আলাপ:পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য: SABYAROY কর্তৃক ২ মাস আগে "পৌন্ড্রক্ষত্রিয়" অনুচ্ছেদে

অনলাইন এডিটাথন/২০২০/বিশেষ এডিটাথন সম্পাদনা

@Obangmoy: বিশেষ এডিটাথনে অংশ নেয়ায় আপনাকে অভিনন্দন। এডিটাথনের নিয়ম অনুযায়ী নতুন তৈরিকৃত নিবন্ধের ক্ষেত্রে তথ্যছক, বিভিন্ন সংযোগ বা লিংক ইত্যাদি বাদে নিবন্ধের শব্দসংখ্যা কমপক্ষে ১,০০০ হতে হবে। যে শর্ত এই নিবন্ধ পূরণ করেনি। অনুগ্রহ করে আগামী ৩ দিনের মধ্যে নিবন্ধটি কমপক্ষে ১,০০০ শব্দে বা সর্বোচ্চ যত শব্দে করা যায় তত শব্দে উন্নীত করুন। আমি পরবর্তিতে আবার পর্যালোচনা করব। ধন্যবাদ।--মাসুম-আল-হাসান (আলাপ) ০৯:৫৮, ৩০ মে ২০২০ (ইউটিসি)উত্তর দিন

পৌন্ড্রক্ষত্রিয় সম্পাদনা

মহাভারতের দিগ্বিজয় শাখায় তাদের আবাস রূপে মুঙ্গেরের পূর্বদিক এবং কোশীর তট (অন্য নাম সপ্তকোশী নদী) শাসনকারী যুবরাজের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গুপ্ত শাসনকালে উৎকীর্ণ লিপি বা তাম্রশাসন এবং প্রাচীন চীনা লেখকরা পুণ্ড্রবর্ধনকে উত্তরবঙ্গে পুণ্ড্রদের স্থান রূপে উল্লেখ করে।পুণ্ড্রদের আবাসস্থলই পুণ্ড্র বা পুণ্ড্রবর্ধন নামে খ্যাত হয়েছিল।কিন্তু পরবর্তীতে তারা ব্রাত্য ক্ষত্রিয়তে পরিণত হয়।

পঞ্চানন বর্মা ক্ষত্রিয়দের অবহেলিত রাজবংশী ক্ষত্রিয় থেকে আর্য জাতির পৌন্ড্রক্ষত্রিয় হিসেবে পুনরায় উচ্চবর্ণের শ্রদ্ধা ও স্বীকৃতি অর্জন করতে এই আন্দোলন করেন। তিনি মনে করেছিলেন রাজবংশী ক্ষত্রিয়দের অবশ্যই সংগঠিত ও শিক্ষিত হওয়া উচিত যা তিনি ক্ষত্রিয় সভার মাধ্যমে অর্জন করার চেষ্টা করেছিলেন। এই সমিতিটি প্রমাণ করে যে রাজবংশী ক্ষত্রিয় রাজকীয় বংশের ক্ষত্রিয় ছিলেন। সংস্কৃত সাহিত্য এবং ব্রাহ্মণ পন্ডিতদের উপর ভিত্তি করে তারা শতাব্দী ধরে পরশুরামের ভয়ে নিজেদের সত্য পরিচয় গোপনকারী ক্ষত্রিয় বলে প্রমাণ করেছিল। এই দাবির সমর্থনে এই আন্দোলনটি একটি আনুষ্ঠানিক ক্ষত্রিয়করণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। বাংলা ১৩১৯ সালের ২৭ মাঘ পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে লক্ষাধিক রাজবংশীর গণউপনয়ন করা হয়। [১] যার ফলে উত্তরবঙ্গের গ্রামগুলিতে কয়েক হাজার রাজবংশীকে ‘ক্ষত্রিয় রাজবংশী’ হিসাবে প্রমাণ করার জন্য তাদের মধ্যে ব্রাহ্মণ্য রীতিনীতির পুনঃপ্রবর্তন করা হয়েছিল। [২] পৌন্ড্রক্ষত্রিয় একটি ‘আত্মপরিচয়’ ঘোষণা করে আত্ম-সম্মানের বোধ তৈরি করেছিল।

বত'মানে রাজবংশী ক্ষত্রিয় জনগোষ্ঠী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশে, বিহার রাজ্যে, আসামে, মেঘালয়ে, ওড়িশা রাজ্যে, নেপালে, ভুটানে, বাংলাদের উত্তর অংশে, বসবাস করছেন।

বত'মানে রাজবংশী ক্ষত্রিয় (পৌন্ড্রক্ষত্রিয়)জাতি ধর্ম পরিবর্তনের ফলে রাজবংশী জাতি এখন হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভক্ত। কিন্তু ভাষা একই।

খৃষ্টপূব' চতুর্থ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, মগধের মহারাজা মহাপদ্ম নন্দ পুন্ড্রবধ'ন আক্রমন করেন এবং সেই যুদ্ধে পুন্ড্রবধ'নের মহারাজা পরাজিত হয়েছিলেন। আমরা সকলেই জানি মহাপদ্ম নন্দ ক্ষত্রিয় নিধনে ব্রতী হয়েছিলেন।সেই কারনে মহাপদ্ম নন্দ "Sarva-Kshatrantaka" নামে অবিহিত হয়েছিলেন। সেই কারনে সেই সময় ক্ষত্রিয় জাতির জনগন মগধরাজ মহাপদ্ম নন্দের হাত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন স্থানে চলে গিয়েছিলেন। যেমন: কামরূপের রত্নপীঠে, নেপালে, ওড়িশায় (বত'মান সময়েও উড়িষ্যা রাজ্যের Sambalpur এলাকায় পৌন্ড্রক্ষত্রিয়-রাজবংশী ক্ষত্রিয়)গন বসবাস করছেন এবং ভাষাও রাজবংশী।)

এর ফলে সেইসকল স্থানের ভাষার সাথে পুন্ড্রবধ'নের ভাষার মিশ্রণ ঘটে। যাই হোক এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে পরবর্তী সময়ে অন্যান্য ভাষার খেত্রে। মহাপদ্ম নন্দ কতৃক পুন্ড্রবধ'ন মগধ সাম্রাজ্যের অন্ত:ভুক্ত হওয়ার দরুন, মগধের ভাষার সাথে পুন্ড্রবধ'নের ভাষার মিশ্রণ ঘটে এক নতুন ভাষার সৃষ্টি হয়। কিছু ভাষাবিজ্ঞানী সেই ভাষার নাম দিয়েছেন মাগধী প্রাকৃত, আবার কিছু ভাষাবিজ্ঞানী সেই ভাষার নাম দিয়েছেন গৌড়ীয় প্রাকৃত। নন্দ বংশের পরে মগধ মৌয' সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দরুন পুন্ড্রবধ'নও মৌয' সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল (৩২২খৃস্টপূব' থেকে ১৮৪খৃস্টপূব' পয'ন্ত)।

পরবতী' সময়ে (আনুমানিক চতুর্থ শতকে) সেই মাগধী প্রকৃত বা গৌড়ীয় প্রাকৃত ভাষা অপভ্রংশ ভাষায় পরিবর্তীত হয়ে, নতুন তিনটি আলাদা আলাদা ভাষার জন্ম দেয়। (আনুমানিক পঞ্চম শতকে) ১)বিহারি (মৈথিলী), ২) পুরাতন ওড়িয়া, ৩) বঙ্গ-কামরূপী (রাজবংশী) ভষার। সেই সময় পুন্ড্রবধ'নে গুপ্তশাসন চলছিল (আনুমানিক ৩২০খৃস্টাব্দ থেকে ৬০০খৃস্টাব্দের কাছাকাছি সময় পয'ন্ত)।

এর পরে পুন্ড্রবধ'ন গৌড়ের মহারাজা শশাঙ্কের শাসনে চলে আসে (আনুমানিক ৫৯৩খৃস্টাব্দ থেকে ৬৩৮খৃস্টাব্দ)। সেই সময় পুণ্ড্রবধ'নের নাম হয় গৌড় এবং তারপর পুন্ড্রবধ'নের নাম হয় বরেন্দ্র।

ঐতিহাসিক গনের মতে গৌড়ের মহারাজা শশাঙ্ক, হষ'বধ'ন ও কামরূপের মহারাজা ভাস্কর বম'নের নিকট পরাজিত হন এবং তার রাজ্য হষ'বধ'ন এবং ভাস্করবম'নের ভাগ হয়েছিল। গৌড় সহ বাংলার সম্পুর্ণ অংশ ভাস্কর বম'নের, কামরূপের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং মগধের পুরো অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয় হষ'বধ'নে সাম্রাজ্যে।বৌদ্ধ গ্রন্থ আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প-এ পুণ্ড্রবর্ধনের যুদ্ধে হর্ষের হাতে শশাঙ্কের পরাজয়ের কাহিনী জানা যায়।

হর্ষবর্ধন প্রথমদিকে শৈব ধর্মের অনুসারী ছিলেন, কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি বৌদ্ধ ধর্মের একজন মহান পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হন। বৌদ্ধ ধর্মের একজন একান্ত অনুরাগী হিসেবে তিনি মহাযান মতবাদ প্রচারে কণৌজে এক বিশাল সংগীতি আহ্বান। অপরপক্ষে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি হর্ষবর্ধনের অনুরাগ এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের প্রতি বিদ্বিষ্ট মনোভাব হিন্দুধর্মের অনুসারিগণকে হতাশ করে করেন।পরবর্তী সময়ে হষ'বধ'নের সাথে ব্রাহ্মণ সমাজের বিরোধ বাঁধলে, হর্ষবর্ধন ব্রাহ্মণদের বিদ্রোহ অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করেছিলেন বলে কথিত আছে। ব্রাহ্মণগন বিপুল সংখ্যায় পূর্ব ভারতের দিকে অভিবাসন করে। হিউয়েন-সাং কামরূপে বেশ কিছু শিক্ষিত ব্রাহ্মণের চলে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। বেশ কিছু ব্রাহ্মণ কামরূপে বসবাসের জন্য ভাস্করবর্মনের কাছ থেকে ভূমিদান লাভ করেন। কুলজি গ্রন্থে কণৌজের বেশ কিছু ব্রাহ্মণের গৌড়ে অভিবাসনের উল্লেখ রয়েছে। কামরূপের রাজা ভাস্কর বর্মনের নিধানপুর তাম্রশাসন থেকেও এই সম্পর্কে জানা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে গৌড়ে ও কামরূপে সাদরে গৃহীত হলেও এই বিপুল অভিবাসন শেষ পর্যন্ত এই দুদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে।

ব্রাহ্মণদের গৌড়ে অভিবাসনের ফলে, উত্তরভারতের ভাষা, মৈথীলি ভাষা এবং মগধের ভাষার সাথে গৌড়ের স্থানীয় ভাষার (পৌন্ড্রক্ষত্রিয় গনের ভাষার)সাথে সংমিশ্রণ ঘটে বাংলা ভাষার সৃষ্টি হয়।এখানে উল্লেখ্য - ভাস্কর বমা' গৌড় দখল করে সেখানেই অধিক সংখ্যায় ব্রাহ্মণগনকে ভূমি দান করেন।কিছু পরিমান শিক্ষিত মৈথীলি ব্রাহ্মণকে কামরূপে ভূমি দান করেন। পরবর্তী সময়ে এই সকল ব্রাহ্মণগনের বিরাট অংশ পূর্ববঙ্গে এবং রারবঙ্গে চলে যান।

SABYAROY (আলাপ) ০৮:২৮, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ (ইউটিসি)উত্তর দিন
"পৌণ্ড্রক্ষত্রিয়" পাতায় ফেরত যান।