দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র

দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) (ইংরেজীতে: Poverty Reduction Strategy Papers) হচ্ছে কোনো "প্রচন্ডভাবে ঋণগ্রস্ত দরিদ্র দেশ" উদ্যোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ঋণ তহবিলের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় একটি নথি বা দলিল।[১][২] কোনো নিম্ন আয়ের দেশের কোনো সহযোগী বা ঋণ প্রদানকারী দেশের কাছ থেকে সাহায্য অথবা ঋণ পেতেও এ নথি প্রয়োজন হয়।[২] এটি মূলত দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্যে বিশ্বে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণভাবে গৃহীত নীতি, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য প্রণীত দলিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল অনুযায়ী, দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র পাঁচটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়।[১] এই নথি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীত, ফলস্বরূপ, উপযোগী, অংশীদারত্ব ভিত্তিক এবং একটি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পণা ভিত্তিক হতে হবে।[১] দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র জনগনের মতামতের জানার পরিকল্পনা তৈরির মাধ্যমে দারিদ্রতা কেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা সৃষ্টি এবং তাদের নিজেদের কৌশল লাভ করতে উৎসাহ প্রদান করে।[৩][৪] দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী দারিদ্রতা বিশ্লেষণ এবং বড় পরিসরে অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।[৫][৬] তবে এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু প্রতিকূলতার বিষয় থাকতে পারে, যেমন: রাষ্ট্রের প্রণীত কৌশল বাস্তবায়নের ক্ষমতা থাকার বিষয়টি তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আরও জটিলতা, যেমন: সহায়তা শর্ত, সহায়তা প্রদানকারী দেশের প্রভাব অথবা তেমন কার্যকরীভাবে এটি বাস্তবায়িত না হওয়ার বিষয়গুলো থাকতে পারে।[২]

উদ্দেশ্য সম্পাদনা

বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল কর্তৃক "প্রচন্ডভাবে ঋণগ্রস্ত দরিদ্র দেশ" কার্যক্রমের অথবা অন্য আর্থিক সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় ঋণ সহায়তার জন্য যেমন দ্বিপাক্ষিক দাতা প্রয়োজন তেমনি সহায়তা শর্ত হিসেবে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র প্রয়োজন।[২] এই কৌশলপত্র সহায়তা প্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলোকে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করে।[১] এ কৌশলপত্রে তিন বছর বা আরও বেশি সময়ের জন্য নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং অবকাঠামোগত নীতি বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে কােনো দেশের বিকাশ এবং দারিদ্রতা হ্রাসের পরিকল্পণা বর্ণনা করা হয়।[১][৭] দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র ধার প্রদানকারী সংস্থা, যেমন: বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-কে এ নিশ্চয়তা প্রদান করে যে, সহায়তা প্রাপ্ত রাষ্ট্র সেই সহায়তা দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রে বর্ণিত এবং ধার বা সহায়তা প্রদানকারী দ্বারা স্বীকৃত উন্নয়নের কাজে ব্যয় করবে।

লক্ষ্য সম্পাদনা

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এটির জন্য পাঁচটি বিষয় বর্ণনা করেছে, যার মাধ্যমে এটিকে ব্যক্ত করা যায়।[১] প্রথমত এটি রাষ্ট্র প্রণীত হতে হবে। অর্থাৎ, ব্যাপক পরিসরে সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে কৌশলগুলোর উপর রাষ্ট্রের মালিকানা সর্বোচ্চ হবে।[১] এটিকে দরিদ্রদের লাভবান হওয়ার দিক থেকে ফলস্বরূপ হতে হবে। এটি দারিদ্রতার বহুমাত্রিক দিক অনুসন্ধান এবং উপলব্ধির দিক থেকে ব্যাপক হতে হবে। এটি অংশীদারত্ব ভিত্তিক হতে হবে যেমন, উন্নয়ন অংশীদার যেমন, সরকার, স্থানীয় অংশীদার এবং অতিরিক্ত দাতা নিযুক্ত করে।[১] পরিশেষে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র দরিদ্রতা বিমোচনের গতি বৃদ্ধিতে একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পণা ভিত্তিক হওয়া উচিত।[১] এই পাঁচটি প্রধান বিষয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের লক্ষ্য।

দারিদ্রতা কেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা সম্পাদনা

দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের একটি প্রধান লক্ষ দারিদ্রতা কেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা সৃষ্টি। আগে দারিদ্রতা হ্রাসের বিষয়টি শুধুমাত্র উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।[৩] দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দারিদ্রতাকে আরো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হিসেবে বিবেবচনা করা হয়েছে এবং দারিদ্রতার বিষয়ে আরো কার্যকরী পরিকল্পণা প্রণয়ন করা হয়েছে, বিশেষ করে যা আগে কখনো হয়নি।[৩] স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং যাতায়াত ব্যবস্থার ক্ষেত্রে দরিদ্র সমর্থন ("pro-poor") বৃদ্ধি পাচ্ছে।[৩] দাতা কর্তৃক ফলাফল প্রদর্শনের দাবির কারণে অংশগ্রহণমূলক দারিদ্রতা মূল্যায়ন এবং পরিবার ভিত্তিক জরিপের মাধ্যমে দারিদ্রতা পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি পেয়েছে।[৩]

সুশীল সমাজের সংশ্লিষ্টতা সম্পাদনা

দারিদ্রতা কেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থার একটি মূল বৈশিষ্ট্য হলো যে, এটি জনসাধারণের অংগ্রহণকে উৎসাহিত করে। সুশীল সমাজের সংশ্লিষ্ট হওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো শর্ত তৈরি, কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সম্পদ বণ্টন এবং অগ্রাধিকার বাছাই এ অংশীদারদের প্রভাব বৃদ্ধি করা।[৪] অংশীদারদের লাভের ক্ষেত্রে আরো কার্যকরী দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল তৈরির মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যকে সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে যাওয়া এর উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত।[৪] এর পেছনে এই ধারণা বিদ্যমান যে, এটির মালিকানা জনগণের এবং তা দীর্ঘ মেয়াদী হবে, যদি রাষ্ট্রের প্রয়োজনীতা এবং সক্ষমতার সাথে উপেযোগী হয়।[৪]

অংশীদারিত্ব সম্পাদনা

দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রে সরকার এবং জনগণের মালিকানা দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।[৮] এর মাধ্যমে দাতা কর্তৃক প্রদত্ত শর্ত বাহ্যিক দিক থেকে উপলদ্ধি করা যায়, যা দাতা সংস্থার একটি সাধারণ উদ্দেশ্য।[২] জনগনের মত নিয়ে সরকারকে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র তৈরির সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে একভাবে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল প্রক্রিয়া মালিকানার বিষয়টিকে উৎসাহিত করে।[৮] এটি তাদের অংশীদারিত্ব নিতে সহায়তা করে এবং যে কৌশল সেই দেশের অবস্থা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বলে সেই দেশের সরকার এবং জনগণ বিবেচনা করে সেগুলোতে প্রণয়ন করার সুযোগ প্রদান করে।[৮] এছাড়া সম্মিলিতভাবে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র প্রণয়নে কোনো দেশ তাদের সম্মুখীন হওয়া দারিদ্রতা সম্পর্কে আরো ধারণা লাভ করবে এমন একটি আশা বিদ্যমান থাকে। এটি সহায়তা হিসেবে পাওয়া অর্থ তাদেরকে তাদের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রে বর্ণিত কৌশলগুলোতে বরাদ্দ করার অধিকার প্রদানের মাধ্যমে কোনো রাষ্ট্রের সরকারকে তাদের নিজস্ব কৌশল বাস্তবায়নে নেতৃত্বদানে উৎসাহিত করে। সরকারের নেতৃত্ব বাধাগ্রস্ত হয় যখন দাতাগণ রাষ্ট্র সংস্থা ছাড়াও সহায়তা প্রাপ্ত দেশগুলোেতে তাদের কৌশল প্রণয়নকারী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে এবং যার ফলে, যা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হ্রাস করে এবং একই সাথে সহযোগিতা সংস্থার উপর নির্ভরশীল করে তোলে।[২]

তৈরির প্রক্রিয়া সম্পাদনা

দারিদ্রতা বিশ্লেষণ সম্পাদনা

দারিদ্রতা বিশ্লেষণের প্রক্রিরয়াটি রাষ্ট্রের দারিদ্রতা বিশ্লেষণের মাধ্যমে শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় সংখ্যাত্মক এবং মান নির্ণয়ক উভয় উপাত্তই গণ্য করা হয়।[৬] মূল সমস্যাগুলো নির্দেশ করায় এটি দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলের একটি ভিত্তি হয়ে যায়।[৬] এ পর্যায়ে সরকারের জনগণের অংশগ্রহণ, যদিও বিভিন্ন দেশে এই এটি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে করা হয়।[৬]

অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া সম্পাদনা

দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি হচ্ছ অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়া, যেটির মাধ্যমে কৌশলপত্রটি তৈরি হয়। বিশ্ব ব্যাংক নিচের পর্যায়গুলো ব্যক্ত করেছে:

  • সরকারের অংশগ্রহণ। এ বিষয়টির মধ্যে মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ, সংসদ এবং জাতীয় শাসন বিভাগের অধীনে থাকা দেশের অন্যান্য শাসন বিভাগের অংশগ্রহণের ব্যাপারটিও বিদ্যমান।
  • অংশীদারদের অংশগ্রহণ এবং সংশ্লিষ্টতা। এর মধ্যে সামাজিক শ্রেণি, নারী শ্রেণি, জাতিগত সংখ্যালঘিষ্ঠ্য শ্রেণি, নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা, বেসরকারী খাত, ট্রেড ইউনিয়ন এবং রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত রাজ্যগুলোর প্রতিনিধির অংশগ্রহণের ব্যাপারটি ধরা হতে পারে।
  • দিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক বহিরাগত উন্নয়ন সংস্থার অংশগ্রগণ।
  • দরিদ্র বা তাদের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ বা মতামত গ্রহণ।[৫]

সুশীল সমাজ সংস্থা, যেমন: এনজিওর কারণে অংশগ্রহণের বিষয়টি আরো সহজ হয়ে গেছে, যদিও অধিকাংশ জনগণের সাথে আলোচনা বা তাদের মত গ্রহণের প্রক্রিয়াটির কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা অংশগ্রহণের সংজ্ঞা কোনোটাই নেই। তাই অনেক সরকার এই প্রক্রিয়াটি তাদের নির্ধারিত উপায়ে পরিচালনা এবং সংঘটিত করে।[৯] আবার প্রায়ই সরকারের লক্ষের উপর জনগণের প্রভাব হ্রাস করার উদ্দেশ্যে সরকারের সাথে নির্বাচনী অংশগ্রহণ এবং এরকম অন্যান্য পদ্ধতিতে এটি সম্পন্ন করা হয়। সরকার অনেক সময় দরিদ্রদের মত কতটা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত সে সস্পর্কেও অনিশ্চিত বিশেষ করে যখন সরকার একই সময়ে দাতাদের সন্তষ্ট রাখার চেষ্টা করে।[৯] দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রে অংশগ্রহণমূলক বিষয়গুলো নিশ্চিত হয়েছে কিনা তা নির্ধারণের কোনো নির্ধারক নেই।[৯] অর্থাৎ, দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের ক্ষেত্রে তা তৈরির সময় প্রকৃত সুশীল সমাজের অংশগ্রহণ ব্যতিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দ্বারা গৃহীত হতে পারে।[৯]

বিষয়বস্তু সম্পাদনা

বিশ্ব ব্যাংকের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের উৎসগ্রন্থ অনুযায়ী, কোনো দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রে দারিদ্রতা বিশ্লেষণ, উন্নয়নের লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য কার্যক্রমগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া, লক্ষ ও নির্দেশক, লক্ষের দিকে অগ্রসরতা পরিমাপ, কার্যক্রমগুলোর বাস্তবায়নের কার্যকারিতা মূল্যায়ন এবং কৌশল তৈরির ক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ার বর্ণনা এ বিষয়গুলো থাকে।[৫]

জটিলতা এবং প্রতিকূলতা সম্পাদনা

একটি গৃহীত দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের থাকা সত্ত্বেও কিছু রাষ্ট্রের উদ্দশ্যমূলক নীতিমালা অনুসরণ তরা সম্ভব হয় না, যে কারণে এ রাষ্ট্রগুলো দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল লাভ করতে ব্যর্থ হয়। এর একটি বড় কারণ হলো বাজেট তহবিলের ভুল বরাদ্দ, যা দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলের ক্ষেত্রে বরাদ্দের কথা ছিল।

রাষ্ট্রে কর্তৃক অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে আরোপিত শর্ত বাহিরে থেকে বাতিল করার জন্য দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল প্রক্রিয়া তৈরি বলে ধারণা করা হলেও দারিদ্র্য বিমোচন কৌশল প্রক্রিয়া সহায়তা শর্তাবলী বৃদ্ধির জন্য সূক্ষ্ম বিশ্লেশিত।[২] কারো কারো মতে, এটি একটি "প্রক্রিয়াগত শর্ত", কোনো "পরিমাণগত শর্ত" নয়। এই দুটির মধ্যে পার্থক্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দাতাগণ অনেক সময় শুধুমাত্র রাষ্ট্র দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র তৈরি করেছে কিনা এবং তা একটি অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে কিনা এ দুটি বিষয় পর্যালোচনা করে। তারপরও এটি একটি সমস্যা তৈরি করে। যেহেতু পূর্বে দাতাগণ সহায়তা গ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলো উক্ত বিষয়গুলো আরোপ করতে পারত না, তাই দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র তৈরিতে সেই দাতাগণের পক্ষে সাধারণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না।[২] এটা ইতোমধ্যেই দেখানো হয়েছে যে, দাতাগণ কর্তৃক সহযোগিতা গ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলোর রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা পূর্বে কখনো সফল হয় নি।[২] এছাড়া আন্তর্জাতিক অথনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু প্রক্রিয়া নয় বরং দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলগত্র মূল্যায়ন করে।[৮]

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক জনগণের অংশগ্রহণ বলতে কি বোঝানো হয় তার কোনো পরিষ্কার সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি।[৯] যা দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তৈরির ব্যাপারটি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। কার্যত, অনেক উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে এমন জনগণের অংশগ্রহণই বিদ্যমান নেই, যারা সরকারের সাথে দারিদ্রতা বিমোচনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট কৌশল প্রণয়নে কাজ করে। যা থেকে বোঝা যায় যে, এ বিষয়টির অনুপস্থিতি সত্ত্বেও বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দ্বারা দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র গৃহীত হয়।[৯]

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র সম্পাদনা

বাংলাদেশে দক্ষিণ এশীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রতি অঙ্গীকার প্রকাশ করেছে, যা দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রের লক্ষ এবং এটির এর শিরোনাম দেওয়া হয় ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নের কৌশল। বাংলাদেশ সুশাসনকে প্রধান সোপান হিসাবে গণ্য করে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রথম যাত্রা করে। ২০০৫ সালে অক্টোবর মাসে আইপিআরএসপিকে প্রাথমিক সোপান হিসাবে গণ্য করে অধিকতর ও ব্যাপক কর্মসূচি ও কৌশল প্রণয়নে কাজ সম্পন্ন করা হয়। এটির শিরোনাম ছিল "আনলকিং দ্য পটেনশিয়াল" বা "দ্রুততর দারিদ্র্য বিমোচনের জাতীয় কৌশল", যা পিআরএসপি নামে পরিচিত। ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে এটি দলিলটিকে হালনাগাদ করা হয়। এটি উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতির ধারাবাহিক স্বাক্ষর হিসাবে গৃহীত হয় এবং এর শিরোনাম তেওয়া হয় ‘দ্রুততর দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশল-২ (অর্থবছর ২০০৯-১১) পথে অগ্রযাত্রা’। এটিকে সর্বাঙ্গীণ দারিদ্র্য বিমোচনের মধ্যমেয়াদী কৌশল হিসেবে সরকার কর্তৃক অভিহিত করা হয়। এই দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপরত্রর কাঠামো নিম্নরূপ:

পূর্ববর্তী দলিল এবং বর্তমান দলিলটির মধ্যে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। আগে কৌশলগত সোপান ছিল চারটি। পরে এই দলিলে কারিগরি উৎকর্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অধিকতর উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করার বিষয়টি যুক্ত হয়। এছাড়াও এ দলিলে খাদ্য নিরাপত্তাও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার কৌশলের উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ দুটি বিষয় বর্তমানে আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক আশঙ্কার কারণ। বিশ্বব্যাপী ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ ছিল খাদ্যশস্য ব্যবহার করে যানবাহনের তেল উৎপাদন এবং জলবায়ু পরিবর্তন। ফলস্বরূপ, খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধি করে এবং সাময়িকভাবে রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এ কারণে বাংলাদেশের বিষয়টি ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। আনুমানিক বসতবাড়ির ৮.৫ শতাংশ পরিবারের আয় হ্রাস পায়, যাতে পরিবারগুলোকে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করতে হয়।

জলবায়ু পরিবর্তন দারিদ্রতার বিরুদ্ধে সংগ্রামে হুমকিস্বরূপ বিবেবচনা করে পিআরএসপি জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব নিরসনে একে বিভিন্নভাবে যুক্ত করার মাথ্যমে মূলধারায় প্রবাহিত করার কৌশলগত অবস্থানের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এরই মধ্যে নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে সরকার কর্তৃক একটি জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল গঠন করা হয়েছে। উন্নয়ন সহযোগীদের সাহায্য ছাড়াও একটি বহুমূখী তহবিল গঠন করারও চেষ্টা চলছে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় অথবা বিভাগের কর্ম পরিকল্পনাসহ বেসরকারি খাতের উপর এ প্রচেষ্টার সফলতা নির্ভর করে।[১০]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Factsheet -- Poverty Reduction Strategy Papers"। IMF। 
  2. Dijkstra, Geske (২০১১)। "The PRSP Approach and the Illusion of Improved Aid Effectiveness: Lessons from Bolivia, Honduras and Nicaragua"। Development Policy Review। 1। 29: 111–133। 
  3. Driscoll, Ruth; Alison Evans (২০০৫)। "Second-Generation Poverty Reduction Strategies: New Opportunities and Emerging Issues"। Development Policy Review23 (1): 5–25। ডিওআই:10.1111/j.1467-7679.2005.00274.x 
  4. Lazarus, Joel (২০০৮)। "Participation in Poverty Reduction Strategy Papers: reviewing the past, assessing the present and predicting the future"Third World Quarterly29 (6): 1205–1221। ডিওআই:10.1080/01436590802201188 
  5. Klugman, Jeni। "PRSP Sourcebook: Overview" (পিডিএফ)। World Bank। 
  6. "Making PRSP Inclusive"। CBM। 
  7. Craig, David; Doug Porter (২০০৩)। "Poverty Reduction Strategy Papers: A New Convergence"World Development31 (1): 53–69। ডিওআই:10.1016/s0305-750x(02)00147-x 
  8. Seshamani, Venkatesh (মার্চ ২০০৫)। "The same old wine in the some old bottle? Content, process and donor conditionalities of the PRSP" (পিডিএফ) 
  9. Kamruzzaman, Palash (ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "Poverty Reduction Strategy Papers and the rhetoric of participation"। Development in Practice19 (1)। 
  10. "দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র" 

আরও পড়ুন সম্পাদনা

  • Jeremy Gould (ed), The New Conditionality: The Politics of Poverty Reduction Strategies, Zed Books 2005
  • Caillods, F. Hallak, J. 2004. Education and PRSPs: a review of experiences. Paris: IIEP/UNESCO. [১]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা