রতি ঈদে বাবা আমাকে অনেক কিছু কিনে দিত। নিজের জন্য কিছুই কিনতো না। কিন্তু এখন বুঝতে পারি তিনি তাঁর জীবনের সমস্ত আনন্দ, সমস্ত উপার্জিত সম্পদ সবই আমাদের জন্য করে গেছেন এবং তার অন্যতম একটি ভাগীদার ছিল সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষ । তিনি অকাতরে মানুষকে দান করতেন এবং সকলকে সবধরনের সহযোগিতার জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন। কখনো কখনো ভালো ডাক্তার দেখান নি। ওষুধ খান নি।মাঝেমাঝে হোমিওপ্যাথি খেতেন। তার বেতনের টাকা সমাজকল্যাণ আর তার ছেলেদের জন্য খরচ করতেন কিন্তু কখনোই তার বিনিময়ে সে কিছুই পাইনি। জীবনের শেষ পর্যায়ে রিটার্ড করার পরে অল্প কিছু টাকা পেয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু টাকাটা ব্যাংকে রয়ে গেল। সেই টাকার স্বাদ তিনি কখনোই গ্রহণ করতে পারল না। মানুষের জীবনের যত অর্থ অর্জন করে মৃত্যুর সময় তা কখনোই নিয়ে যায় না। এখন আমি একটা চাকুরী করি। ইচ্ছে করলে অনেক ভালো জামা কাপড় কিনতে পারি। কিন্তু আমার বাবাকে আর কিছুই দিতে পারবো না। আজ আমি আমার বাবাকে শান্তি দিতে পারলাম না। সে চলে গেলো না ফেরার দেশে। সে তাঁর সারাজীবন ত্যাগের মাধ্যমে নিজেকে উজাড় করে দিল। আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে, আত্মীয় স্বজনের দিকে তাকিয়ে, দেশের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য সারাজীবন শুধু কষ্ট করে গেছেন। তাঁর জীবন কেটেছে অনেক অবহেলা কষ্ট আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। স্বপ্ন দেখেছেন সুন্দর একটি পরিবারের সুন্দর একটি সমাজের সুন্দর একটি দেশের এই দেশের মাটির প্রতি এই দেশের মানুষের প্রতি এই সমাজের প্রতি তার ছিল বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ছিল। মানুষের জন্য মানুষ, জীবনের জন্য জীবন তার জীবনতো উদাহরণ ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুব আলী। তিনি শত দুঃখ-কষ্ট-দারিদ্রতার মাঝেও অকাতরে মানুষকে দান করেছেন। উপকার করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি তার পকেটের টাকা দিয়ে গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতেন। আমাকে তাঁর এক ছাত্রী বলেছে যে, ' স্যার আমার ssc র ফর্ম ফিলাপের টাকা দিয়েছেন। রাজনৈতিক অধ্যায় t ১৯৯৯ সালের আগে রাজনৈতিক কারনে শাহাবুব আলী ঢাকাতে অবস্থান করেন। তখন জাতীয় বীর কাজী আরেফ আহমেদ সহ জাসদের ৫ জন নেতাকে ( কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক সহ) ১৯৯৯ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে দুর্বৃত্তদের আতর্কিত হামলায় নিহত হন। সেই সময় জাসদের অবস্থা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। দলের এই ক্রান্তিলগ্নে শাহাবুব আলীকে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় নিয়ে আসা হয় | তিনি জানতেন এতে তাঁর জীবনের ঝুঁকি আছে। তারপরেও জীবনের মায়া ত্যাগ করে, সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে তিনি দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০৩ ইং সালে জাসদের সম্মেলনে শাহাবুব আলীকে কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি এবং আব্দুল আলিম স্বপনকে জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করে। শাহাবুব আলী পরপর দুÕবার জেলা জাসদের সভাপতি মনোনীত হন।

২০০৩ সালে জামাত-বিএনপি নিপিড়ন ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তখন চারিদিকে সকলেই দিশেহারা, ভয়ে কুঁকড়ে মুকরে আছে। তখন এই সাহসী বীর, অকুতোভয়, নির্লোভী, চৌকস রাজনীতিবিদ শাহাবুব আলী জাসদের মশাল হাতে নিয়ে সবার দ্বারেদ্বারে নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে, পকেটের পয়সা খরচ করে, পায়ে হেঁটে দলের কর্মীদের তৃণমূলে সংগঠিত করেছিলেন। জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে উপজেলা-থানা-ইউনিয়ন-গ্রাম পর্যায়ে জাসদের কর্মীবাহিনীকে সংঘবদ্ধ করেন এই জননন্দিত নেতা শাহাবুব আলী, দলের জন্য অসামান্য অবদান রাখেন। তাঁর নেপথ্যে দল আবারো শক্তি সঞ্চয় করে। দলের এই শক্তি দিয়েই এ অঞ্চলের সমস্ত অপশক্তিকে প্রতিহত করা হয়। 

তাঁর সংগ্রাম এখানে শেষ নয়; বরং শুরু। শাহাবুব আলী নিউক্লিয়াসের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ আহমেদ, ততকালীন জাসদের সভাপতি লোকমান হোসেন, জাসদের সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী সহ জাসদের মোট 5 নেতা হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের বিচার দাবীতে ২০ বছর যাবত শতাধিক মিছিল-মিটিং সহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যা তাঁর সাহসীক্তার পরিচায়ক। জননেতা কার্শেদ আলম তাঁর সহযাত্রী হন। তিনি Òকাজী আরেফ আহামেদ স্মৃতি সংসদÓ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ২০০১ থেকে ২০১৯ আমৃত্যু সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়েছেন

শুধু জাসদকর্মীই নয় বরং স্বাধীনতাঁর পক্ষে যারা ছিল তথা ১৪ দল এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে শাহাবুব আলী, নাসিম আহামেদ, আব্দুল জলিল, শামসুল বারী মিলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘবদ্ধ করেন। তাঁরা "মুক্তিযোদ্ধা ঐক্য পরিষদ" নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও "স্বাধীনতা আমার অহংকার" নামক একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রতিটি বিদ্যালয়ে গিয়ে তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনাতে থাকেন। তাঁরাই প্রথম এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতাঁর চেতনায় উদ্ভুত করতে থাকেন। কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলায়, ৫৬ বিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন। কুইজ, রচনা, আবৃত্তি প্রতিযোগিতাঁর মাধ্যমে ৭১-এর চিত্র শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে অংকন করেন। Òস্বাধীনতা আমার অহংকারÓ প্রোগ্রামে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বাধীনতার চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে তিনি অনেক অবদান রেখেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে বিতর্ক, কইজ প্রতিযোগিতাঁর মাধ্যমে জয়ীদের দেওয়া হয়েছিল মূল্যবান পুরস্কার। 

শিক্ষাবিদ শাহাবুব আলী t একজন শিক্ষাবিদের কাজ হল শিক্ষার মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা, শিক্ষার আলো সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া ,শাহাবুব আলী তাই করেছেন । এই শিক্ষানুরাগী, জ্ঞানতাপস শিক্ষক মুকুল সংঘ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন এবং প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি খাদিমপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন, তাঁর হাত ধরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেক ধরনের সহযোগিতা পান । ৩ টি স্কুলে সুনামের সাথে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। খাদিমপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০০১ সালে mpo হয়েছে। তাঁর বিদ্যালয়ে এমপিও ভুক্ত করার জন্য তিনি কোন শিক্ষকের কাছে কোন টাকা নেন নি। । তিনি শিক্ষক সমিতির সভাপতি থাকা কালে শিক্ষার মান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তাঁর সহযোগিতায় অনেক শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। তাঁর প্রচেষ্টা ছিল যাতে সকলেই শিক্ষার আলো দেখতে পাই। তিনি প্রথম মিরপুরে খাদিমপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন | তাঁর প্রচেষ্টায় এবং জনাব হাসানুল হক ইনু (এমপি) মহোদয়ের সক্রিয় সহযোগিতায় ২০১২ সালে ssc কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় যার কারণে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব হয়। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রোজেক্টের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। ছাত্র-ছাত্রীদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন শিক্ষাসংক্রান্ত প্রকল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। কুষ্টিয়া জিলা স্কুল এবং সরকারি বালিকা বিদ্যালয় এ সরকারের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একজন করে বীর মুক্তিযোদ্ধা কে মুক্তিযুদ্ধের গল্পকার হিসেবে মনোনীত করা হয়। তিনি কুষ্টিয়ার ওই দুই বিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধার গল্প শোনানোর জন্য আমন্ত্রিত হন এবং তাদের মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প শোনান | বিদ্যালয় গুলোতে সেই ভিডিও সংরক্ষন করা হয়েছে। কুষ্টিয়া, চৌড়হাস মুকুল সংঘ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বিমান এর ভাস্কর্য Òমুক্তি মৈত্রীÓ সেটা প্রতিষ্ঠায় শাহাবুব আলী র অগ্রণী ভূমিকা ছিল| তাঁরপর এই মহান যোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা কমান্ডের সহকারী কমান্ডার (অর্থ) দ্বায়িত্ব পান, নাছিম উদ্দীন আহামেদ এবং শাহাবুব আলী, মুক্তিযোদ্ধের চেতনার সমাজ নির্মানের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আল বদরদের বিচারের আন্দোলনে তাঁরা বিশেষ অবদান রেখেছেন। ইতিহাস তুলেধরে আরো বলেন বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলায় যুদ্ধ স্থান গুলো খুজে খুজে বেরকরে সমস্ত যুদ্ধস্থান গুলোতে স্মৃতি সৌধ তৈরীতে তাঁদের অবদান অপরিসিম । তাঁর মধ্যেঃ কুষ্টিয়া শহরে বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের ভাষ্কর্য স্থাপন (যেমনঃ মুক্তি মিত্র স্মৃতিসৌধ, রাজাকার চত্তর), মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানাদের কর্মসংস্থানসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক কল্যাণ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুব আলী কুষ্টিয়া জেলার Òমুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিরÓ জেলা কমান্ডার হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন; তখন অনেকেই তাকে অনেক প্রলোভন দেখান। কিন্তু এই নির্লোভী, সৎ মানুষটিকে কোন অপশক্তিই টাকা দিয়ে কিনতে পারে নি। তাই যে কোন সাংগঠনিক কাজে তাকে অর্থ সচিবের দ্বায়িত্ব দেওয়া হত। যেমনঃ Òকুষ্টিয়া জিলা স্কুলের সুবর্ণ জয়ন্তীÓতে শাহাবুব আলী ছিলেন আহবায়ক। সেই অনুষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে তাঁর স্বাক্ষরে অর্থ উত্তোলন করা হত। তিনি বিভিন্ন সংগঠনের নেপথ্যে কাজ করেছেন । কিন্তু কেউ তাঁর সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে নি। তাঁর বিদ্যালয়ে এমপিও ভুক্ত করার জন্য তিনি কোন শিক্ষকের কাছে কোন টাকা নেয় নি। তিনি ছিলেন সত্যিকারের ভালো মানুষ। যিনি কখনো দূর্নীতি করেন নি, তথা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেন নি। বাস্তবতা এই যে, শাহাবুব আলী চাইলে চাকুরী দেবার নামে সুপারিশ করে টাকা নিতে পারতেন, সংগঠনের কথা বলে টাকা নিতে পারতেন কিন্তু এই আর্দশবান মানুষটি তা করেন নি। শাহাবুব আলীর সন্তান একবার তাঁকে বলেনঃ ' আব্বু আপনি আমাদের জন্য একটা টিনের বাড়ি তো করতে পারেন।, তখন 
শাহাবুব আলী বলেছিলেনঃ Òগোটা বাংলাই তো আমার বাড়ি।Ó সেদিনের কথার মর্ম সবার বোধগম্য নয়। তিনি ছেড়া সেন্ডেল আর এক পাঞ্জাবী পড়ে মানুষকে বুঝিয়ে দিলেন তাঁর এই নির্লোভ। তাই তিনি সাম্যবাদী আলোরই প্রতীক, নিরঅহংকারী, সাদা মনের মানুষ|
তিনি বলতেনঃ ' Òতোমার কর্ম তুমি করো, কর্মই তোমাকে তোমার জাইগাতে নিয়ে যাবে।Ó

জাসদের এই শ্রদ্ধাভাজন নেতা সমাজতন্ত্রের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রবীণকালে রাজনীতি ছেড়েছেন কিন্তু মানুষের জন্য কাজ করা ছাড়তে পারেন নি। তিনি অনেক কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে রাজনীতি করেছেন; তাই পকেট ভারি করা রাজনীতি অপছন্দ করতেন। শেষ বয়সে হাসানুল হক ইনু এমপি মহোদয় কর্তৃক রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের "রেজিস্ট্রার" চাকুরির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেনঃ 'আমি শেষ বয়সে সামাজিক আন্দোলন ও কর্মকান্ড নিয়ে ব্যস্ত আছি, চাকুরী আর করবো না। সামাজিক দায়বদ্ধতা আমার কাছে বড়।' GKRb ‡kÖô সংগঠK ২০১৩ ইং সালে শাহাবুব আলীর নেতৃত্ব Òসম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনÓ গড়ে তোলেন। তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন, আমৃত্যু সংগঠনটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর এই মহতী উদ্যোগে সাড়া দিয়ে কুষ্টিয়ার বাম দলগুলো কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হত্যা-গুম-ধর্ষণ-দূর্নীতি-নিপীড়ন-বিচারহীনতাঁর সংস্কৃতির বিপক্ষে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তখন শাহাবুব আলী হয়ে উঠে সুশীল সমাজের অভিভাবক এক আদর্শিক বটবৃক্ষ। শাহাবুব আলী তখন আর কোন দলের না বরং তাঁর আর্দশই যে কোন দলের অনুপ্রেরণা। তাই অনেক সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে এক জন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে শেষ বয়সে সামাজিক উন্নয়ন ও মানুষের উপকার করতে থাকেন। তিনি এক সময় Òবাংলাদেশ হিউম্যান রাইটÓ এর কুষ্টিয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তাছাড়াও বিভিন্ন এনজিও ও মানবাধিকার সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন যেমনঃ সেতু, সৃজনী, দিশা। ফেয়ার এর প্রধান উপদেষ্টা হয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ করেছেন। তাছাড়াও তিনি কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নির্বাহী সদস্য ছিলেন। সাহিত্যিক লালিম হকের সাথে তাঁর সখ্যতা ছিল। শাহাবুব আলী একসময় লেখালেখি করতেন। তিনি বিভিন্ন স্থানীয় সংবাদপত্রে, পত্রপত্রিকায়, জার্নালে লিখতেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে কুষ্টিয়ার ১৭টি যুদ্ধের ঘটনা নিয়ে তাঁর একটি স্বরচিত অপ্রকাশিত গ্রন্থ আছে যা তিনি ২০২১ সালে প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। শাহাবুব আলী Òজাতীয় যক্ষা নিরোধ কমিটিÓ, কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। এই সেচ্ছাসেবী সংগঠন আজকের যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের তীব্রতা দেখা দিয়েছে তা থেকে প্রতিরোধ ও জনমনে সচেতনতা তৈরিতে অসামান্য অবদান রাখেন। শাহাবুব আলীর নেতৃত্বে প্রতি মাসে সমাজের নানা শ্রেণির মানুষের সাথে আলোচনা সভা করতেন। সেখানে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন উপস্থিত থাকতেন। যক্ষা ও অনান্য জীবাণু থেকে বাঁচতে মুখে মাস্কে ব্যবহার এবং সাবান দিয়ে হাত ধৌত করা এমন অনেক বিষয়ে গণমানুষকে সচেতন করতেন। জননেতা কার্শেদ আলম প্রয়াত নেতা সম্পর্কে বলেনঃ Òসব মিলিয়ে শাহাবুব আলী একটি রাজনৈতিক, সামাজিক পদচারণায় বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব। আজ আমরা তাকে ছাড়া নেতৃত্বে শূন্যতা অনুভব করছি। শাহাবুব আলী প্রয়াত হওয়ার এক বছর হয়েছে কিন্তু কুষ্টিয়ায় এমন কেউ নেই যে, তাকে আমরা অভিভাবক হিসেবে পাবো। তিনি একজন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী তিনি দেশটাকে এতই ভালোবাসতেন যে অর্থের প্রতি কোন লোভ ছিল না। তাঁর স্বপ্নের এই দেশটাকে মুক্তির জন্য আরেকটা লড়াই প্রয়োজন, সাম্যতাঁর জন্য, জনগণের সুশাসন নিশ্চিতের জন্য, ন্যায্যতাঁর লড়াই, শান্তির জন্য লড়াই করতে হবে। তাঁর স্বপ্ন ছিলবাংলাদেশ হবে একটি শান্তির নীরসেই কারণে তিনি জাসদ রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। তাঁর এই লড়াই এর পেছনে আরেক জন রয়েছেন। তিনি কুষ্টিয়ার শ্রেষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হাদী। শাহাবুব আলী তাকে রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মানত। বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হাদীর প্রধান সহচর ছিলেন শাহাবুব আলী। শামসুল হাদী, শাহাবুব আলীকে সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার জন্য, শোষণ মুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।

তাঁর সেই স্বপ্নকে পূরণ করার জন্য শাহাবুব আলী জাসদের যে বাহিনী ছিল, জনগণের যে বাহিনী জনগণের শক্তি - গণবাহিনী, শামসুল হাদী সহ তাঁর ৭ জন অনচরকে ১৯৭৫ সালের ১১ মে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। শামসুল হাদী ছিলো গণ বাহিনীর প্রধান। শামসুল হাদী মারা যাবার পর গণবাহিনীর দ্বায়িত্ব আসে শাহাবুব আলীর উপর। শাহাবুব আলী তখন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য রাতের অন্ধকারে পায়ে হেঁটে গ্রামের গ্রামে গিয়ে দলকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে গেছেন। শাহাবুব আলী শিক্ষক নেতা ছিলেন, তিনি অসংখ্য সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালিত করতেন, তাঁর উদ্যোগে কিছু গুণী মানুষদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়, যেমনঃ কুষ্টিয়ার প্রখ্যাত লেখক - বীলু কবির, নাট্যকার মাসুম রেজা সহ প্রমুখ।আর একটি কথা না বললেই নয়, কিছুদিন আগে আমরা 'বিপ্লব শতবর্ষ ' পালন করলাম সেখানে সবগুলো বাম দল একত্রিত হয়েছিলাম, সেখানে শাহাবুব আলীকে সভাপতি করে আমরা 'বিপ্লব শতবর্ষ 'পালন করেছি। শাহাবুব আলী রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিজেকে এমন ভাবে গোড়ে তুলেছেন সবাই তাকে আইকন মানত, তিনি ছিলেন সকলের মধ্যমনি, তিনি যেন এক রাজনৈতিক বটবৃক্ষের ছায়া। Ó

'------- কিন্তু এই বিপ্লবী নেতাঁর আত্মতৃপ্তি কখনোই ঘটেনি, তিনি বলতেনঃ Òবাঙালি জাতির জীবনের শ্রেষ্ঠ যে রাজনৈতিক ঘটনা সেটি হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে বহু দিন। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি| বাঙালির সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না তা নিরন্তর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু তাঁর পেছনে যে স্বপ্ন ছিল, গণমানুষের সেইদিন পূরণ হয়েছে কি? ' তাঁর আর্দশে, নীতি নৈতিকতা, নির্মোহ মহান ব্যক্তিত্ব আপামর জনতাকে মুগ্ধ করেছে। শাহাবুব আলীর জীবনদর্শন সমাজতন্ত্রের ঐতিহ্যগত উৎকর্ষের সাথে মিলে যায়।

 তিনি শুধু দেশমাতৃকার জন্য, আমজনতাঁর জন্য, সমাজের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ভেবে গেছেন। নিজের স্বার্থকে ত্যাগ করে, রাজনীতির জন্য নিজের ক্যারিয়ারকে নষ্ট করে অনেক ত্যাগ করেছেন। তাই তাকে ত্যাগী নেতা বলা হয়।অর্থের উপর তাঁর কোন লোভ ছিল না। তিনি একটি ছেড়া স্যান্ডেল আর একটি পাঞ্জাবী পড়ে বছরের পর বছর কাটিয়েছেন। তাই তিনিই সত্যিকারের সমাজতন্ত্রের বাংলার মহান নেতা।

তাঁর শোকসভায় জাসদের মাননীয় চেয়ারম্যান হসানুল হক ইনু, (এমপি) মহোদয়, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুব আলী সম্পর্কে মন্তব্য করেনঃ Òশাহাবুব আলী ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতন, তাঁর হাতে আলোর মশাল ছিল, তাঁর দেখানো পথে আমরা সেই মশাল নিয়ে এগিয়ে যাবো, তিনি ছিলেন এক অকুতোভয় নির্ভীক, নির্লোভী, একজন সংগ্রামী যোদ্ধা বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ছিলেন অত্যন্ত পরোপকারী। শাহাবুব আলীর এই অম্লান আদর্শকে সামনে রেখে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে |Ó শোকবার্তাt গোলাম মহাসীন

( সভাপতি, কুষ্টিয়া জেলা জাসদ)

" কিছু কিছু মৃত্যু হাঁসের পালকের মতো হাল্কা, কিছু কিছু মৃত্যু পাহাড়ের মতো ভারী। শাহাবুব ভাইয়ের মৃত্যু আমদের দলের কাছে, কুষ্টিয়া বাসীর কাছে, গণমানুষের কাছে পাহাড়ের মত ভারী। রাজনৈতিক জীবনে, রাজনৈতিক পথ চলার মাধ্যমে তাঁর কাছে যতটুকু শিক্ষেছি, নিজেকে আয়ত্ত করার চেষ্টা করেছি। শাহাবুব ভাই এক জন আর্দশিক মানুষ ছিলেন, তিনি সময়ের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিলেন। শাহাবুব ভাই এই দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গোড়ে তোলার জন্য নিবেদিত প্রাণ। তিনি ছিলেন আমাদের চলার পথের পাথেও। আমি আমার জীবনে বিভিন্ন আঁকাবাঁকা পথে জীবনের যৌবনকাল, আমরা কৈশোর কাল এবং আজকের জীবন পর্যন্ত, মৃত্যুর আগ মূহুর্তে ও শাহাবুব ভাই আমার জন্য আর্দশ, এবং দেশের আর্দশ। আজকে সমাজে তাঁর যে অভাব তা অপূরোনীয়, আসুন আজকে তাঁর সম্পর্কে যা শুনলেন তাঁর মাধ্যমে নিজেকে শাহাবুব হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করি।


শোকবার্তাt ইকবাল স্যার ( প্রাক্তন অধ্যক্ষ, কুষ্টিয়া সরকারি গার্লস কলেজ) শাহাবুবের জন্ম 1956 সালের জুনে আমার জন্ম 1957 সালের জুনে আমরা 1966 সাল থেকে একে অপরের সাথে জড়িত ছিলাম | শাহাবুব যে সোনার মেডেল পেয়েছিল এটা ছিল ইস্ট পাকিস্তানের কো-অপারেটিভ ডিপার্টমেন্টের একটি রচনা প্রতিযোগিতা | রচনা বিষয় ছিল Òসোনালী আশঁ Ó স্বর্ণ পদক মৃত্যুর আগে আমার সাথে ফোনে কথা হয়েছিল, বলেছিলt Òইকবাল আমি নাসিম ভাইকে নিয়ে একটি লেখা লিখেছি, তোমাকে একটু দেখে দিতে হবেÓ তাঁরপর আর কথা হয়নি এটাই ছিল শেষ কথা | আমি আর কিছু বলবো না| শুধু এইটুকু বলব সে যেই পথ দেখিয়ে দিয়েছিল আমরা যেন সেই পথেই চলতে পারি।


শোকবার্তাt এডভোকেট আব্দুল জলিল (কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধে প্রথম পতাকা উত্তোলনকারী) Òশাহাবুব আলী সম্পর্কে বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হয় |যেহেতু সময় স্বল্প তাই আমি অল্প কথাই বলব | শাহাবুব এর সাথে আমার প্রথম দেখা হয় 1968 সালে জেলায় স্কুলে, স্বর্ণপদক বিজয়ী একটি অনুষ্ঠান হয়| এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হয়, তাঁরপরে তাকে ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত করি |মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের সাথে ছিল |একসাথে ট্রেনিং করেছি, একসাথে যুদ্ধ করেছি | দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের শাসন ব্যবস্থা ও অবকাঠামো সঠিকভাবে গড়ে না ওঠার কারণে যে মুক্তিযোদ্ধা চেতনা নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম, সেটি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই আমরা নতুন করে সংগ্রাম গড়ে তুলি | শাহাবুব সেই সংগঠনের আদর্শকে ধারণ করত ,সেটা আমরা জানি আমি বেশি কথা বলতে চাই না একটা কথা বলতে চাই শাহাবুব একজন দেশপ্রেমী ,একজন মুক্তিযোদ্ধা ,একজন গবেষক, একজন লেখক ,মানুষ একজন মানুষ গড়ার কারিগর, তাঁর কোন লোভ ছিল না একজন নির্লোভ মানুষ , আজকে রাষ্ট্রের কাঠামো সে রকম শাহাবুবের মতো লোক পাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার | আমরা যে জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম, শাহাব মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল, দেশ যদি সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে যায়, তাহলে শাহাবুবের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে| আমি সবাইকে আহ্বান জানাব সেই স্বপ্ন পূরণে সকলেই সহযোদ্ধা হিসেবে থাকবে| আজকে আমি বেঁচে আছি কালকে হয়তো আমি নাও থাকতে পারি কিন্তু দেশ ও জাতির জন্য আমরা যে কমিটমেন্ট করেছিলাম, সেই কমিটমেন্ট থেকে আমরা যেন ফিরে না যায়| শাহাবুব এর মতো লোক ভবিষ্যতে আর পাওয়া যাবে কিনা তাতে আমার সন্দেহ হয় | আমি আমার পরিবারের পক্ষ থেকে সকলের কাছে ধন্যবাদ প্রকাশ করছি এবং আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন এই কামনা করছি"


শোকবার্তাt অধ্যাপক শাহজাহান আলী (মাননীয় উপাচার্য, রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া) Òবীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুব আলীর সাথে আসলে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না |কুষ্টিয়া পৌরসভায় এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি, উনি আমার ডান পাশে বসেছিলেন| আমার সাথে অন্তত পাঁচ মিনিট কথা বলেছেন আমি ভেবেছি এবং অনুধাবন করেছি হয়তো তাকে আর পাওয়া যাবে না, আর হয়তো হবেনা |আমি তাকে অনুরোধ করেছিলাম আমার বিশ্ববিদ্যালয় আসেন, এক কাপ চা খেয়ে যান কিন্তু সে ভদ্রলোক আর আসতে পারলো না তাঁর সাথে দেখা হলো না| আজকের এই শোক সভায় তাঁর জন্য আমার একান্ত কামনা তাঁর জন্য দোয়া করবেন সে যেন বেহেশতে যেতে পারেন |এবং তাঁর ব্যক্তিগত আদর্শকে সামনে রেখে আপনারা আপনাদের ব্যক্তিগত জীবনেও সেই আদর্শকে ধারণ করার চেষ্টা করবেন, আল্লাহর কাছে সেটা কবুল হবে এইটাই কামনা করে আজকের এই সভায় আমার বক্তব্য শেষ করছি|

বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুব আলী দ্রুত অপসারণ সম্পাদনা

 

বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুব আলী নামক নিবন্ধটি উইকিপিডিয়ার দ্রুত অপসারণের বিচারধারা অনুসারে দ্রুত অপসারণের অনুরোধ করা হয়েছে। এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে

আত্মজীবনী, মৌলিক গবেষণা?

যেহেতু নিবন্ধটি উইকিপিডিয়ার নীতিমালা অনুসরণ করেনি, তাই নিবন্ধটি যে কোন মুহুর্তে অপসারণ করা হতে পারে। দয়া করে উইকিপিডিয়ায় সাধারণভাবে গ্রহনযোগ্য নিবন্ধের নীতিমালা দেখুন। আপনি আপনার যুক্তি দেখিয়ে এই ট্যাগের আপত্তি জানাতে পারেন ও ব্যাখ্যা করতে পারেন কেন আপনি বিশ্বাস করেন এই নিবন্ধ অপসারণ করা উচিত নয়। এর জন্য আপনি {{আপত্তি}} এই ট্যাগটি নিবন্ধ পাতায় যুক্ত করতে পারেন এবং নিবন্ধের আলাপ পাতায় আপনি আপনার যুক্তি রাখতে পারেন। তবে দয়া করে আপনার নিজের তৈরি করা নিবন্ধ থেকে এ নোটিশটি সরিয়ে ফেলবেন না।

অনুগ্রহকরে কোন প্রশ্ন থাকলে আপনি আমার আলাপ পাতায় রাখতে পারেন। Miad I Mahbub BD (আলাপ) ১৭:১০, ২৭ নভেম্বর ২০২০ (ইউটিসি)উত্তর দিন