সত্যেশ্বর মহাদেব জীউ মন্দির -

সত্যেশ্বর শিব মন্দির, মাড়তলা, ডেবরা

সত্যেশ্বর মন্দিরের বর্ণনা সম্পাদনা

ডেবরার সত্যপুরের মাড়তলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে পুরোনো মাকড়া পাথরের দেউলটির নাম শ্রী শ্রী সত্যেশ্বর মহাদেব জীউ মন্দির। বলা হয়ে থাকে এই দেবতার নামেই গ্রামের নাম হয়েছিল সত্যপুর। সত্যেশ্বর মন্দিরটি খাঁটি ওড়িশী শিখর মন্দিরের নিদর্শন। মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। মূল দেউলটির ওপর নবরথ বিভাজন করা হয়েছে। সামনের দিকে সমতল ছাদের ( দালান বারান্দা ) নির্মাণ সংযোজিত হয়েছে পরবর্তীকালে । কিন্ত মূল মন্দিরটি তৈরী হয়েছিল জগমোহন ছাড়াই । তার বাইরের দেওয়ালে একটি ফলকে লেখা রয়েছে - "আনুমানিক খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে শ্রীশ্রীঁসত্যেশ্বর মহাদেব জীউ আদেশক্রমে তাঁহার সেবাকল্পে মেদিনীপুর জেলাস্থ সাহাপুর পরগণা রাজা মহামান্য মুকুট নারায়ণ রায় বাহাদুরের অনুরোধে বাবার স্বপ্নাদেশে সত্যপুর প্রকাশিত মাড়তলা গ্রামে হুগলী জেলার উত্তর পাড়াস্থ কাশ্যপ গোত্রজ চটোবংশোদ্ভব যদুনন্দন সাংখ্য বেদান্ত তীর্থ মহাশয় আগমন করিয়াছিলেন। বর্তমানে তাঁহার বংশধরগণ রাজদত্ত চক্রবর্তী উপাধিপ্রাপ্ত মন্দির পুনঃসংস্কারের স্মারক হিসাবে এই ফলক স্থাপিত হইল। বাং ৭ই আশ্বিন ১৩৯৬/ইং ২৪শে সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ / শ্রীশ্রীঁসত্যেশ্বর মহাদেব জীউর সেবাইতবৃন্দ / মাড়তলা , মেদিনীপুর।" তবে তারাপদ সাঁতরা মহাশয় এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাকাল সতেরো শতক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মন্দিরের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে প্রচলিত আছে যে রাজা মুকুটনারায়ণের সময়ে দুর্গম বেতবনকে মন্দির চত্বরে রূপান্তরিত করা হয়। মন্দিরের গায়ে অপর একটি ফলকে বলা হয়েছে - "মন্দির পুনঃসংস্কারক / নয়নচাঁদ কামিল্যার পুত্র শ্রী হংসধ্বজ কামিল্যা / পৌত্রগন , শ্রী অনিল কৃষ্ণ কামিল্যা শ্রী বিমল কৃষ্ণ কামিল্যা / শ্রী ভবানীশঙ্কর কামিল্যা / সাকিন পাইকপাড়ি / সন ১৩৩৮ সাল , মাহ বৈশাখ।" বিখ্যাত মন্দির গবেষক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ ডেভিড ম্যাকাচ্চন এই মন্দিরের সম্পর্কে যে নোট লিখেছিলেন- "MAROTALA (Midnapore : Debra), Satyesvara, laterite : largly plain + inlaid images." গবেষক তারাপদ সাঁতরা "পুরাকীর্তি সমীক্ষা: মেদিনীপুর" গ্রন্থে লিখেছেন- "ওড়িশা স্থাপত্যশৈলী প্রভাবিত এ মন্দিরের সম্মুখভাগে বেঁকির নিচে গন্ডী অংশে প্রায় ৩'৩" (১ মি.) উচ্চতাবিশিষ্ট পাথরের এক বিষ্ণুমূর্তি নিবন্ধ রয়েছে।" মন্দিরের গন্ডী অংশে প্রতিকৃতি মন্দির ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। চূড়ার মস্তক বিভাগে বেঁকি, আমলক, খপুরি, কলস ও ত্রিশূল উপস্থিত। দেউলটির গাত্র ভাস্কর্যে - গরুড়, সিংহ, সিংহাসনে রামসীতা , দধিভান্ডে শ্রীকৃষ্ণের হস্তপ্রবেশ, জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা, বংশীবাদক কৃষ্ণ, সন্তান কোলে জননী , নারী পুরুষ মূর্তি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । এই মন্দির চত্বরে ত্রিরথ কাঠামো যুক্ত আটচালা রীতির শিবের মন্দির বর্তমান। দক্ষিণমুখী এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠালিপি থেকে জানা যায় এটি ১৮২৯ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল। মন্দিরের পরিচারক ছিলেন সার্থক পাল এবং কারিগর কৃষ্ণপ্রসাদ। মন্দিরের গায়ে অলংকরণ নেই। ১৯৬১ খ্রীষ্টাব্দের census of India, vol16 তে সত্যপুর এলাকাতে ( মৌজা ২৬০ ) বৈশাখে পনেরো দিন ব্যাপী গাজন উৎসব ও দুহাজার জনসমাগমের কথা উল্লেখ রয়েছে। বর্তমানেও এখানে গাজন ও মেলা অনুষ্ঠিত হয় ।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

সত্যেশ্বর মন্দির https://midnapore.in/article/Satyaswar-Shiva-Temple-Marhtala-Paschim-Medinipur.html?fbclid=IwAR2L0tSBNKjW1h9vi9NVfCQVCRNZBYJjVJFLFs7qK6rVEN_0m9F2aeceWC0