বুরাইয়া কামিল এম.এ মাদ্রাসা

বুরাইয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসা সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার দোলার বাজার ইউনিয়নের বুরাইয়া গ্রামে অবস্থিত। এটা জেলার একমাত্র কামিল স্তরের ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গ্রামের স্থানীয় পীর, আলেম ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় ১৯৬৭ সালে এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়।

বুরাইয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসা, সুনামগঞ্জ জেলা
বুরাইয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসার লগো
মাদরাসা একটা পোস্টার
অবস্থান

তথ্য
ধরনসংযুক্ত কামিল মাদরাসা
নীতিবাক্যপড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন
প্রতিষ্ঠাকাল১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ
অধ্যক্ষমো: আব্দুস সালাম
শিক্ষার্থী সংখ্যা১০০০ (প্রায়)
শ্রেণিইবতেদায়ী ১ম শ্রেণি থেকে কামিল (হাদিস)
ভাষাআরবী, বাংলা
আয়তন৫ একর (প্রায়)
ক্যাম্পাসের ধরনগ্রামীণ
ওয়েবসাইটhttp://bkmc.edu.bd

অবস্থান

সম্পাদনা

বুরাইয়া কামিল মাদ্রাসা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার দোলার বাজার ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড বুরাইয়া গ্রামে অবস্থিত।

ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট

সম্পাদনা

বুরাইয়া গ্রামের প্রসিদ্ধ ১২জন সুফি-আলেমের মাওলানা নিয়ামত উল্লাহ, পীর মাহমুদ আলী এবং মাওলানা আলতাফুর রহমান অন্যতম ছিলেন। এরা সবাই নিজ গ্রামে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন, একসময় এদের নেতৃত্বে গ্রামের সবাই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগী হয়। পীর মাহমুদ আলী তার মৃত্যুবরণের পূর্বে ১০০০ টাকা এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা তহবিলে দান করেন।[] পরবর্তীতে তার উত্তরসূরী বুরাইয়া গ্রামের অন্যতম আলেম মৌলভী জাফর আলী কলকাতাঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষা জীবন শেষ করে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চাকরি করে অবশেষে বুরাইয়া গ্রামে ফিরে আসেন।

মৌলভী জাফর আলী অত্র এলাকায় ইসলামী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে পীর মাহমুদ আলীর রেখে যাওয়া ১০০০ টাকার তহবিল ও এলাকাবাসীর সাথে সলা-পরামর্শ করতঃ সবার সাহায্য সহযোগিতার ভিত্তিতে ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সালে একটি মসজিদ ভিত্তিক ইসলামী শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন। মাদরাসাটি প্রথমে বুরাইয়া বাজারের মসজিদে ফুরকানিয়া মাদরাসা হিসেবে আরম্ভ করা হয়।

এরপরে কোন এক বৈশাখ মাসের ঝড়ে মসজিদটি লন্ড ভন্ড হয়ে যায়, ফলে বুরাইয়া চিছরাওলী জামে মসজিদে মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে চালানো হয়। তখন শিক্ষক হিসেবে ছিলেন মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী জাফর আলী ও হাফিজ আলাউদ্দিন । পরবর্তীতে ১৯৬৭ সালে বর্তমান মাদরাসার স্থানে একটি টিনের ঘর তৈরি করা হয় এবং মাদরাসার পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করা হয়। ঘরটির বেড়া ছিল খড় কোটার এবং বেঞ্চগুলি ছিল বাঁশের। বর্তমানে এটা বুরাইয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসা নামে সুপরিচিত।[]

দাখিল, আলিম, ফাযিল ও কামিল শ্রেণির স্বীকৃতি লাভ

সম্পাদনা

সুনামগঞ্জ জেলার সর্বোচ্চ দ্বীনি বিদ্যাপীঠ বুরাইয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসা প্রথমে মসজিদ ভিত্তিক মক্তব হিসেবে চালু করা হলেও ১৯৬৭ সালে এর পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু করা হয়। ১৯৬৮ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে দাখিল শ্রেণির স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭২ সালে আলিম শ্রেণির স্বীকৃতি পেয়ে ক্রমান্বয়ে ১৯৭৮ সালে ফাযিল শ্রেণির স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৯৩ সালে এই মাদরাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর কামিল শ্রেণির পূর্ণ স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৯৩ সাল থেকে অদ্যাবধি হাদিস শরীফের দরস বিতরণ-গ্রহণের ধারা অব্যাহত রয়েছে। ২০০৬ সালে বুরাইয়া কামিল মাদরাসা কে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশের অধীনে ফাযিলকে ডিগ্রী এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে বুরাইয়া কামিল মাদরাসা কে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে অধিভূক্ত করা হয়।[]

ক্যাম্পাস

সম্পাদনা

বুরাইয়া কামিল মাদরাসা প্রায় ৫ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত সুবিশাল ক্যাম্পাস। মাদারাসায় বর্তমানে রয়েছে ২টি ৪তলা ও ১টি ১তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, ১টি প্রশাসনিক ভবন, বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ১টি বিজ্ঞান ভবন, ছাত্রদের জন্য ২টি আবাসিক হল, তাহফিজ বিভাগের জন্য একটি তাহফিজ ভবন, পুরুষদের জন্য ২তলা বিশিষ্ট বিশাল জামে মসজিদ, মহিলাদের নামাযের জন্য ৩তলা বিশিষ্ট মসজিদ এবং একটি সুবিশাল কুতুবখানা/লাইব্রেরী রয়েছে।[]

শিক্ষার্থী

সম্পাদনা

বুরাইয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসায় বর্তমানে ইবতেদায়ী ১ম শ্রেণি থেকে কামিল (হাদিস) শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১০০০ (এক হাজার) শিক্ষার্থী রয়েছেন। []

ছাত্র সংসদ

সম্পাদনা

১৯৭৯ সালে বুরাইয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসার ছাত্রদের কল্যাণে মুফতি আব্দুল খালিক এর তত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ছাত্র ইউনিয়ন‘। ছাত্র কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত ছাত্র ইউনিয়ন পরবর্তীতে ছাত্র পরিষদ“ নামকরণ করা হয়। বর্তমানে উহা ‘বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া ছাত্র সংসদ‘ নামে পরিচিত। [][তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

লাইব্রেরী

সম্পাদনা

বুরাইয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসায় নির্ভরযোগ্য কিতাবাদি সংগ্রহের মাধ্যমে সুবিশাল একটি কুতুবখানা বা লাইব্রেরী রয়েছে।

বুরাইয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসায় পুরুষদের জন্য ২তলা বিশিষ্ট বিশাল জামে মসজিদ এবং মহিলাদের নামাযের জন্য ৩তলা বিশিষ্ট মসজিদ রয়েছে।

অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

সম্পাদনা

০১. বুরাইয়া একাডেমি ( ইসলামিক কিন্ডারগার্টেন)

০২. তাহফিজুল কুরআন বিভাগ।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. বুরাইয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসা সাহিত্য বার্ষিকী নেদায়ে হক্ব-২০০৬
  2. বুরাইয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসা সাহিত্য বার্ষিকী আল-বালাগ-১৯৯০, নেদায়ে হক্ব-২০০৬, নেদায়ে হক্ব-২০১৪, নেদায়ে হক্ব-২০২০।
  3. প্রশাসনিক কার্যালয়, বুরাইয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসা।
  4. ছাত্র সংসদ, বুরাইয়া কামিল (এম.এ) মাদরাসা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা