উচ্চগতির ইন্টারনেটকে বলা হয় ব্রডব্যান্ড। বর্তমানে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে ধরা হয় ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের হারকে। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন এরমতে, ব্রডব্যান্ডে গণমানুষের সংযোগ জীবনযাপনের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষা, উদ্যোগ, গবেষণা, আউটসোর্সিং, যোগাযোগ, নাগরিক সেবাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন ব্রডব্যান্ডের বিকল্প নেই। .

ব্রডব্যান্ডের মাপকাঠি সম্পাদনা

দেশে ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো ব্রডব্যান্ডের সংজ্ঞায় ১২৮ কেবিপিএস গতি ঠিক করে দেওয়া হয়। জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা ২০০৯-এ সর্বনিম্ন ২৫৬ কেবিপিএস গতিকে ব্রডব্যান্ড হিসেবে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ২০১৩ সালে এই গতি বাড়িয়ে ১ এমবিপিএসে নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ন্যূনতম ৫ এমবিপিএস গতি না হলে সেটি ব্রডব্যান্ড হিসেবে বিবেচিত হবে না। এই সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে দ্য স্টেট অব ইন্টারনেটে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। এ দেশের গ্রাহকরা গড়ে ২২.২ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। .

ব্রডব্যান্ড ও বাংলাদেশ সম্পাদনা

ব্রডব্যান্ড ব্যবহারে দক্ষিণ এশিয়ায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান, নেপাল, আফগানিস্তান, এমনকি ভারত-এর চেয়েও এগিয়ে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (এসক্যাপ) তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সাম্প্রতিক প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। প্রতিবেদনটিতে আছে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জনে ২.৪ জন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করে আর ভারতে করে ১.৩ জন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাব অনুযায়ী, ফিক্সড ব্রডব্যান্ডের সংযোগ ৩৭ লাখ ৯৪ হাজার। এ ছাড়া ওয়াইম্যাক্স অপারটরগুলোর গ্রাহক ৯৭ হাজার। এগুলোও এক ধরনের ব্রডব্যান্ড সংযোগ। বর্তমানে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কম্পানির (বিএসসিসিএল) ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ক্ষমতার একটি সাবমেরিন কেবল সংযোগ রয়েছে, যার মধ্যে ১৩০ জিবিপিএস ব্যবহৃত হচ্ছে। জানুয়ারি মাসের মধ্যে বিএসসিসিএল আরো ১৩০০ জিবিপিএস ক্ষমতার দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সংযোগ পেতে যাচ্ছে। সেই হিসাবে সারা দেশে প্রয়োজনীয় সংযোগ দিয়েও ব্যান্ডউইডথ উদ্বৃত্ত থাকবে। .

বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ সম্পাদনা

বর্তমানে দেশে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড সংযোগের আওতায় আছে ৭ শতাংশ মানুষ। সরকারের নতুন টেলিযোগাযোগ নীতিমালায় (মন্ত্রিসভায় খসড়া অনুমোদিত) ফিক্সড ব্রডব্যান্ডকে ২০১৮ সালের মধ্যে ২০ শতাংশে, ২০২১ সালের মধ্যে তা দ্বিগুণ করে ৪০ শতাংশে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সব ইউনিয়ন পর্যায়ে তারবিহীন ব্রডব্যান্ড সেবা দিতে ২০ শতাংশ বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠান উচ্চগতির অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) ‘অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট অ্যাট উপজেলা লেভেল’ প্রকল্পের আওতায় ৬৪ জেলার ২৯০টি উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার কেবল স্থাপন শেষ।

এ ছাড়া ‘ইনফো সরকার ৩’ প্রকল্পে দেশে সাড়ে আট হাজার কিলোমিটার ফাইবার অপটিক কেবল স্থাপিত হচ্ছে। গ্রাম পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ছড়িয়ে দেওয়াই এর অন্যতম লক্ষ্য। তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।