Muid Hasan Enar
হেরা গুহায় হতাশ মনে বসে থাকা সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানুষটির(সঃ)কাছে যেদিন জিব্রিঈল(আঃ) আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে বার্তা নিয়ে আসলেন Revolution টা সেখান থেকেই শুরু । এক পড়তে না পারা মানুষের(সঃ) কাছে বানী আসলো , “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন” (সূরা আলা’কঃ১) । স্কলার এবং ভাষাবিদদের মতে এখানে আরবী শব্দ ‘ইকরা’ মানে শুধুমাত্র চোখ দিয়ে পড়া নয় বরং চোখ দিয়ে পড়ার সাথে সাথে অন্তর দিয়ে উপলব্ধি করাকে বোঝায়।আর সেই উপলব্ধিবোধই দূর করে নবী(সঃ) এর হতাশা আর অন্ধকারে থাকা পৃথিবী পায় আলোর সন্ধ্যান।
Islam came to remove people from sadness and depression...
একজন মানুষের দুঃখিত বা বিষণ্ণ থাকার পেছনে তিন ধরনের কারন থাকতে পারে ,প্রথমত হতে পারে অতিতের কোনো ভুলের কারনে , দ্বিতীয়ত বর্তমানের অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতির জন্য তৃতীয়ত ভবিষ্যতে ঘটতে যাচ্ছে এমন কোনো ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করে কূলকিনারা খুঁজে না পাওয়ায় । মজার বিষয় হচ্ছে ইসলাম এই তিন ধরনের ব্যাপার নিয়েই ডিল করে।
অতিতে বড় ধরনের কোনো ভুল হয়ে গেছে ?অনুশোচনায় কুড়েকুড়ে খাচ্ছে ?কিংবা আল্লাহ্ তায়ালার কাছে মাপ চাওয়ার মুখটা পর্যন্ত নাই ? সেক্ষেত্রে আলহামদুলিল্লাহ এই জিনিসটা জানা খুব দরকার যে আল্লাহ্ যত বড় ক্ষমাশীল, আমাদের ততটা গুনাহ করারও সাধ্য নেই। শুধু যেটা করতে হবে তা হচ্ছে “তওবা”।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “তারা কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোনো মন্দ কাজে জড়িয়ে নিজের উপর জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে । আল্লাহ্ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন ? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য অহংকার প্রদর্শন করে না আর জেনেশুনে তাই করতে থাকে না”(সূরা আলে-ইমরানঃ ১৩৫)। এর ঠিক কিছু আয়াত পরেই আল্লাহ্ পাক বলেন, “আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না ; যদি তোমরা মুমিন হও তবে তোমরাই জয়ী হবে” ।
আর কিছু লাগে !!...?
এবার আসা যাক বর্তমানের হতাশা নিয়ে ...
নিজের সত্ত্বাটাই হারিয়ে গেছে? ভয়ংকর কোনো পাপের জালে আটকে গেছে জীবনটা ? কিংবা একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় টালমাটাল ?
এক্ষেত্রে ধৈর্যটা একটা বিরাট হাতিয়ার... আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধনপ্রান এবং ফলের(ফসলের) লোকসান দ্বারা পরীক্ষা করব; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।”(সূরা বাকারাঃ ১৫৫)।
আর ধৈর্যধারনের পর যেতে হবে অ্যাকশনে , আল্লাহ্ পাকের উপর ভরসা করে ফার্স্ট স্টেপটা নিতে হবে বান্দাকেই...
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণীত ,রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেছেন, “ আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেনঃ আমার প্রতি বান্দার ধারনা মুতাবিক আমি তার সঙ্গে আচরন করি । সে যেখানেই আমাকে স্মরণ করে আমি তার সঙ্গে আছি। মরু বিয়াবানে তোমাদের কেউ হারানো পশু পাওয়ার পর যে খুশি হয় আল্লাহ্ তায়ালা বান্দার তওবার পর এর থেকেও অধিক খুশি হলো ।যদি কেউ এক বিঘত পরিমান আমার দিকে এগিয়ে আসে তবে আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। যদি কেউ এক হাত পরিমান আমার দিকে এগিয়ে আসে তবে আমি এক গজ পরিমান তার দিকে এগিয়ে যাই। যদি কেউ আমার দিকে হেটে আসে তবে তার দিকে দৌড়ে যাই।”(মুসলিম)।
সমস্যা হচ্ছে প্রচণ্ড হতাশায় জাপটে ধরলে কখনো কখনো আল্লাহ্ পাকের অসংখ্য রহমত গুলো আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় ,উপলব্ধি করতে পারি না আলহামদুলিল্লাহ কতো ভালো রেখেছেন আল্লাহ্ পাক আমাদের। তখন যাস্ট অসংখ্য রহমত থেকে ঠান্ডা মাথায় যে কোনো একটি পিক করে আল্লাহ্ পাকের শুকরিয়া আদায় করতে পারলেই হয়ে যাবে আল্লাহর দিকে এগিয়ে যাওয়া... বাকিটা আল্লাহ্ ভরসা...
আর কেউ অতিত আর বর্তমানকে সামলে নিতে পারলে ভবিষ্যতের ব্যাপারটা অটোমেটিক ইজি হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ । বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে । নবী(সঃ) দোয়া করতেন “হে আল্লাহ্! হে অন্তর সমূহের পরিবর্তন আনায়নকারী ! আমার অন্তরকে আপনার ধর্মের উপর স্থির রাখুন...”
পবিত্র কুরআনে উল্ল্যেখ আছে, “ হে আমাদের পালনকর্তা ! সরলপথ প্রদর্শনের পর আমাদের অন্তরকে বক্র করে দিবেন না.........”(সুরা আল-ইমরানঃ৮)
একবার হযরত আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ(সঃ) এর সওয়ারীতে তার পেছনে বসে ছিলেন। ঐ সময় রসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেন, “ হে বালক! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি। ............ কিছু চাইতে হলে আল্লাহর কাছেই চাবে । সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে তার কাছেই করবে । সমস্ত উম্মত মিলিত হয়ে যদি তোমার উপকার করতে চায় এবং তা যদি আল্লাহ্ না চান তবে তারা তোমার সামান্যতম উপকারও করতে পারবে না । অনুরুপভাবে সবাই মিলিত হয়ে যদি তোমার ক্ষতি করতে চায় তবে তারা তোমার ক্ষতি করতে পারবে না , তোমার ভাগ্যে আল্লাহ্ যা লিখে রেখেছেন তা ছাড়া............” (তিরমিজী ও আহমদ)
আর তারপরেও ভবিষ্যত নিয়ে খুব বেশি অনিশ্চয়তায় ভুগলে উদ্বিগ্ন না হয়ে আল্লাহ পাকের উপর আস্থা রাখা উচিৎ , ধর্ম কর্মের ব্যাপারে উদাসীন না হয়ে বরং সেই মহান স্বত্বাকে ভয় করে চলা উচিৎ। আর তাতে ডাবল লাভ......। আল্লহ পাক বলেন, “ ......যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দিবেন । আর আল্লাহ্ তার ধারনাতীত উৎস থেকে দান করবেন রিজিক; যে ব্যাক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, আল্লাহ্ তার ইচ্ছা পূরন করবেনই , আল্লাহ্ সব কিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।” (সূরা তালাকঃ ২,৩)