ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
২২ নং লাইন:
'''ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো''' [[অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার|সিবিই]] (৭ এপ্রিল ১৮৯০ - ২৭ জানুয়ারি ১৯৭৯) আর্জেন্টিনার একজন বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী, লেখিকা এবং সাহিত্য সমালোচক। তিনি ল্যাটিন আমেরিকায় নারীবাদী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী। তিনি স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশিত আর্জেন্টিনার বিখ্যাত সাহিত্য পত্রিকা ''সুর'' এর প্রতিষ্ঠাতা। [[হোর্হে লুইস বোর্হেস|বোর্হসের]] মতে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো নিছক নারী থেকে একজন 'ব্যক্তিত্বে' পরিণত হয়েছিলেন।
 
তার জন্ম হয়েছির বুয়েন্স এয়ার্সে এবং তৎকালীন অভিজাত পরিবারের রীতি অনুযায়ী তার শিক্ষালাভ হয়েছিল স্বগৃহে একজন অভিজ্ঞ পরিচারিকার কাছে। প্রথমেই তিনি ফরাসি ভাষা শিক্ষা করেছিলেন। কার্যতঃ কোনরূপ প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী তার হয় নি। [[দান্তে আলিগিয়েরি|দান্তের]] ''দ্য ডিভাইন কমেডির'' ওপর লেখা একটি আলোচনামূলক গ্রন্থ দিয়ে সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে তার অভিষেক হয়। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে তিনি ''সুর'' সাহিত্য পত্রটি প্রকাশ করতে শুরু করেন। এ পত্রিকায় ল্যাটিন আমেরিকার সকল প্রধান কবি-লেখকের রচনা প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্যারিসে [[জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা|ইউনেস্কো]] প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি সক্রিয় অবদান রেখেছিলেন। ১৯৪৬-এ তিনি নুরেমবুর্গ ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন। আর্জেন্টিনার শাসক পেরনের প্রকাশ্য বিরোধিতার জন্য ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে কিছুদিন কারাবাস করতে হয়েছিল। ১৯৬৩ তে প্রথম তার মুখগহ্বরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে ভারতের প্রধান মন্ত্রী [[ইন্দিরা গান্ধী]] তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং [[বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়]] তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ লিটেরেচার উপাধি প্রদান করে। এছাড়া হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ লিটেরেচার উপাধি প্রদান করে। তিনি ছিলেন আর্জেন্টিনা একাডেমী অফ লেটারস-এর প্রথম নারী সদস্য। ৮৮ বৎসর বয়সে সান ইসিদ্রোয় অবস্থিত তার আবাসগৃহ "ভিলা ওকাম্পো"-তে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তার সম্পত্তি দেশের শিক্ষার উন্নয়নের জন্য দান করে যান। <ref>[http://www.villaocampo.org/ing/historico/victoria.htm ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো প্রকল্প]</ref>
 
== রবীন্দ্রনাথ-ওকাম্পো সম্পর্ক ==
১৯১৩ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে [[নোবেল পুরস্কার]] পাওয়ার পর ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে [[গীতাঞ্জলি]] ফরাসি ভাষায় অনুদিত হয় এবং সেই অনুবাদ পড়েই ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো রবীন্দ্রনাথের অনুরাগী হয়ে পড়েন। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে [[পেরু]] এবং [[মেক্সিকো]] ভ্রমণের পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে কবি [[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]] আর্জেন্টিনায় যাত্রা বিরতি করেন এবং সান ইসিদ্রোতে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আতিথ্যে বিশ্রাম গ্রহণ করেছিলেন। ওকাম্পোর এই বাড়ীতে প্রায় ২ মাস ছিলেন ঠাকুর এবং ৩০টি কবিতা রচনা করেন এ সময়। ঠাকুর তাকে "বিজয়া" বলে সম্বোধন করতেন, এবং ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে ''পূরবী'' কাব্যগ্রন্থটি তাকে উৎসর্গ করেন।<ref>[http://www.parabaas.com/rabindranath/articles/pKetaki1.html On the Trail of Rabindranath Tagore and Victoria Ocampo; Ketaki Kushari Dyson]</ref>। ওকাম্পোর বাসায় পূরবীর পান্ডুলিপিতে বিচিত্র কাটাকুটিতে উৎসাহ প্রদান এবং সেখান থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ বয়সে 'চিত্রকর রবীন্দ্রনাথ' হয়ে ওঠার পেছনেও ওকাম্পোর বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়<ref>[http://arts.bdnews24.com/?p=6075 ওকাম্পো আর রবীন্দ্রনাথ : কিছু অশ্রুত গুঞ্জন, অভিজিৎ রায়, বিডিআর্টস২৪]</ref>। ১৯৩০ সালে প্যারিসে রবীন্দ্রনাথের প্রথম চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনে উদ্যোগী ভুমিকা পালন করেন ভিক্টোরিয়া। সেই ছিল তাঁদেরতাদের দ্বিতীয় ও শেষ দেখা। ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেন। ওকাম্পো মারা যান ১৯৭৯ সালে। কিন্তু আমৃত্যু তাঁদেরতাদের দুজনের মধ্যে উষ্ণ, আন্তরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সেই সম্পর্কটি ছিল, চলেছে চিঠি চালাচালি। <ref name="archive.prothom-alo.com">[http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2011-12-26/news/211723 রবীন্দ্রনাথ-ভিক্টোরিয়ার ‘সম্পর্ক’ নিয়ে চলচ্চিত্র]</ref>
 
=== থিংকিং অব হিম ===
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর ‘অন্তরঙ্গ অথচ নিখাদ বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্ক নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছেন [[আর্জেন্টিনা]]র চলচ্চিত্র পরিচালক পাবেলো সিজার। এই চলচ্চিত্রের কেন্দ্রবিন্দু হবে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে আর্জেন্টিনা সফরের সময় ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গল্প এবং পরবর্তীকালে দুজনের কাজে পারস্পরিক প্রভাব। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে আর্জেন্টিনায় তৎকালীন ভারতের রাষ্ট্রদূত রঙ্গরাজ বিশ্বনাথন রবীন্দ্রনাথ ও ভিক্টোরিয়ার বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেন। ছবিটির নাম রাখা হয়েছে '''থিংকিং অব হিম'''। রবীন্দ্রনাথ চরিত্রে ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা [[অমিতাভ বচ্চন]] অভিনয় করবেন এমনটি প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১২-র মধ্যেই ছবির কাজ শেষ করে তা বিশ্বব্যাপী মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ইংরেজি, বাংলা ও স্প্যানিশ ভাষায় নির্মিত হবে ছবিটি। চলচ্চিত্রায়ন হবে [[পশ্চিমবঙ্গ|পশ্চিমবঙ্গের]] বোলপুর, শান্তিনিকেতন, আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আইরেস ও ফ্রান্সের প্যারিসে।
<ref name="archive.prothom-alo.com"/>
 
== ভিলা ওকাম্পো ==
১৯২৪ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে জাহাজে [[পেরু]] গমনের সময় অসুস্থ হয়ে আজেন্টিনায় ভিক্তোরিয়া ওকাম্পোর 'মিরালরিও' নামের বাড়ীতে বেশ কিছু দিন অবস্থান করেন রবীন্দ্রনাথ। এসময় দিনের বেলা সচরাচর আরেকটি বাড়ি 'ভিলা ওকাম্পো'-তে অবস্থান করতেন। এ বাড়িতে অতিথি হয়েছেন বহু বিখ্যাত ব্যক্তি। ওকাম্পো বাড়িটি লাভ করেছিলেন পৈতৃক সূত্রে। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে ভিক্তোরিয়ার বাবা মানুয়েল ওকাম্পো নিজেই বাড়িটির নকশা করেছিলেন। তিনি ছিরেন পেশায় স্থপতি। আজেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেস থেকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরের সান ইসিদ্রো। সেখানেই এই দুটি বাড়ী। সেখানেই এল অরতোন্দো সড়কে ভিলা ওকাম্পো, ১৮৩৭ নম্বর বাড়ী।
 
সামনের বাগানটি ১১ হাজার বর্গমিটার আয়তনের। একতলায় খাওয়ার ঘর, বসার ঘর, নানা রকম বই, আর সুর ম্যাগাজিনের পুরোনো সংখ্যা দেয়ালে। অসম্ভব সুন্দর পুরোনো চিত্রকর্ম টাঙানো। বাড়িটির গ্রন্থাগারে প্রায় ১২ হাজারের মতো এস্পানিয়োল, ইংরেজি ও ফরাসি বই আছে। সেই সঙ্গে আছে সুর পত্রিকার পুরোনো সব সংখ্যা। আরও আছে ভিক্তোরিয়ার লেখা পাণ্ডুলিপি, চিঠি ইত্যাদি। ভিলা ওকাম্পোতে নানা সময়ে এসেছিলেন হোর্হে লুইস বোর্হেস, আলব্যের কামু, অক্তাভিয়ো পাজ, ইন্দিরা গান্ধীসহ আরও বহু গুণীজন। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত এটি ভিক্তোরিয়ার ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল। আর্জেন্টিনায় ক্ষমতায় সে সময় পেরোনের ফ্যাসিবাদী সরকার।
 
১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দখ্রিষ্টাব্দ থেকে 'ভিলা ওকাম্পো' ইউনেসকোর সম্পত্তি। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দেখ্রিষ্টাব্দে সংস্কারের পর এটি একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কবি-সাহিত্যিকেরা এখানে বছরে বিভিন্ন সময় একত্রিত হন। <ref>[http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2011-12-23/news/210765 আর্জেন্টিনার রবিতীর্থ]</ref>
 
== তথ্যসূত্র ==