বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
৩২ নং লাইন:
}}
[[চিত্র:Bengalpresidency 1858.jpg|thumb|250px|ব্রিটিশ বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ১৮৫৭ সালের মানচিত্র]]
'''বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি''' বা '''বাংলা প্রেসিডেন্সি''' ছিল [[ব্রিটিশ ভারত|ব্রিটিশ ভারতের]] একটি ঔপনিবেশিক অঞ্চল। এই অঞ্চলের ক্ষেত্রভুক্ত ছিল পূর্ব ও পশ্চিম বাংলা নিয়ে গঠিত অবিভক্ত বাংলা যা বর্তমানে [[বাংলাদেশ]] রাষ্ট্র এবং [[ভারত|ভারতের]] [[পশ্চিমবঙ্গ]], [[অসম]], [[বিহার]], [[ওড়িশা]], [[ঝাড়খণ্ড]], [[ত্রিপুরা]] ও [[মেঘালয়]] ইত্যাদি রাজ্যসমূহে বিভক্ত। পরবর্তীকালে ভারতের [[উত্তর প্রদেশ]], [[উত্তরাখণ্ড]], অবিভক্ত [[পাঞ্জাব (ভারত)|পাঞ্জাব]], [[হরিয়ানা]], [[হিমাচল প্রদেশ]] ও [[ছত্তিসগড়]], [[মধ্যপ্রদেশ]] ও [[মহারাষ্ট্র|মহারাষ্ট্রের]] অংশবিশেষ এবং [[পাকিস্তান|পাকিস্তানের]] [[উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ]], [[পাঞ্জাব (পাকিস্তান)|পাঞ্জাব]] এবং বর্মা (অধুনা [[মায়ানমার]]) অঞ্চলের বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত হয়।
== নামকরণ ==
৪১ নং লাইন:
== ইতিহাস ==
=== পূর্ব ইতিহাস ===
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় প্রথম বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে। এই কুঠিগুলির চরিত্র তখন পুরোপুরিই ছিল অর্থনৈতিক। [[১৬২০]] খ্রিষ্টাব্দে পটনায় কোম্পানি তাদের একটি কুঠি স্থাপন করে; [[১৬২৪]]-[[১৬৩৬|৩৬]] সময়কালে উড়িষ্যার উত্তরে পিপ্পলির পুরনো [[পর্তুগাল|পর্তুগিজ]] কুঠির ধ্বংসাবশেষের উপর সম্রাটের অনুগ্রহে কোম্পানির আধিপত্য স্থাপিত হয়; [[১৬৪০]]-[[১৬৪২|৪২]] সময়কালে উড়িষ্যার [[বালেশ্বর]] ও [[হুগলি নদী]]র তীরে কলকাতার অদূরে এক স্থানে ইংরেজ সার্জন গ্যাব্রিয়েল বঘটন একটি বসতি স্থাপনা করেন। কলকাতার নিকটস্থ এই স্থানটিতে তখন একটি পর্তুগাল বসতিও ছিল। কিন্তু কোম্পানির এজেন্টরা প্রথম যুগে যে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হন, তাতে ব্যবসা চালানো একসময় প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। [[১৬৭৭]]-[[১৬৭৮|৭৮]] সালে তারা হুমকি দেয় যে, বাংলা থেকে ব্যবসা প্রত্যাহার করে নেবেন। [[১৬৮৫]] সালে [[আওরঙ্গজেব|আওরঙ্গজেবের]] পৌত্রের কাছ থেকে তারা তাদের ব্যবসার জন্য আরও নিরাপত্তা ক্রয় করেন। [[১৬৯৬]] সালে [[ডিহি কলিকাতা]], [[গোবিন্দপুর]] ও [[সূতানুটি]] গ্রাম তিনটি কলকাতা শহরের রূপ পরিগ্রহ করতে শুরু করে। এই শহরই আধুনিক ভারতের প্রথম মেট্রোপলিস বা মহানগরী। সম্রাট [[ফারুকশিয়র]] [[১৭১৭]] সালে কোম্পানিকে বাংলায় করদান থেকে অব্যহতি দেন। পরবর্তী চল্লিশ বছর সুবার মুঘল শাসনকর্তা ও মারাঠা আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদের এক দীর্ঘ জটিল যুদ্ধে অতিবাহিত হয়। [[১৭৫৬]] সালে নবাব [[সিরাজদ্দৌলা]]র হাতে কলকাতার পতন ঘটে। পরের বছর কলকাতা অধিকার [[পলাশীর যুদ্ধ|পলাশীর যুদ্ধে]] নবাবকে পরাস্ত করে বাংলায় ব্রিটিশ আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত করেন [[রবার্ট ক্লাইভ]]। [[বক্সারের যুদ্ধ]] বাংলায় ব্রিটিশ সামরিক আধিপত্য স্থাপনের পথ সুগম করে। [[১৭৬৫]] সালের চুক্তির বলে অবিভক্ত বাংলা, অবিভক্ত বিহার ও উড়িষ্যা ব্রিটিশ প্রশাসনের হস্তগত হয়। এই সময় প্রতিষ্ঠিত হয় তিনটি প্রেসিডেন্সি সামরিক বাহিনীর মধ্যে বৃহত্তম [[বেঙ্গল আর্মি]]।
=== প্রশাসনিক সংস্কার ও চিরস্থায়ী বন্দ্যোবস্ত ===
[[ওয়ারেন হেস্টিংস|ওয়ারেন হেস্টিংসের]] (ব্রিটিশ গভর্নর ১৭৭২-৮৫) আমলে বাংলায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সুসংহত হয়। তাদের কাছে শুধুমাত্র একটি বাণিজ্য অঞ্চল থেকে একটি সামরিক সহায়তাপ্রাপ্ত অসামরিক সরকারের অধীনে বাংলা পরিণত হয় একটি সামগ্রিকভাবে সেনাবিজিত অঞ্চলে। সিভিল সার্ভিস সদস্য জন শোর ও তার পরে লর্ড টিনমাউথের পরিকল্পনায় বাংলায় একটি নিয়মিত আইনবিভাগ স্থাপিত হয়। তাদের সাহায্যে তদনীন্তন গভর্নর-জেনারেল [[লর্ড কর্নওয়ালিস]] জমিদারদের জমির উপর অধিকার সুরক্ষিত করেন। পূর্বের ব্যবস্থা অনুযায়ী এই জমিদাররা ছিলেন কর-আদায়কারী মাত্র। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় তারা সরকার প্রদত্ত জমির ছদ্ম-মালিকানার অধিকার পান। [[১৭৯৩]] সালে এই ছদ্মমালিক জমিদারদের জমির উপর স্বত্ত্ব লর্ড কর্নওয়ালিসের ঘোষণা বলে চিরস্থায়ী হয়ে যায় নির্দিষ্ট ভূমিকরের পরিবর্তে। এই আইনটি ভূমি করব্যবস্থার [[চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত]] নামে পরিচিত। ভারতে সম্পত্তির অধিকার ধারণাটি “পরিচিত” করানোর উদ্দেশ্যে এবং একটি ভূমিকেন্দ্রিক বাজার গঠনের জন্য এই ব্যবস্থা চালু হয়। প্রথমটি ভারতের ভূম্যধিকার সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণার জন্ম দেয় এবং দ্বিতীয়টি সর্বোতভাবে ব্যর্থ হয়। কর্নওয়ালিস কোড, যা অধিকারীর অধিকার সংক্রান্ত বিষয়টি নির্ধারণ করেছিল, তা প্রজা ও কৃষকদের স্বার্থের কথা আদৌ ভাবেনি। বাংলা প্রেসিডেন্সিতে সমগ্র ব্রিটিশশাসনেই এটি একটি অভিশাপ হিসাবেই রয়ে যায়। ‘রায়ত’রা (কৃষক) জমিদারদের হাতে নির্যাতিত হতে থাকে। জমিদাররাও নিজেদের লাভের জন্য সরকারি খাজনার উপরেও চড়া হারে রাজস্ব আদায় করতে থাকেন; নিংড়ে নিতে থাকেন তাদের প্রজাদের। তদুপরি চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করেও মূল্যবৃদ্ধি আটকানো যায়নি। ফলে সরকারের রাজস্বে বছর বছর ঘাটতি হতে থাকে। কৃষকদের ভারি বোঝা বইতে হয়। অবস্থা আরও সঙ্গিন হয় ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে। এই সময়ে প্রথমে সরকার ও পরে ব্রিটিশ উৎপাদকরা ভারতীয় চাষিদের দিয়ে আফিম ও নীলের বাধ্যতামূলক চাষ করাতে থাকেন। কৃষকদের দিয়ে জোর করে জমির একটি অংশে এই চাষ করানো হত এবং বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে তা কিনে নেওয়া হত রফতানির জন্য। ফলে গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিহারের [[তিরহুত জেলা]]য় এর সর্বাধিক কুপ্রভাব পড়েছিল।
[[লর্ড লেক]] ও [[আর্থার ওয়েলেসলি]] মারাঠাদের বিরুদ্ধে অভিযান করে [[উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত]] প্রদেশ দখল করে নেন।
=== বঙ্গভঙ্গ ১৯০৫ ===
{{মূল নিবন্ধ|বঙ্গভঙ্গ}}
[[লর্ড কার্জন|লর্ড কার্জনের]] নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে বাংলার সুবৃহৎ প্রদেশটি দ্বিখণ্ডিত করা হয়
এই বিভাজনের সিদ্ধান্তটি ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত। কারণ এর ফলে হিন্দুরা বঙ্গপ্রদেশে ও মুসলমানেরা পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণ-আন্দোলন শুরু হয়। কেউ কেউ এটিকে ‘[[ডিভাইড অ্যান্ড রুল]]’ বা বিভাজন ও শাসননীতির ঘৃণ্য প্রয়োগ মনে করেন। আবার কলকাতা-কেন্দ্রিক বাঙালি সম্প্রদায়, যাঁরা বাংলাকে দুটি সরকারে বিভক্ত করার বিরোধী ছিলেন এবং অখণ্ড বাংলার শক্তি, সমৃদ্ধি ও ঐক্যে বিশ্বাস করতেন তারাও এর তীব্র বিরোধিতা করেন। আন্দোলন
এই সর্বশেষ বিভাজনের ফলে নাম ব্যতীত বাংলা প্রেসিডেন্সির আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
==বাংলার পুনর্গঠন, ১৯১২ সাল==
[[File:Bengal Province 1931.png|thumb|200px|পুনরায় সংগঠনের পর বাংলা প্রদেশের প্রশাসনিক বিভাগসমূহ]]
|