বাংলাদেশের মৃত্তিকা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
বাংলাদেশের মৃত্তিকা ট্যাগ: ২০১৭ উৎস সম্পাদনা |
আফতাবুজ্জামান (আলোচনা | অবদান) সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন:
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ বদ্বীপ। এর উপর দিয়ে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রক্ষপুত্র, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী প্রভৃতি নদী প্রবাহমান। বাংলাদেশের ভূমি উত্তর হতে দক্ষিণ দিকে ক্রমশ ঢালু। ফলে উক্ত নদনদী এবং এদের শাখানদী ও উপনদীগুলোও উত্তর হতে দক্ষিণ দিকে বঙ্গোপসাগর অভিমুখে প্রবাহিত হয়। এ দেশের উত্তর-পুর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাংশের পাহাড়ি এলাকা ব্যতিত প্রায় সমগ্র এলাকাই এ সব নদনদী বাহিত পললে গঠিত।
২৫ ⟶ ২৩ নং লাইন:
চ) চট্টগ্রামের উপকূলীয় সমভূমি - ফেনী নদী হতে কক্সবাজারের দক্ষিণ পর্যন্ত বিস্তৃত।
== '''বাংলাদেশের মৃত্তিকা'''
ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও মেঘনা - এই তিনটি বৃহৎ নদীব্যবস্থা দ্বারা গঠিত বদ্বীপে বাংলাদেশের অধিকাংশ ভূখন্ড অবস্থিত। এই তিনটি প্রধান নদীসহ বহু নদী বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমানার বাইরে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র- মেঘনা নদীপ্রণালী গড়ে তুলেছে। এই নদীপ্রণালী ১৭.৬ লক্ষ বর্গ কিমি আয়তনের অববাহিকা এলাকাকে নিষ্কাশিত করে থাকে। শুধু হিমালয়ের বরফ গলা পানিই নিষ্কাশিত করেনা, এই অঞ্চলে অবস্থিত বিশ্বের সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল এলাকাসমূহের পানিও নিষ্কাশিত করে থাকে। সহস্র বছর ধরে এসকল নদীবাহিত বিপুল পলিরাশি সঞ্চিত হয়ে গঠিত হয়েছে সুবিস্তৃত বদ্বীপ এবং এখনও গঠনরত রয়েছে বঙ্গোপসাগরে জলমগ্ন বদ্বীপীয় সমভূমি। দেশের মোট মাটির ৮০ ভাগই গঠিত হয়েছে এসকল নদীবাহিত পলি দ্বারা। অবশিষ্ট ২০ ভাগ গঠিত হয়েছে টারশিয়ারী পাহাড়সমূহের (১২ শতাংশ) এবং কোয়াটারনারী যুগের প্লাইসটোসিন সোপানসমূহের (৮ শতাংশ) পলল দ্বারা।
== ''মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়া''
দুটি বিশেষ অবস্থায় বাংলাদেশের মৃত্তিকা গঠিত হয়ে থাকে: প্রথমটি হচ্ছে পর্যায়ক্রমিক ঋতুগত আর্দ্র অবস্থা বা প্লাবিত অবস্থা ও শুষ্ক অবস্থা যা অধিকাংশ প্লাবন সমভূমি এলাকাতে সংঘটিত হয়ে থাকে এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে সবিরাম আর্দ্র অথবা শুষ্কাবস্থা যা পাহাড়ী এবং সোপান এলাকাসমূহে সংঘটিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন ঋতুতে কৃষিজলবায়ুগত পরামিতিসমূহ বিভিন্ন হওয়ার দরুন এই অবস্থাসমূহ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এর ফলে প্লাবন সমভূমি, পাহাড়ী এলাকা এবং উত্থিত সোপানসমূহে মাটি গঠন প্রক্রিয়া তাৎপর্যপূর্ণভাবে পৃথক হয়ে থাকে।
== ''প্লাবন সমভূমির মৃত্তিকা''
মৃত্তিকা জরিপের মাধ্যমে সক্রিয়, নবীন এবং পুরাতন - এই তিন ধরনের প্লাবন সমভূমি চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রধান নদীর আশেপাশে এবং নিকটবর্তী এলাকায় যেখানে বার্ষিক প্লাবনের সময়কালে নদীর গতি পরিবর্তনের ফলে পলি সঞ্চয়ন এবং ক্ষয় সংঘটিত হয়ে থাকে, সেসমস্ত এলাকা জুড়ে সক্রিয় প্লাবন সমভূমি বিস্তৃত। এই প্লাবন সমভূমিতে নতুন নতুন সঞ্চিত পলিরাশি বিভিন্ন স্তরে স্তরে স্তরীভূত হয়ে থাকে। সাধারণত সূক্ষ্ম পলি এবং কর্দম সঞ্চয়ন মিহি স্তরে স্তরীভূত হয় এবং বালি ও পলির মিশ্রণ স্থূল স্তরে সজ্জিত হয়। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে মাটি গঠনকারী নিয়ামকসমূহ মাটি গঠন প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করার জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করছে।
প্রধান নদীখাত অন্যত্র সরে যাওয়ায় নবীন এবং প্রবীণ প্লাবন সমভূমিসমূহ মূলত স্থিতিশীল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। তবে এসকল ভূমি উপনদী অথবা শাখানদী দ্বারা বিভক্ত যাদের সংখ্যা সক্রিয় হতে মৃতপ্রায় বদ্বীপে ভিন্ন ভিন্ন। এসকল প্লাবন সমভূমিতে পলি সঞ্চয়নের উপর মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়া প্রাধান্য বজায় রাখে। মৃত্তিকা বৈশিষ্ট্য থেকে এর লক্ষণ পাওয়া যায় এবং জৈবিক মিশ্রণের দ্বারা এই মৃত্তিকাতে পলির স্তরায়ন ভেঙ্গে পড়েছে। এসকল প্লাবন সমভূমিতে অন্তর্মৃত্তিকা সুগঠিত রূপ লাভ করেছে এবং জারিত হয়ে চিত্র-বিচিত্র বর্ণ ধারণ করেছে এবং অধিকতর পুরনো মৃত্তিকাতে ঊর্ধ্বমৃত্তিকা অম্লধর্মীতে পরিণত হয়েছে।
== ''পাহাড়ি মৃত্তিকা''
একটি উল্লেখযোগ্য সময়কাল পর্যন্ত পাহাড়ের উপর মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়াসমূহ সক্রিয় থাকে। উঁচু পাহাড়ের খাড়া ঢালে ক্ষয়ীভবনের ফলে বিচূর্ণীত অবশেষসমূহ প্রতিনিয়ত অপসারিত হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার ফলে উঁচু পাহাড়ের মৃত্তিকা অপরিণত অবস্থায়ই থেকে যায়। অপরদিকে নিচু পাহাড়সমূহের মৃত্তিকা তুলনামূলকভাবে পরিণত হয়, কেননা সেখানে ক্ষয়ীভবন প্রক্রিয়া ততটা তীব্র নয় এবং মাটির উপাদানসমূহ সঞ্চিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। খাড়া ও অত্যধিক খাড়া পাহাড় সারিতে বিদ্যমান অন্তস্থ পাললিক শিলাসমূহ সাধারণত কঠিন ও বিচূর্ণীভবনযোগ্য খনিজসমৃদ্ধ হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে, অপেক্ষাকৃত নিচু পাহাড়সমূহে বিদ্যমান অন্তস্থ পাললিক শিলাসমূহ সাধারণত অসংবদ্ধ ও সামান্য পরিমাণে বিচূর্ণীভবনযোগ্য খনিজসমৃদ্ধ হয়ে থাকে। পরিমিত থেকে অত্যধিক নিষ্কাশিত অবস্থা, অনুস্রবণ প্রক্রিয়া, অম্লীয়করণ এবং ক্ষয়ীভবনের দ্বারা ভূ-পৃষ্ঠের পদার্থসমূহের অপসারণ প্রভৃতি অবস্থার আওতায় খনিজসমূহ থেকে প্রলম্বিত বিচূর্ণীভবনের মাধ্যমে মৃত্তিকা গঠিত হয়ে থাকে। পৃষ্ঠমৃত্তিকা থেকে অন্তর্মৃত্তিকায় কর্দমের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এই প্রক্রিয়া নিচু পাহাড়সমূহের অধিকাংশ মৃত্তিকার গঠনে কর্দমের প্রাধান্যকে যুক্তিযুক্ত করে।
== প্লাইসটোসিন সোপানসমূহের মৃত্তিকা
দুই ধরনের মধুপুর কর্দমে প্লাইসটোসিন সোপানসমূহের মৃত্তিকা গঠিত হয়েছে - গভীরভাবে বিচূর্ণিত প্রবেশ্য কর্দম এবং সামান্য পরিবর্তিত অপ্রবেশ্য কর্দম। দুই ধরনের কর্দমই মৃত্তিকার উৎসবস্ত্তর বিচূর্ণীভবনের বিস্তৃতি ও ভূপ্রকৃতির ভিত্তিতে নিষ্কাশন ব্যবস্থা, মাটির গভীরতা এবং পরিলেখ (Profile) গঠন মাত্রায় উল্লেখযোগ্য পার্থক্য প্রদর্শন করে।
== ''মাটির শ্রেণিবিন্যাস''
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এস.আর.ডি.আই) বাংলাদেশে প্রায় ৫০০ মৃত্তিকা শ্রেণিক্রম (soil series) চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। একই ধরনের উৎস বস্ত্ত (Parent Material) এবং একই নিষ্কাশন ব্যবস্থা, উদ্ভিজ্জ, জলবায়ু ও সময়কাল এবং সর্বোপরি একই প্রকার মৃত্তিকা ক্ষিতিজ (soil horizon) ও সেইসঙ্গে একই ধরনের পার্থক্যসূচক বৈশিষ্ট্যের আওতায় গঠিত মৃত্তিকা দলসমূহকে
আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা শ্রেণিবিন্যাসে ব্যবহূত নামকরণসমূহ তিনটি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করেছে:
১) প্রাথমিক একক (যেমন, Fluvisol, Gleysol) যা একটি মৃত্তিকা পর্যায় অথবা উদ্ভিদ পরিবারের
২) মৃত্তিকা একক (যেমন, Eutric Fluvisol, Dystric Fluvisol) যা একটি প্রাথমিক এককের প্রধান উপবিভাগ এবং সাধারণভাবে মৃত্তিকা উপপর্যায় অথবা উদ্ভিদ গণের (Plant genus) সমতুল্য; এবং
৩) মৃত্তিকা উপ-একক (যেমন, Orthi-Eutric Fluvisol, Chromi- Eutric Fluvisol) যা দুটি প্রাথমিক এককের মধ্যে অথবা দুটি মৃত্তিকা এককের মধ্যে আন্তঃক্রম (inter-grade) নির্ধারণ করে এবং সাধারণভাবে একটি উপদল অথবা উদ্ভিদ প্রজাতির (Plant species) সমতুল্য।
৫৫ ⟶ ৫৩ নং লাইন:
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞানীদের কাছে বাংলাদেশের মাটির এই আন্তর্জাতিক শ্রেণিবিন্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মৃত্তিকার এই আন্তর্জাতিক শ্রেণিবিন্যাসের উপলব্ধির মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোন অংশের মৃত্তিকা সম্পদের উন্নয়ন সাধন সম্ভব। কিন্তু কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পর্কিত সাধারণ মানুষের উপলব্ধির জন্য মৃত্তিকার এই কারিগরি শ্রেণিবিন্যাস খুবই দুর্বোধ্য ও জটিল। এ সমস্যা দূর করে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য মৃত্তিকার একটি সহজ শ্রেণিবিন্যাস করা হয় এবং মোট ২১টি সাধারণ মৃত্তিকা ধরন শনাক্ত করা হয়।
=== সাধারণ মৃত্তিকা ধরন
কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পর্কিত সাধারণ মানুষকে ১৯৬০ সালে FAO/ইউএনডিপি কর্তৃক পরিচালিত মৃত্তিকা জরিপ প্রকল্প থেকে সংগৃহীত মৃত্তিকার কারিগরি তথ্যসমূহ ব্যবহার করতে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রণীত মাটির অ-কারিগরি শ্রেণিবিন্যাস। এই সাধারণ শ্রেণিন্যিাস মৃত্তিকার গুণাগুণসমূহ সাধারণীকরণের একটি ব্যাপক ভিত্তি রচনা করে। প্রতিটি সাধারণ মৃত্তিকা ধরনে বিস্তৃত প্রকার রাসায়নিক ও ভৌত গুণাগুণ সম্বলিত এবং একাধিক প্রকার উৎসবস্ত্ত দ্বারা গঠিত মৃত্তিকা শ্রেণিক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকে। সমগ্র দেশের অথবা একটি অঞ্চলের মৃত্তিকার অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার লক্ষ্যে সমরূপ বৈশিষ্ট্যসমূহের ভিত্তিতে মৃত্তিকার শ্রেণিবিন্যাস করাই সাধারণ মৃত্তিকা ধরন শ্রেণিবিন্যাসের উদ্দেশ্য।
=== প্লাবন সমভূমি মৃত্তিকা
বিভিন্ন উপ-ধরনে বিভক্ত, যথা- চুনযুক্ত পলল, চুনবিহীন পলল, চুনযুক্ত বাদামি প্লাবনভূমি মৃত্তিকা, চুনযুক্ত ধূসর প্লাবনভূমি মৃত্তিকা, চুনযুক্ত গাঢ় ধূসর প্লাবনভূমি মৃত্তিকা, চুনবিহীন ধূসর প্লাবনভূমি মৃত্তিকা, চুনবিহীন বাদামি প্লাবনভূমি মৃত্তিকা, চুনবিহীন গাঢ় ধূসর প্লাবনভূমি মৃত্তিকা, কৃষ্ণ তরাই মৃত্তিকা, অম্ল অববাহিকীয় কাদা, এসিড সালফেট মৃত্তিকা, পিট মৃত্তিকা, ধূসর পর্বত পাদদেশীয় মৃত্তিকা প্রভৃতি।
==== চুনযুক্ত পলল
স্তরায়িত মৃত্তিকা অথবা চাষযোগ্য স্তরের সর্বত্র অথবা নিম্নে অবস্থিত অরূপান্তরিত পলল। এ মৃত্তিকা সর্বত্র অথবা অংশবিশেষে চুনযুক্ত এবং অন্তর্মৃত্তিকায় বৈশিষ্ট্যসূচক স্তর অনুপস্থিত। সক্রিয় গাঙ্গেয় প্লাবন সমভূমিতে বিরাজমান এই পলল প্রধানত ঈষৎ বাদামি ধূসর থেকে পান্ডুর বাদামি বর্ণের বালু ও পলি সঞ্চয়ন দ্বারা গঠিত যা পরিমিত পরিমাণে চুনযুক্ত। লোয়ার মেঘনা মোহনাজ প্লাবন সমভূমি মৃত্তিকা অল্প পরিমাণে চুনযু্ক্ত এবং সূক্ষ্ম স্তরসমৃদ্ধ পলি দ্বারা গঠিত। বর্ণের দিক থেকে এই মৃত্তিকা ধূসর থেকে জলপাই বর্ণের। এসকল মৃত্তিকা প্রধানত Fluvisols প্রকৃতির।
==== চুনবিহীন পলল
বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে চুনযুক্ত পলল মাটির সমরূপ, তবে মাটির পরিলেখ বা পার্শ্বচিত্র চুনমুক্ত। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র-যমুনা প্লাবনভূমির বিস্তৃত এলাকা জুড়ে এই মৃত্তিকা বিদ্যমান। বালুকাময় থেকে পলিসমৃদ্ধ, ধূসর থেকে জলপাই বর্ণের, নিরপেক্ষ থেকে স্বল্প পরিমাণে ক্ষারীয় প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যে এই মৃত্তিকা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। অধিকাংশ মৃত্তিকা Eutric Fluvisols প্রকৃতির।
==== চুনযুক্ত বাদামি প্লাবনভূমি মৃত্তিকা
Cambic B অনুভূমিক স্তরবিশিষ্ট, যা প্রধানত জারিত এবং পরিলেখ বা পার্শ্বচিত্রে চুন পাওয়া যায়। গাঙ্গেয় প্লাবনভূমিতে অবস্থিত শৈলশিরাসমূহের ঊর্ধ্বাংশে এবং গঙ্গা নদীর তীরস্থ জোয়ার ভাটা প্লাবনভূমিতে বিদ্যমান এই মৃত্তিকা পান্ডুর বাদামি থেকে জলপাই বাদামি বর্ণের ঝুরঝুরে দোঅাঁশ ও কর্দম মৃত্তিকা দ্বারা গঠিত। এই মৃত্তিকার অধিকাংশই চুনযুক্ত Gleysol বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
==== চুনযুক্ত ধূসর প্লাবনভূমি মৃত্তিকা
ধূসর ছাঁচের Cambic B অনুভূমিক স্তরবিশিষ্ট এবং পরিলেখে চুন ধারণ করে। নদীতীর এবং প্লাবনভূমিতে এই মৃত্তিকা পলি দোঅাঁশ ও পলি কর্দম দোঅাঁশ গঠিত এবং অববাহিকা মৃত্তিকা পলি কর্দম বিশিষ্ট। দক্ষিণ-পশ্চিমের গাঙ্গেয় জোয়ার ভাটা প্লাবন সমভূমিতে প্রধানত এই মৃত্তিকা বিদ্যমান। এছাড়াও লোয়ার মেঘনা ও গঙ্গা নদীগঠিত প্লাবন সমভূমির অল্প কিছু এলাকায় এই মৃত্তিকা পাওয়া যায়। মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য চুনযুক্ত Gleysol প্রকৃতির।
==== চুনযুক্ত গাঢ় ধূসর প্লাবনভূমি মৃত্তিকা
গাঙ্গেয় প্লাবনভূমির বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিদ্যমান। স্থানীয়ভাবে মৃত্তিকা Cambic B অনুভূমিক স্তরবিশিষ্ট এবং মৃত্তিকা স্তরের সর্বত্র অথবা অংশবিশেষ চুনযুক্ত। পৃষ্ঠমৃত্তিকা অথবা অন্তর্মৃত্তিকার ঊর্ধ্বাংশ গাঢ় ধূসর বর্ণের। গাঙ্গেয় জোয়ার ভাটা প্লাবন সমভূমিতে প্রতিনিয়ত গাঢ় ধূসর অবশেষ সঞ্চিত হয়। মাটির বৈশিষ্ট্য চুনযুক্ত Gleysol প্রকৃতির।
==== চুনবিহীন ধূসর প্লাবনভূমি মৃত্তিকা
সাধারণত ধূসর বর্ণের পৃষ্ঠমৃত্তিকা এবং ধূসর ম্যাট্রিক্স ও ধূসর গ্লেন (glean) সমৃদ্ধ Cambic B অনুভূমিক স্তরবিশিষ্ট অন্তর্মৃত্তিকা দ্বারা গঠিত। এই মৃত্তিকা ব্যাপকভাবে তিস্তা, করতোয়া-বাঙ্গালী, যমুনা, মধ্য মেঘনা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদীগঠিত প্লাবন সমভূমি জুড়ে বিস্তৃত। তবে পৃথক পৃথক মৃত্তিকা বুনট দ্বারা গঠিত মাটিতে বর্ণিত উপাদানসমূহের অনুপাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আঞ্চলিক বিভিন্নতা দেখা যায়। তিস্তা নদীর সর্পিলাকৃতি প্লাবন সমভূমির মৃত্তিকায় পলি-দোঅাঁশ বুনটের প্রাধান্য বিদ্যমান, অপরদিকে গাঙ্গেয় জোয়ার ভাটা প্লাবন সমভূমি ও সুরমা-কুশিয়ারা প্লাবন সমভূমির মৃত্তিকায় পলি কর্দমের প্রাধান্য বিরাজমান। কিন্তু যমুনা প্লাবন সমভূমিতে রয়েছে পলি দোঅাঁশ, পলি কর্দম দোঅাঁশ এবং পলি কর্দমের অধিক সমানুপাতিক বণ্টন। এসকল মৃত্তিকার বেশিরভাগই Eutric Gleysol-এর অন্তর্ভুক্ত।
==== চুনবিহীন গাঢ় ধূসর প্লাবনভূমি মৃত্তিকা
Cambic B অনুভূমিক স্তর এবং পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তর্মৃত্তিকা চুনবিহীন গাঢ় ধূসর। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র এবং পুরাতন মেঘনা মোহনাজ প্লাবন সমভূমিতে এই মৃত্তিকা ব্যাপকভাবে উপস্থিত। মেঘনা মোহনাজ প্লাবন সমভূমি এবং তিস্তা সর্পিলাকার প্লাবন সমভূমিতে পলি দোঅাঁশ ও পলি কর্দম দোঅাঁশ মৃত্তিকার প্রাধান্য রয়েছে। অপরদিকে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র প্লাবন সমভূমিতে রয়েছে পলি কর্দম ও ভারী কর্দমের ব্যাপক প্রাধান্য। এসকল মৃত্তিকার বেশিরভাগই Eutric Gleysol-এর অন্তর্ভুক্ত।
==== চুনবিহীন বাদামি প্লাবন সমভূমি মৃত্তিকা
পুরাতন হিমালয় পাদদেশীয় সমভূমি, বিশেষ করে বেশির ভাগ শৈলশিরাসমূহে বিদ্যমান। তিস্তা, করতোয়া-বাঙ্গালী, যমুনা, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র প্লাবন সমভূমি এবং গাঙ্গেয় প্লাবন সমভূমির পশ্চিমাংশের কিছু এলাকায় এই মৃত্তিকা পাওয়া যায়। এসকল মৃত্তিকা চুনবিহীন এবং পূর্ণ অথবা বহুলাংশে জারিত Cambic B অনুভূমিক স্তরবিশিষ্ট। এই গ্রুপে দুই প্রকার মৃত্তিকা রয়েছে। এক প্রকার মৃত্তিকা গাঢ় বর্ণের গভীর পৃষ্ঠমৃত্তিকাবিশিষ্ট, যা পুরাতন হিমালয় পাদদেশীয় সমভুমি এলাকায় ব্যাপকভাবে বিস্তৃত। অপর প্রকার মৃত্তিকা প্রধানত অগভীর মৃত্তিকা, যাতে অনুপস্থিত রয়েছে পুরু গাঢ় বর্ণের পৃষ্ঠমৃত্তিকা এবং প্রধানত পুরাতন হিমালয় পাদদেশীয় সমভূমি এলাকার বাইরে বিস্তৃত। এসকল মৃত্তিকার বেশিরভাগই Dystric/Eutric Gleysol অথবা Cambisols-এর অন্তর্ভুক্ত।
==== কৃষ্ণ তরাই মৃত্তিকা
পুরাতন হিমালয় পাদদেশীয় সমভূমি জুড়ে বিস্তৃত। এই মৃত্তিকার পৃষ্ঠমৃত্তিকা ২৫ সেমি অথবা ততোধিক গভীরতার এবং গাঢ় ধূসর অথবা কৃষ্ণ বর্ণের। গাঢ় বর্ণের ঊর্ধ্বমৃত্তিকা ৯০ সেমি-এর কম পুরু হলে এর নিম্নস্তরে সুষ্ঠুভাবে জারিত Cambic B অনুভূমিক স্তর বিদ্যমান থাকে। এই পৃষ্ঠমৃত্তিকা হয় mollic অথবা umbric অনুভূমিক স্তরবিশিষ্ট। মৃত্তিকা বুনট উঁচু শৈলশিরাসমূহে দোঅাঁশ বালুকাময় এবং অধিকাংশ ভূমিরূপে বালি কর্দম দোঅাঁশময়। এসকল মৃত্তিকার বেশিরভাগই Umbric অথবা Mollic Gleysol-এর অন্তর্ভুক্ত।
==== অম্ল অববাহিকীয় কাদা
কয়েকটি পুরাতন প্লাবন সমভূমির অববাহিকা প্রধানত, কুশিয়ারা প্লাবন সমভূমির পূর্বাংশ জুড়ে বিস্তৃত। এছাড়াও মধুপুর গড়ের গভীর উপত্যকায়ও এই মৃত্তিকা পাওয়া যায়। মৃত্তিকা বৈশিষ্ট্য ধূসর থেকে গাঢ় ধূসর বর্ণের, ভারী কর্দম ও শক্তিশালী অম্লবিশিষ্ট। মৃত্তিকা কাঠামো শক্তিশালী প্রিজমাকৃতির ও ব্লক আকৃতির, ধূসর অথবা গাঢ় ধূসর গ্লেনসমৃদ্ধ। এসকল মৃত্তিকার বেশিরভাগই Eutric, Dystric অথবা Mollic Gleysol-এর অন্তর্ভুক্ত।
==== অম্ল সালফেট মৃত্তিকা
চট্টগ্রাম উপকূলীয় সমভূমি ও গাঙ্গেয় জোয়ার ভাটা প্লাবন সমভূমির অল্পকিছু এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। এই মৃত্তিকা সালফাইড জাতীয় বস্ত্ত ধারন করে যা বায়ুর সংস্পর্শে এলে চরম অম্লভাব ধারণ করে। গরান বনভূমির আওতাভুক্ত এবং লোনা জল কর্তৃক প্লাবিত হয় এমন মৃত্তিকা মিহি কর্দমাক্ত পলল দ্বারা সূক্ষ্মভাবে স্তরায়িত। কিন্তু যেসকল এলাকায় বন্যা ও লোনাজলের অনুপ্রবেশের জন্য বাঁধ দেয়া হয়েছে সেসকল এলাকায় মৃত্তিকার পরিলেখ চরম অম্লধর্মী অনুভূমিক স্তরসমৃদ্ধ চুনবিহীন ধূসর ও গাঢ় ধূসর প্লাবন সমভূমি মৃত্তিকার অনুরূপ। এসকল মৃত্তিকার বেশিরভাগই Thionic Fluvisols অথবা Thionic Gleysol-এর অন্তর্ভুক্ত।
==== পিট মৃত্তিকা
গোপালগঞ্জ-খুলনা বিল এলাকায় এবং স্থানীয়ভাবে সিলেট অববাহিকার কিছু হাওর এলকায় প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান। মৃত্তিকার ঊর্ধ্বস্তরে অথবা খনিজ স্তরের নিচে প্রায় ৪০ সেমি গভীরে চাপা পড়া অবস্থায় জৈবপদার্থ উপস্থিত থাকে। মৃত্তিকার হিস্টিক ক্ষিতিজ (histic horizon) গঠনকারী জৈবপদার্থ গাঢ় বাদামি বর্ণের তন্তুময় পিট থেকে অর্ধতরল কৃষ্ণ গোবর সার বর্ণের হয়ে থাকে। এসকল মৃত্তিকা হিস্টোসল (Histosols)-এর অন্তর্ভুক্ত।
==== ধূসর পাদদেশীয় মৃত্তিকা
ব্যাপকভাবে উত্তরাঞ্চলের এবং পূর্বাংশের পাদদেশীয় সমভূমিতে এবং স্থানীয়ভাবে চট্টগ্রামের উপকূলীয় সমভূমিতে বিদ্যমান। পর্বতের পাদদেশে পলল সঞ্চয়নের মাধ্যমে Cambic B অনুভূমিক স্তরসমৃদ্ধ এই মৃত্তিকা গঠিত হয়। পরিমিত অথবা অত্যধিক শক্তিশালী এই মৃত্তিকা ধূসর ম্যাট্রিক্স বৈশিষ্ট্যপুর্ণ। এসকল মৃত্তিকা প্রধানত Dystric অথবা Eutric Gleysols-এর অন্তর্ভুক্ত।
==== ভরাট ভূমির মৃত্তিকা
চাষাবাদের জন্য কৃত্রিমভাবে ভরাট করা জমির মৃত্তিকা। সংগৃহীত মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য দ্বারা এই মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য নির্ণীত হয়। এসকল মৃত্তিকাকে Fimic Anthrosols শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
==== পাহাড়ি মৃত্তিকা
বাদামি পাহাড়ি মৃত্তিকা
==== সোপান মৃত্তিকা
অগভীর লোহিত-বাদামি সোপান মৃত্তিকা
==== গভীর লোহিত-বাদামি সোপান মৃত্তিকা
বরেন্দ্রভূমির উত্তর-পূর্বাংশ, মধুপুর গড় ও আখাউড়া সোপানে ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। এসকল মৃত্তিকা সুষ্ঠু থেকে পরিমিত সুষ্ঠুভাবে নিষ্কাশিত, লালচে বাদামি বর্ণ থেকে হলুদ বাদামি বর্ণের এবং শক্তিশালী থেকে চরম অম্লধর্মী। গভীরভাবে বিচূর্ণিত ও লালচে ছাপযুক্ত মধুপুর কর্দমের উপর ভঙ্গুর কর্দম মৃত্তিকা অবস্থান করে। এসকল মৃত্তিকা প্রধানত Ferric Alisols শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
==== বাদামি কর্বুরিত সোপান মৃত্তিকা
বরেন্দ্রভূমির উত্তর-পূর্বাংশ, মধুপুর গড় ও আখাউরা সোপানের সমতল অংশে স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায়। এসকল মৃত্তিকা বাদামি ও লালচে ছাপযুক্ত, শক্তিশালী থেকে চরম অম্লধর্মী এবং গভীরভাবে বিচূর্ণিত কর্দম মৃত্তিকার উপর ভঙ্গুর কর্দম দোঅাঁশ মৃত্তিকার অবস্থান এবং লালচে ছাপযুক্ত মধুপুর কর্দম প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এসকল মৃত্তিকা পরিমিত থেকে অসম্পূর্ণভাবে নিষ্কাশিত এবং এর বেশিরভাগই Ferric Luvisols ও Alisols শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
==== অগভীর ধূসর সোপান মৃত্তিকা
বরেন্দ্রভূমির সমতল ও উঁচু অংশের বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যমান। মৃত্তিকা ধূসর, পলিময় এবং নিম্নমানের নিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্বলিত। ভারি, ধূসর ও ঈষৎ পরিবর্তিত মধুপুর কর্দমের উপর স্বল্প গভীরতায় এই মৃত্তিকা অবস্থিত। মৃত্তিকার কর্ষিত স্তরের নিচে একটি ই-ক্ষিতিজ (E-horizon) বিদ্যমান। এই মৃত্তিকা Eutric Planosols শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
==== গভীর ধূসর সোপান মৃত্তিকা
বরেন্দ্রভূমির উত্তর-পূর্বাংশে এবং মধুপুর গড়ের বিস্তীর্ণ অংশে বিদ্যমান। উত্তর ও পূর্বাংশের পর্বত পাদদেশীয় সমভূমির উত্তর-পশ্চিমেও এই মৃত্তিকা পাওয়া যায়। মৃত্তিকা নিম্ন নিষ্কাশন ব্যবস্থা, ধূসর বর্ণ, পলিময় প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য সম্বলিত এবং সচ্ছিদ্র, গভীরভাবে বিচূর্ণিত মধুপুর অথবা পর্বত পাদদেশীয় কর্দমের উপর অবস্থিত। অন্তর্মৃত্তিকার বেশিরভাগ অংশ একটি ই-ক্ষিতিজ। এ জাতীয় মৃত্তিকার বেশিরভাগ Albic Gleysols, Gleyic Luvisols এবং Gleyic Alisols।
==== ধূসর উপত্যকা মৃত্তিকা
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গভীর ধূসর সোপান মৃত্তিকার সমরূপ, তবে উপত্যকাসমূহে গঠিত হওয়ার কারণে গভীর ধূসর সোপান মৃত্তিকা থেকে পার্থক্য প্রদর্শন করে। এ মৃত্তিকা Albic এবং Eutric Gleysols শ্রেণিভুক্ত।
==তথ্যসূত্র==
{{সূত্র তালিকা}}
[[বিষয়শ্রেণী:বাংলাদেশের ভূগোল]]
|