আবদুল করিম (বীর বিক্রম) সম্পাদনা

মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক সম্পাদনা

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

আবদুল করিমের জন্ম চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশ উপজেলার গাছবাড়িয়ায়। তাঁর বাবার নাম আমদু মিয়া এবং মায়ের নাম বিলকিস খাতুন। তাঁর স্ত্রীর নাম মঞ্জুমান করিম। তাঁদের পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে।

কর্মজীবন সম্পাদনা

আবদুল করিম চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। ১৯৭১সালে তাঁর পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিদ্রোহ করে যোগ দেন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরের সিমনা সাব-সেক্টরে। পরে এস ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সরাইল দখলের পর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে এগিয়ে যেতে থাকে আশুগঞ্জ অভিমুখে। ৮ ডিসেম্বর তাঁরা একই সঙ্গে আশুগঞ্জের পূর্ব দিকে আজবপুর ও দুর্গাপুরের কাছে পৌঁছে। সেখানে পৌঁছার পর তাঁরা জানতে পারে, আশুগঞ্জ থেকে পাকিস্তানিরা সরে গেছে। ৯ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে মিত্রবাহিনীর অগ্রগামী একটি দল হঠাৎ আশুগঞ্জে এগিয়ে যায়। কিন্তু তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফাঁদে পড়ে। আশুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০ গজের মধ্যে পৌঁছামাত্র পাকিস্তান সেনাবাহিনী সর্বশক্তি দিয়ে আক্রমণ করে। ওই আক্রমণ ছিল অনভিপ্রেত। মিত্রবাহিনীর ওই দল এ ধরনের আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। কারণ, তাদের বলা হয়েছিল, আশুগঞ্জ শত্রুমুক্ত। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। চারটি ট্যাংক ধ্বংস ও ১২০ জন সেনা শহীদ হন। মিত্রবাহিনীর এই দলটির অক্ষত পাঁচটি ট্যাংক পদাতিক সেনাদের পশ্চাদপসরণের সুবিধার্থে নিজেদের নিরাপত্তা বিপন্ন করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। কারণ, তারা শহীদ ও আহতদের ফেলে পশ্চাদপসরণে মোটেও আগ্রহী ছিল না। তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিজেদের সাময়িক সাফল্যে মাত্রাতিরিক্ত উৎসাহী হয়ে ওঠে। তারা নিজেদের সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে বেরিয়ে পাল্টা-আক্রমণ চালায়। এ সময় মুক্তিবাহিনীর ওপর নির্দেশ আসে, মিত্রবাহিনীর সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার। নির্দেশ পেয়ে তাঁরা দ্রুত দুর্গাপুর গ্রামে অবস্থান নেন। তখন মিত্রবাহিনীর আক্রান্ত সেনারা পশ্চাদপসরণ করে সেখানে আসছিলেন। তাঁদের পেছনে ধাওয়ারত পাকিস্তানি সেনাদের দল। আবদুল করিমসহ মুক্তিযোদ্ধারা দেখতে পেলেন, ধাওয়ারত পাকিস্তানি সেনা হাজারের ওপরে। তারা লাইন ধরে সামনে ছুটে আসছে। এর আগেই মিত্রবাহিনীর সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় পশ্চাদপসরণ সম্পন্ন করেছেন। পাকিস্তানি সেনাদের অগ্রসরমাণ দল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠল মুক্তিযোদ্ধা সবার অস্ত্র। মেশিনগান, এলএমজি, রাইফেলসহ অন্যান্য অস্ত্রের একটানা গুলিবর্ষণের শব্দে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা দুর্গাপুর। পাকিস্তানি সেনারা এ ধরনের প্রতিরোধ আশা করেনি। হতভম্ব পাকিস্তানি সেনাদের অনেকে দিগিবদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। তারপর সেখানে ভয়াবহ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আবদুল করিম তাঁর দল নিয়ে অসাধারণ বীরত্ব ও সাহস প্রদর্শন করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিপুল ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে নিজেদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য হয়

বীর বিক্রম উপাধি সম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য আবদুল করিমকে বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ২৮।

বর্তমানে সম্পাদনা

স্বাধীনতার পর অনারারি ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে অবসর নেন। এখনও অবসরে অাছেন।