মহাত্মা গান্ধী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

[অপরীক্ষিত সংশোধন][অপরীক্ষিত সংশোধন]
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
৩৪ নং লাইন:
| signature = চিত্র:মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী.jpg
}}
'''মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী''' ({{lang-gu|મોહનદાસ કરમચંદ ગાંધી}} {{অডিও|Hi-Mohandas Karamchand Gandhi pronunciation 1.oga|উচ্চারণ}})(মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী) বা '''মহাত্মা গান্ধী''' (২রা [[অক্টোবর]], [[১৮৬৯]] - ৩০শে [[জানুয়ারি]], [[১৯৪৮]]) একজন অন্যতম ভারতীয় [[রাজনীতিবিদ]], [[ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন|ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের]] অগ্রগামী ব্যক্তিদের একজন এবং প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি ছিলেন [[সত্যাগ্রহ]] আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এর মাধ্যমে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণ তাদের অভিমত প্রকাশ করে । এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের উপর ভিত্তি করে এবং এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকা শক্তি, সারা বিশ্বে মানুষের স্বাধীনতা এবং অধিকার পাওয়ার আন্দোলনের অন্যতম অনুপ্রেরণা।
 
গান্ধী ভারতে এবং বিশ্ব জুড়ে ''মহাত্মা'' <ref group="টীকা">[[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] তাঁকে এই উপাধিটি দিয়েছেন</ref><ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.worldcat.org/oclc/37448787|শিরোনাম=The Oxford Hindi-English Dictionary|শেষাংশ=McGregor, R. S. (Ronald Stuart)|তারিখ=1997|প্রকাশক=Oxford University Press|অবস্থান=Oxford [England]|আইএসবিএন=0-19-864339-X|oclc=37448787}}</ref>(''মহান আত্মা'') এবং ''বাপু'' (''বাবা'') নামে পরিচিত। [[ভারত সরকার]] সম্মানার্থে তাকে ভারতের [[জাতির জনক]] হিসেবে ঘোষণা করেছে <ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://archive.indianexpress.com/news/gandhi-not-formally-conferred-father-of-the-nation-title-govt/973101/|শিরোনাম=Gandhi not formally conferred 'Father of the Nation' title: Govt - Indian Express|ওয়েবসাইট=archive.indianexpress.com|সংগ্রহের-তারিখ=2019-12-19}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://timesofindia.indiatimes.com/india/Constitution-doesnt-permit-Father-of-the-Nation-title-Government/articleshow/16961980.cms|শিরোনাম=Constitution doesn't permit 'Father of the Nation' title: Government {{!}} India News - Times of India|শেষাংশ=Oct 26|প্রথমাংশ=PTI {{!}} Updated:|শেষাংশ২=2012|ওয়েবসাইট=The Times of India|ভাষা=en|সংগ্রহের-তারিখ=2019-12-19|শেষাংশ৩=Ist|প্রথমাংশ৩=9:25}}</ref><ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.thehindu.com/todays-paper/tp-miscellaneous/tp-others/crusade-with-arms/article27999691.ece|শিরোনাম=Crusade with arms|তারিখ=2000-02-01|কর্ম=The Hindu|সংগ্রহের-তারিখ=2019-12-19|ভাষা=en-IN|issn=0971-751X}}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.ndtv.com/india-news/10-year-olds-rti-on-father-of-the-nation-title-for-gandhi-474827|শিরোনাম=10-year-old's RTI on 'Father of the Nation' title for Gandhi|ওয়েবসাইট=NDTV.com|সংগ্রহের-তারিখ=2019-12-19}}</ref>। ২রা অক্টোবর তার জন্মদিন ভারতে ''[[গান্ধী জয়ন্তী]]'' হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। [[২০০৭]] সালের ১৫ই [[জুন]] [[জাতিসংঘ|জাতিসংঘের]] সাধারণ সভায় ২রা অক্টোবরকে ''[[আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস]]'' হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। জাতিসংঘের সকল সদস্য দেশ এ দিবস পালনে সম্মতি জ্ঞাপন করে।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি | ইউআরএল=http://www.un.org/News/Press/docs/2007/ga10601.doc.htm| শিরোনাম=General Assembly adopts texts on day of non-violence,...| কর্ম=un.org|প্রকাশক=[[জাতিসংঘ]]| তারিখ=15 June 2007| সংগ্রহের-তারিখ=2007-07-01}}</ref>
 
একজন শিক্ষিত ব্রিটিশ [[আইনজীবী]] হিসেবে [[দক্ষিণ আফ্রিকা|দক্ষিণ আফ্রিকায়]] নিপীড়িত ভারতীয় সম্প্রদায়ের নাগরিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে গান্ধী প্রথম তাঁর অহিংস শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনের মতাদর্শ প্রয়োগ করেন। ভারতে ফিরে আসার পরে তিনি কয়েকজন দুঃস্থ কৃষক এবং দিনমজুরকে সাথে নিয়ে বৈষম্যমূলক কর আদায় ব্যবস্থা এবং বহুবিস্তৃত বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। [[ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস|ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের]] নেতৃত্বে আসার পর গান্ধী সমগ্র ভারতব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ, জাতির অর্থনৈতিক সচ্ছলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রচার শুরু করেন। কিন্তু এর সবগুলোই ছিল স্বরাজ অর্থাৎ ভারতকে বিদেশি শাসন থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে। [[১৯৩০]] সালে গান্ধী ভারতীয়দের লবণ করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ৪০০ কিলোমিটার (২৪৮ মাইল) দীর্ঘ [[লবণ সত্যাগ্রহ|ডান্ডি লবণ কুচকাওয়াজে]] নেতৃত্ব দেন, যা [[১৯৪২]] সালে ইংরেজ শাসকদের প্রতি সরাসরি ''ভারত ছাড়'' আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকবার [[দক্ষিণ আফ্রিকা]] এবং [[ভারত|ভারতে]] কারাবরণ করেন।
 
মহাত্মা গান্ধী সমস্ত পরিস্থিতিতেই অহিংস মতবাদ এবং সত্যের ব্যাপারে অটল থেকেছেন। তিনি সাধারণ জীবনযাপন করতেন এবং একটি স্বায়ত্তশাসিত আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তার নিজের পরিধেয় কাপড় ছিল ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় [[ধুতি]] এবং [[শাল]], যা তিনি নিজেই চরকায় বুনতেন। তিনি সাধারণ নিরামিষ খাবার খেতেন। শেষ জীবনে ফলমূলই বেশি খেতেন। আত্মশুদ্ধি এবং প্রতিবাদের জন্য তিনি দীর্ঘ সময় উপবাস থাকতেন।
 
== প্রাথমিক জীবন ==
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী <ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.worldcat.org/oclc/613205934|শিরোনাম=Mohandas Gandhi|শেষাংশ=Todd, Anne M.|তারিখ=2004|প্রকাশক=Chelsea House|অবস্থান=Philadelphia|অন্যান্য=Marty, Martin E., 1928-|আইএসবিএন=978-0-7910-7864-8|oclc=613205934}}</ref> [[১৮৬৯]] সালের ২ রা [[অক্টোবর]] <ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=FauJL7LKXmkC&hl=en|শিরোনাম=Gandhi: The Man, His People, and the Empire|শেষাংশ=Gandhi|প্রথমাংশ=Rajmohan|তারিখ=2008-03-10|প্রকাশক=University of California Press|ভাষা=en|আইএসবিএন=978-0-520-25570-8}}</ref> [[পোরবন্দর|পোরবন্দরের]] হিন্দু মোধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.worldcat.org/oclc/40199852|শিরোনাম=Responses to 101 questions on Hinduism|শেষাংশ=Renard, John, 1944-|তারিখ=1999|প্রকাশক=Paulist Press|অবস্থান=New York|আইএসবিএন=0-8091-3845-X|oclc=40199852}}</ref> তার পিতা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পোরবন্দরের [[দেওয়ান]] (প্রধান মন্ত্রী)। মা পুতলিবা করমচাঁদের চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন। পুতলিবা প্রণামী বৈষ্ণব গোষ্ঠীর ছিলেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=aLgB8pZg0qsC&pg=PA67&hl=en|শিরোনাম=Identity and Religion: Foundations of Anti-Islamism in India|শেষাংশ=Misra|প্রথমাংশ=Amalendu|তারিখ=2004|প্রকাশক=Sage Publications|ভাষা=en|আইএসবিএন=978-0-7619-3227-7}}</ref><ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.worldcat.org/oclc/643855431|শিরোনাম=Mohandas : a true story of a man, his people, and an empire|শেষাংশ=Gandhi, Rajmohan.|তারিখ=2006|প্রকাশক=Penguin Books|অবস্থান=New Delhi|আইএসবিএন=978-81-8475-317-2|oclc=643855431}}</ref><ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=LHJuAAAAMAAJ&hl=en|শিরোনাম=Mahatma; Life of Mohandas Karamchand Gandhi: Illus. Collected and Arranged by Vithalbhai K. Jhaveri; Foreword by Jawaharlal Nehru|শেষাংশ=Tendulkar|প্রথমাংশ=D. G.|তারিখ=1951|ভাষা=en}}</ref><ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.worldcat.org/oclc/49339429|শিরোনাম=Lawyer to mahatma : life, work and transformation of M.K. Ganddhi|শেষাংশ=Malhotra, S. L.|তারিখ=2001|প্রকাশক=Deep & Deep|অবস্থান=New Delhi|আইএসবিএন=81-7629-293-1|oclc=49339429}}</ref> করমচাঁদের প্রথম দুই স্ত্রীর প্রত্যেকেই একটি করে কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছিলেন। অজানা কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছিল <ref group="টীকা">শোনা যায় যে সন্তান জন্ম দেবার সময়ে তারা মারা যান</ref>। গান্ধীর ব্যাপারে তার বোন মন্তব্য করেন, তিনি খেলাধুলা কিংবাা ঘুরাঘুরির ব্যাপারে পারদের মত নিশ্চল ছিলেন । তার শৈশব কালে প্রিয় খেলা ছিল কুকুরের কান মোচড়ানো<ref>{{বই উদ্ধৃতি|শিরোনাম=গুহ|শেষাংশ=|প্রথমাংশ=|বছর=২০১৫|প্রকাশক=|অবস্থান=|পাতাসমূহ=২২|আইএসবিএন=}}</ref> ধার্মিক মায়ের সাথে এবং গুজরাটের [[জৈন ধর্ম|জৈন]] প্রভাবিত পরিবেশে থেকে গান্ধী ছোটবেলা থেকেই জীবের প্রতি অহিংসা, নিরামিষ ভোজন, আত্মশুদ্ধির জন্য উপবাসে থাকা, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সহিষ্ণুতা ইত্যাদি বিষয় শিখতে শুরু করেন।<ref>{{বই উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.worldcat.org/oclc/889943239|শিরোনাম=Gandhi : a spiritual biography|শেষাংশ=Sharma, Arvind,|অবস্থান=New Haven|আইএসবিএন=978-0-300-18738-0|oclc=889943239}}</ref> তিনি জন্মেছিলেন হিন্দু ''বৈশ্য'' গোত্রে, যা ছিল ব্যবসায়ী গোত্র।
 
[[চিত্র:Gandhi and Kasturbhai 1902.jpg|left|thumb|240px|গান্ধী এবং তাঁর স্ত্রী [[কস্তুরবা গান্ধী|কস্তুরবা]] (১৯০২)]]
[[১৮৮৩]] সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মহাত্মা গান্ধী তার বাবা মায়ের পছন্দে [[কস্তুরবা গান্ধী|কস্তুরবা মাখাঞ্জীকে]] (''কাস্তুবাই'' নামেও পরিচিত ছিলেন) বিয়ে করেন। তাদের চার পুত্র সন্তান জন্মায় যাদের নাম [[হরিলাল গান্ধী]], (জন্ম [[১৮৮৮]]) [[মনিলাল গান্ধী]], (জন্ম [[১৮৯২]]) [[রামদাস গান্ধী]] (জন্ম [[১৮৯৭]]) এবং [[দেবদাস গান্ধী]] (জন্ম [[১৯০০]]) সালে। মহাত্মা গান্ধী ছোটবেলায় পোরবন্দর ও রাজকোটের ছাত্রজীবনে মাঝারি মানের ছাত্র ছিলেন। কোন রকমে গুজরাটের ভবনগরের সামালদাস কলেজ থেকে [[ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা|ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায়]] উত্তীর্ণ হন। তিনি কলেজেও সুখী ছিলেন না, কারণ তার পরিবারের ইচ্ছা ছিল তাকে [[আইনজীবী]] করা।
 
১৮ বছর বয়সে [[১৮৮৮]] সালের ৪ঠা [[সেপ্টেম্বর]] ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য [[ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন|ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে]] যান। রাজকীয় রাজধানী [[লন্ডন|লন্ডনে]] তার জীবন যাপন ভারতে থাকতে তার মায়ের কাছে করা শপথ দ্বারা প্রভাবিত ছিল। জৈন সন্ন্যাসী বেচার্জীর সামনে তিনি তার মায়ের কাছে শপথ করেছিলেন যে তিনি মাংস, মদ এবং উচ্ছৃঙ্খলতা ত্যাগ করার হিন্দু নৈতিক উপদেশ পালন করবেন। যদিও তিনি ইংরেজ আদব কায়দা পরীক্ষামূলকভাবে গ্রহণ করেছিলেন (যেমন নাচের শিক্ষা), কিন্তু তিনি তার বাড়িওয়ালির দেওয়া [[ভেড়া]]র মাংস এবং [[বাঁধাকপি]] খেতেন না। তিনি লন্ডনের গুটি কয়েক নিরামিষভোজী খাবারের দোকানের একটিতে নিয়মিত যেতেন। শুধু তার মায়ের কথায় সাধারণ নিরামিষভোজী জীবনযাপন না করে তিনি এ বিষয়ে পড়াশোনা করে একান্ত আগ্রহী হয়ে নিরামিষভোজন গ্রহণ করেন। "নিরামিষভোজী সংঘে" যোগ দেন এবং কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন, এ সংস্থার একটি স্থানীয় শাখাও প্রচলন করেন। তার এই অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অনেক ভাবে কাজে লাগে। নিরামিষভোজী অনেক সদস্যই আবার ''থিওসোফিক্যাল সোসাইটি''(Theosophical Society)-এর সদস্য ছিলেন, যা [[১৮৭৫]] সালে সার্বজনীন ভাতৃত্বের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল এবং এতে ধর্ম শিক্ষায় বৌদ্ধ এবং হিন্দু ব্রাহ্মণ্য সাহিত্য পড়ানো হত। তারা গান্ধীকে [[ভগবত গীতা]] পড়তে উৎসাহিত করেছিলেন। আগে ধর্ম বিষয়ে তেমন কোন আগ্রহ না থাকলেও, গান্ধী [[হিন্দু]], [[খ্রিস্টান]], [[বৌদ্ধ]], [[ইসলাম]]সহ অন্যান্য ধর্ম এবং বিভিন্ন রীতি সম্পর্কে পড়াশোনা করেন।
 
{{তথ্যসূত্র প্রয়োজন|date=}}<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=https://www.adisikha.com/mahatma-gandhi-biography-bengali/|শিরোনাম=মহাত্মা গান্ধীর জীবনী Mahatma Gandhi Biography in Bengali » Adi Sikha|তারিখ=2019-09-22|ওয়েবসাইট=Adi Sikha - আদি শিখা|ভাষা=en-US|সংগ্রহের-তারিখ=2020-03-23}}</ref>
৭৪ নং লাইন:
অন্যায়ের বিরুদ্ধে গান্ধীর অস্ত্র ছিল অসহযোগ এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ। পাঞ্জাবের [[জালিয়ানওয়ালাবাগ|জালিয়ানওয়ালাবাগে]] সাধারণ মানুষের উপরে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক সংগঠিত [[জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড|হত্যাকাণ্ডের]] ফলে জনসাধারণ ক্ষুব্ধ হয়ে যায় এবং সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। গান্ধী ব্রিটিশ সরকারের কৃতকর্ম এরং ভারতীয়দের প্রতিশোধপরায়ণ আচরণ উভয়েরই নিন্দা করেন। তিনি একটি লিখিত বিবৃতিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিটিশ নাগরিকদের সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং বিশৃঙ্খলার সমালোচনা করেন। তার এই পদক্ষেপ প্রাথমিক পর্যায়ে দলের ভিতরে অসন্তোষের জন্ম দিলেও গান্ধীর একটি আবেগীয় বক্তৃতার পর তা গৃহীত হয়। বক্তৃতায় তিনি মূলনীতিগুলোর বর্ণনা দিয়ে বলেন সবরকম বিশৃঙ্খলাই অমঙ্গলজনক এবং সমর্থনযোগ্য নয়। <ref>R. Gandhi, ''Patel: A Life'', p. 82.</ref> এই হত্যাকাণ্ড এবং গণবিক্ষোভের পর গান্ধী পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন এবং সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ লাভের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা শেষ পর্যন্ত [[স্বরাজ]] বা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত, আদর্শগত, রাজনৈতিক স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নেয়।
[[চিত্র:Sabarmati Ashram.jpg|thumb|left|300px|[[সবরমতী আশ্রম]], গুজরাটে গান্ধীর বাড়ী]]
[[১৯২১]] সালের ডিসেম্বরে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাহী হন। তার নেতৃত্বে কংগ্রেস স্বরাজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন সংবিধান গ্রহণ করেন। সদস্য চাঁদা দিতে রাজি হওয়া যে কোন ব্যক্তির জন্য দলের সদস্যপদ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। নিয়মানুবর্তিতা উন্নতির জন্য বিভিন্ন শ্রেণির কমিটি গঠন করা হয় । দলকে একটি অভিজাত প্রতিষ্ঠান থেকে জাতীয় জনগণের আকর্ষণে রূপান্তর করা হয়। গান্ধী তার অহিংস নীতির পরিবর্ধন করেন স্বদেশি নীতি যোগ করে। স্বদেশি নীতি মতে সকল বিদেশি পণ্য বিশেষত ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করা হবে। এর পথ ধরে তিনি সকল ভারতীয়কে ব্রিটিশ পোশাকের বদলে খাদি পরার আহ্বান জানান।<ref>R. Gandhi, ''Patel: A Life'', p. 89.</ref> তিনি সকল ভারতীয় পুরুষ ও মহিলা, ধনী ও গরিব মানুষকে দৈনিক [[খাদী]]র চাকা ঘুরানোর মাধ্যমে স্বাধীনতার আন্দোলনকে সমর্থন করতে বলেন। এটি এমন একটি কৌশল ছিল যা নিয়মানুবর্তিতা ও আত্মত্যাগের অনুশীলনের মাধ্যমে অনিচ্ছা ও উচ্চাকাঙ্ক্ষা দূরীকরণের পাশাপাশি আন্দোলনে মহিলাদের যুক্ত করে। এ সময়ে মহিলাদের করা এ সকল কাজকে অসম্মানজনক বলে মনে করা হত। এছাড়াও ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের পাশাপাশি গান্ধী জনগণকে ব্রিটিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অফিস আদালত বর্জনের সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ এবং ব্রিটিশ উপাধি বর্জনের ডাক দেন।
 
“অসহযোগ” ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও সাফল্য লাভ করে। উত্তেজনা বৃদ্ধিকারী এ আন্দোলনে সমাজের সকল স্তরের লোক অংশগ্রহণ করে। আন্দোলনটি চরমে আরোহণ করামাত্র অপ্রত্যাশিত ভাবে উত্তর প্রদেশের [[চৌরি চৌরা]]য় তীব্র সংঘর্ষের ফলে এ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটে। আন্দোলন সহিংসতার দিকে মোড় নিতে দেখে এবং এর ফলে সকল কর্মকাণ্ডের ব্যর্থতার আশঙ্কায় গান্ধী গণ অসহযোগ আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।<ref>R. Gandhi, ''Patel: A Life'', p. 105.</ref> গান্ধী গ্রেপ্তার হলে [[১৯২২]] সালের ১০ [[মার্চ]] রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ১৯২২ সালের ২৮ মার্চ শুরু হওয়া শাস্তির কেবল দুই বছরের মত ভোগ করতে হয়। [[১৯২৪]] সালের ফেব্রুয়ারিতে এপেনডিসাইটিসের অপারেশনের পর তাকে মুক্তি দেয়া হয়। গান্ধী ঐক্যবদ্ধ ব্যক্তিত্বের অভাবে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ভিতরে ফাটল ধরে যা দলটিকে দুটি ভাগে ভাগ করে দেয়। একটি অংশের নেতৃত্ব দেন চিত্তরঞ্জন দাস এবং মতিলাল নেহরু - আইনসভার পার্টির অংশগ্রহণ সমর্থন করেন। চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী এবং সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে অপর অংশ এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে। এছাড়াও হিন্দু ও মুসলিমদের অহিংস আন্দোলন চলাকালীন সৌহার্দ্যে ভাঙন ধরে। গান্ধী এসব বিরোধ মিটিয়ে তুলতে সেতুবন্ধের কাজ করার চেষ্টা করেন এবং এজন্য ১৯২৪ সালের শরৎকালে তিন সপ্তাহের অনশন করেন। তার এই প্রচেষ্টায় খুব বেশি সফলতা আসেনি।<ref>R. Gandhi, ''Patel: A Life'', p. 131.</ref>
 
== স্বরাজ ও লবণ সত্যাগ্রহ ==
৮২ নং লাইন:
গান্ধী ১৯২০ এর দশকের বেশির ভাগ সময় নীরব থাকেন। এ সময় তিনি [[স্বরাজ পার্টি]] এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মাঝে বাধা দূর করার চেষ্টা করেন। অস্পৃশ্যতা, মদ্যপান, অবজ্ঞা এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে তিনি সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। ১৯২৮ সালে তিনি আবার সামনে এগিয়ে আসেন। এর আগের বছর ব্রিটিশ সরকার স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে একটি নতুন সংবিধান সংশোধনী কমিশন গঠন করে যাতে একজনও ভারতীয় ছিল না। ফলে ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলো এই কমিশনকে বর্জন করে।
 
গান্ধী কলকাতা কংগ্রেসে ১৯২৮ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ভারতকে ডোমিনিয়নের মর্যাদা দেবার দাবি জানান, অন্যথায় নতুন অহিংস নীতির পাশাপাশি পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্যের হুমকি দেন। গান্ধী এর মাধ্যমে তরুণ নেতাজী [[সুভাষ চন্দ্র বসু]] এবং [[জওহরলাল নেহরু]]র দর্শন সঞ্চালন করেন যারা অবিলম্বে স্বাধীনতার পক্ষপাতী ছিলেন। এই সিদ্ধান্তে তিনি দু'বছরের বদলে একবছর অপেক্ষা করার নীতিরও প্রতিফলন ঘটান।<ref>R. Gandhi, ''Patel: A Life'', p. 172.</ref> ব্রিটিশ সরকার এর প্রত্যুত্তর দেয়নি। ১৯২৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর লাহোরে ভারতীয় পতাকার উন্মোচন হয়। [[১৯৩০]] সালের ২৬শে জানুয়ারি লাহোরে মিলিত হয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দিনটিকে ভারতীয় স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উৎযাপন করে। অন্যান্য প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান ও এই দিনটিকে উদযাপন করে। ঘোষণামতো গান্ধী লবণের উপর কর আরোপের বিরুদ্ধে নতুন সত্যাগ্রহ অভিযান শুরু করেন। ১৯৩০ সালের মার্চে এই উদ্দেশ্যে তিনি ডাণ্ডির উদ্দেশ্যে লবণ কুচকাওয়াজ আয়োজন করেন ও নিজের হাতে লবণ তৈরির জন্য ১২ই মার্চ থেকে ৬ই [[এপ্রিল]] পর্যন্ত ৪০০ কিলোমিটার হেঁটে [[এলাহাবাদ]] থেকে ডাণ্ডিতে পৌঁছান।
 
হাজার হাজার ভারতীয় তার সাথে হেঁটে সাগরের তীরে পৌঁছান। এটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তার অন্যতম সফল প্রয়াস। ব্রিটিশরা এর প্রতিশোধ নিতে ৬০,০০০ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। সরকার গান্ধীর সাথে সমঝোতা করতে লর্ড এডওয়ার্ড আরউইনকে প্রতিনিধি নিয়োগ করে। গান্ধী-আর উইন প্যাক্টস হয় [[১৯৪১]] সালের মার্চ মাসে সরকার সকল গণ অসহযোগ আন্দোলন বন্ধের বিনিময় সকল রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে রাজি হয়। এছাড়াও গান্ধীকে গোল টেবিল বৈঠকের জন্য লন্ডনে আমন্ত্রণ জাননো হয। সেখানে তিনি একাই কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব করেন। আলোচনা ভারতীয় যুবরাজ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অনুষ্ঠিত হয় - যা গান্ধী ও অন্যান্য জাতীয়তাবাদীদের নিরাশ করে। লর্ড আরউইনের স্থলাভিষিক্ত লর্ড উইলিংডন জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
গান্ধী পুনরায় গ্রেপ্তার হন এবং সরকার তার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে তাকে সম্পূর্ণরূপে তার অনুসারীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পদ্ধতিটি অবশ্য সফল হয়নি। ১৯৩২ সালে দলিত নেতা [[বি আর আম্বেদকার|বি আর আম্বেদকারের]] প্রচেষ্টার ভিত্তিতে সরকারি নতুন সংবিধানের আওতায় অস্পৃম্শ্যদের জন্য আলাদা ইলেকটোরেট আয়োজন করে। এর প্রতিবাদে গান্ধী ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বরে ৬ দিনের অনশন পালন করেন এবং এতে সরকার বাধ্য হয়ে দলিত ক্রিকেটার ও পরবর্তীকালে রাজনৈতিক নেতা [[পালওয়াঙ্কার বালু]]র মধ্যস্থতায় আরও গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা প্রদান করে। এরপরই গান্ধী হরিজন ("''ঈশ্বরের সন্তান''") নাম দিয়ে দলিত, অস্পৃশ্যদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে এক নতুন অগ্রযাত্রার সূচনা করেন। ১৯৩৩ সালের ৮ মে তিনি হরিজন আন্দোলনকে এগিয়ে নেবার লক্ষ্যে ২১ দিনের জন্য আত্মশুদ্ধি অনশন করেন।<ref>R. Gandhi, ''Patel: A Life'', pp. 230–32.</ref>
 
[[১৯৩৪]] সালের গ্রীষ্মে তাকে হত্যার জন্য তিনটি ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয়।
 
কংগ্রেস পার্টি ফেডারেশন স্কিমের ক্ষমতা মেনে নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি হলে গান্ধী দল থেকে নিজের সদস্যপদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। গান্ধী এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না করলেও সরকারের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতা করা কোন দলের নেতা হয়ে থাকবেন এমন গুজব এড়ানোর চেষ্টা করেন।{{তথ্যসূত্র প্রয়োজন}}
১৩২ নং লাইন:
 
{{উক্তি|হ্যাঁ, আমি তাই। এ ছাড়াও আমি একজন খ্রিস্টান, একজন মুসলিম, একজন বৌদ্ধ এবং একজন ইহুদি।}}
[[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] ও গান্ধীর ভিতরে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকা স্বত্ত্বেও তাঁরা একাধিকবার নিজেদের মধ্যে [[বিতর্ক|বিতর্কে]] জড়িয়ে পড়েন। এই বিতর্কগুলি সে সময়কার জনপ্রিয়তম দুই ভারতীয়ের ভিতরে দার্শনিক মতভেদকে প্রমাণ করে। ১৫ [[জানুয়া]]রি, [[১৯৩৪]] সালে [[বিহার|বিহারে]] একটি [[ভূমিকম্প]] আঘাত করে এবং এটি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের কারণ হয়। গান্ধী বলেন, এটি হবার কারণ হল উঁচুশ্রেণির হিন্দুদের অস্পৃশ্যদের তাদের প্রাসাদে ঢুকতে না দেবার পাপের ফল। রবীন্দ্রনাথ গান্ধীর এই মন্তব্যের ব্যাপক বিরোধিতা করে বলেন, [[ভূমিকম্প]] কেবল প্রাকৃতিক কারণেই সংঘটিত হতে পারে, অস্পৃশ্যতার চর্চা যতই বেমানান হোক না কেন।
 
=== সরলতা ===
১৬৪ নং লাইন:
 
== অবদান ==
গান্ধীর জন্মদিন [[অক্টোবর]] ২ ভারতের জাতীয় ছুটি, [[গান্ধী জয়ন্তী]] হিসাবে পালিত হয়। [[২০০৭]] সালের ১৫ [[জুন]] [[জাতিসংঘ|জাতিসংঘের]] সাধারণ অধিবেশনে গান্ধীর [[জন্মদিন|জন্মদিনকে]] [[বিশ্ব অহিংস দিবস]] হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।<ref>{{সংবাদ উদ্ধৃতি | প্রথমাংশ=Nilova| শেষাংশ=Chaudhury| ইউআরএল=http://www.hindustantimes.com/storypage/storypage.aspx?id=54580f5e-15a0-4aaf-baa3-8f403b5688fa&&Headline=October+2+is+Int'l+Non-Violence+Day| শিরোনাম=October 2 is global non-violence day| কর্ম=hindustantimes.com|প্রকাশক=Hindustan Times| তারিখ=[[15 June]] [[2007]]| সংগ্রহের-তারিখ=2007-06-15}}</ref> মহাত্মা গান্ধী বহুত্ববাদী ভারতীয় সমাজে সৌভ্রাতৃত্বপূর্ন সহাবস্থান আদর্শের বিশিষ্ট প্রবক্তা।
 
== সমালোচনা ==