বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪

বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪ হলো বাংলাদেশের একটি আইন। এই আইনের ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সরকার কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য কাউকে আটক করতে পারে।

ইতিহাস সম্পাদনা

পাকিস্তানের রহিত নিরাপত্তা আইন, ১৯৫২, ১৯৫৮ সালের জননিরাপত্তা অধ্যাদেশ এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ তফসিলী অপরাধ (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) আদেশকে প্রতিস্থাপনের জন্য আইনটি ১৯৭৪ সালে পাস করা হয়েছিল। আইনটির ক্ষমতাবলে সরকার চোরাচালান, কৃত্রিম সংকট তৈরি এবং ক্ষতিকারক ক্রিয়াকলাপের প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রতিরোধমূলক পর্যায়ে আটক করতে পারে।[১] পরামর্শক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হলে ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই জন্য ছয় মাস পর্যন্ত অথবা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আটক করে রাখা যেতে পারে।[২] আওয়ামী লীগ প্রভাবিত বাংলাদেশ সংসদ ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪ সালে আইনটি পাস করে। আইন পাস করায় আওয়ামী লীগে সমালোচনার শিকার হয়।[৩] আতাউর রহমান খান এবং আব্দুস সাত্তার আইনটির বিরোধিতা করেন।[২] বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহারে আইনটি অপসারণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতায় আসার পর এটি বজায় রেখেছিল।[২][৪] শেখ হাসিনা আইনটি অপসারণের আহ্বান জানিয়েছিলেন, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি এটিকে প্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করেন।[২]

১৯৯০ সালে একটি সংশোধনীর মাধ্যমে এই আইনের ১৬(২) নং ধারাটি বাতিল করা হয়েছিল, কিন্তু পুলিশ ২০১৮ সাল পর্যন্ত উক্ত ধারার অধীনে মামলা দায়ের করে।[৫] সংসদীয় আইনের মাধ্যমে অপসারিত হওয়ায় বাংলাদেশের উচ্চ আদালত পুলিশকে এই ধারাটির ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশ দেন।[৬]

২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ পুলিশ শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য ভাঙচুরের জন্য এই আইনের আওতায় চারজনকে অভিযুক্ত করেছিল।[৭] ২০২২ সালে সরকার ব্যবসায়ীদের দ্বারা খাদ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনটি ব্যবহার করে।[৮]

সমালোচনা সম্পাদনা

২০২২ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর পাশাপাশি এই আইনটি বাতিলের আহ্বান জানায়।[৯] বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ২০২২ সালে আইন অপসারণের আহ্বান জানায়।[৪][১০] ডেইলি স্টারের এক সম্পাদকীয় আইনটিকে সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের জন্য তাঁদের দ্বারা ব্যবহৃত "ড্রাকোনিয়ান" (কঠোর আইন) হিসাবে বর্ণনা করে।[১১] হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সরকারকে বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিলের আহ্বান জানায়।[১২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বাংলাপিডিয়ায় বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪
  2. Bhuiyan, Md. Jahid Hossain। "Preventive detention law in Bangladesh: A review"archive.thedailystar.net। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৩ 
  3. Majumdar, Badiul Alam (২০১৮-১০-০১)। "All that glitters is not gold"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৩ 
  4. "Will BNP's quitting JS help it?"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-১২-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৩ 
  5. Sarkar, Ashutosh (২০১৮-০৭-২৪)। "Section 16(2) Of Special Powers Act: Scrapped yet used for arrest"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৩ 
  6. sun, daily। "No cases or arrests under Sec 16: HC | Daily Sun"daily sun (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৩ 
  7. "Case filed under Special Powers Act, 4 arrested over Mujib sculpture vandalising"New Age | The Most Popular Outspoken English Daily in Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৩ 
  8. "Experts for strict application of Spl Power Act - Front Page - observerbd.com"The Daily Observer। ২০২২-১২-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৩ 
  9. "CTTC arrests Jamaat Ameer Shafiqur Rahman"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-১২-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৩ 
  10. "Bangladesh's Opposition Demands Government's Resignation at Massive Dhaka Rally"thediplomat.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৩ 
  11. Mazhar, Farhad; Elan, Abu Saleh Mohammad। "Who's Security?"www.thedailystar.net। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৩ 
  12. "Letter to PM Sheikh Hasina with Recommendations to Improve Human Rights in Bangladesh"Human Rights Watch (ইংরেজি ভাষায়)। ২০০৯-০১-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৩