দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
৩২ নং লাইন:
== ব্যক্তিগত জীবন ==
দ্বারকানাথ বর্তমান [[বাংলাদেশ|বাংলাদেশের]] [[ঢাকা|ঢাকার]] [[বিক্রমপুর|বিক্রমপুরের]] মাগুরখণ্ডের নিবাসী ছিলেন। তার বাবার নাম কৃষ্ণপান গঙ্গোপাধ্যায়। দ্বারকানাথ প্রবেশিকা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবার পরে গ্রাম ছেড়ে [[ফরিদপুর|ফরিদপুরের]] লোনসিং গ্রামে শিক্ষকতা করতে আরম্ভ করেন। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে তিনি [[১৮৮৩]]
== সমাজসেবা ==
তিনি ছাত্র অবস্থা থেকেই সমাজসংস্কারমূলক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। [[১৮৬৯]]
কলকাতায় তিনি ব্রাহ্মনেতা [[কেশবচন্দ্র সেন|কেশবচন্দ্র সেনের]] দলে ছিলেন। কিন্তু যখন কেশবচন্দ্র সেন নিজের মেয়ে সুনীতির
নারীশিক্ষা ছাড়াও ভারতীয় কুলী আন্দোলনে দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, বিশেষত ১৮৬৮ সালে সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরবর্তীকালে ব্রাহ্ম সমাজের বহু সদস্য ভারতবর্ষের বিভিন্ন চা বাগানে কর্মরত কুলীদের অধিকারের পক্ষে সওয়াল করা আরম্ভ করেন। এর সূত্রপাত রামকুমার বিদ্যারত্নর সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের ধর্মপ্রচারক রূপে অসম যাত্রা থেকে। তার মাধ্যমেই আপামর বাঙালি তথা অন্যান্য ভারতীয় অসমের চা বাগানে কুলীদের প্রতি বাগান মালিকদের অমানবিক অত্যাচারের কথা প্রথম জানতে পারে। রামকুমার তার অসমের অভিজ্ঞতার কথা নিয়মিত ভাবে লিখতেন সেই সময় সদ্য প্রকাশিত সঞ্জীবনী পত্রিকায়।<ref>কানাইলাল চট্টোপাধ্যায়, "আসামে চা কুলী আন্দোলনে ব্রাহ্ম সমাজ," দশদিশি পত্রিকা (এপ্রিল ২০১৪- সেপ্টেম্বর ২০১৪)ঃ ৩০৫- ৩০৬।</ref> পরে উদাসীন সত্যস্রবার অসম ভ্রমণ এবং কুলী কাহিনী নামক দুটি বইতেও রামকুমার নিজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেন (যার মধ্যে কুলী কাহিনী বইটি তিনি দ্বারকানাথকে উৎসর্গ করেন)। রামকুমারের লেখায় অসমে কুলীদের শোষণ বৃত্তান্ত পড়ে দ্বারকানাথ ১৮৮৬ সালে ভারত সভার পক্ষ থেকে অসম উদ্দেশ্যে রওনা হন।<ref name="ReferenceB">প্রভাত চন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়, ভারতের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের খসড়া (কলকাতাঃ সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ, ১৯৪২), ৫০- ৫২।</ref> রামকুমারের মতই দ্বারকানাথও সেখানে গিয়ে কুলী সমস্যার সরেজমিনে তদন্ত আরম্ভ করেন। প্রয়জনে কখনও কুলীর বেশে কখনও বা চা বাগানের আনাচে কানাচে লুকিয়ে দ্বারকানাথ কুলীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন ও তাদের মুখ থেকে তাদের যাবতীয় সমস্যা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন।<ref name="ReferenceB"/> বলা বাহুল্য এই কাজ তাকে বহু বিপদ অতিক্রম করে ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের নানা বাঁধা বিপত্তি অগ্রাহ্য করে করতে হয়। অবশেষে কলকাতায় ফিরে দ্বারকানাথ তার নিজের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেন সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি দ্বারা সম্পাদিত The Bengalee পত্রিকায়, ‘Slave Trade in Assam’ শিরোনামে প্রকাশিত ১৩টি প্রবন্ধে।<ref name="ReferenceB"/> নিজস্ব অভিজ্ঞতার পাশাপাশি দ্বারকানাথ এতে একাধিক মামলার কথাও প্রমাণস্বরূপ উল্লেখ করেন। এইভাবে তিনি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন কিভাবে আইনের বেড়া জালে বহু অত্যাচারী চা-কর উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে বেকসুর প্রমাণিত হয় এবং অসহায় কুলীদের ওপর অত্যাচার বজায় রাখে। The Bengalee পত্রিকার পাশাপাশি এই সময়ে দ্বারকানাথ সঞ্জীবনী পত্রিকায় 'আসামে লেগ্রির সন্তান' নামে বাংলায় একটি ধারাবাহীক লিখতেন।<ref name="ReferenceB"/> এছাড়াও দ্বারকানাথ একপ্রকার নিজস্ব উদ্যোগেই ভারত সভার পক্ষ থেকে এই সময় একাধিক ইশতেহার প্রকাশ করেন।<ref>কানাইলাল চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী'র 'Slavery in British Dominion' (কলকাতা: জিজ্ঞাসা, ১৯৫৯), ২৮।</ref> এই ধরনের বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে দ্বারকানাথ অসমে কুলীদের ওপর প্রচলিত অমানবিক অত্যাচার সম্পর্কে কলকাতার সভ্য সমাজকে অবহিত করতে সক্ষম হন এবং সক্ষম হন এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একটা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে। এই সময়ে দ্বারকানাথ ভারত সভার পক্ষ থেকে বেশ কিছু কুলীদের তাদের চা করদের বিরুদ্ধে মামলা লড়ার জন্য অর্থ সাহায্যও করেন।
== রাজনীতি ==
রাজনীতিতে তিনি ছাত্রসমাজ, ভারত-সভা এবং [[ভারতের জাতীয় কংগ্রেস|ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের]] সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কংগ্রেসে তিনি মহিলাদের প্রতিনিধিত্বের দাবি তোলেন। এর ফলস্বরূপ [[কাদম্বিনী গাঙ্গুলী|কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর]] নেতৃত্বে [[১৮৮৯]]
১৮৮৭ সালে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে দ্বারকানাথ কুলীদের প্রতি অত্যাচারের বিষয়টি উত্থাপন করতে গেলে সেটিকে প্রাদেশিক আখ্যা দিয়ে এড়িয়ে যাওয়া হয়।<ref>প্রভাত চন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়, ভারতের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের খসড়া (কলকাতাঃ সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ, ১৯৪২), ৫৩।</ref> আগামী বছর প্রথম বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মিলনীর অধিবেশনে [[বিপিনচন্দ্র পাল]] বিষয়টি উত্থাপন করলে দ্বারকানাথকে এবিষয়ে আলোকপাত করতে অনুরোধ করা হয়। দ্বারকানাথ কুলীদের শোষণের বিষয়ে বিস্তারিত বক্তৃতা প্রদান করেন ও সেখানে উপস্থিত সকলকে বোঝাতে সক্ষম হন যে এই সমস্যাকে প্রাদেশিক আখ্যা দেওয়া আদপে ভ্রান্ত ধারণা। সভায় ১৮৮৭ সালের কংগ্রেস অধিবেশনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করা হয় ও কুলীদের বিষয়টিকে জাতীয় স্তরের সমস্যা হিসেবে গণ্য হয়।<ref>প্রভাত চন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়, ভারতের রাষ্ট্রীয় ইতিহাসের খসড়া (কলকাতাঃ সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ, ১৯৪২), ৫৪।</ref> এর পর যদিও জাতীয় স্তরে স্বীকৃতি পেতে আরও বছর কয়েক সময় লাগে। অবশেষে ১৮৯৬ সালে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে কুলী সমস্যাকে জাতীয় স্তরের সমস্যার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
|