রবার্ট ক্লাইভ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
৬০ নং লাইন:
গোলন্দাজ বাহিনীর প্রধান নিহত হওয়ার পর সিরাজউদ্দৌলা মীর জাফর ও রায় দুর্লভকে তাদের অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে তীব্র বেগে অগ্রসর হতে নির্দেশ দেন। কিন্তু উভয় সেনাপতি তার নির্দেশ অমান্য করেন। তাদের যুক্তি ছিল গোলন্দাজ বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া অগ্রসর হওয়া আত্মঘাতী ব্যাপার। কিন্তু কোম্পানি ও নবাবের বাহিনীর মধ্যে তখন দূরত্ব মাত্র কয়েকশত গজ। বিশ্বস্ত সেনাপতি মোহন লাল নবাবকে পরামর্শ দেন যুদ্ধবিরতি ঘটলে বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী কিন্তু সিরাজ মীর জাফর প্রমুখের পরামর্শে পশ্চাৎপসরণের সিদ্ধান্ত নেন। বিকেল পাঁচটায় সিরাজউদ্দৌলার বাহিনী নির্দেশনার অভাবে এবং ইংরেজ বাহিনীর গোলন্দাজি অগ্রসরতার মুখে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে অর্থাৎ পরাজয় স্বীকার করে। নবাবের ছাউনি ইংরেজদের অধিকারে আসে। ইংরেজদের পক্ষে ৭ জন ইউরোপীয় এবং ১৬ জন দেশীয় সৈন্য নিহত হয়। তখন কোনো উপায় না দেখে সিরাজউদ্দৌলা রাজধানী রক্ষা করার জন্য ২,০০০ সৈন্য নিয়ে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু রাজধানী রক্ষা করার জন্যেও কেউ তাকে সাহায্য করেনি। সিরাজউদ্দৌলা তার সহধর্মিণী লুৎফুন্নেসা ও ভৃত্য গোলাম হোসেনকে নিয়ে রাজধানী থেকে বের হয়ে স্থলপথে ভগবানগোলায় পৌঁছে যান এবং সেখান থেকে নৌকাযোগে [[পদ্মা]] ও [[মহানন্দা|মহানন্দার]] মধ্য দিয়ে উত্তর দিক অভিমুখে যাত্রা করেন। তার আশা ছিল পশ্চিমাঞ্চলে পৌঁছাতে পারলে ফরাসি সেনাপতি মসিয়ে নাস-এর সহায়তায় [[পাটনা]] পর্যন্ত গিয়ে রাজা রামনারায়ণের কাছ থেকে সৈন্য সংগ্রহ করে ফরাসি বাহিনীর সহায়তায় বাংলাকে রক্ষা করবেন। কিন্তু তার সে আশা পূর্ণ হয়নি। সিরাজ পথিমধ্যে বন্দি হন ও মিরনের হাতে বন্দি অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে।
 
== রবার্ট ক্লাইভের শাসনামল ও জীবনাবসান ==
==শেষ জীবন==
চন্দননগর থেকে ফরাসিদের বিতাড়ন ও মীরজাফরকে সিরাজউদ্দৌলার স্থলাভিষিক্ত করা এ দুটি ঘটনার মূল্যায়ন করতে গিয়ে ক্লাইভ পলাশী যুদ্ধ শেষ হওয়ামাত্র কোর্ট অব ডাইরেক্টর্সকে লিখেছিলেন যে, ফরাসিদের পরাজিত ও বাংলা থেকে বিতাড়িত করা ছিল তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব। ইউরোপ ও পৃথিবীব্যাপী সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর মতামত সম্ভবত সঠিক ছিল। পলাশী যুদ্ধে তাঁর বিজয়কে ক্লাইভ আর্কটের ন্যায় শুধু একজন নওয়াবের পরিবর্তন হিসেবে দেখেছিলেন। কিন্তু ক্লাইভ শীঘ্রই অনুধাবন করেন যে, বস্ত্তত নীরবে তিনি প্রাচ্যে একটি সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছেন।
 
৬৯ নং লাইন:
ক্লাইভ ১৭৬৫ সালে কলকাতা পৌঁছেন। তিনি সমুদ্রপথে বাংলা অভিমুখে যাত্রাকালেই তাঁর অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মপদ্ধতির পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল গভর্নর হিসেবে তাঁর দ্বিতীয় শাসনকালকে যতখানি সম্ভব তাঁর জাতির জন্য অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করে তোলা। এ কাজে তিনি প্রত্যাশার অতিরিক্ত সাফল্য অর্জন করেন। তিনি এলাহাবাদ যান এবং খেতাবসার সম্রাটের নিকট থেকে বার্ষিক নিয়মিত ২৬ লক্ষ সিক্কা টাকার বিনিময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দীউয়ানি লাভ করেন। কোম্পানির নামে দীউয়ান এর পদ গ্রহণের সময় তিনি সম্পূর্ণরূপে এর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তিনি অনুধাবন করেছিলেন যে, রাজকীয় ফরমান বলে এদেশে বাণিজ্যরত অন্যান্য সমুদ্রোপকূলীয় কোম্পানি স্বভাবতই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দীউয়ানি এখতিয়ার মেনে নিতে অস্বীকার করবে; এর পরিণাম হবে যুদ্ধ এবং অবশ্যই তা পরিহার করতে হবে। ক্লাইভ এও বুঝতে পেরেছিলেন যে, দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কোম্পানির কোনো অভিজ্ঞতা নেই এবং বাস্তবিকপক্ষে বাংলার গ্রামগঞ্জ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করার জন্য জনবলও কোম্পানির নেই। এ পরিস্থিতিতে দেশটি সরাসরি শাসন করা থেকে বিরত থেকে ক্লাইভ সর্বোচ্চ রাজনৈতিক দূরদর্শিতা প্রদর্শন করেছেন। তিনি কোম্পানির পক্ষে রাজস্ব ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য সৈয়দ মুহম্মদ রেজা খান নামে একজন পারসিক ভাগ্যান্বেষীকে নায়েব দীউয়ান (ডেপুটি দীউয়ান) পদে নিয়োগ করেন। অন্য কথায়, সাধারণভাবে দ্বৈতশাসন (১৭৬৫) ব্যবস্থা নামে পরিচিত ক্লাইভ প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থায় অর্থ বা জনবলে কোনো বিনিয়োগ ব্যতিরেকে এবং কোনো প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ না করে কোম্পানি দেশের রাজস্ব ভোগ করবে। এটি হচ্ছে বিনিয়োগ ছাড়া আয়ের একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
 
কোম্পানির স্বার্থের দিক থেকে বিবেচনা করলে এ ব্যবস্থা তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক উভয় ক্ষেত্রেই ছিল বিস্ময়কর। এমনকি ক্লাইভ নিজেও কল্পনা করতে পারেন নি যে, তাঁর দীউয়ানি ব্যবস্থা শীঘ্রই একটি সাম্রাজ্যের রূপ পরিগ্রহ করবে। ক্লাইভ একজন জাতীয় বীরে পরিণত হন। তাঁর পূর্ণাবয়ব প্রতিমূর্তি ও আবক্ষ মূর্তিগুলি ইন্ডিয়া অফিস ও পার্লামেন্ট ভবনসহ বিভিন্ন প্রকাশ্য স্থানে স্থাপিত হয়। একজন অদম্য যোদ্ধা ও একটি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট ক্লাইভ তাঁর জীবনে একটি ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কোনো পরাজয়ের সম্মুখীন হন নি। তিনি কখনও মনের বিষণ্ণতাকে অতিক্রম করতে পারেন নি। তাঁর প্রথম জীবনে আত্মহত্যামূলক প্রবণতার একটি প্রমাণ আছে। বিজয়ের রোমাঞ্চকর ঘটনাবলি, অভিবাদন ও গৌরবগাথা তাঁর ভারতীয় জীবনকে উচ্ছ্বসিত করে রেখেছিল। কিন্তু লন্ডনে শেষ বারের মতো প্রত্যাবর্তনের পর যখন তাঁর জীবন তুলনামূলকভাবে নিঃসঙ্গ ও নীরব হয়ে পড়ে তখনই সমস্যাটি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে এবং পরিণামে তিনি এর শিকারে পরিণত হন। ১৭৭৪ সালের ২২ নভেম্বর ক্লাইভ নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন।
 
==তথ্যসূত্র==