বেনিনের ইতিহাস

ইতিহাসের বিভিন্ন দিক

ঔপনিবেশিক বেনিন (সাবেক রিপাবলিক দু দাহোমি/দাহোমি প্রজাতন্ত্র) সম্পাদনা

দাহোমি ফরাসি উপনিবেশ ছিল এবং ১৯০৪ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ফরাসি পশ্চিম আফ্রিকার অংশ ছিল। ফরাসিদের অধীনে কোতোনৌ এ একটি বন্দর এবং রেলপথ নির্মিত হয়েছিল। রোমান ক্যাথলিক মিশননারিরা স্কুল সুবিধা সম্প্রসারিত করেছিল। ১৯৪৬ সালে দাহোমি একটি বৈদেশিক অঞ্চলে পরিণত হয় সাথে তার নিজস্ব সংসদ স্থাপিত হয় এবং ফরাসি জাতীয় পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করে। ১৯৫৮ সালের ৪ ডিসেম্বর এটি দাহোমি প্রজাতন্ত্রে পরিনত হয়। ১৯৬০ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে সামরিক অভ্যুত্থানে একের পর এক সরকার পরিবর্তন ঘটে। এর মধ্যে সর্বশেষে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কঠোর মার্কসবাদ-লেনিনবাদ মতাবলম্বী একটি সরকারের প্রধান হিসাবে মেজর ম্যাথিউ কেরেকৌকে ক্ষমতায় বসানো হয়। ১৯৭৫ সালের মধ্যে দাহোমি প্রজাতন্ত্রের নাম পরিবর্তন করে গণপ্রজাতন্ত্রী বেনিন রাখা হয়। বেনিনের গণ বিপ্লবী দল নব্বইয়ের দশকের শুরু পর্যন্ত পূর্ণ ক্ষমতায় ছিল। ফ্রান্স ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তি দ্বারা প্রণোদিত হয়ে কারাকৌ একটি জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন যা একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রবর্তন করে এবং রাষ্ট্রপতি ও আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে চূড়ান্ত বিজয়ী হয় কারাকৌর প্রধান প্রতিপক্ষ প্রধানমন্ত্রী নিকেফোর সোগ্লো। সোগ্লোর সমর্থকরাও জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে আর এভাবেই বেনিন প্রথম আফ্রিকার দেশ হিসাবে সফলভাবে স্বৈরশাসন থেকে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন করে।

ঔপনিবেশিক উত্তর বেনিন সম্পাদনা

১৯৬০ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে সামরিক অভ্যুত্থানে একের পর এক সরকারের অনেক পরিবর্তন ঘটে।[১] এর মধ্যে সর্বশেষে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কঠোর মার্কসবাদ-লেনিনবাদ মতাবলম্বী একটি সরকারের প্রধান হিসাবে মেজর ম্যাথিউ কেরেকৌকে ক্ষমতায় বসানো হয়।[২] ১৯৭৫ সালের মধ্যে দাহোমি প্রজাতন্ত্রের নাম পরিবর্তন করে গণপ্রজাতন্ত্রী বেনিন রাখা হয়।[৩] বেনিন গণ বিপ্লবী দল নব্বইয়ের দশকের শুরু পর্যন্ত পূর্ণ ক্ষমতায় ছিল। ফ্রান্স ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তি দ্বারা প্রণোদিত হয়ে কেরেকৌ একটি জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করেন যা একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রবর্তন করে এবং রাষ্ট্রপতি ও আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে চূড়ান্ত বিজয়ী হয় কারাকৌর প্রধান প্রতিপক্ষ প্রধানমন্ত্রী নাইসফোর সোগ্লো। সোগ্লোর সমর্থকরাও জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।[৪] আর এভাবেই বেনিন প্রথম আফ্রিকার দেশ হিসাবে সফলভাবে স্বৈরশাসন থেকে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন করে।[৫]

১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে সোগ্লোর রাজনৈতিক রথ পার্টি দে লা রেনেসাঁস দু বেনিন বৃহত্তম একক দল হিসাবে নির্বাচিত হয় তবে সামগ্রিকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সক্রিয় রাজনীতি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণকারী প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি কেরেকৌয়ের সমর্থকদের দ্বারা গঠিত দলের সাফল্য তাকে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের উভয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সফলভাবে নির্বাচিত করে।[৪]

২০০১ সালের নির্বাচনের সময় অনিয়ম এবং সন্দেহজনক আচরণের অভিযোগ এনে প্রধান বিরোধী দলের প্রার্থীরা দ্রুত নির্বাচন বয়কট করে। প্রথম দফা রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পর চার শীর্ষস্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন ম্যাথিউ কেরেকৌয (বর্তমান রাষ্ট্রপতি) ৪৫.৪%, নাইসফোর সোগ্লো (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি) ২৭.১%, অ্যাড্রিয়েন হৌংবেজি (জাতীয় সংসদের স্পিকার) ১২.৬%, এবং ব্রুনো আমৌসৌ (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) ৮.৬%। মূলত দ্বিতীয় দফার নির্বাচন ১৮ মার্চ, ২০০১-এ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু কয়েক দিনের জন্য তা স্থগিত করা হয় কারণ সোগ্লো এবং হৌংবেজি নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে কেরেকৌকে তার নিজস্ব প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হয়, যাকে একটি "বন্ধুত্বপূর্ণ ম্যাচ" হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।[৪]

মার্কসবাদ-লেনিনবাদ প্রতিষ্ঠার আগে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে বেনিনে প্রথম পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কোতোনৌর দ্বাদশ জেলা কাউন্সিলের উল্লেখযোগ্য ব্যাতিক্রম সহ প্রক্রিয়াটি মসৃণ ছিল, এই নির্বাচনের ফল শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবে রাজধানীর মেয়র পদে কে নির্বাচিত হবে। এই নির্বাচনটি অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত হয় এবং নির্বাচন কমিশন পুনঃ নির্বাচন আয়োজন করতে বাধ্য হয়। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাইসফোর সোগ্লোর রেনেসাঁস দু বেনিন (আরবি) দল নতুন ভোটে জয়লাভ করে, নবনির্বাচিত নগর পরিষদের মাধ্যমে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির কোতোনৌ এর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পথ সুগম হয়।[৪]

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০৩ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয় এবং এটি সাধারণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ বলে বিবেচিত হয়। যদিও এতে কিছু অনিয়ম ছিল তবে এগুলি গুরুত্বপূর্ণ ছিল না এবং এটি কার্যপ্রণালী বা ফলাফলকে ব্যাপকভাবে ব্যহত করেনি। এই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল আরবি এর আসন সংখ্যা হ্রাস পায়। অন্যান্য বিরোধী দল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অ্যাড্রিয়েন হৌংবেজির নেতৃত্বাধীন পার্টি ফর ডেমোক্র্যাটিক রিনিউয়াল (পিআরডি) এবং অ্যালায়েন্স ইতোইলে (এ.ই) সরকারি জোটে যোগ দেয়।[৪]

২০০৬ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পশ্চিম আফ্রিকা উন্নয়ন ব্যাংকের প্রাক্তন পরিচালক ইয়াইয়ি বনি ২৬ জন প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। জাতিসংঘ, পশ্চিম আফ্রিকার দেশসমূহের অর্থনৈতিক জোট (ইকোয়াস) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বলে অভিহিত করে। ১৯৯০ সালের সংবিধান অনুসারে মেয়াদ ও বয়সের সীমাবদ্ধতার কারণে রাষ্ট্রপতি কেরেকৌ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। ২০০৬ সালের ৬ এপ্রিল ইয়াইয়ি রাষ্ট্রপতি পদে অভিষিক্ত হন।[৪]

২০০১ সালের ৩১ শে মার্চ বেনিন জাতীয় পরিষদের ৮৩ টি আসনের জন্য আইনসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি ইয়াইয়ির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত দলসমূহের জোট ফোর্স কাওরি ফর এন এমার্জিং বেনিন (এফসিবিই) জাতীয় পরিষদের বেশিরভাগ আসন লাভ করে এবং রাষ্ট্রপতিকে আইনসভার কার্যাবলীতে যথেষ্ট প্রভাবিত করে।[৪]

আরও দেখুন সম্পাদনা

টীকা সম্পাদনা

  1. Decalo, Samuel (১৯৯৭)। "Benin: First of the new democracies"। John F. Clark & David E. Gardinier। Political Reform in Francophone Africa। Boulder, CO: Westview Press। পৃষ্ঠা 43–61। 
  2. Profiles of People in Power: The World's Government Leaders (2003), page 55.
  3. Jamie Stokes. Encyclopedia of the Peoples of Africa and the Middle East: L to Z. Infobase Publishing, 2009. আইএসবিএন ০-৮১৬০-৭১৫৮-৬, p110.
  4. "Background Note: Benin". U.S. Department of State (June 2008).   এই উৎস থেকে এই নিবন্ধে লেখা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পাবলিক ডোমেইনে রয়েছে।
  5. Thomson Gale (Firm). Countries of the world and their leaders yearbook 2007, Volume 1. Thomson Gale, 2006. আইএসবিএন ০-৭৮৭৬-৮১০৪-০, p212

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা