বুড়োশিব মন্দির, নবদ্বীপ
বুড়োশিব মন্দির নবদ্বীপ শহরের একটি দ্বিশতাধিক প্রাচীন শিব মন্দির। বাংলার মন্দির স্থাপত্য রীতির নবরত্ন ধারায় মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে। নবদ্বীপের বুড়োশিবতলায় মন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরটি দ্বিশতাধিক প্রাচীন হলেও শিব মূর্তিটি আরো বেশি প্রাচীনত্বের স্মৃতি বহন করছে।[১][২]
বুড়োশিব মন্দির, নবদ্বীপ | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
ঈশ্বর | শিব |
অবস্থান | |
অবস্থান | নবদ্বীপ, নদিয়া, পশ্চিমবঙ্গ |
স্থানাঙ্ক | ২৩°২৪′৪০.৯″ উত্তর ৮৮°২১′৫০″ পূর্ব / ২৩.৪১১৩৬১° উত্তর ৮৮.৩৬৩৮৯° পূর্ব মানচিত্র |
স্থাপত্য | |
ধরন | বাংলার মন্দির স্থাপত্য, নবরত্ন |
সৃষ্টিকারী | তারাপ্রসন্ন চূড়ামণি |
প্রতিষ্ঠার তারিখ | ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে (আদি বুড়োশিব মন্দির) ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দ (বর্তমান নবরত্ন মন্দির) |
ইতিহাস
সম্পাদনাবুড়োশিবের আদি প্রাচীন মন্দিরটি নবদ্বীপ পৌরসভার প্রথম কমিটির সদস্য কৃষ্ণকান্ত শিরোমণি ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তারাপ্রসন্ন চূড়ামণির প্রচেষ্টায় বর্তমান "নবরত্ন' মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দিরগাত্রের উৎকীর্ত ফলক থেকে জানা যায় যে মন্দিরটি ১৩১৬ বঙ্গাব্দে সংস্কৃত হয়। নবদ্বীপের প্রবীণ নাগরিকদের কাছ থেকে জানা যায় যে, মন্দিরের বারান্দা এবং চূড়াগুলির নির্মাণ ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে হলেও গর্ভগৃহটি প্রাচীন, পাতলা টালি ইটের নির্মিত।[১] মন্দিরে বুড়োশিব ছাড়াও কষ্টিপাথর নির্মিত দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী[৩], প্রস্তর নির্মিত গণেশ মূর্তি, সূর্য নামে পরিচিত ক্ষুদ্র স্ফটিক খণ্ড ও তামার মঙ্গলচণ্ডী বিগ্রহ ছিল।[২] ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে মহিষাসুরমর্দিনী বিগ্রহটি মন্দির থেকে অপহৃত হয়।[৪]
প্রাচীনত্ব
সম্পাদনানবদ্বীপের বুড়োশিব মন্দিরটি প্রায় দ্বিশতাধিক প্রাচীন। তবে বুড়োশিব মূর্তিটি আরো অনেক পুরোনো। মনে করা হয় যে, সপ্তদশ শতকে বুড়োশিব মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। অষ্টাদশ শতকে রচিত কিছু গ্রন্থে এই বুড়োশিবের উল্লেখ পাওয়া যায়। অষ্টাদশ শতকে রচিত 'শ্রীশ্রীগৌরচরিত চিন্তামণি' গ্রন্থে সুস্পষ্টভাবে বুড়োশিবের কথা আছে।[৫] আবার ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দে রচিত বিজয়রামসেন বিশারদের তীর্থমঙ্গলে বুড়োশিবের উল্লেখ পাওয়া যায়[৬]-
“ | নবদ্বীপে বুড়োশিব আর নিত্যানন্দে। উদ্দিশে প্রণাম করি চলিলা আনন্দে। |
” |
আবার নরহরি চক্রবর্তী রচিত শ্রীশ্রীগৌরচরিত চিন্তামণি গ্রন্থে বলা হয়েছে[৭]-
“ | যা সবারে সদা শাশুড়ি ননদ পতি আদি সব পাড়য়ে গালি। প্রতিদিন বুড়াশিবে পূজে কত আদরে কলঙ্ক হইবে বলি। |
” |
ফলে সুস্পষ্টভাবে বলাই যায় যে বুড়োশিব নবদ্বীপে প্রায় ৩০০-৩৫০ বছর ধরে পূজিত হয়ে চলেছে।[১] পূর্বে নবদ্বীপের পোড়ামাতলায় শিবের বিয়ে হত। বাসন্তীপুজোর দশমীর ভোরে বুড়োশিব আর যোগনাথ শিবের জোড়া বিয়ে হত। এখনো বিয়ের যাবতীয় রীতিনীতি মেনে বুড়োশিবের বিয়ে সম্পন্ন হয়।[৮][৯]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ মণ্ডল, মৃত্যুঞ্জয় (২০১৩)। নবদ্বীপের ইতিবৃত্ত। কলকাতা: দেজ পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ৩৩৪–৩৩৫।
- ↑ ক খ রায়, মোহিত (১৯৭৫)। বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিয়কুমার; দাশ, সুধীররঞ্জন, সম্পাদকগণ। নদীয়া জেলার পুরাকীর্তি। পূর্ত (পুরাতত্ত্ব বিভাগ), পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পৃষ্ঠা ৪৫।
- ↑ দাস, নীলাঞ্জনা (২০০৫)। Economics of Religion (ইংরেজি ভাষায়)। দিল্লি: ভিস্তা ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশিং হাউস। পৃষ্ঠা ২৫। আইএসবিএন 978-81-89526-36-8।
- ↑ মণ্ডল, মৃত্যুঞ্জয় (২০১৩)। নবদ্বীপের ইতিবৃত্ত। কলকাতা: দেজ পাবলিশিং। পৃষ্ঠা ৩৪২।
- ↑ গৌরচরিত্র চিন্তামণি। বিষ্ণুপ্রিয়া পত্রিকা ৬ বর্ষ। পৃষ্ঠা ৫৩৬।
- ↑ সেন, বিজয়রাম (১৯১৫)। বসু, নগেন্দ্রনাথ, সম্পাদক। তীর্থ-মঙ্গল। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ মন্দির। পৃষ্ঠা ৩০।
- ↑ রাঢ়ী, কান্তিচন্দ্র (১৯৩৭)। দত্ত, জিতেন্দ্রিয়; দত্ত, ফণিভূষণ, সম্পাদকগণ। নবদ্বীপ মহিমা:অর্থাৎ নবদ্বীপের প্রাচীন ও আধুনিক বিবরণ (দ্বিতীয় সংস্করণ)। নবদ্বীপ: নবদ্বীপ মহিমা কার্যালয়: অমিয় গোপাল দত্ত। পৃষ্ঠা ১০১।
- ↑ বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস (২০১৭-০৪-০৭)। "নবদ্বীপে বুড়োশিবের বিয়েতে ভূরিভোজ"। www.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৭।
- ↑ সংবাদদাতা, নিজস্ব (২০১২-০৪-০২)। "শিবের বিয়েতে পোলাও-পায়েস: আনন্দবাজার পত্রিকা - মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া"। archives.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৩-২৭।