সালমান আল-ফারসি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
InternetArchiveBot (আলোচনা | অবদান)
1টি উৎস উদ্ধার করা হল ও 0টি অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হল। #IABot (v2.0beta10ehf1)
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
২০ নং লাইন:
|data8= [[আল্লাহ|ঈশ্বর]], [[মুহাম্মদ]], [[আলী]], এবং [[আহল আল-বাইত]]
|label9= মৃত্যু
|data9= ৬৫৬<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |authorলেখক=Web Admin | urlইউআরএল=http://www.sibtayn.com/en/index.php?option=com_content&view=article&id=5931:salman-farsi,-the-son-of-islam&catid=589&Itemid=674 | titleশিরোনাম= Salman Farsi, the Son of Islam | publisherপ্রকাশক= Sibtayn International Foundation | dateতারিখ= | accessdateসংগ্রহের-তারিখ=September 20, 2015}}</ref>
|label10= কবর স্থান
|data10= [[আল মাদাইন]], [[ইরাক]]
৪৮ নং লাইন:
 
==জন্ম স্থান==
সালমান ফারস প্রদেশের কাজিরান শহরে অথবা পারস্যর এসফাহন প্রদেশে জন্মগ্রহণ করেন।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি |urlইউআরএল=http://www.experiencefestival.com/salman_the_persian_-_biography |titleশিরোনাম=Salman The Persian - Biography |publisherপ্রকাশক=Experiencefestival.com |dateতারিখ= |accessdateসংগ্রহের-তারিখ=2013-01-05 |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20131020014320/http://www.experiencefestival.com/salman_the_persian_-_biography |আর্কাইভের-তারিখ=২০১৩-১০-২০ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref><ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|urlইউআরএল=http://www.islamawareness.net/Caliph/salman_al_farsi.html |titleশিরোনাম=Salman al-Farsi (Salman the Persian) |publisherপ্রকাশক=Islamawareness.net |dateতারিখ= |accessdateসংগ্রহের-তারিখ=2013-01-05}}</ref>
 
= সালমান আল–ফারেসী  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু =
৫৪ নং লাইন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সালমান নবী পরিবারেরই একজন।’
 
এটি একজন সত্য-সন্ধানী ও আল্লাহকে পাওয়ার অভিলাষী এক ব্যক্তির জীবন কথা। তিনি হযরত সালমান আল-ফারেসী। সালমান আল-ফারেসীর যবানেই তাঁরতার সেই সত্য প্রাপ্তির চমকপ্রদ বর্ণনা রয়েছে। তিনি বলেনঃ আমি তখন পারস্যের ইসফাহার অঞ্চলের একজন পারসী নওজোয়ান। আমার গ্রামটির নাম ‘জায়্যান’। বাবা ছিলেন গ্রামের দাহকান-সর্দার। সর্বাধিক ধনবান ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। জন্মের পর থেকেই আমি ছিলাম তাঁরতার কাছে আল্লাহর সৃষ্টিজগতের মধ্যে সবচে বেশি প্রিয়। আমার বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমার প্রতি তাঁরতার স্নেহ ও ভালবাসাও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে কোন অমঙ্গলের আশংকায় তিনি আমাকে মেয়েদের মত ঘরে আবদ্ধ করে রাখেন। আমার বাবা-মার মাজুসী ধর্মে আমি কঠোর সাধনা শুরু করলাম এবং আমাদের উপাস্য আগুনের তত্ত্বাবধায়কের পদটি খুব তাড়াতাড়ি অর্জন করলাম। রাতদিন চব্বিশ ঘন্টা উপাসনার সেই আগুন জ্বালিয়ে রাখার দায়িত্বটি আমার ওপর অর্পিত হয়।
 
আমার বাবা ছিলেন বিরাট ভূ-সম্পত্তির মালিক। তিনি নিজেই তা দেখাশুনা করতেন। তাতে আমাদের প্রচুর শস্য উৎপন্ন হতো। একদিন কোন কারণবশত তিনি বাড়িতে আটকে গেলেন, গ্রামের খামারটি দেখাশুনার জন্য যেতে পারলেন না। আমাকে ডেকে তিনি বললেনঃ ‘বেটা, তুমি তো দেখতেই পাচ্ছো, বিশেষ কারণে আজ আমি খামারে যেতে পারছিনা। আজ বরং তুমি একটু সেখানে যাও এবং আমার তরফ থেকে সেখানকার কাজকর্ম তদারক কর।’ আমি খামারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। পথে খৃষ্টানদের একটি গীর্জার পাশ দিয়ে যাবার সময় তাদের কিছু কথার আওয়ায আমার কানে ভেসে এলো। তারা তখন প্রার্থনা করছিলো। এ আওয়াযই আমাকে সচেতন করে তোলে।
৭৬ নং লাইন:
তারা বললোঃ বিশপ, গীর্জার পুরোহিত।
 
আমি তাঁরতার কাছে গেলাম। বললামঃ আমি খৃষ্টধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি। আমার ইচ্ছা, আপনার সাহচর্যে থেকে আপনার খিদমত করা, আপনার নিকট থেকে শিক্ষালাভ ও আপনার সাথে প্রার্থনা করা। তিনি বললেনঃ ভেতরে এসো।
 
আমি ভেতরে ঢুকে তার কাছে গেলাম এবং তার খিদমত শুরু করে দিলাম। কিছুদিন যেতে না যেতেই আমি বুঝতে পারলাম লোকটি অসৎ। কারণ সে তার সংগী সাথীদেরকে দান-খয়রাতের নির্দেশ দেয়, সওয়াব লাভের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে; কিন্তু যখন তারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার জন্য তার হাতে কিছু তুলে দেয়, তখন সে নিজেই তা আত্মসাত করে এবং নিজের জন্য পুঞ্জিভূত করে রাখে। গরীব মিসকীনদের সে কিছুই দেয় না। এভাবে সে সাত কলস স্বর্ণ পুঞ্জিভূত করে।
৯২ নং লাইন:
– আল্লাহর কসম আমরা তাকে দাফন করবো না।
 
তাকে তারা শুলিতে লটকিয়ে পাথর মেরে তার দেহ জর্জরিত করে দিল। কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা অন্য এক  ব্যক্তিকে তার স্থলাভিষিক্ত করলো। আমি তাঁরওতারও সাহচর্য গ্রহণ করলাম। এ লোকটি অপেক্ষা দুনিয়ার প্রতি অধিক উদাসীন, আখিরাতের প্রতি অধিক অনুরাগী ও রাতদিন ইবাদতের প্রতি বেশী নিষ্ঠাবান কোন লোক আমি এর আগে দেখিনি। আমি তাঁকেতাকে অত্যধিক ভালোবাসতাম। একটা দীর্ঘ সময় তাঁরতার সাথে আমি কাটালাম। যখন তাঁরতার মরণ সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, আমি তাঁকেতাকে বললামঃ
 
– জনাব, আপনার মৃত্যুর পর কার সাহচর্যে কাটাবার উপদেশ দিচ্ছেন আমাকে?
 
বললেনঃ বেটা আমি যে সত্যকে আঁকড়ে রেখেছিলাম, এখানে সে সত্যের ধারক আর কাউকে আমি জানিনা। তবে মাওসেলে এক ব্যক্তি আছে, নাম তাঁরতার অমুক, তিনি এ সত্যের এক বিন্দুও পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করেননি। তুমি তঁঅর সাহচর্য অবলম্বন করেঅ্ আমার সে বন্ধুটির মৃত্যুর পর মাওসেলে গিয়ে তাঁরতার বর্ণিত লোকটিকে আমি খুঁজে বের করি। আমি তাঁকেতাকে আমার সব কথা খুলে বলি। একথাও তাঁকেতাকে আমি বলি যে, অমুক ব্যক্তি তাঁরতার অন্তিম সময়ে আমাকে আপনার সাহচর্য অবলম্বনের কথা বলে গেছেন। আর তিনি আমাকে একথাও বলে গেছেন যে, তিনি যে সত্যের ওপর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, আপনি সে সত্যকেই গভীরভাবে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। আমার কথা শুনে তিনি বললেনঃ তুমি আমার কাছে থাক।
 
আমি তাঁরতার কাছে থেকে গেলাম। তাঁরতার চালচলন আমার ভালোই লাগলো। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি মারা গেলেন। তাঁরতার মরণ সময় নিকটবর্তী হলে আমি তাঁকেতাকে বললামঃ
 
– জনাব, আপনি দেখতেই পাচ্ছেন, আল্লাহর ফায়সালা আপনার কাছে এসে গেছে। আর আমার ব্যাপারটি তো আপনি অবগত আছেন। এখন আমাকে কার কাছে যাওয়ার উপদেশ দিচ্ছেন?
 
বললেনঃ বেটা, আমরা যে জিনিসের ওপর ছিলাম, তার ওপর অটল আছে এমন কাউকে তো আমি জানিনা। তবে ‘নাস্‌সিবীনে’ অমুক নামে এক ব্যক্তি আছেন, তুমি তাঁরতার সাথে মিলতে পার।
 
তাঁকেতাকে কবর দেওয়ার পর আমি নাস্‌সিবীনের সেই লোকটির সাথে সাক্ষাত করলাম এবং আমার সমস্ত কাহিনী তাঁকেতাকে খুলে বললাম। তিনি আমাকে তাঁরতার কাছে থেকে যেতে বললেন। আমি থেকে গেলাম। এ ব্যক্তিকেও পূর্ববর্তী দু’বন্ধুর মত নিষ্কলুষ চরিত্রের দেখতে পেলাম। আল্লাহ কি মহিমা, অল্পদিনের মধ্যে তিনি মারা গেলেন। অন্তিম সময়ে তাঁকে আমি বললামঃ আমার সম্পর্কে আপনি মোটামুটি সব কথা জানেন। এখন আমাকে কার কাছে যেতে বলেন?
 
তিনি বললেনঃ অমুন নামে ‘আম্মুরিয়াতে’ এক লোক আছেন, তুমি তাঁরইতারই সুহবত অবলম্বন করবে। এছাড়া আমাদের এ সত্যের ওপর অবশিষ্ট আর কাউকে তো আমি জানিনা। তাঁরতার কাছে উপস্থিত হয়ে আমি আমার সব কথা বললাম।
 
আমার কথা শুনে তিনি বললেনঃ আমার কাছে থাক। আল্লাহর কসম, তাঁরতার কাছে থেকে আমি দেখতে পেলাম তিনি তাঁরতার পূর্ববর্তী সংগীদের মত একই মত ও পথের অনুসারী। তাঁরতার কাছে থাকাকালেই আমি অনেকগুলি গরু ও ছাগলের অধিকারী হয়েছিলাম।
 
কিছুদিনের মধ্যেই তাঁরতার পূর্ববর্তী সংগীদের যে পরিণতি দেখেছিলাম, সেই একই পরিণতি তাঁরওতারও ভাগ্যে আমি দেখতে পেলাম। তাঁরতার জীবনের অন্তিম সময়ে আমি তাঁকেতাকে বললামঃ আমার অবস্থা তো আপনি ভালোই জানেন। এখন আমাকে কি করতে বলেন, কার কাছে যেতে পরামর্শ দেন?
 
বললেনঃ বৎস! আমরা যে সত্যকে ধরে রেখেছিলাম, সে সত্যের ওপর ভূ-পৃষ্ঠে জন্য কোন ব্যক্তি অবশিষ্ট আছে বলে আমার জানা নেই। তবে, অদূর ভবিষ্যতে আরব দেশে একজন নবী আবির্ভূত হবেন। তিনি ইবরাহীমের দ্বীন নতুনভাবে নিয়ে আসবেন। তিনি তাঁরতার জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে বড় বড় কালো পাথরের যমীনের মাঝখানে খেজুর উদ্যানবিশিষ্ট ভূমির দিকে হিজরাত করবেন। দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট কিছু নিদর্শনও তাঁরতার থাকবে। তিনি হাদিয়ার জিনিস তো খাবেন; কিন্তু সাদকার জিনিস খাবেন না। তাঁরতার দু’কাঁধের মাঝখানে নুওয়াতের মোহর থাকবে। তুমি পারলে সে দেশে যাও।
 
এরপর তিনি মারা গেলেন। আমি আরো কিছুদিন আম্মুরিয়াতে কাটালাম। একদিন সেখানে ‘কালব’ গোত্রের কিছু আরব ব্যবসায়ী এলো। আমি তাদেরকে বললামঃ আপনারা যদি আমাকে সংগে করে আরব দেশে নিয়ে যান, বিনিময়ে আমি আপনাদেরকে আমার এ গরু ছাগলগুলি দিয়ে দেব। তাঁরাতারা বললেনঃ ঠিক আছে, আমরা তোমাকে সংগে করে নিয়ে যাব।
 
আমি তাঁদেরকেতাদেরকে গুরু-ছাগলগুলি দিয়ে দিলাম। তাঁরাতারা আমাকে সংগে নিয়ে চললেন। যখন আমরা মদীনা ও শামে’র মধ্যবর্তী ‘ওয়াদী আল-কুরা’ নামক স্থানে পৌঁছলাম, তখন তাঁরাতারা আমার সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করে এক ইহুদীর কাছে আমাকে বিক্রি করে দিল। আমি তার দাসত্ব শুরু করে দিলাম। অল্পদিনের মধ্যেই বনী কুরাইজা গোত্রের তার এক চাচাতো ভাই আমাকে খরীদ করে এবং আমাকে ‘ইয়াসরিবে’ (মদীনা) নিয়ে আসে। এখানে আমি আম্মুরিয়ার বন্ধুটির বর্ণিত সেই খেজুর গাছ দেখতে পেলাম এবং তিনি স্থানটির যে বর্ণনা দিয়েছিলেন, সে অনুযায়ী শহরটিকে চিনতে পারলাম। এখানে আমি আমার মনিবের কাছে কাটাতে লাগলাম।
 
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন মক্কায় দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছিলেন। কিন্তু দাস হিসাবে সব সময় কাজে ব্যস্ত থাকায় তাঁরতার সম্পর্কে কোন কথা বা আলোচনা আমার কানে পৌঁছেনি। কিছুদিনের মধ্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে হিজরাত করে ইয়াসরিবে এলেন। আমি তখন একটি খেজুর গাছের মাথায় উঠে কি যেন কাজ করছিলাম, আমার মনিব গাছের নীচেই বসে ছিলো এমন সময় তার এক ভাতিজা এসে তাকে বললোঃ
 
আল্লাহ বনী কায়লাকে (আউস ও খাজরাজ গোত্র) ধ্বংস করুন। কসম খোদার, তারা এখন কুবাতে মক্কা থেকে আজই  আগত এক ব্যক্তির কাছে সমবেত হয়েছে, যে কিনা নিজেকে নবী বলে মনে করে।
১৩০ নং লাইন:
– এর সাথে তোমার সম্পর্ক কি? যাও, তুমি যা করছিলে তাই কর।
 
সেদিন সন্ধ্যায় আমার সংগৃহীত খেজুর থেকে কিছু খেজুর নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে অবস্থান করছিলেন সেদিকে রওয়ানা হলাম। রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিকট পৌঁছে তাঁকেতাকে বললামঃ
 
– আমি শুনেছি আপনি একজন পূর্ণবান ব্যক্তি। আপনার কিছু সহায়-সম্বলহীন সঙ্গী-সাথী আছেন। এ সামান্য কিছু জিনিস সদকার উদ্দেশ্যে আমার কাছে জমা ছিল, আমি দেখলাম অন্যদের তুলনায় আপনারাই এগুলি পাওয়ার অধিক উপযুক্ত। এ কথা বলে খেজুরগুলি তাঁরতার দিকে এগিয়ে দিলাম। তিনি সঙ্গীদের বললেনঃ তোমরা খাও। কিন্তু তিনি নিজের হাতটি গুটিয়ে নিলেন, কিছুই খেলেন না। মনে মনে আমি বললামঃ এ হলো একটি।
 
সেদিন আমি ফিরে এলাম। আমি আবারও কিছু খেজুর জমা করতে লাগলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবা থেকে মদীনায় এলেন। আমি একদিন খেজুরগুলি নিয়ে তাঁরতার কাছে গিয়ে বললামঃ ‘আমি দেখেছি, আপনি সদকার জিনিস খাননা। তাই এবার কিছু হাদিয়া নিয়ে এসেছি, আপনাকে দেয়ার উদ্দেশ্যে।’ এবার তিনি নিজে খেলেন এবং সঙ্গীদের আহ্‌বান জানালেন তাঁরাওতারাও তাঁরতার সাথে খেলেন। আমি মনে মনে বললামঃ এ হলো দ্বিতীয়টি।
 
তারপর অন্য একদিন আমি রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাছে গেলাম। তিনি তখন ‘বাকী আল-গারকাদ’ গোরস্থানে তাঁরতার এক সঙ্গীকে সঙ্গীকে দাফন করছিলেন। আমি দেখলাম, তিনি গায়ে ‘শামলা’ (এক ধরণেরধরনের ঢিলা পোশাক) জড়িয়ে বসে আছেন। আমি তাঁকেতাকে সালাম দিলাম। তারপর আমি তাঁরতার পেছনের দিকে দৃষ্টি ঘোরাতে লাগলাম। আমি খুঁজতে লাগলাম, আমার সেই আম্মুরিয়ার বন্ধুটির বর্ণিত নবুওয়াতের মোহরটি।
 
রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁরতার পিঠের দিকে ঘন ঘন তাকাতে দেখে আমার উদ্দেশ্য বুঝতে পারলেন। তিনি তাঁরতার পিঠের চাদরটি সরিয়ে নিলেন এবং আমি মোহরটি স্পষ্ট দেখতে পেলাম। আমি তখন পরিস্কারভাবেপরিষ্কারভাবে তাঁকেতাকে চিনতে পারলাম এবং হুমড়ি খেয়ে পড়ে তাঁকেতাকে চুমুতে ভরে দিলাম ও কেঁদে চোখের পানিতে বুক ভাসালাম। আমার এ অবস্থা দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেনঃ
 
– তোমার খবর কি?
 
আমি সব কাহিনী খুলে বললাম। তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন এবং আমার মুখ দিয়েই এ কাহিনীটা তাঁরতার সংগীদের শোনাতে চাইলেন। আমি তাঁদেরকেতাদেরকে শোনালাম। তাঁরাতারা অবাক হয়ে গেলেন, খুবই আনন্দিত হলেন।
 
দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকার কারণে সালমান রাযিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি। ফলে তিনি খুবই মর্মজ্বালা ভোগ করতে থাকেন। সালমান বলেনঃ ‘একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডেকে বললেনঃ ‍তুমি তোমার মনিবের সাথে মুকাতাবা (চুক্তি)কর। আমি চুক্তি করলাম, তাকে আমি তিন শ’ খেজুরের চারা লাগিয়ে দেব এবং সেই সাথে চল্লিশ ‘উকিয়া স্বর্ণও দেব। আর বিনিময়ে আমি মুক্তি লাভ করবো। আমি রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ চুক্তির কথা অবহিত করলাম। তিনি সাহাবীদেরকে ডেকে বললেনঃ তোমরা তোমাদের এ ভাইকে সাহায্য কর। তারা প্রত্যেকেই আমাকে পাঁচ, দশ, বিশ, ত্রিশটি করে যে যা পারলেন চারা দিলেন। এভাবে আমার তিনশ’ চারা সংগ্রহ হয়ে গেল। তারপর আমি রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশে গর্ত খুড়লাম। তিনি নিজেই একদিন আমার সাথে সেখানে গেলেন। আমি তঁঅর হাতে একটি করে চারা তুলে দিলাম, আর তিনি সেটা রোপন করলেন। আল্লাহর কসম, তাঁরতার একটি চারাও মারা যায়নি। (ঐতিহাসিকরা বলছেন, সালামান রাযিয়াল্লাহু আনহু একটি মাত্র চারা রোপন করেছিলেন, আর সেটাই মারা যায়। বাকী সবগুলিই রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোপন করেছিলেন এবং সবগুলিই বেঁচে যায়।।) এভাবে আমি আমার চুক্তির একাংশ পূরণ করলাম, বাকী থাকলো অর্থ।
 
একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ডেকে মুরগীর ডিমের মত দেখতে স্বর্ণজাতীয় কিছু পদার্থ আমার হাতে দিয়ে বললেন, যাও, তোমার চুক্তি মুতাবিক পরিশোধ কর। আমি বললাম, এত েকি তা পরিশোধ হবে? তিনি বরলেনঃ ‘ধর, আল্লাহ এতেই পরিশোধ করবেন।’ আল্লাহর কস, আমরা ওজন করে দেখলাম তাতে চল্লিশ উকিয়াই আছে।
 
এভাবে সালমান রাযিয়াল্লাহু আনহু তার চুক্তি পূরণ করে মুক্তিলাভ করেন। গোলামী থেকে মুক্ত হয়ে হযরত সালমান রাযিয়াল্লাহু আনহু মুসলমানদের সাথে বসবাস করতে থঅকেন। তখন তঁঅর কোন ঘর-বাড়ী চিল না। রাসুলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য মুহাজিরদের মত প্রখ্যাত আনসারী সাহাবী আবু দারদার রাযিয়াল্লাহু আনহু সাথে তাঁরতার মুওয়াখাত বা ভ্রাতু-সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে দেন। গোলামীর কারণে হযরত সালমান রাযিয়াল্লাহু আনহু বদর ও উহুদ যুদ্ধে শরীক হতে পারেননি। গোলামী থেকে মুক্ত হওয়ার পর খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয। এ যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে পূর্ববর্তী দু’টি যুদ্ধে অনুপস্থিতির ক্ষতি পুষিয়ে নেন। সারা আরবের বিভিন্ন গোত্র কুরাইশদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মদীনা আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। খবর পেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করেন। অনেকে অনেক রকম পরামর্শ দেন। হযরত সালমান বলেন, পারস্যে পরিখা খনন করে নগরের হিফাজত করা হয়। মদীনার অরক্ষিত দিকে পরিখা খনন করে নগরীর হিফাজত করা সমীচীন। এ পরামর্শ রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনঃপূত হয়। মদীনার পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিকে সুদীর্ঘ পরিখা খনন করে বিশাল কুরাইশ বাহিনীর আক্রমণ সহজে প্রতিরোধ করা হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এই পরিখা বা খন্দক খননের কাজে অংশগ্রহণ করেন। কুরাইশ বাহিনী মদীনার উপকণ্ঠে এসে এ অপূর্ব রণ-কৌশল দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায়। ২১/২২ দিন মদীনা অবরোধ করে বসে থাকার পর শেষে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। খন্দকের পর যত যুদ্ধ হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে হযরত সালমান অংগ্রহণ করেছেন। রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইনতিকালের পর হযরত সালমান বেশ কিছুদিন মদনিায় অবস্থান করেন। সম্ভবতঃ হযরত আবু বকরের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু খিলাফতের শেষে অথবা হযরত ’উমারের খিলাফতের প্রথম দিকে তিনি ইরাকে এবং তাঁর দ্বীনী ভাই আবু দারদা রাযিয়াল্লাহু আনহু সিরিয়ায় বসতি স্থাপন করেন। তিনি হযরত উমারের যুগে ইরান বিজয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। মুসিলম মুজাহিদদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধ করেন। জালুলু বিজয়েও তিনি অংশগ্রহণ করেন। হযরত উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু তঁঅকে মাদায়েনের ওয়ালী নিযুক্ত করেন। হযরত উসমানের খিলাফতাকলে ইনতিকাল করেন।
 
ইসলম গ্রহণের পর হযরত সালমানের জীবনের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত হয় রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুহবতে। এ কারণে তিনি ইলম ও মা’রেফাতে বিশেষ পারদর্শিতা লাভ করেন। হযরত আলীকে রাদ্বিয়াল্লাহু আনিহু তাঁর ইল্‌ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে বলেনঃ ‘সালমান ইলম ও হিকমতের ক্ষেত্রে লুকমান হাকীমের সমতুল্য।’ অন্য একটি বর্ণনা মতে তিনি বলেনঃ ‘ইলমে আউয়াল ও ইলমে আখের সকল ইলমের আলিম ছিলেন তিনি।’ ইলমে আখের অর্থ কুরআনের ইলম। আরবে তার কোন আত্মীয় ও খান্দান ছিল না, তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকেতাকে আহলে বাইতের সদস্য বলে ঘোষণা করেন। হযরত মুয়াজ বিন জাবাল, যিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলিম ও মুজতাহিদ সাহাবী, বলেনঃ চার ব্যক্তি থেকে ইলম হাসিল করবে। সেই চারজনের একজন সালমান।
 
হযরত সালমান থেকে ষাটটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে তিনটি মুত্তাফাক আলাইহি, একটি মুসলিম ও তিনটি বুখারী এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আবু সাঈদ খুদরী, আবুত তুফাইল, ইবন আব্বাস, আউস বিন মালিক ও ইবন আজযা রাযিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখ বিশিষ্ট সাহাবী তাঁরতার ছাত্র ছিলেন।
 
হযরত সালমান সেইসব বিশিষ্ট সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত যাঁরা রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষ নৈকট্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেন। হযরত  রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেদিন রাতে সালমানের সাথে নিভৃতে আলোচনা করতে বসতেন, আমরা তাঁর স্ত্রীরা ধারণা করতাম সালমান হযতো আজ আমাদের রাতের সান্নিধ্যটুকু কেড়ে নেবে।’
 
যুহুদ ও তাকওয়ার তিনি ছিলেন বাস্তব নমুনা। ক্ষণিকের মুসাফির হিসেবে তিনি জীবন যাপন করেছেন। জীবনে কোন বাড়ী তৈরী করেননি। কোথাও কোন প্রাচীর বা গাছের ছায়া পেলে সেখানেই শুয়ে যেতেন। এক ব্যক্তি তাঁরতার কাছে ইজাযত চাইলো, তাঁকেতাকে একটি ঘর বানিয়ে দেওয়ার। তিনি নিষেধ করলেন। বার বার পীড়াপীড়িতে শেষে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কেমন ঘর বানাবে? লোকটি বললোঃ এত ছোট যে, দাঁড়ালে মাথায় চাল বেঁধে যাবে এবং শুয়ে পড়লে দেয়ালে পা ঠেকে যাবে। এ কথায় তিনি রাজী হলেন। তাঁরতার জন্য একটি ঝুপড়ি ঘর তৈরী করা হয়। হযরত হাসান রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ ‘সালমান যখন পাঁচ হাজার দিরহাম ভাতা পেতেন, তিরিশ হাজার লোকের উপর প্রভুত্ব করতেন তখনও তাঁর একটি মাত্র ‘আবা’ ছিল। তার মধ্যে ভরে তিনি কাঠ সংগ্রহ করতেন। ঘুমানোর সময় আবাটির এক পাশ গায়ে দিতেন এবং অন্য পাশ বিছাতেন।’
 
হযরত সালমান রাযিয়াল্লাহু আনহু যখন অন্তিম রোগ শয্যায়, হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্‌কাস রাযিয়াল্লাহু আনহু তাঁকেতাকে দেখতে যান। সালমান রাযিয়াল্লাহু আনহু কাঁদতে শুরু করলেন। সা’দ বললেনঃ আবু আবদিল্লাহ, কাঁদছেন কেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো আপনার প্রতি সন্তুষ্ট অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। হাউজে কাওসারের নিকট তাঁরতার সাথে আপনি মিলিত হবেন। বললেনঃ আমি মরণ ভয়ে কাদঁছিনে। কান্নার কারণ হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, আমাদের সাজ-সরঞ্জাম যেন একজন মুসাফিরের সাজ-সরঞ্জাম থেকে বেশি না হয়। অথচ আমার কাছে এতগুলি জিনিসপত্র জমা হয়ে গেছে। সা’দ বলেনঃ সেই জিনিসগুলি একটি বড় পিয়ালা, তামার একটি থালা ও একটি পনির পাত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।
 
==আরও দেখুন==