রোবের্ট কখ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
Zaheen (আলোচনা | অবদান)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
৩ নং লাইন:
| image = RobertKoch cropped.jpg
| birth_name = হাইনরিখ হের্মান রোবের্ট কখ
| birth_date = {{birthজন্ম dateতারিখ|df=yes|1843|12|11}}
| birth_place = [[ক্লাউস্টহাল]], [[হানোফার রাজ্য]], [[জার্মান রাজ্যসংঘ]]
| death_date = {{deathমৃত্যু dateতারিখ and ageবয়স|df=yes|1910|5|27|1843|12|11}}
| death_place = [[বাডেন-বাডেন]], [[বাডেনের মহাডিউকরাজ্য]], [[জার্মান সাম্রাজ্য]]
| nationality = [[জার্মানি|জার্মান]]
১৬ নং লাইন:
| known_for = [[ব্যাকটেরিয়া বিজ্ঞান]]-এর প্রতিষ্ঠাতা<br />[[রোগজীবাণু তত্ত্ব]] ক্ষেত্রে [[কখের স্বতঃসিদ্ধসমূহ]] <br/>[[অ্যানথ্রাক্স]], [[যক্ষ্মা]] ও [[কলেরা]]র জীবাণু পৃথককরণ
| prizes = {{Plainlist|
* যুক্তরাজ্যের [[রয়াল সোসাইটির সভ্য]] (ForMemRS) (১৮৯৭)<ref name=frs>{{citeওয়েব webউদ্ধৃতি|archiveurlআর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20150316060617/https://royalsociety.org/about-us/fellowship/fellows/|archivedateআর্কাইভের-তারিখ=2015-03-16|urlইউআরএল=https://royalsociety.org/about-us/fellowship/fellows/|publisherপ্রকাশক=Royal Society|locationঅবস্থান=London|titleশিরোনাম=Fellows of the Royal Society}}</ref>
* [[চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার]] (১৯০৫)}}
| signature = Robert Koch signature.svg
}}
'''হাইনরিখ হের্মান রোবের্ট কখ'''<ref group="টীকা">এই জার্মান ব্যক্তি বা স্থাননামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে [[উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় জার্মান শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ]] শীর্ষক রচনাশৈলী নিদের্শিকাতে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।</ref> ({{lang-de|Heinrich Hermann Robert Koch}}) (জন্ম ১১ই ডিসেম্বর, ১৮৪৩, ক্লাউস্টহাল, [[হানোফার]], [[জার্মানি]]; মৃত্যু ২৭শে মে, ১৯২০, [[বাডেন-বাডেন]], জার্মানি) একজন [[নোবেল পুরস্কার]] বিজয়ী জার্মান চিকিৎসক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি পরীক্ষাগারে অনেক শ্রম ও যত্ন সহকারে গবেষণাকর্ম সম্পাদন করে [[অণুজীব]]-সংক্রান্ত অধ্যয়ন ও গবেষণাকে আধুনিক [[ব্যাকটেরিয়া বিজ্ঞান|ব্যাকটেরিয়া বিজ্ঞানে]] উন্নীত করেন। তিনি প্রমাণ করে দেখান যে বিশেষ বিশেষ [[জীবাণু]]র কারণে বিশেষ বিশেষ রোগ ঘটে। তাকে ব্যাকটেরিয়া বিজ্ঞানের পিতা হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি [[অ্যানথ্রাক্স]], [[যক্ষ্মা]] ও [[কলেরা]]র মত রোগ সৃষ্টিকারী [[ব্যাকটেরিয়া]]গুলিকে শনাক্ত করেন এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রোগের [[বাহক প্রাণী]]দের আবিষ্কার করেন।
 
কখ ১৮৪৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর তারিখে জার্মানির [[হার্ত্‌স পর্বতমালা]]তে অবস্থিত ক্লাউস্টহাল-সেলারফেল্ড নামের একটি খনি শিল্পশহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি [[খনিজ]] পদার্থ, [[উদ্ভিদ]], খুদে প্রাণী ইত্যাদি সংগ্রহ করতেন এবং বিরাট কোনও অভি
যাত্রী হবার স্বপ্ন দেখতেন। ১৮৬২ সালে তিনি [[গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়|গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে]] উচ্চশিক্ষার্থে প্রবেশ করেন এবং সেখানে [[উদ্ভিদবিজ্ঞান]], [[পদার্থবিজ্ঞান]], [[গণিত]] ও [[চিকিৎসাবিজ্ঞান]] নিয়ে পড়াশোনা করেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল অভিযান চিকিৎসক হিসেবে কাজ করা। [[স্নাতক]] হবার পরে কখ চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথমে তিনি হামবুর্গ সাধারণ হাসপাতালে নবিশী করেন ও পরে মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী শিশুদের একটি কেন্দ্রেও কাজ করেন। এরপর তিনি ব্যক্তিগত পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা দিতে শুরু করেন। হামবুর্গ শহরে তিনি এমি ফ্রাৎসের সাথে পরিচিত হন ও তাকে বিয়ে করেন। এরপর তিনি একজন পল্লী চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পেশাগত কাজকর্মের পাশাপাশি তিনি জ্ঞানের আরও বহু বিভিন্ন শাখায় আগ্রহী ছিলেন, যাদের মধ্যে [[পুরাতত্ত্ব]], [[নৃবিজ্ঞান]], পেশাক্ষেত্রের রোগব্যাধি (যেমন [[সীসা]]র বিষক্রিয়া) এবং ব্যাকটেরিয়া বিজ্ঞান নামক নতুন একটি শাস্ত্র ছিল অন্যতম।
 
চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি কখ [[আতশী কাচ]] দিয়ে ক্ষুদ্রাকার বস্তু ও পদার্থ অধ্যয়ন করা শুরু করেন। ২৮তম জন্মদিনে তিনি তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে একটি [[অণুবীক্ষণ যন্ত্র]] উপহার হিসেবে পান। এরপর ১৮৭০-এর দশকে তিনি অ্যানথ্রাক্স রোগের উপরে গবেষণা শুরু করেন। অ্যানথ্রাক্স ছিল উষ্ণ-রক্তের প্রাণীদের জন্য একটি প্রাণঘাতী রোগ। তিনি অ্যানথ্রাক্সের অনেকগুলি জীবাণু শনাক্ত ও আলাদা করেন এবং এগুলির বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন ফলন তৈরি করেন। এরপর ঐ ফলানো জীবাণুগুলি দিয়ে তিনি সুস্থ প্রাণীর (ইঁদুরের) দেহে সংক্রমণ ঘটান এবং দেখানোর চেষ্টা করেন কোন্‌ জীবাণু কোন্‌ ধরনের সংক্রমণ ঘটায়। তিনি প্রমাণ করে দেখান যে [[অ্যানথ্রাক্স ব্যাসিলাস]] নামের ব্যাকটেরিয়ার জীবন্ত দণ্ড বা রেণুবিশিষ্ট পদার্থ যখন সুস্থ ইঁদুরের রক্তে [[সূচিপ্রয়োগ]] করে প্রবেশ করানো হয়, তখন সেই সুস্থ ইঁদুরের দেহেও অ্যানথ্রাক্স রোগ সৃষ্টি হয়। তিনি পোল্যান্ডের [[ব্রেসলাউ বিশ্ববিদ্যালয়|ব্রেসলাউ বিশ্ববিদ্যালয়ের]] বিজ্ঞানীদের কাছে তার গবেষণার ফলাফল পেশ করেন। এভাবে তিনি বিশ্বের ইতিহাসে প্রথমবারের মত সন্দেহাতীতভাবে ও নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে একটি নির্দিষ্ট জীবাণু একটি নির্দিষ্ট রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। কখই সর্বপ্রথম ব্যাসিলাস পরিবারের অ্যানথ্রাক্স রোগসৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া পরীক্ষাগারে আলাদা করে এর জীবনচক্র অধ্যয়ন করে একটি প্রতিরোধী টিকা প্রস্তুত করতে সক্ষম হন। তিনিই প্রথম ব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া ও রোগের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রমাণ করেন। কখের গবেষণায় পরিস্কারপরিষ্কার হয়ে যায় যে সংক্রামক রোগগুলি কোনও রহস্যময় পদার্থের কারণে নয়, বরং নির্দিষ্ট কিছু অণুজীবের কারণে সৃষ্ট হয়।
 
ফরাসি বিজ্ঞানী [[লুই পাস্তুর|লুই পাস্তুরের]] প্রস্তাবিত ধারণার উপর ভিত্তি করে কখ ব্যাকটেরিয়ার বিশুদ্ধ ফলন বা কালচারের কৌশল আরও নিখুঁত করেন। একজন গবেষক কীভাবে এইসব অণুজীব নিয়ে কাজ করবেন, কীভাবে এগুলিকে সংক্রমিত প্রাণীদেহ থেকে সংগ্রহ করবেন, কীভাবে এগুলিকে কৃত্রিমভাবে পরীক্ষাগারে ফলাবেন এবং কীভাবে এগুলিকে ধ্বংস করবেন, এ ব্যাপারে কখ স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেন। রোগবিজ্ঞানে কখের দেওয়া স্বতঃসিদ্ধগুলি আজও মৌলিক ভিত্তিস্বরূপ। কোনও নির্দিষ্ট রোগ কোনও নির্দিষ্ট জীবাণু দ্বারা সংঘটিত হয়েছে কি না, তা প্রমাণ করার জন্য এই স্বতঃসিদ্ধগুলি মানদণ্ড হিসেবে কাজ করে। কখের স্বতঃসিদ্ধগুলি এরকম - ১) রোগসৃষ্টিকারী জীবাণু সর্বদা অসুস্থ প্রাণীতে পাওয়া যাবে, সুস্থ প্রাণীদেহে নয়। ২) জীবাণুটিকে অসুস্থ প্রাণী থেকে আলাদা করা যাবে এবং আলাদা করা জীবাণুটিকে পরীক্ষাগারে বিশুদ্ধ ফলন পদ্ধতিতে পুনরুৎপাদন করা যাবে। ৩) ফলনে উৎপন্ন জীবাণুটিকে যদি একটি সুস্থ প্রাণীতে প্রবেশ করা হয়, তাহলে সেটি অসুস্থ হয়ে পড়বে। ৪) নতুন অসুস্থ প্রাণীর দেহ থেকে রোগ-সৃষ্টিকারী জীবাণুকে আবার পৃথক করে আবার বিশুদ্ধ ফলন করলে একই ধরনের জীবাণু পাওয়া যাবে। কখ তাঁর এই পর্যবেক্ষণগুলি তৎকালীন বিখ্যাত জার্মান রোগতত্ত্ববিদ [[ইউলিউস ফ্রিডরিখ কোনহাইম]] ও তার সহযোগীদের সাথে ভাগ করে নেন। ঐ সহযোগীদের একজন ছিলেন ব্যাকটেরিয়াবিজ্ঞানী [[পাউল এরলিখ]], যিনি পরবর্তীতে আধুনিক অনাক্রম্যবিজ্ঞানের জনক হিসেবে স্বীকৃত লাভ করেন।
 
১৮৮০ সালে ক্ষতের সংক্রমণ-সংক্রান্ত ব্যাকটেরিয়াবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকর্ম সমাপ্ত করার প্রেক্ষিতে জার্মান সরকার কখকে বার্লিন অবস্থিত সাম্রাজ্যিক স্বাস্থ্য দপ্তরের সরকারী পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগদান করে। এখানে তিনি তাঁর কর্মজীবনের বহু গবেষণাকর্ম সম্পাদন করেন। ১৮৮১ সালে তিনি যক্ষ্মারোগের উপরে গবেষণা শুরু করেন। এর পরের বছরেই অর্থাৎ ১৮৮২ সালে তিনি যক্ষ্মা রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু তথা ব্যাকটেরিয়াটি (টিউবার্কল ব্যাসিলাস) আলাদা করতে সক্ষম হন এবং এটিকে রোগটির কারণ হিসেবে প্রমাণ করে দেখান। সারা বিশ্বজুড়ে গবেষকরা কখের এই আবিষ্কার সঠিক বলে নিশ্চিত করেন। এই আবিষ্কারের পরে সংক্রামক রোগনির্ণয় পদ্ধতিতে উন্নয়ন সাধিত হয় এবং দেহজ নিঃসরণ বিশেষ করে কফের থুতুতে ব্যাসিলার ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি প্রমাণ করার পরীক্ষা চালু হয়।
 
১৮৮৩ সালে কখ [[মিশর|মিশরে]] ও [[ভারত|ভারতে]] স্থানীয়ভাবে [[মহামারী]] পর্যায়ে চলে যাওয়া কলেরা বা ওলাওঠা রোগ নিয়ে গবেষণা করার লক্ষ্যে গঠিত একটি কমিশনের প্রধান নির্বাচিত হন। ঐ বছরই তিনি কলেরা সৃষ্টিকারী ব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া ধরনের জীবাণুটি আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। তিনি দেখান যে ব্যাকটেরিয়াটি মূলত পানির মাধ্যমে বাহিত হয়ে কলেরা রোগের সংবহন ঘটায়। এছাড়া [[রিন্ডারপেস্ট]] নামক গবাদি পশুর সংক্রামক মহামারী রোগের জন্য টিকা প্রস্তত করেন। ফলে জার্মানিতে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। তাঁকে ২৫ হাজার মার্কিন ডলারের সমতুল্য অর্থ দেওয়া হয় এবং গবেষণাকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য ১৮৯১ সালে তাঁকে বার্লিনের একটি বৃহৎ উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, যার নাম ছিল সংক্রামক ব্যাধিসমূহের উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্র। বর্তমানে এটিকে রোবের্ট কখ উচ্চতর গবেষণা কেন্দ্র নামকরণ করা হয়েছে। ১৮৯০ সালে তিনি [[টিউবারকুলিন]] নামের একটি পদার্থ আবিষ্কার করেন; পদার্থটিকে শুরুতে ত্রুটিবশত যক্ষ্মার একটি প্রতিকারমূলক ঔষধ হিসেবে গণ্য করা হলেও বর্তমানে এটিকে যক্ষ্মার উপস্থিতি শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। এরপর কখ [[পূর্ব আফ্রিকা]] ও [[পশ্চিম আফ্রিকা]]র কীটপতঙ্গ-বাহিত [[গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ]]ব্যাধিগুলি নিয়ে গবেষণা করা শুরু করেন। ১৯০৪ সালে অবসর গ্রহণের আগ পর্যন্ত কখ সেখানে কর্মরত ছিলেন। কখ ১৯০৫ সালে তাঁর কাজের জন্য শারীরবিজ্ঞান বা চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।