উইকিপিডিয়া:স্বাগতম, নবাগত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

[পরীক্ষিত সংশোধন][অপরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সংশোধন
Md Emad Uddin (আলোচনা | অবদান)
শায়খুল হাদীস আল্লামা ফখরুদ্দীন জাতজামী (রহ.) সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানার অজ পাড়া গাঁ থেকে প্রথম বিভাগে দাখিল পাশ করে ১৯৮২ইং এর শেষার্ধে ভর্তি হলাম আলিম শ্রেণীতে ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকাতে । যেয়ে দেখলাম কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে ১৯৮১ইং মাদরাসা-ই-আলিয়ার দ্বিশতবার্ষিকী উদযাপন। স্বাভাবিকভাবে হাতে পেলাম দ্বিশতবার্ষিকী উদযাপনের স্মারক গ্রন্থ। আমি আবেগ আপ্লুত হয়ে ইতিহাসের পাতা উল্টাতে থাকলাম। আহা! ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮০ইং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ক্যালকাটা আলিয়া মাদরাসা যার...
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
১ নং লাইন:
{{WP help pages (header bar)}}
[[Image:Contactus-wmcolors.svg|left|60px]]
{{shortcut|WP:WEL|WP:WELCOME}}
স্বাগতম নবাগত
[[Image:welcomebanner.gif|375px]]
 
শায়খুল হাদীস আল্লামা ফখরুদ্দীন জাতজামী (রহ.)
[[উইকিপিডিয়া]] একটি [[উইকি]]-ভিত্তিক উন্মুক্ত [[ইন্টারনেট]] [[বিশ্বকোষ]]। কিন্তু এর বিশেষত্ব হল অবদানকারীরা (অর্থাৎ পাঠকদেরই একাংশ) [[সম্মিলিত সহযোগিতার]] মাধ্যমে বিশ্বকোষটি রচনা করেন।
 
 
সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালী থানার অজ পাড়া গাঁ থেকে প্রথম বিভাগে দাখিল পাশ করে ১৯৮২ইং এর শেষার্ধে ভর্তি হলাম আলিম শ্রেণীতে ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকাতে । যেয়ে দেখলাম কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে ১৯৮১ইং মাদরাসা-ই-আলিয়ার দ্বিশতবার্ষিকী উদযাপন। স্বাভাবিকভাবে হাতে পেলাম দ্বিশতবার্ষিকী উদযাপনের স্মারক গ্রন্থ। আমি আবেগ আপ্লুত হয়ে ইতিহাসের পাতা উল্টাতে থাকলাম। আহা! ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮০ইং প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ক্যালকাটা আলিয়া মাদরাসা যার প্রিন্সিপ্যালও ছিলেন নিজেই। ১৯৪৭ইং ভারতবর্ষ বিভাজিত হয়েছিল দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে। আর সেই ধারায় ক্যালকাটা আলিয়া মাদরাসা বিভাজিত হয়ে পঞ্চাশ হাজার কিতাবাদিসহ টেবিল চেয়ার নিয়ে আসা হলো পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ব বাংলার ঢাকাতে। সদরঘাটে শুরু হলো ঢাকা আলিয়ার শিক্ষাকার্যক্রম ১৯৪৮ইং। পরবর্তীতে বর্তমান অবস্থানে(বকসী বাজার) স্থানান্তরিত হয় মাদরাসা-ই- আলিয়া, ঢাকা। মাদরাসা ও মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড একই বিল্ডিং-এ ছিল। পরবর্তীতে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড পশ্চিম পাশে স্থানান্তর হয়। প্রথম দিন আলিম শ্রেণীর ক্লাশে ঢুকে টেবিলের নীচে হারিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা আমার। কারণ আমি তখন এতো ছোট ছিলাম যে গোফও উঠেনি এবং সাইজে ছোট হওয়ায় ক্যালকাটা থেকে নিয়ে আসা ঐসব উচু টেবিলে লেখা অত্যন্ত কষ্টকর ছিল আমার জন্য। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আলিয়া হোস্টেলে জীবন কাটতে লাগলো।
ওস্তাদদের মুখে শুনতে লাগলাম আলিয়া মাদরাসার শায়খুল হাদীস গণের স্তুতি। বিশেষভাবে সবার মুখে মুখে ছিলেন সৈয়দ আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেী বারাকাতী (রহ.) কারণ ওনার ছাত্রগণই তখন আলিয়ার শিক্ষকবৃন্দ। ছাত্রদের মুখে মুখে যে সব শায়খুল হাদীস গণের নাম শুনতাম মওলানা ওবাইদুল হক জালালাবাদী (রহ.), মাওলানা মিয়া মুহাম্মদ কাসেমী (রহ.), মাওলানা মাহবুবুল হক (রহ.), মাওলানা ফখরুদ্দীন (রহ.), মাওলানা ওজিহ উদ্দিন প্রমুখ। সে সময় আমাদের আলিমের ক্লাশ হতো দু’ তলায়, তখন কামিলের ক্লাশ হতো নীচ তলায় ও তিন তলায়। আলিয়া হোস্টেল থেকে বের হয়ে একাডেমিক ভবনের করিডোরে ঢুকতেই কোন কোন শায়খুল হাদীসের সামনে পড়ে যেতাম। কাউকে সালাম দেয়ার সুযোগ পেতাম, আবার কেউ কেউ সালাম দেয়ার কোন সুযোগই দিতেন না বরং সালামের উত্তর দিতে বাধ্য করতেন। আমার জীবনে আগে কখনই এমন ওস্তাদের সাক্ষাৎ মেলেনি। মিয়া মুহাম্মদ কাসেমী (রহ.) যাঁকে আমি কখনই আগে সালাম দিতে পারেনি। ভাবছি দু’কদম এগিয়ে গিয়ে সালাম দিবো কিন্তু তার আগেই উনার মুখ থেকে বেরিয়ে আসতো ”আস-সালামু আলাইকুম”। ঢাকা আলিয়া আমার জীবনটাকেই পাল্টে দিলো। বুঝতে পারলাম মানুষ যত বড় হয়, ততো বিনয়ী ও নম্র হয়। তিনমাস সাইন্সে পড়ার পর সাধারণ বিভাগে পড়ে বড় আলিম হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আবেদন নিয়ে গেলাম হেড মাওলানা ওবাইদুল হক জালালাবাদী (রহ.) এর অফিসে, যেখানে বসা ছিলেন ঐসব শায়খুল হাদীস যাদের কথা বড় ভাইদের মুখে শুনতাম। আমার বুখারীর উস্তাদ শায়খুল হাদীস আল্লামা ফখরুদ্দীন জাতজামী (রহ.)ও বসা ছিলেন। সেদিনের ঐ স্মুতি আমার জীবনে কখনো ভোলা সম্ভব নয়। শায়খুল হাদীস ওবাইদুল হক জালালাবাদী (রহ.)সহ সবাই আমাকে সাধুবাদ দিলেন আমি আলিম হতে চাই বলে এবং হাত তোলে দু’আ করলেন, আমার জন্য যা ছিল আমাার ওস্তাদগণের শ্রেষ্ঠ উপহার। আমি ভাবতে লাগলাম ঐসব স্বনামধন্য ওস্তাদগণের দারসে বসার সুযোগ কবে মিলবে তখন ঘটনাচক্রে আলিম ক্লাশেই পেয়ে গেলাম শারহুল বেকায়ার উস্তাদ হিসেবে শায়খুল হাদীস ওবাইদুল হক জালালাবাদী (রহ.) কে। উনার উর্দু তাকরীর আজও কানে বাজে। ফাযিল শ্রেণীতে পড়াকালীন হারালাম শায়খুল হাদীস মিয়া মুহাম্মদ কাসেমী (রহ.)কে, সড়ক দুর্ঘটানায় চলে গেলেন আল্লাহর সান্নিধ্যে।
আমি ছিলাম বই পোকা, ক্যালকাটা আলিয়ার সেই সব বইগুলো ঘাটছিলাম আর নোট করছিলাম আলিয়ার লাইব্রেরীতে বসে। কোন এক পড়ন্ত বিকেলে ফাযিল শ্রেণীর ফিকহের নোট করছিলাম আরবীতে, পেছন থেকে কেউ একজন আমার পিঠ চাপড়াচ্ছিলেন। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে সালাম দিলাম বটে, চিন্তে পারলাম না,। লাইব্রীয়ান এগিয়ে এসে বললেন উনি খাত্তানী হুজুর। আমি স্তম্ভিত, যার সুনাম সুখ্যাতি ছারছিনা দারুস সুন্নাহ মাদরাসার গন্ডি পেরিয়ে সারা বাংলার জমিনে শায়খুল হাদীস হিসেবে সেই কী না আমার পিঠ চাপড়াচ্ছেন। আমি ভাংগা ভাংগা আরবীতে উনার সাথে কথা বলছিলাম। আমার নোট বুক হাতে নিয়ে প্রশ্ন করলেন ফিকহের সকল উত্তর আরবীতে দিবো কী না? আমি বললাম না’আম, ইনশা আল্লাহ। উনার মুখ থেকে তখন আমার জন্য দোয়া বের হচ্ছিল। আমি শুধু আমিন আমিন বলছিলাম। আমি এখনও ভাবি কী করে সেই সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আমি আদায় করবো যিনি আমার জন্য ওয়ারাসাতুল আন্বিয়ার ধারক ও বাহকদেরকে দোয়ার হাত প্রসারিত করালেন।
ফাযিল পেরিয়ে যখন কামিল হাদীসে ভর্তি হলাম তখন অবসরে চলে গেলেন ওবাইদুল হক জালালাবাদী (রহ.) এবং বায়তুল মুকাররামের খতীব হিসেবে বরিত হলেন আমার উস্তাদ। কামিল হাদীসে পেলাম বাঘা বাঘা সব শায়খুল হাদীস যাদের ক্লাশে বসার বহু দিনের স্বপ্ন ছিল। যাদের অগ্রভাগে ছিলেন মাওলানা ফখরুদ্দীন (রহ.), মাওলানা ওজিহ উদ্দিন, মাওলানা আব্দুর রহীম (রহ.) মাওলানা মাহবুবুল হক (রহ.),মাওলানা আব্দুল লতিফ সিলেটীসহ প্রমুখ। আলিম ক্লাশ থেকেই আমার ক্লোজ বন্ধু ছিলেন কাজী সিরাজ, ফাযিলে যুক্ত হলো বন্ধু হিসেবে আরো একজন খান মুহাম্মদ মুফিজুর রহমান (প্রিন্সিপ্যাল, লাউড়ী রামনগর কামিল মাদরাসা, মনিরামপুর, যশোর।) কামিল হাদীসে পেলাম আরো দু’বন্ধু মো: রুহুল আমীন (সাতক্ষীরা) এবং ড. মুহাম্মদ যাকারিয়া মজুমদারকে(প্রফেসর, আল-ফিকহ এ- লিগ্যাল ষ্টাডিজ বিভাগ ইবি.)। কাজী সিরাজ একদিন আমাকে বললো আমরা বুখারী শরীফ যদি খতম করতে চাই উস্তাদের সান্নিধ্যে তাহলে ক্লাশের পড়া দ্বারা সম্ভব নয়। আমাদেরকে ক্লাশের বাইরে গিয়ে পড়তে হবে। যাহোক তার প্রস্তাব অনুযায়ী আমরা দশ বারো জন ঐ সময়কার শ্রেষ্ঠ শায়খুুল হাদীস আল্লামা ফখরুদ্দীন হুজুরকে রাজী করাতে পারলাম এবং শুরু হলো খাতমে বুখারী দারসের মিশন যেখানে আমার প্রিয় বন্ধু মুফিজও সাথী হলো। বাদ মাগরিব উস্তাদ আমাদেরকে সময় দিলেন। কখনও রাত দশটা কখনও রাত একটা এভাবে চলতে থাকলো বুখারী শরীফের তাকরীর। এ খবর চাউড় হয়ে গেলে ক্লাশেই ফুসে ঊঠলেন মাওলানা ওজিহ উদ্দিন (দা:বা) এবং বললেন: আমি তোদেরকে ক্লাশ টাইমের আগেই বুখারী শরীফ পড়াবো। শুরু হলো বুখারীর দারস আলিয়া মাদরাসার বিশাল হল রুমে দুইশত ছাত্রের মধ্যে প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্রের উপস্থিতিতে। এ ভাবে মাস খানেক চলার পর ছাত্রদের আগ্রহ কমতে থাকলো ভোর বেলার দারসে। দ্বিতীয় মাসে ছাত্রদের আগ্রহে ভাটা দেখে উস্তাদ ওজিহ উদ্দিন(দা:বা)ও আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন। আমরা যারা নিয়মিত হাজিরা দিতাম তারাও বেকায়দায় পড়ে গেলাম, তবে আমরা ১৫/২০জন চুপ করে থাকাটাই শ্রেয় মনে করলাম। একসময় উস্তাদ নিজে থেকেই ভোর বেলার হাদীস দারস বন্ধ করে দিলেন। হাদীসে পড়েছিলাম জ্ঞানার্জনে গিবতা বা ঈর্ষা বৈধ কিন্তু জ্ঞান বিতরণেও গিবতা হতে পারে এই প্রথম দেখলাম আমাদের দারসে বুখারীর দুই দিকপালকে(মাওলানা ফখরুদ্দীন (রহ.) ও মাওলানা ওজিহ উদ্দিন (দা:বা) মাঝে)। যাহোক আমরা মাওলানা ফখরুদ্দিন (রহ.) এর দারসে বুখারীতে শরীক হতে থাকলাম। কিছুদিন পর যুক্ত হলো আমার আরেক প্রিয় বন্ধু যাকারিয়া মজুমদার। উস্তাদ ফখরুদ্দিন (রহ.) দীর্ঘ সময় নিয়ে বুখারীর দারস দিতে লাগলেন আমাদেরকে। যতই দিন যেতে লাগলো আমরা অবাক আর বিষ্ময়াবিভূত হতে লাগলাম উস্তাদের তাকরীর শুনে। মনে হতে লাগলো জ্ঞানের সমুদ্র থেকে মণি মুক্তা ছড়াচ্ছেন আমাদের মাঝে। إنما الأعمال بالنيات.. এ হাদীসটির উপর তাকরীর করেছিলেন খুবসম্ভবত দুই সপ্তাহ এবং এ হাদীসের উপর দেড় শতাধিক প্রশ্নোত্তর করার পর সবচেয়ে আরাধ্য সেগুলোর উপর নিজের হাতে লেখা প্রশ্ন ও উত্তর সম্বলিত নুসখা পেলাম যা দীর্ঘ দিন আমার নিকট সংরক্ষিত ছিলো। আল-হাদীস বিভাগের ছাত্রদের মাঝে আমার উস্তাদ জীবন্ত কিংবদন্তি মাওলানা ফখরুদ্দিন সাহেবের গল্প বলছিলাম, বলছিলাম একটা হাদীসের উপরে দেড় শতাধিক প্রশ্ন ও উত্তর সম্বলিত নুসখার গল্প। একদিন আমার এক প্রিয়ভাজন ছাত্র এসে নুসখার আবদার জানালে আমি তাকে দিলাম যাতে সে ফটো কপি করে ফেরত দেয়। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য আমার উস্তাদের নিজের হাতের লেখা নুসখাটা আর ফেরত এলো না, যা এখনো আমাকে কষ্ট দেয়।
১৯৮৮ইং কামিল ফাইনাল পরীক্ষার পূর্বেই খাতমে বুখারীর তাকরীর শেষ হলো। উস্তাদ আল্লামা ফখরুদ্দিন (রহ.) আমাদের কয়েকজনকে সিহাহ সিত্তার সনদ সরবরাহ করলেন এবং ভাইবা বোর্ডে যেনো আমরা হাদীস বর্ণনা সনদসহ করি সে তাকীদও দিলেন। ফাইনাল পরীক্ষা শেষে ভাইবা নিতে আগমন করলেন ছারছানী দারুস সুন্নাহ মাদরাসার স্বনামধন্য অধ্যক্ষ মাওলানা শরীফ মো: আব্দুল কাদির (রহ.)। আমি ভাইবা বোর্ডে ঢুকে সালাম বাদ বসলাম। বুখারী শরীফের প্রথম হাদীসটি পড়তে বলা হলো। আমি শুরু করলাম হাদ্দাসানা শায়খুনা আল্লামা ফখরুদ্দি ইবনু মুফতী শাফিউর রহমান আন মুফতি সাইয়্যেদ আমীমুল ইহসান ইবনুস সাইয়্যেদ আব্দুল মান্নান আল-মুজাদ্দেদী আল-বারাকাতী বলার পরই বোর্ডে উপস্থিত আমার আরেক উস্তাদ শায়খুল হাদীস আল্লামা ওজিহ উদ্দিন আমাকে থামতে বললেন। এরপর উস্তাদ বললেন আমার এবং ফখরুদ্দিন সাহেবের একই উস্তাদ এবং সনদ একই। আমি পুনরায় শুরু করলাম হাদ্দাসানা উস্তাযুনাল মুহতারাম শায়খুল হাদীস আল্লামা ফখরুদ্দিন ওয়া উস্তাযুনাল মুহতারাম শায়খুল হাদীস আল্লামা ওজিহ উদ্দিন আন মুফতি সাইয়্যেদ আমীমুল ইহসান ইবনুস সাইয়্যেদ আব্দুল মান্নান আল-মুজাদ্দেদী আল-বারাকাতী বলতে বলতে ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল আল-বুখারী (রহ.) পর্যন্ত সনদ মুখস্থ বললাম, এরপর ইমাম বুখারীর উস্তাদ থেকে নিয়ে রাসূল (সা.) পর্যন্ত সনদ বুখারী শরীফের লিখিত সনদ পড়ে হাদীস পাঠ করলাম। পড়া শেষ হওয়া মাত্রই সুবহানাল্লাহ বলে মাওলানা আব্দুল কাদির সাহেব বোর্ডে উপস্থিত আমার দুই উস্তাদকে প্রশংসা ভাসালেন। ভাইবা শেষ হলে আমাদের কয়েকজনকে পুনরায় ডেকে নেয়া হলো। আমি কিছুটা স্তম্ভিত ছিলাম কী না কী হয় সেটা ভেবে। যাহোক ভিতরে ঢুকার পর মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ আব্দুল কাদির সাহেব আমাদের বায়োডাটা চাইলেন এবং বললেন তোমাদের চাকুরী আমি দেবো। আমি ততদিনে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের অনার্সের ছাত্র কাজেই বললাম পরে যোগাযোগ করবো ইনশা আল্লাহ।
বিশ^বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে আমি যখন ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের আল-হাদীস এ- ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে যোগদান করলাম তখন শুনলাম আমার উস্তাদ মাওলানা ফখরুদ্দিন সিলেট আলিয়ায় যোগদান করেছেন। মনের বাসনা ছিলো উস্তাদের পায়ে সালাম ঠুকবো কিন্তু সেটা হয়ে উঠলো না। সিলেটের অধিবাসী আমার হাদীস বিভাগের প্রিয় ছাত্র মঈনুল ইসলাম পারভেজকে বললাম আমার উস্তাদকে আমার তরফ থেকে সালাম জানাবে এবং আমার অনুরোধটাও জানাবে উনি যেন দয়া করে উনার হাদীসের সনদটি আমাকে দান করেন, কারণ আমি এখানে হাদীসের খেদমতের সুযোগ পেয়েছি। (আল্লাহ আমার উস্তাদকে জাযায়ে খাইর দান করুন এবং বেহেশতে উঁচু মাকাম দান করুন।) মঈনুল ইসলাম পারভেজের মুখে আমার কথা শুনার পর উস্তাদ নিজে থেকেই বলেছেন ও ময়নুল কাজী সিরাজ ও মুফিজের বন্ধু। এরপর উস্তাদ আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছেন এ বলে যে তার সন্তান ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের আল-হাদীস বিভাগের টিচার হয়েছে। আমার উস্তাদ মাওলানা ফখরুদ্দিন (রহ.) এর প্রিন্ট করা সনদ যা ফটোকপি করে দিয়েছেন তিনি, সেটি যখন আমার ছাত্র আমার হাতে পৌছালো তখন কী যে আনন্দ হচ্ছিল ভাষা তা ধারণ করতে সক্ষম নয়। বিষ্ময়ের ঘোর কাটতেও বেশ সময় লাগলো যে আমার উস্তাদ কতটা আন্তরিক হলে আমার ছাত্রের হাতে আমার জন্য এমন উপহার তিনি দিতে পারেন। তিনি আমাকে ইজাজাহ প্রদান করেছেন সিহাহ সিত্তার সনদের এবং তাতে ০৮.০৯. ২০০৫ইং স্বাক্ষর করে পাঠিয়েছেন। আমি আমার ছাত্রদেরকে জানালাম এ সুখের খবর যা অনেকেই বিষ্ময় প্রকাশ করছিলো যে আমার উস্তাদ থেকে রাসূল (সা.) পর্যন্ত সনদের মেল বন্ধন এখন আমার হাতে। আমি হাদীস বর্ণনা করছি যেন আল্লাহর রাসূলের মুখ থেকে। আল্লাহ আকবার, এটাই ইসলাম।
২০০৬ইং অগাষ্ট মাসে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে মাদরাসাগুলো এসে গেলো। ভাবলাম কোন এক ফাকে সিলেট গিয়ে উস্তাদের সান্নিধ্যে কিছু সময় কাটাবো। আমাদের ইবির অধীনে কামিল পরীক্ষা-২০০৭ ও ২০০৮ এক সাথে শুরু হলো। মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ফয়েজ মুহাম্মদ সিরাজুল হক সাহেব আমাকে বললেন সিলেট আলিয়ার পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে আমার সাথে তোমাকে যেতে হবে। আমি খুব আনন্দিত হলাম কারণ আমার উস্তাদের সাক্ষাৎ মিলবে। কিন্তু যেয়ে শুনলাম উনি দু’বছর আগেই অবসরে চলে গেছেন। এখন হয়তো চট্টগ্রামে আছেন এ ভাবনা নিয়েই ফিরে এলাম সিলেট থেকে। এর বছর দুয়েক পরে আমার ছাত্র ও কলিগ ড. সৈয়দ মাকসুদূর রহমান(আল-হাদীস এ- ইসলামিক ষ্টাডিজ বিভাগের ১ম ব্যাচের ছাত্র ও গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত ছাত্র এবং বর্তমানে বিভাগীয় সভাপতি) চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদরাসায় ভাইবা নিতে গিয়ে আমার উস্তাদ (মাওলানা ফখরুদ্দীন রহ.) এর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হয়, কারণ আমার মুখে বহুবার আমার উস্তাদের নাম সে শুনেছে। তার সাক্ষাৎ পরবর্তীতে আমি জানতে পারলাম উস্তাদ এখনও হাদীসের দারসে রয়েছেন যা আমাকে আরোও আনন্দিত করলো। হঠাত চট্টগ্রাম থেকে উস্তাদের একটি চিঠি আমার কাছে পৌঁছালো যেটি পাঠিয়েছিলেন তিনি ০৯.০৮.২০০৯ইং। চিঠি খুলে আনন্দের অশ্রু বন্যায় ভেসে যাচ্ছিলাম, চিঠিটি বারবার পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম, আমি উস্তাদের আজিজম প্রফেসর। উস্তাদ আমার এবং প্রফেসর ড. আ. ন. ম. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) এর যৌথভাবে লেখা ”বহুস ফি উলুমুল হাদীস” বইটি পুরোটা পড়েছেন এটিও আমাকে বিস্মিত করেছে। কামিল হাদীসে ঢাকা আলিয়াতে পড়াকালীন যেভাবে আমাদেরকে আপনি সম্বোধন করে কথা বলতেন, সেভাবেই চিঠিতেও সে ভাষার প্রয়োগ আমাকে টেনে নিয়ে গেলো ছাত্র জীবনের সেই সোনালী অতীতে। যে অতীত আমাকে এখনও ভাবিত করে দল বেঁধে আলিয়া হোস্টেল থেকে বের হয়ে উস্তাদের খাজে দেওয়ান রোড বা উর্দু গির্দারোড এর ছোট বাসায়, পরবর্তীতে আলিয়ার দক্ষিণপূর্ব ব্লকের রুমে গিয়ে তাকরীর শুনে রাত বারোটায় আবার হোস্টেলে ফিরে আসা। যাহোক আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সাথে পরামর্শক্রমে উস্তাদের চাহিদা মোতাবেক বই এবং আমার নিজের তরফ থেকে আরও কিছু অতিরিক্ত বই পাঠালাম। ফোনে উস্তাদের সাথে যখন কথা হলো উস্তাদ অত্যন্ত আনন্দিত ছিলেন এবং আমিও ছিলাম উতফুল্লু, আমাকে বললেন চট্টগ্রাম এলে আমার এখানে অবশ্যই বেড়িয়ে যাবে। আমিও কথা দিলাম ইনশা আল্লাহ আসবো। কিন্তু আফসোস! আমি কথা রাখতে পারেনি। কর্তৃপক্ষ আমাকে ভাইবা নিতে পাঠালো দারুল উলুম চট্টগ্রামে, ভাইবা শেষে ঢাকায় জরুরী কাজ থাকায় পরদিন ভোরেই ফিরতে হলো, যাওয়া হলো না উস্তাদের সান্নিধ্যে। ভাবলাম আবার একদিন আসবো, কিন্তু সেদিন আসার আগেই আমার উস্তাদ চলে গেলেন আল্লাহর সান্নিধ্যে। ২০১১ সালের ২৬ মে যখন আমার উস্তাদের ছেলে ফোনে জানালো এখবর তখন আসলে আমি নিথর হয়ে গেলাম, ইন্নালিল্লাহ পড়ে বোকার মতো প্রশ্ন করলাম আমার নাম্বারটা কিভাবে পেলেন? ছেলে জানালো আব্বুর মোবাইলে আপনার নাম্বারটা সেভ্ করা আছে এবং কল লিষ্ট ধরেই সবাইকে জানাচ্ছি।
আজ যখন উস্তাদকে নিয়ে স্মৃতির পাতা উল্টাচ্ছিলাম পেয়ে গেলাম উস্তাদের সেই আজিজম প্রফেসরের প্রতি লেখা চিঠি এবং প্রিন্টেড সনদের চঠি বই যা পড়ে আমার দু’চোখ বেয়ে শুধু অশ্রুই ঝরছে। নিজেকে বড়ই অপরাধী মনে হয়, কেন জীবিত কিংবদন্তির পা ছুয়ে সালাম দিতে পারলাম না, আল্লাহ আমায় ক্ষমা করো, আমার প্রাণ প্রিয় উস্তাদের ভুল ত্রুটিগুলো মার্জনা করো, জান্নাতুল ফেরদাউসের মেহমান বানিয়ে নাও এবং জান্নাতে যেন উস্তাদের সাক্ষাত লাভে ধন্য হই এ আকুতি করি তোমার দরবারে, ওরাসাতুল আন্বিয়ার দায়িত্ব পালনের ভার বহনের শক্তি দাও হে প্রভু! কবুল করো মোর এ মুনাজাত।
اللهم اغفرله وارحمه وعافه واعف عنه وأكرم نزله و اغسله بالماء و الثلج والبرد و نقه من الخطايا كما ينقي الثوب الأبيض من الدنس وابدله دارا خيرا من داره و زوجا خيرا من زوجه و أهلا خيرا من أهله وادخله في فسيح جنتك الفردوس الأعلي يا رب الكعبة و يا صاحب العرش العظيم.
 
 
 
লেখক: প্রফেসর ড. মো: ময়নুল হক
সাবেক সভাপতি, আল-হাদীস এ- ইসলামিক ষ্টাডিজ বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ।
 
==আপনি কি পাঠক?==