বাংলা উইকিপিডিয়ায় স্বাগতম সম্পাদনা

--অভ্যর্থনা কমিটি বট (আলাপ) ১৬:৩৪, ১১ নভেম্বর ২০১৬ (ইউটিসি)উত্তর দিন

মুহাম্মাদ নুরুজ্জামান সম্পাদনা

মহাসচিব বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজ ৫১, ৫১/এ, পুরানা পল্টন (৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১০০০ মোবা 01944 77 22 23

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজ সম্পাদনা

ইসলামী ছাত্রসমাজ: তারুণ্যদীপ্ত দুরন্ত কাফেলা

আবদুল মাজেদ আতহারী

তিন সেপ্টেম্বর ঊনিশশো উনসত্তর ঈসায়ী সাল। সোনারাঙা হলুদমাখা ঝলমলে নতুন প্রভাত। মহান আল্লাহ নির্ধারিত প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের অন্যান্য দিনের মত একটি দিন হলেও সে ভোরের আঙ্গিক ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, নব মাত্রিক, বৈচিত্র্যময় ও কালজয়ী প্রত্যয়ে বিভোর এবং চাঞ্চল্য মতির আবহের জ্যোতি বিচ্ছুরণে ছিল ব্যতিক্রমী এক ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিবস।

কারণ, তাওহিদ বিশ্বাসী টগবগে, নবতারুণ্যের উচ্ছ্বাসে দূরন্ত পথিক ছাত্র জনতার আদর্শিক অনুশীলনের সূতিকাগার বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজের অস্তিত্ব ঘোষণার ঐতিহাসিক শুভ দিন এটি। হেরার জ্যোতির পরশমাখা, ইসলামী আদর্শের অফুরন্ত আলোকধারায় বিসিক্ত, অপূর্ব আকর্ষণের অলংকারে দীপ্তিময় এ কাফেলার নাম রাখলেন উপমহাদেশে ইসলামী আদর্শের সিপাহসালার থানভী দর্শনের আলোকবর্তিকা চেতনার দীপ্তমশাল, সংগঠক ও সম্মোহনী ব্যক্তিত্বের মূর্ত প্রতীক আল্লামা আতহার আলী রহ.।

শুরু হলো পথচলা, জ্বলে উঠলো চেতনার বহ্নিশিখা, দিশা পেলো দূরপাল্লার নাবিকের ন্যায় তমশাঘেরা অকুল পাথরে অভিষ্ট লক্ষ্যের অভিযাত্রী মুক্তির বিহঙ্গ ছাত্র জনতা। রঙিন সূর্যের মত দীপ্তি ছড়িয়ে ভেসে উঠলো, প্রতিশ্রুতির ঝলক দিয়ে ইসলামী ছাত্রসমাজ দূর আগামীর দৃপ্ত প্রত্যয়ে। সূচিত হলো ছাত্র-জনতার মাঝে নবীন এ কাফেলার সুশীতল ছায়ায় জড়ো হবার উল্লাসমুখর পালা। ঠাঁই নেবার প্রতিযোগিতার আসরে সর্বাগ্রে কাতারবন্দি হলো দেশসেরা মেধাবী ও প্রতীভা ধর শিক্ষার্থীগণ। আন্দোলিত পবনের গতিতেই ছড়িয়ে পড়ল দেশব্যাপী শিক্ষাঙ্গনের ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে মেধাবী ছাত্রদের সংগঠনই ইসলামী ছাত্রসমাজ কালজয়ী এ শ্লোগান।

সংগঠন, আন্দোলন ও সংগ্রামের নবতর পর্যায়ের গতি সঞ্চারিত হলো শিক্ষার্থীদের চলার পথে। উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আবেগের সাথে যুক্ত হলো বুদ্ধিবৃত্তিক প্রক্রিয়ার কৌশলী অভিযান। সামান্য সময়ের মধ্যেই দেশব্যাপী সাংগঠনিক অবস্থান তৈরি হলো ঈর্ষনীয় পর্যায়ে। মাদরাসা, কলেজ ও ভার্সিটির ক্যাম্পাসজুড়েই এখন বিচরণ ইসলামী ছাত্রসমাজের। বাধাহীন গতিতে নিরলস প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত কর্মসূচির আলোকে শুরু হলো আদর্শে নিষ্ঠা, দায়িত্বে সচেতন, কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা সম্পন্ন যোগ্য নেতৃত্ব সৃষ্টির এক মহা কর্মশালা।

যে কর্মশালার আলোকময় পন্থার দূরদর্শী নেতৃত্বের পরশে অতি উন্নত দিক নির্দেশনায় গড়ে উঠলো ব্যাচের পর ব্যাচ, জাতীয় নেতৃত্ব পর্যায় থেকে শুরু করে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার বিশাল ক্ষেত্রের সব অঙ্গনে নেতৃত্ব দেবার মত এক ঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ নেতৃবর্গ। সুদীর্ঘ সাংগঠনিক পথ পরিক্রমার সে আলোকিত কাতারে শামিল হয়ে সৃষ্টি হলো দক্ষ কোরআর-হাদীস বিশারদ, খ্যাতনামা লেখক, বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিক ও সাংবাদিক, প্রথম শ্রেণির আইনজীবি ও ব্যাংকার, আত্মত্যাগী কর্মবীর ও দক্ষ সংগঠক, দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, মাঠ কাঁপানো জনপ্রিয় বক্তা, জাতীয় গীতিকার ও সুরকার, মঞ্চে ঝড় তোলা কণ্ঠশিল্পী, আদর্শবান ব্যবসায়ী, উদাহরণ যোগ্য জাতীয় রাজনীতিক ও সমাজকর্মী, যাদের আকর্ষণীয় অবস্থানে ধন্য আজ মাতৃভূমি।

সুদীর্ঘ সাতচল্লিশ বছরের এ অভিযাত্রায় বাঁধার মুখে পড়েছে বহুবার ছাত্রসমাজ শত্রু-মিত্র উভয় পক্ষের, তবে বাঁক ঘুরিয়েছে ঠিকই থেমে যায়নি চলার পথে। প্রচণ্ড প্রতিকুলে ঝড়ের কবলে পড়েছে, তবো শির তুলে বুকটান করে দাঁড়িয়েছে—কিন্তু পিছপা হয়নি। শত্রুর আঘাতে রক্ত ঝরেছে কিন্তু ইসলামী আদর্শের স্বার্থে প্রতিঘাত করেনি। ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার অগ্রযাত্রায় এ সবই নিয়তির অমোঘ বিধান হিসাবে বরণ করে নিয়েছে অমলিন হাসি মুখে।

নিষ্ঠাবান আদর্শের মূর্তপ্রতীক, যোগ্যতার মাপকাঠিতে অতুলনীয়, সাংগঠনিক তৎপরতায় অসামান্য দক্ষতার স্বাক্ষর রাখায় অনুকরণীয়, সেসব নেতৃবৃন্দকে জাতীয় পর্যায়ে সুপ্রতিষ্ঠিত করার পরিবর্তে অবহেলা ও অনাদরের পাল্লাই ভারি। জানি না কোন অশুভ ইংগিতেই আজ সম্ভাবনাময় একঝাঁক নেতা নিজস্ব পরিমণ্ডলেই পথ হারিয়ে দ্বিধা-বিভক্তির নিঃসঙ্গ অঙ্গনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে। যার কারণে আশার প্রদীপ ফ্যাকাশে রূপ ধারণ করে ক্ষতি হচ্ছে জাতির অপূরণীয়।

কেন তোমাদের এ অভিমান? কেন তোমাদের খণ্ডিত অবস্থান? কেন তোমরা ঐক্যের মোহনায় যাবার শপথ ভেঙে পিছপা হয়ে নির্বাক-হত উদ্যম কেন এত পিছুটান? কেন তোমাদের শাণিত সাংগঠনিক প্রতিভা নিস্তেজ-নিষ্ক্রিয়? কেন তোমাদের যোগ্যতা, দক্ষতা, বিকাশমান কর্মস্পৃহা থেকে জাতি দুঃখজনকভাবে বঞ্চিত? কেন তোমাদের স্বপ্নঘেরা নেতৃত্বের পুষ্পিত আসন উপবেশন বঞ্চনায় শ্রী বিহীন শূন্য? বিজয়ের মন্ত্র পাঠ করে কেন আত্মভোলা হয়ে পরাজিতের স্বাদ নিয়ে পরিতৃপ্ত? ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার শপথে বলিয়ান, চেতনার দীপ্তমশাল লোভনীয় একঝাঁক নেতৃবৃন্দের জন্য এহেন নির্লিপ্ত অবস্থান কি আদৌ মানান সই? নির্দ্বিধায় বলা যায় অবশ্যই হতে পারে না মানানসই ও শুভনীয়।

সুতরাং ইসলামী ভ্রাতৃত্বে বন্ধনে চির আবদ্ধ। সাংগঠনিক চেতনার অটুট একতায় শৃংখলিত, নব প্রজন্মের চেতনার উৎস হে কাণ্ডারি! অগ্রপথিক রাহবার হয়ে ফিরে এসো ঐক্যের মোহনায়। ভুলে যাও মান অভিমান, নেতৃত্বের কলুষিত মোহ হউক চির অবসান, দিশারীর জ্যোতির্ময় পরশে আর একবার জেগে উঠুক নিষ্প্রভ ঘুমন্ত দীপশিখা, হউক নবতর উত্থান, পদদলিত হউক অনৈক্যের ঘৃণিত জিন্দান।

আশির দশকের ঐতিহ্যময় একতার মন্ত্র পাঠ করো আর একবার, স্মরণ করো সোনালি অতীত। বিকশিত হউক আত্মপরিচয় নতুন আবহে, নবতর পদক্ষেপে শুরু হউক আবারো সোনারাঙা অগ্রযাত্রা।

এ প্রত্যাশা কালের পরিক্রমায় যারা আজ ছাত্রসমাজের কর্ণধার তাদের। ইসলামী আন্দোলনের পরিমণ্ডলে ছাত্রসমাজকে নিয়ে যারা স্বপ্নবোনে সেসব হিতাকাঙ্ক্ষী মহৎপ্রাণ মুসলিমসমাজের। তাই আর কাল বিলম্ব নয়, এখনই শুরু হউক প্রস্তুতির পালা। প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজের সাত চল্লিশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে তার সাবেক নেতা কর্মীদের পক্ষ থেকে অনুকূল সাড়া পাবার গভীর প্রত্যাশায় এবং অপলক প্রতিক্ষায় আশার আলোর পাণে পথচেয়ে পান্থ পথিক।