পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
InternetArchiveBot (আলোচনা | অবদান)
2টি উৎস উদ্ধার করা হল ও 0টি অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হল। #IABot (v2.0beta10ehf1)
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
৩ নং লাইন:
== ইতিহাস ==
 
প্রাচীন ভারতের গ্রামীণ শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি ছিল পাঁচজন নির্বাচিত বা মনোনীত ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠান পঞ্চায়েত। এই প্রতিষ্ঠানের হাতে ন্যস্ত ছিল গ্রামগুলির প্রশাসন, আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ও বিচারব্যবস্থা পরিচালনের দায়িত্ব। [[মুঘল সাম্রাজ্য|মুঘল আমল]] পর্যন্ত ভারতের গ্রামগুলি এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হত। কিন্তু মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাটি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের এই সুমহান ঐতিহ্যশালী শাসনব্যবস্থার সম্পূর্ণ অবসান ঘটে। তার বদলে ভারতের রাজশক্তি নিজ কায়েমি স্বার্থ টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে ভারতের গ্রাম ও নগরাঞ্চলে ব্রিটিশ ধাঁচের এক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। আধুনিক ‘পঞ্চায়েতি রাজ’ শাসনব্যবস্থা [[মহাত্মা গান্ধী|মহাত্মা গান্ধীর]] মস্তিষ্কপ্রসূত এক ধারণা। তিনি চেয়েছিলেন স্বাধীন ভারতের আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠুক গ্রামকে কেন্দ্র করে। স্বাধীনতার পরে মূলত তাঁরতার আদর্শ অনুসরণ করেই ভারতে গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। এর পরে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই ব্যবস্থাকে আধুনিক যুগের উপযোগী ও আরও বেশি কার্যকরী করে তোলার জন্য ভারতে ও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন সরকারি পদক্ষেপ গৃহীত হয়। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের রাজত্বকালে (১৯৭৭-বর্তমান) পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সাধিত হয়। মনে করা হয়ে থাকে, এই সরকারের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সাফল্যের জন্য পঞ্চায়েত সংস্কার ও এই ব্যবস্থা থেকে প্রাপ্ত সুফলগুলি অনেকাংশে দায়ী। এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ডক্টর অশোক মিত্রের উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য, “...যদি পঞ্চায়েত ব্যর্থ হয়, সিপিআই(এম)-এর পরীক্ষানিরীক্ষাও ব্যর্থ হবে।” <ref>ডঃ অশোক মিত্রের সাক্ষাৎকার, কলকাতা, [[মার্চ ১৬]], [[১৯৭৯]]; ভারতীয় প্রশাসন, শিউলি সরকার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, [[কলকাতা]], [[২০০৫]] থেকে উদ্ধৃত</ref>
 
=== ব্রিটিশ যুগ ===
১৬ নং লাইন:
প্রতিটি জেলায় একটি করে জেলা বোর্ড গঠিত হয়। বোর্ডের কার্যক্ষেত্র হয় জেলার সমগ্র গ্রামাঞ্চল। চার বছরের মেয়াদকালযুক্ত এই বোর্ডগুলি নয় থেকে ছত্রিশ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হত এবং এর সদস্যরা সকলেই নির্বাচিত হতেন। সদস্যদের মধ্য থেকে একজন সভাপতি ও একজন সহসভাপতি নির্বাচিত হতেন। এই জেলা বোর্ডগুলির হাতে বহু দায়িত্ব ন্যস্ত থাকত। এদের প্রধান কাজ ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যাতায়াত ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ। জেলা বোর্ডগুলির আয়ের উৎসও ছিল বিভিন্ন। আয়ের প্রধান উৎস ছিল পথ, সেতু, খেয়াঘাট, ডাকবাংলো, খোঁয়াড় প্রভৃতি থেকে প্রাপ্ত কর। সরকারি অনুদানও বোর্ডগুলি পেত। এছাড়া সাধারণের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণের ক্ষমতাও তাদের দেওয়া হয়েছিল। স্বাধীনোত্তর কালে পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার প্রবর্তনের আগে অবধি এই বোর্ডগুলি কাজ করে গিয়েছে।
 
[[১৮৯৯]] সালে [[লর্ড কার্জন]] ভারতের ভাইসরয় পদে অভিষিক্ত হলে তিনি শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রীকরণ ঘটান। কার্জন ভারতবাসীর স্বাধিকারের তীব্র বিরোধী ছিলেন এবং ভারতবাসীকে তিনি আদৌ গণতন্ত্রের উপযুক্ত বলে মনে করতেন না; তা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের মতো যত সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রেই হোক না কেন। তাঁরতার প্রবর্তিত শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রীকরণ রোধ করার জন্য [[লর্ড মর্লি]] [[১৯০৭]] সালে রাজকীয় বিকেন্দ্রীকরণ কমিশন বা রয়্যাল কমিশন অন ডিসেন্ট্রালাইজেশন গঠন করেন। [[১৯০৯]] সালে এই কমিশন তার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে চৌকিদারি ও অন্যান্য স্থানীয় কাজের দায়িত্ব একটি একক গ্রামীণ সংস্থার হাতে অর্পণ করার প্রস্তাব রাখা হয় এবং বলা হয় এক-একটি গ্রামকে গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তি করতে না পারলে এই শাসনব্যবস্থায় গ্রামবাসীদের আগ্রহ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না।
 
এরপর [[১৯১৪]] সালে তদনীন্তন বাংলা সরকার একটি জেলা প্রশাসন কমিটি বা ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি সুপারিশ করেন গ্রামাঞ্চলে এমন এক শাসন কর্তৃপক্ষ গড়ে তুলতে যার মধ্যে একাধারে ইউনিয়ন কমিটি ও চৌকিদারি পঞ্চায়েতের কাজ করবে এবং একটি গ্রামীণ বিচারব্যবস্থাও তার অন্তর্ভুক্ত হবে। মূলত এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে [[১৯১৯]] সালে পাস হয় বঙ্গীয় গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন আইন বা বেঙ্গল ভিলেজ সেল্ফ-গভর্নমেন্ট অ্যাক্ট। এই আইনবলে চৌকিদারি পঞ্চায়েত ও ইউনিয়ন কমিটি অবলুপ্ত করা হয় এবং উভয়ের ক্ষমতা একাধিক গ্রাম নিয়ে গঠিত ইউনিয়ন বোর্ডের হাতে ন্যস্ত করা হয়। এই বোর্ডগুলি গ্রামবাসীদের প্রয়োজনে নিজ নিজ এলাকায় কর ধার্য করার ক্ষমতা রাখত। এছাড়া এই আইনের ছোটোখাটো দেওয়ানি মামলা বিচারের জন্য ইউনিয়ন কোর্ট ও ছোটোখাটো ফৌজদারি মামলা বিচারের জন্য ইউনিয়ন বেঞ্চও গঠন করা হয়। এই বিচারব্যবস্থার বিচারকগণও ইউনিয়ন বোর্ডের সদস্যদের মধ্য থেকেই নিযুক্ত হতেন।
৩১ নং লাইন:
 
* '''চার-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা''' –
** '''গ্রাম পঞ্চায়েত''' – এক বা একাধিক গ্রাম নিয়ে গঠিত হত গ্রাম পঞ্চায়েত। প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য সংখ্যা ছিল ৯ থেকে ১৫। এঁরা সকলেই এলাকার ভোটদাতাদের দ্বারা চার বছরের জন্য নিযুক্ত হতেন। নির্বাচিত সদস্যবর্গ নিজেদের মধ্যে থেকে একজন অধ্যক্ষ ও একজন উপাধ্যক্ষকে নির্বাচন করতেন। সরকার মনোনীত সদস্যরা অবশ্য এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারতেন না। অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষের দপ্তরের মেয়াদ ছিল চার বছর। গ্রাম পঞ্চায়েতের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের গৃহীত প্রস্তাববলে এঁদের অপসারিত করা যেত। অধ্যক্ষই ছিলেন পঞ্চায়েতের মুখ্য কার্যনির্বাহী। পঞ্চায়েতের কাজকর্মের সকল দিকেই তাঁকেতাকে নজর রাখতে হত। এছাড়াও গ্রাম পঞ্চায়েতের সভায় তাঁকেইতাকেই সভাপতিত্ব করতে হত।<br />গ্রাম পঞ্চায়েত এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিয়ে গ্রাম সভা গঠিত হত। গ্রাম সভার বৈঠক বসত বছরে দু-বার। অধ্যক্ষ এই বৈঠকগুলিতে সভাপতিত্ব করতেন। সাধারণ বাৎসরিক বৈঠকে পরবর্তী বছরের ব্যয়বরাদ্দ ও পূর্ববর্তী বছরের কাজের প্রতিবেদন বিবেচনা করা হত। গ্রাম সভা গ্রাম পঞ্চায়েতকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা ভোগ করত, কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েতকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না।<br />গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা ও কার্যাবলি ছিল তিন ধরনের – বাধ্যতামূলক, অর্পিত ও ঐচ্ছিক। মূলত পৌর দায়িত্বসংক্রান্ত কাজগুলি ছিল বাধ্যতামূলক কাজ ও উন্নয়ন ও পল্লি পুনর্গঠন সংক্রান্ত কাজগুলি অর্পিত ও স্বেচ্ছাধীন ও অর্পিত কাজের মধ্যে পড়ত।<br />তবে গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজস্ব আয়ের কোনও উৎস ছিল না। এই ব্যাপারে তাদের নির্ভর করতে হত অঞ্চল পঞ্চায়েতের অনুদানের উপর। এছাড়াও নিজস্ব কোনও কর্মচারীও এদের ছিল না। অধ্যক্ষকেই সব দায়দায়িত্ব বহন করতে হত।
** '''অঞ্চল পঞ্চায়েত''' – অঞ্চল পঞ্চায়েত গঠিত হত কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে। মূল আইনবলে এই পঞ্চায়েতের সদস্যগণ গ্রাম সভা কর্তৃক নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হত। পরবর্তীকালে দুই প্রকার সদস্য নিয়ে অঞ্চল পঞ্চায়েত গঠিত হতে থাকে – (১) অঞ্চল পঞ্চায়েতের অধীন গ্রাম পঞ্চায়েতের অধ্যক্ষগণ ও (২) গ্রাম পঞ্চায়েতের এলাকা থেকে নির্বাচিত সদস্যগণ। অঞ্চল পঞ্চায়েতগুলি প্রথম বৈঠকে একজন প্রধান ও একজন উপপ্রধান নির্বাচিত করে নিত। অঞ্চল পঞ্চায়েত, প্রধান ও উপপ্রধানের দপ্তরের মেয়াদকাল ছিল চার বছর। এছাড়াও অঞ্চল পঞ্চায়েতে একজন সচিব থাকতেন; যিনি প্রধানকে পঞ্চায়েতের কাজকর্ম ব্যাপারে পরামর্শ দিতেন ও সহায়তা করতেন। আর থাকতেন কয়েকজন চৌকিদার ও দফাদার।<br />অঞ্চল পঞ্চায়েত মূলত এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিযুক্ত ছিল। এজন্য দফাদার ও চৌকিদারকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অঞ্চল পঞ্চায়েতের হাতেই অর্পণ করা হয়েছিল। এছাড়াও ন্যায় পঞ্চায়েত গঠন, কর ধার্য ও সংগ্রহ করাও অঞ্চল পঞ্চায়েতের অন্যতম কাজ ছিল।<br />অঞ্চল পঞ্চায়েতের আয়ের মূল উৎস ছিল কর, অভিকর ও মাশুল। এছাড়া এরা কিছু সরকারি অনুদানও পেত। তবে অঞ্চল পঞ্চায়েতের আয় এতই কম ছিল যে নিজেদের ব্যয় বহনের পর গ্রাম পঞ্চায়েতকে উন্নয়নকাজের অনুদান হিসাবে দেবার মতো খুব কম টাকাই তাদের হাতে থাকত।
** '''আঞ্চলিক পরিষদ''' – প্রত্যেকটি [[সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক]] এলাকায় একটি করে আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়। এই পরিষদে সরাসরি নির্বাচিত কোনও সদস্য ছিলেন না। পরোক্ষভাবে নির্বাচিত সদস্য, পদাধিকার বলে সদস্য ও একজন সহযোগী সদস্য নিয়ে এই পরিষদ গঠিত হত। স্থানীয় সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (বিডিও) হতেন সহযোগী সদস্য। অন্যান্যরা ছিলেন – (১) সংশ্লিষ্ট অঞ্চল পঞ্চায়েতের প্রধানগণ (এঁরা পদাধিকার বলে সদস্য হতেন); (২) প্রত্যেক অঞ্চল পঞ্চায়েতের অন্তর্ভুক্ত অধ্যক্ষদের মধ্য থেকে নির্বাচিত একজন অধ্যক্ষ; (৩) এলাকা থেকে নির্বাচিত অথচ মন্ত্রী নন এমন সাংসদ ও বিধায়ক এবং এলাকায় বসবাস করেন অথচ মন্ত্রী নন এমন [[রাজ্যসভা]] ও বিধান পরিষদের সদস্য; (৪) [[পশ্চিমবঙ্গ সরকার|রাজ্য সরকার]] মনোনীত দুজন মহিলা ও দুজন অনগ্রসর সম্প্রদায়ভুক্ত সদস্য; (৫) আঞ্চলিক পরিষদের সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত দুজন সমাজসেবী ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাপারে অভিজ্ঞ ব্যক্তি।<br />আঞ্চলিক পরিষদগুলিতে একজন সভাপতি ও একজন সহকারী সভাপতি পরিষদ সদস্যদের দ্বারা চার বছরের জন্য নির্বাচিত হতেন। স্থানীয় বিডিও পদাধিকার বলে পরিষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিকের কাজ করতেন। কয়েকটি স্থায়ী সমিতির মাধ্যমে পরিষদ তার কার্য সম্পাদনা করত।<br />আঞ্চলিক পরিষদের প্রধান কাজগুলি ছিল প্রধানত সামাজিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণমূলক। কিছু কৃষি, সমবায়, জল সরবরাহ, জনস্বাস্থ্য ও অপরাপর কিছু জনকল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহণ ও অর্থ সাহায্যদানের ক্ষমতা পরিষদগুলিকে দেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও অঞ্চল পঞ্চায়েতগুলির বাজেট অনুমোদন করত আঞ্চলিক পরিষদগুলি।<br />নিজস্ব আয়ের সূত্র থাকলেও কোনও আঞ্চলিক পরিষদই সেগুলি ব্যবহার করত না; ফলে এই পরিষদগুলি রাজ্য সরকার ও জেলা পরিষদের অনুদানের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল।
৫০ নং লাইন:
গ্রাম পঞ্চায়েত পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর। একটি গ্রাম পঞ্চায়েত গঠন করার জন্য [[পশ্চিমবঙ্গ সরকার|রাজ্য সরকার]] কোনও একটি মৌজা, বা তার অংশবিশেষ, বা তার সংলগ্ন একাধিক মৌজা, বা তার অংশবিশেষকে ‘গ্রাম’ ঘোষণা করে থাকেন। প্রত্যেক গ্রামের নামে গ্রাম পঞ্চায়েতের নামকরণ হয়ে থাকে। [[১৯৯২]] সালের পঞ্চায়েত আইনের সংশোধনী অনুসারে পূর্বতন অঞ্চল পঞ্চায়েতের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকাকেই গ্রাম পঞ্চায়েতের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকা বলে ঘোষিত হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি প্রতি পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। এগুলি এক-একটি নিগমবদ্ধ সংস্থা বা কর্পোরেট বডি হিসাবে কাজ করে, যাদের একটি করে সাধারণ সিল থাকে এবং এরা মামলা করতে পারেন বা এদের বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে।
* '''সদস্য''' – গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত হয় দু-ধরনের সদস্য নিয়ে – নির্বাচিত ও পদাধিকার বলে সদস্য। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যসংখ্যা ন্যূনতম পাঁচ ও সর্বাধিক ৩০। নির্বাচিত সদস্যগণ [[পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা|পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার]] আইনসম্মত নির্বাচক বা ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত হন। এছাড়া পদাধিকার বলে সদস্যদের মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্বাচিত হয়েছেন অথচ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বা সহকারী সভাপতি নন এমন সদস্যগণ।<br />নির্বাচনের সুবিধার জন্য প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাকে কয়েকটি নির্বাচনক্ষেত্রে বিভক্ত করা হয়েছে। সাধারণত প্রতি ৫০০ ভোটদাতা পিছু একজন সদস্য ও ৫০০-এর বেশি ভোটদাতা হলে অতিরিক্ত একজন সদস্য গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্বাচিত হন। পার্বত্য এলাকায় অবশ্য প্রতি ১০০ ভোটদাতা পিছু একজন সদস্য ও ১০০-এর বেশি ভোটদাতা হলে একজন অতিরিক্ত সদস্য নির্বাচত হয়ে থাকেন।<br /> এছাড়াও ১৯৯২ সালের সংশোধনীতে বলা হয়েছে জনসংখ্যার অনুপাতে প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে তফশিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকবে। তাছাড়া তফশিলি জাতি ও উপজাতির জন্য সংরক্ষিত আসনের ১/৩ ভাগ আসন তফশিলি জাতি ও উপজাতির মহিলাদের জন্য এবং সর্বমোট আসনের ১/৩ ভাগ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অসংরক্ষিত আসনগুলিতেও তফশিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলারা প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা করতে পারবেন।
* '''প্রধান ও উপ-প্রধান''' – গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রথম সভায় সদস্যগণ নিজেদের মধ্যে থেকে একজনকে প্রধান ও একজনকে উপ-প্রধান নির্বাচিত করেন। এই ভোটাভুটি হয় গোপন ব্যালটে। এঁদের উভয়ের কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর। পঞ্চায়েত সমিতি সদস্য এমন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যরা অবশ্য এই দুই পদের জন্য প্রার্থী হতে পারেন না।<br /> জেলায় অবস্থিত প্রধান ও উপ-প্রধানের পদগুলি তফশিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলা জনসংখ্যার অনুপাতে সংরক্ষিত এবং সংরক্ষিত আসনের ২/৩ অংশ আবার ওই সম্প্রদায়গুলির মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। তাছাড়া সর্বমোট প্রধান ও উপ-প্রধান পদের ১/৩ অংশ আবার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।<br />প্রধান বা উপ-প্রধান স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন অথবা গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশ সদস্য প্রস্তাব গ্রহণ করে তাঁদেরতাদের অপসারিত করতে পারেন। রাজ্য সরকারও নির্দিষ্ট কারণে কোনও প্রধান বা উপ-প্রধানকে অপসারিত করার ক্ষমতা রাখেন। প্রধান বা উপ-প্রধান পদচ্যূত হলে, পদত্যাগ করলে বা মারা গেলে যদি ওই পদদুটি শূন্য হয়, তবে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে নতুন প্রধান বা উপ-প্রধান নির্বাচিত করেন; যিনি পূর্ববর্তী প্রধান বা উপ-প্রধানের অবশিষ্ট কার্যকাল পর্যন্ত দপ্তরে অধিষ্ঠিত থাকেন।
* '''সদস্যপদের অযোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতা''' – কোনও ব্যক্তি একই সঙ্গে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের নির্বাচন প্রার্থী হতে পারেন না। সরকারি বা পঞ্চায়েতি সংস্থার কর্মচারী, পঞ্চায়েতের ঠিকাদারের কর্মচারী, দেউলিয়া, অপ্রকৃতিস্থ, পঞ্চায়েতের বকেয়া কর বাকি আছে যার এমন কেউ, একুশ বছর বয়স হয়নি এমন কেউ, দণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান বা উপ-প্রধান, অডিটর প্রদত্ত নির্দেশ অমান্য করার কারণে দণ্ডপ্রাপ্ত এবং রাজ্য সরকার দ্বারা অপসৃত পঞ্চায়েতের যেকোনও স্তরের চেয়ারপার্সন গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন না। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হওয়ার পরে কোনও ব্যক্তিকে গ্রাম পঞ্চায়েত বা ভোটদাতারা অপসারিত করতে পারেন না। একমাত্র মহকুমা শাসকই এই কাজ করতে পারেন। তাছাড়া দলীয় ভিত্তিতে পঞ্চায়েতের নির্বাচন হয়ে থাকে বলে রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করলে সদস্যপদের অযোগ্যতা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও কোনও ব্যক্তি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন।
* '''গ্রাম পঞ্চায়েতের সভা''' – প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে মাসে একবার সভা অনুষ্ঠিত হয়। তিনজন সদস্য সাপেক্ষে মোট সদস্যসংখ্যার ১/৩ অংশ উপস্থিত থাকলেই সভা করা যায়। মুলতুবি বৈঠকের জন্য কোনও কোরামের প্রয়োজন হয় না। প্রধান বা তাঁরতার অনুপস্থিতিতে উপ-প্রধান এই সভার সভাপতিত্ব করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সভায় উত্থাপিত সমস্ত প্রশ্নের মীমাংসা হয়। তবে সমসংখ্যক ভোট পড়লে সভাপতি দ্বিতীয় বা মীমাংসাসূচক ভোটদান করতে পারেন।
==== গ্রাম সংসদ ====
গ্রাম পঞ্চায়েতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে গ্রামবাংলার তৃণমূল স্তরে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় যে দুটি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল গ্রাম সংসদ। গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যেক নির্বাচনক্ষেত্রে একটি করে গ্রাম সংসদ আছে। এই গ্রাম সংসদগুলি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোটারতালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত। সংসদের দুটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় – ষান্মাসিক ও বাৎসরিক। গ্রাম সংসদের সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান, উপ-প্রধান অথবা সংসদক্ষেত্র থেকে নির্বাচিত সদস্যরা। সদস্যসংখ্যার ১/১০ অংশ উপস্থিত থাকলেই সভার কোরাম হয়। তবে মুলতুবি সভার জন্য কোরাম কোরামের প্রয়োজন পড়ে না।
৬৪ নং লাইন:
"১৯৭৩ সালের পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন" অনুসারে পঞ্চায়েত সমিতি পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার দ্বিতীয় বা মধ্যবর্তী স্তর। এই স্তর সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক স্তরে গঠিত। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ব্লকের নামানুসারে প্রত্যেক ব্লকে একটি করে পঞ্চায়েত সমিতি গঠন করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে মোট ৩৪১টি ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতি বিদ্যমান। পঞ্চায়েত সমিতিগুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের মতোই এক-একটি নিগমবদ্ধ সংস্থা, যার একটি সাধারণ সিল রয়েছে ও যারা মামলা করতে পারে বা যার বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে।
* '''সদস্য''' – পাঁচ প্রকার সদস্য নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি গঠিত। এঁরা হলেন (১) ব্লকের অন্তর্গত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানগণ (এঁরা পদাধিকার বলে সদস্য); (২) প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত অনধিক তিনজন সদস্য; (৩) ব্লক এলাকা থেকে নির্বাচিত সভাধিপতি বা সহকারী সভাধিপতি নন এমন জেলা পরিষদ সদস্য; (৪) ব্লক এলাকা থেকে নির্বাচিত মন্ত্রী নন এমন [[লোকসভা]] বা বিধানসভা সদস্য; এবং (৫) মন্ত্রী নন অথচ ভোটার তালিকায় নাম আছে এমন রাজ্যসভা সদস্য। এঁরা প্রতি পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। তবে সরকারি কর্মচারী বা পঞ্চায়েতের কোনও প্রতিষ্ঠানের কর্মী বা [[পুরসভা|পুরসভায়]] চাকুরিরত ব্যক্তিরা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হতে পারেন না।<br /> এছাড়াও মোট জনসংখ্যার অনুপাতে প্রত্যেক পঞ্চায়েত সমিতিতে তফশিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত করা হয়েছে এবং তফশিলি জাতি ও উপজাতির জন্য সংরক্ষিত আসনের ১/৩ ভাগ আসন তফশিলি জাতি ও উপজাতির মহিলাদের জন্য এবং সর্বমোট আসনের ১/৩ ভাগ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে।
* '''সভাপতি ও সহকারী সভাপতি''' – পঞ্চায়েত সমিতির প্রথম সভায় নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে থেকে একজন সভাপতি ও একজন সহকারী সভাপতি নির্বাচিত হন। তাঁদেরতাদের দপ্তরের মেয়াদ পাঁচ বছর। তবে সাংসদ, বিধায়ক, গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বা জেলা পরিষদের সদস্য এমন পঞ্চায়েত সমিতি সদস্যরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা করতে পারেন না। এছাড়াও সভাপতি ও সহকারী সভাপতির পদগুলি তফশিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলা জনসংখ্যার অনুপাতে সংরক্ষিত এবং সংরক্ষিত আসনের ২/৩ অংশ আবার ওই সম্প্রদায়গুলির মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। তাছাড়া সর্বমোট সভাপতি ও সহকারী সভাপতি পদের ১/৩ অংশ আবার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।<br /> সভাপতি বা সহকারী সভাপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন অথবা পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশ সদস্য প্রস্তাব গ্রহণ করে তাঁদেরতাদের অপসারিত করতে পারেন। এছাড়াও রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট কারণে তাঁদেরতাদের অপসারিত করার ক্ষমতা রাখেন। অপসারণ, পদত্যাগ, মৃত্যু বা অন্য কোনও কারণে তাঁদেরতাদের পদ শূন্য হলে পঞ্চায়েত সমিতি নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে অপর কাউকে শূন্যপদে অধিষ্ঠিত করতে পারেন। সেক্ষেত্রে নবনিযুক্ত সভাপতি বা সহকারী সভাপতি তাঁরতার পূর্বতনের অবশিষ্ট মেয়াদকালের জন্য পদে অধিষ্ঠিত থাকেন।
* '''পঞ্চায়েত সমিতির সভা''' – প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার পঞ্চায়েত সমিতির সভা ডাকা হয়। এই সভায় মোট সদস্যসংখ্যার ১/৪ অংশের উপস্থিতি প্রয়োজন। তবে মুলতুবি সভার জন্য কোরামের প্রয়োজন হয় না। সভাপতি বা তাঁরতার অনুপস্থিতিতে সহকারী সভাপতি সভা পরিচালনা করেন। সভাইয় উত্থাপিত প্রশ্নগুলি সংখ্যাগরিষ্ঠের মতানুসারে মীমাংসিত হয়। এক্ষেত্রেও সমসংখ্যক ভোট পড়লে তবেই সভাপতি ব্যক্তি মীমাংসক ভোটটি দিতে পারেন।
 
=== জেলা পরিষদ ===
জেলা পরিষদ পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার তৃতীয় তথা সর্বোচ্চ স্তর। জেলা পরিষদের নামকরণ করা হয় সংশ্লিষ্ট জেলার নামানুসারে। [[কলকাতা জেলা|কলকাতা]] ও [[দার্জিলিং জেলা|দার্জিলিং]] জেলা বাদে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায় জেলা পরিষদ বর্তমান। দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমায় জেলা পরিষদের সমক্ষমতা ও মর্যাদা সম্পন্ন একটি মহকুমা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত। পশ্চিমবঙ্গে সেই কারণে বর্তমানে মোট ২০টি জেলা পরিষদ রয়েছে।
* '''সদস্য''' – প্রত্যেক জেলা পরিষদে চার প্রকার সদস্য রয়েছেন। এঁরা হলেন, (১) জেলার অন্তর্গত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি (এঁরা পদাধিকার বলে সদস্য); (২) জেলার প্রত্যেক ব্লক থেকে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত অনধিক তিনজন সদস্য; (৩) জেলা থেকে নির্বাচিত অথচ মন্ত্রী নন এমন লোকসভা ও বিধানসভা সদস্য; এবং জেলার ভোটারতালিকায় নাম আছে অথচ মন্ত্রী নন এমন রাজ্যসভা সদস্য।<br />এছাড়া জনসংখ্যার অনুপাতে প্রত্যেক জেলা পরিষদে তফশিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকে। তাছাড়াও তফশিলি জাতি ও উপজাতির জন্য সংরক্ষিত আসনের ১/৩ ভাগ আসন তফশিলি জাতি ও উপজাতির মহিলাদের জন্য এবং সর্বমোট আসনের ১/৩ ভাগ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
* '''সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি''' – পঞ্চায়েতের প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের পর জেলা পরিষদ সদস্যদের মধ্যে থেকে একজন সভাধিপতি ও একজন সহকারী সভাধিপতি পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পরিষদ সদস্য অথচ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এমন ব্যক্তিরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা করতে পারেন না। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির মতোই সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতির পদে তফসিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই পদগুলিতে তফশিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলা জনসংখ্যার অনুপাতে সংরক্ষিত এবং সংরক্ষিত আসনের ২/৩ অংশ আবার ওই সম্প্রদায়গুলির মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। তাছাড়া সর্বমোট সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি পদের ১/৩ অংশ আবার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।<br /> সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন অথবা রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট কারণে কোনও তাঁদেরতাদের অপসারিত করতে পারেন। সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি পদচ্যূত হলে, পদত্যাগ করলে বা মারা গেলে যদি ওই পদদুটি শূন্য হয়, তবে পরিষদ নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে নতুন সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি নির্বাচন করেন এবং তিনি পূর্ববর্তী সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতির অবশিষ্ট কার্যকাল পর্যন্ত দপ্তরে অধিষ্ঠিত থাকেন।
* '''জেলা পরিষদের অধিবেশন''' – প্রতি তিন মাস অন্তর জেলা পরিষদের অধিবেশন বসে। পরিষদের মোট সদস্যসংখ্যার ১/৪ অংশ অনুপস্থিত থাকলেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। এক্ষেত্রেও মুলতুবি বৈঠকের জন্য কোনও কোরামের প্রয়োজন হয় না। সভায় উত্থাপিত সমস্ত সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে গৃহীত হয়। উভয় পক্ষের সমসংখ্যক ভোট পড়লে সভাধিপতি নির্ণায়ক বা কাস্টিং ভোট প্রদান করে সমস্যা সমাধান করেন।
 
৯৫ নং লাইন:
গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর। আইন অনুসারে পাঁচ বছর শেষ হবার আগেই এই তিন সংস্থায় নির্বাচন করতে হয়। তাছাড়া কোনও পঞ্চায়েত সংস্থা ভেঙে দিলে ছয় মাসের মধ্যে ভোটের আয়োজন করাও বাধ্যতামূলক।
 
নির্বাচনের সুবিধার জন্য প্রত্যেক পঞ্চায়েত সংস্থাকে কয়েকটি নির্বাচন ক্ষেত্রে ভাগ করা হয়েছে। এই এলাকার ভোটদাতারা অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ভোটাররাই। গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটার সংখ্যার নিরিখে কোনও কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনি এলাকা একাধিক সদস্যবিশিষ্ট। অন্যান্য ক্ষেত্রে অবশ্য এই এলাকা এক সদস্যবিশিষ্টই। প্রত্যেক পঞ্চায়েত সংস্থার মেয়াদ পাঁচ বছরের জন্য। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই রাজ্য সরকার যে-কোনও পঞ্চায়েত সংস্থা ভেঙে দিতে পারেন। এছাড়া কোনও সদস্য পদত্যাগ করলে বা পদচ্যূত হলে বা মারা গেলে তাঁরতার নির্বাচনি এলাকায় পুনরায় নির্বাচন করা যায়।
 
== কার্যাবলি ==
১২০ নং লাইন:
পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত সংস্থাগুলির সুষ্টু পরিচালনার দায়িত্ব [[পশ্চিমবঙ্গ সরকার|পশ্চিমবঙ্গ সরকারের]] হাতে ন্যস্ত। এই কাজের জন্য রাজ্য সরকারের অধীনে একটি পঞ্চায়েত বিভাগ এবং পঞ্চায়েত অধিকার প্রতিষ্ঠিত আছে।
* '''পঞ্চায়েত বিভাগ''' – পঞ্চায়েত বিভাগ ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর অধীনস্থ একটি বিভাগ। এর প্রধান হলেন সচিব। এই বিভাগের কাজ হল পঞ্চায়েত সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ করা।
* '''পঞ্চায়েত অধিকার''' – পঞ্চায়েত অধিকার পঞ্চায়েত বিভাগের নীতিগুলি রূপায়িত করে থাকে। এর ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হলেন পঞ্চায়েত অধিকর্তা। তাঁকেতাকে সাহায্য করার জন্য দুজন যুগ্ম-অধিকর্তা, তিনজন সহ-অধিকর্তা এবং অন্যান্য আধিকারিক ও কর্মীরাও রয়েছেন।
 
এছাড়া পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরের জন্য তিন জন আঞ্চলিক সহ-অধিকর্তা, প্রত্যেক জেলায় একজন জেলা পঞ্চায়েত আধিকারিক বা ডিস্ট্রিক্ট পঞ্চায়েত অফিসার (ডিপিও) এবং পঞ্চায়েতের সর্বনিম্ন যোগসূত্র হিসাবে একজন পঞ্চায়েত সম্প্রসারণ আধিকারিক (ইওপি) রয়েছেন। ডিপিও গ্রাম পঞ্চায়েতের তত্ত্বাবধান করেন ও তাঁদেরতাদের পরামর্শ দেন; ইওপি ব্লক স্তরে সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের অধীনে কাজ করেন।
 
প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ এক-একটি ‘আবদ্ধ ইউনিট’। <ref>পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত, অসিতকুমার বসু, [[পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি]], [[কলকাতা]], [[১৯৯৮]], পৃ.৪২</ref> সেজন্য পঞ্চায়েতের বিভিন্ন স্তরে নিযুক্ত কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ ভিন্ন ভিন্ন রকমের
 
=== গ্রাম পঞ্চায়েত প্রশাসন ===
গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রশাসনিক ব্যবস্থার শীর্ষে আছেন প্রধান ও উপ-প্রধান। এছাড়া প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে একজন করে সচিব থাকেন যিনি পঞ্চায়েতের দৈনিক কাজকর্ম পরিচালনা করেন। তাঁকেতাকে নিয়োগ করেন পঞ্চায়েত অধিকর্তা। এছাড়া থাকেন একজন কর্মসহায়ক বা জব অ্যাসিস্টেন্স। তাঁকেতাকে নিয়োগ করেন প্রধান। তিনি মূখ্যত প্রকল্প সংক্রান্ত কাজকর্ম দেখাশোনা করেন।
 
এছাড়া পূর্বে প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে যে একজন করে দফাদার ও কয়েকজন চৌকিদার থাকতেন, তাঁদেরতাদের বদলে পঞ্চায়েতের সর্বক্ষণের জন্য কর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছে। এঁদের নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘গ্রাম পঞ্চায়েত কর্মী’।
 
এছাড়া প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েতে এক বা একাধিক কর আদায়কারী বা কালেক্টর আছেন, যাঁরা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধার্য করা কর আদায় করে থাকেন। এজন্য তিনি মাসিক ভাতা ও কর আদায়ের পরিমাণের উপর কমিশন পেয়ে থাকেন।
১৩৯ নং লাইন:
 
=== জেলা পরিষদ প্রশাসন ===
জেলা পরিষদের নীতিপ্রণয়ন ও কার্যসম্পাদনের জন্য জেলা পরিষদের সভাধিপতি বা তাঁরতার অনুপস্থিতিতে সহকারী সভাধিপতি নেতৃত্বে একটি প্রশাসন যন্ত্র কাজ করে। সভাধিপতি পরিষদের আর্থিক ও কার্যনির্বাহী প্রশাসনের সাধারণ দায়িত্বে বহাল থাকেন ও পরিষদের দলিলপত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়ী থাকেন। পরিষদের কাজকর্ম কয়েকটি কমিটির দ্বারা সম্পাদিত হয়ে থাকে। এই কমিটিগুলির অধ্যক্ষগণ জেলা পরিষদ প্রশাসনে নির্দিষ্ট দায়িত্ব বহন করে থাকেন।
 
প্রত্যেক জেলার জেলা-শাসক জেলা পরিষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিকের পদে আসীন থাকেন। তাঁকেতাকে সহায়তা করেন একজন অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক; তিনি অতিরিক্ত জেলা-শাসকের মর্যাদাসম্পন্ন আধিকারিক। এছাড়াও অপর একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক পরিষদের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এঁরা সকলেই [[পশ্চিমবঙ্গ সরকার|রাজ্য সরকার]] কর্তৃক নিযুক্ত হন।
 
এঁরা ছাড়াও প্রত্যেক জেলা পরিষদে একজন করে জেলা প্রযুক্তিবিদ বা ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার, মেডিক্যাল অফিসার, উচ্চপদস্থ কারিগরি কর্মী এবং করণিক ও আরদালি থাকেন। রাজ্য সরকারও কিছু কর্মচারীকে পরিষদে ন্যস্ত করে থাকেন।