বাংলা উইকিপিডিয়ায় স্বাগতম সম্পাদনা

জীবনের বাস্তবতা সম্পাদনা

সব দুঃখ-কষ্ট যে ন্যাচারাল, বিষয়টি এমন নয়। কিছু কিছু দুঃখ-কষ্ট আমরা নিজেরাই নিজেদের ভুলে ভোগ করে থাকি। বিশেষত কারো সাথে সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে ভুলের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। একতরফা আকাশ-কুসুম কল্পনা করে, আগবাড়িয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে বিনিময়ে শুধু শুধু দুঃখ-কষ্টকে সঙ্গি করে নিই। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর যার মাশুল দিতে হয় আমাদের। কোন কোনটার মাশুল আজীবনই দিয়ে যেতে হয়। . রং নাম্বারের সূত্র ধরে মোবাইলফোনে বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে কথা হল। হয়তো মেয়েটির ভয়েস অনেক মিষ্টি বা ছেলেটির কথা অনেক গোছানো। কেউ কাউকে দেখছে না, শুধুই শুনছে। ঠিক কথা বলতে বলতে শুরু করে দিল কল্পনা। যার কণ্ঠস্বর এত মিষ্টি, না জানি সে দেখতে কত সুন্দর! যার কথা এত গোছানো, না জানি সে দেখতে কত সুদর্শন! এভাবে কল্পনার রাজ্যে ঘুরতে ঘুরতে চোখ-কান-নাক-ঠোঁট-পেট-পিঠ কিছুই বাদ যায় না!! দিন-রাত অবধি কথা হয়, কল্পনা বাড়ে, আবেগ বাড়ে, মায়া বাড়ে, দুর্বলতা বাড়ে। শেষমেশ দেখা যায়, যা ভাবা হয়েছে, বাস্তবে তার ধারেকাছেও নেই! অথচ ততদিনে মন দেয়া-নেয়া হয়ে গেছে, এমনকি মনের সম্পর্ক ছাড়িয়ে শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়ে গেছে। . ফেসবুকে বিপরীত লিঙ্গের কারো ছবি দেখেহয়তো একটুখানি ভালো লেগেছে। কিংবা লেখালেখি করে এমন কারো লেখা পড়ে একটা ভালো লাগা তৈরি হয়েছে। এই ভালো লাগাকে কেন্দ্র করে শুরু হল চ্যাটিং, মেসেঞ্জার, ভাইবার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, স্কাইপিতে কথা বলা। দিনেদিনে কথা বাড়ে, কল্পনা বাড়ে, আবেগ বাড়ে, মায়া বাড়ে, দুর্বলতা বাড়ে। ভার্চুয়ালি ভাবতে ভাবতে একজন আরেকজনকে জীবনসঙ্গি বানিয়ে ফেলে, বাবুর জন্ম দিয়ে ফেলে, বাবুদের নামও ঠিক করে ফেলে। বেশিরভাগের ফলাফল, জিরো; একবুক শূন্যতা। উপরন্তু কারো কারো শরীরটা যায়, কারো কারো টাকাপয়সা যায়। যেখানে রিয়েল লাইফে কল্পনা আর বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়া যায় না, সেখানে ভার্চুয়ালি কল্পনা বা আবেগের বশবর্তী হয়ে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া তো নিজেই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনার নামান্তর! . চলতে-ফিরতে রিয়েল লাইফেও কারো প্রতি ভালো লাগা অনুভূত হলে, শুরু হয়ে যায় কল্পনা। তার সম্পর্কে কোন খোঁজখবর নেয়ার আগেই মনের ভেতর জন্ম নেয় একতরফা ভালোবাসা। যাকে নিয়ে ভাবা হচ্ছে, কল্পনা করা হচ্ছে, হয়তো ইতিমধ্যেই সে অন্য কারো মনের রাজ্যে বসবাস করা শুরু করে দিয়েছে। আবার ভালো লাগার মানুষটি হয়তো কথা বলছে, হাসছে, মিশছে। এসবই করছে সে খুব স্বাভাবিক একটা চিন্তাচেতনা থেকে। গভীরভাবে কিছুই ভাবছে না, প্রেম-ভালোবাসার কথা তার মনের মধ্যেই নেই। কিন্তু তার এই কথা বলা, হাসি, মেশাকে ‘আমার প্রতি তার দুর্বলতা আছে' কিংবা ‘আমাকেও সে ভালোবাসে' ধরে নিয়ে ছক এঁকে নেয়, বহুদূর হেঁটে নেয়। একটা সময়ে যখন বিপরীত লিঙ্গের মানুষটি বলে দেয়, আমি তো তোমাকে নিয়ে এমনকিছু ভাবি না, তোমাকে আমি ভালোবাসি না, তখনই মাথার ওপর আকাশটা ভেঙে পড়ে! . কারো সাথে সম্পর্কে জড়ানোর আগে তার ব্যাপারে মৌলিক ধারণা নিতে হবে। পারস্পরিক ভালো একটা বোঝাপড়া থাকতে হবে। খোলামেলা কথাবার্তা বলতে হবে। তুমি তাকে নিয়ে যা ভাবছ, সে তোমাকে নিয়ে তা ভাবছে কি না, সেটা নিশ্চিত হতে হবে। ভার্চুয়ালি হলে তো আরো ব্যাপক খোঁজখবর নিতে হবে। শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে, তার ভার্চুয়াল লাইফ আর রিয়েল লাইফ এক কি না? তবেই সামনে এগোতে হবে। আগে বোঝাপড়া না করে, ধারণা পরিষ্কার না করে, নিজে নিজে কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করলে, মায়া বিলিয়ে দিলে, জীবনসঙ্গি করার পরিকল্পনা করলে বিনিময়ে দুঃখ-কষ্টই জুড়বে শুধু। অথচ যাকে কেন্দ্র করে তোমার দুঃখ-কষ্টের অবতারণা, তাতে তার কিছুই যাবে-আসবে না তখন, কিছুই না। মাঝখানে তোমার ভুলে তুমি হারিয়ে ফেলবে জীবনের সোনালি দিনগুলো! আজীবন বয়ে বেড়াবে না পাওয়ার এক তীব্র যন্ত্রণা! যার অংশীদার তুমি ছাড়া কেউ হবে না, কেউ-ই না!!

লেখা: বেলাল উদ্দিন বেলাল উদ্দিন (আলাপ) ০৮:৫৪, ২১ নভেম্বর ২০১৭ (ইউটিসি)উত্তর দিন