ইমাম বুখারী: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সত্য অপলাপ (আলোচনা | অবদান)
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
২১ নং লাইন:
}}
 
'''ইমাম বুখারী''' (জন্মঃ ১৯৪ হিঃ-মৃত্যুঃ ২৫৬ হিঃ ), আরব রীতি অনুযায়ী বংশধারাসহ পুরো নাম হলো '''মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বিন বারদিযবাহ''' ([[আরবি ভাষা|আরবি]]/[[ফার্সি ভাষা|ফার্সি ভাষায়]]: محمد بن اسماعيل بن ابراهيم بن مغيره بن بردزبه بخاری), একজন বিখ্যাত হাদীসবেত্তা ছিলেন। তিনি "[[সহীহ বুখারী|বুখারী শরীফ]]" নামে একটি হাদীসের সংকলন রচনা করেন, যা মুসলমানদের নিকট হাদীসের সবোর্ত্তম গ্রন্থ বিবেচিত হয়। <ref>দুহাল ইসলাম (ইসলামের দ্বিপ্রহর) ২য় খন্ড, ডা: আহমাদ আমীন রচিত, আবু তাহের মেসবাহ অনূদিত, ইসলামিক ফাউন্ডশন থেকে প্রকাশিত। পৃষ্ঠা-১১৩</ref> তার নাম মুহাম্মদ। উপনাম হলো আবু আবদুল্লাহ। আমিরুল মুমিনীন ফিল হাদীস তাঁরতার উপাধি। [[বুখারা]] তাঁরতার জন্মস্থান বলে তাকে বুখারী বলা হয়।<ref name="al">{{ওয়েব উদ্ধৃতি | ইউআরএল=http://www.alkawsar.com/article/58/print | শিরোনাম=ইমাম বুখারীর দেশে | প্রকাশক=মাসিক আলকাউসার অনলাইন সংস্করণ | তারিখ=ডিসেম্বর ২০০৯ | সংগ্রহের-তারিখ=18 March 2014 | লেখক=মুহাম্মাদ তাকী উসমানী | আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20121003211308/http://alkawsar.com/article/58/print | আর্কাইভের-তারিখ=৩ অক্টোবর ২০১২ | অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref>
 
 
== জীবনী ==
তিনি ১৩ই শাওয়াল শুক্রবার, ১৯৪ হিজরীতে (৮১০ খ্রিস্টাব্দ) [[উত্তর খোরাসান প্রদেশ|খোরাসানের]] [[বুখারা|বুখারাতে]] (বর্তমানে [[উজবেকিস্তান|উজবেকিস্তানের]] অংশ) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম [[ইসমাইল ইবনে ইব্রাহিম]]। তাঁরতার দাদার নাম ইব্রাহিম। তাঁরতার দাদার সম্পর্কে খুব বেশি জানা না গেলেও তাঁরতার বাবা ইসমাইল মুসলিম বিশ্বে একজন পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন হাদীসবিদ। তিনি হাদিস শাস্ত্রবিদ আল্লামা হাম্মাদ (রহঃ) এবং [[ইমাম মালিক|হযরত ইমাম মালেক (রহঃ)]] এর শাগরিদ ছিলেন। এছাড়াও বিখ্যাত মনীষী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহঃ) এর শাগরিদ ছিলেন বলে জানা যায়। সমসাময়িক যুগের আরও অনেক বুজুর্গ আলেমদের কাছ থেকে দ্বীনে ফায়েজের জাহেরি ও বাতেনি ইলম হাসিল করে সুযোগ্য আলেম ও বিজ্ঞ মুহাদ্দিস হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।ইমাম বুখারী (রহঃ) শিক্ষা, জ্ঞান ও যোগ্যতা শুধু পিতার দিক থেকেই পাননি বরং মাতার দিক থেকেও অর্জন করেছিলেন। [[ইমাম বুখারী|ইমাম বুখারী (রহঃ)]] এর মাতা ছিলেন বিদূষী ও মহীয়সী মহিলা। নেককার মহিলা হিসেবে তাঁরতার পরিচিতি ছিল। এ সম্পর্কে একটা ঘটনা আছে। বাল্যকালে ইমাম বুখারী (রহঃ) এর একবার কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ রোগের প্রভাবে তাঁরতার দুই চোখ প্রায় অন্ধ হয়ে যায়। স্নেহময়ই মাতা পুত্রের চোখের আলোর পুনঃপ্রাপ্তির জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েন এবং [[আল্লাহ্‌]] পাকের দরবারে প্রার্থনা করতে থাকেন। এ পর্যায়ে এক রাত্রে স্বপ্নে তিনি হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে তার শিয়রে বসা অবস্থায় দেখতে পেলেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাকে বলেন, তোমার প্রার্থনা আল্লাহ্‌ পাক কবুল করেছেন। তাঁরতার দয়ার বরকতে তোমার পুত্র চোখের আলো ফিরে পেয়েছে। পরদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে তাঁরতার পুত্র ইমাম বুখারী (রহঃ) বলে উঠলেন, আম্ম! আমি সবকিছু দেখতে পাচ্ছি। আমার চোখ ভাল হয়ে গেছে। এ ঘটনাটিই প্রমাণ করে ইমাম বুখারী (রহঃ) এর মাতা কত বড় মাপের বুজুর্গ মহিলা ছিলেন।ইমাম বুখারী (রহঃ) শৈশবেই বাবাকে হারান, ফলে মায়ের কাছে প্রতিপালিত হন। পিতা মারা যাওয়ার সময় প্রচুর ধনসম্পদ রেখে যান। ফলে ইমাম বুখারী (রহঃ) কে কোনরূপ প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়নি। মাতাই পুত্রের শিক্ষা-দীক্ষার ভার গ্রহণ করেন। ইমাম বুখারী (রহঃ) এর বাল্যকাল থেকেই শিক্ষা-দীক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। ইমাম বুখারী (রহঃ) প্রথমে কোরআন পাঠ শুরু করেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে তিনি কুরআন মুখস্থ করেন। ১০ বছর বয়স থেকে তিনি হাদীস মুখস্থ করা শুরু করেন। ১৬ বছর বয়সেই তিনি "আবদুল্লাহ বিন মুবারক" এবং "ওয়াকীর পান্ডুলিপিসমূহ" মুখস্থ করে ফেলেন। মহান আল্লাহ্‌ পাক তাকে অনন্য সাধারণ স্মরণ শক্তি দান করেছিলেন। <ref>দুহাল ইসলাম (ইসলামের দ্বিপ্রহর) ২য় খন্ড, ডা: আহমাদ আমীন রচিত,আবু তাহের মেসবাহ অনূদিত,ইসলামিক ফাউন্ডশন থেকে প্রকাশিত। পৃষ্ঠা-১১৩</ref><ref name="articles.ourislam.org">{{ওয়েব উদ্ধৃতি |শিরোনাম=সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি |ইউআরএল=http://articles.ourislam.org/articles/380/1/aaaa-aaaaaa-aa--/Page1.html |সংগ্রহের-তারিখ=১৫ নভেম্বর ২০১১ |আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20111105194525/http://articles.ourislam.org/articles/380/1/aaaa-aaaaaa-aa--/Page1.html |আর্কাইভের-তারিখ=৫ নভেম্বর ২০১১ |অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ }}</ref>
 
=== সফরসমূহ ===
ষোল বছর বয়সে তিনি মা এবং বড় ভাইয়ের সাথে [[হজ্জ|হজ্জে]] গমন করেন। হজ্জের পর তিনি [[মক্কা|মক্কাতে]] রয়ে গেলেন এবং হিজাযের হাদীসবিশারদদের কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করতে থাকলেন। এ সময় তিনি "কাজায়াস সাহাবা ওয়াত তাবীয়ীন" নামক গ্রণ্থ রচনা করেন। এরপর হাদীস অন্বেষণের জন্য তিনি [[ইরাক]], [[সিরিয়া]] ও [[মিশর]]সহ বহু অঞ্চলে সফর করেন। একদা ইমাম বুখারি (রহঃ) মুহাদ্দিস দাখেলির দরসগাহে যোগ দেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর তিনি হাদীস অন্বেষণের ভ্রমণ শেষ করে নিজ মাতৃভূমি বুখারায় ফিরে আসেন।<ref>দুহাল ইসলাম (ইসলামের দ্বিপ্রহর) ২য় খন্ড, ডা: আহমাদ আমীন রচিত,[[আবু তাহের মিসবাহ]] অনূদিত,ইসলামিক ফাউন্ডশন থেকে প্রকাশিত। পৃষ্ঠা-১১৩</ref><ref>http://dawatul-haq.com/article.php?id=165{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=ডিসেম্বর ২০১৮ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref>
 
 
==শৈশব কাল ও জ্ঞান অর্জন==
 
শিশুকালেই তাঁরতার পিতা ইন্তেকাল করেন। পিতার মৃত্যুর পর মাতার তত্বাবধানে তিনি প্রতিপালিত হন। দশ বছর বয়সে উপনীত হয়ে তিনি জ্ঞান চর্চার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। অল্প বয়সেই তিনি পবিত্র কুরআন মুখস্ত করেন। শৈশব কালে মক্তবে লেখাপড়া করার সময়ই আল্লাহ্ তাঁরতার অন্তরে হাদীছ মুখস্ত ও তা সংরক্ষণ করার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। ১৬ বছর বয়সেই হাদীছের প্রসিদ্ধ কিতাবগুলো পাঠ সমাপ্ত করেন। তাঁরতার জীবনীতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি ছোট থাকতেই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং আল্লাহর রহমতে ও তাঁরতার মায়ের দোয়ায় পুনরায় দৃষ্টি শক্তি ফিরে পান ।
 
==ইমাম বুখারীর স্মরণ শক্তির প্রখরতা:==
 
১৮ বছর বয়সে আবারো তিনি হজ্জ পালনের জন্য মক্কায় গমণ করেন। মক্কায় অবস্থান করে তিনি ইলমে হাদীসের চর্চা শুরু করেন। অতঃপর তিনি এই উদ্দেশ্যে অন্যান্য দেশ ভ্রমণ করেন এবং এক হাজারেরও অধিক সংখ্যক মুহাদ্দিসের নিকট থেকে হাদীস সংগ্রহ করেন। জ্ঞান অর্জনের জন্য গভীর রাত জেগে তিনি অত্যন্ত কঠিন পরিশ্রম করতেন। তাঁরতার স্মৃতি শক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর। সহীহ বুখারীর অন্যতম ভাষ্যকার কুস্তুলানীর বক্তব্য অনুযায়ী তিনি ছয় লক্ষ হাদীছের হাফেয ছিলেন। আলেমগণ তাঁরতার জীবনীতে উল্লেখ করেছেন, যে কোন কিতাবে একবার দৃষ্টি দিয়েই তিনি তা মুখস্ত করে ফেলতে পারতেন।
তাঁরতার জীবনীতে আরও বর্ণিত হয়েছে যে,একদা ইমাম দাখেলি (রহঃ) একটি হাদিসের সনদ বর্ণনা করবার সময় 'জুবাইর' এর স্থলে 'আবু জুবাইর' বলেছেন। ইমাম বুখারি নম্রস্বরে বললেন- এখানে আবু জুবাইর' এর স্থলে 'জুবাইর' হবে। অতঃপর ইমাম দাখেলি (রহঃ) বাড়িতে গিয়ে কিতাব দেখে তাঁরতার ভুল সংশোধন করেছেন। এর অব্যবহিত পরই দাখেলি (রহঃ) তাঁকেতাকে খুব স্নেহ করতেন। তিনি এতদ্ভিন্ন অন্য এক দরসগাহে ও যোগ দিতেন। সেখানে অন্য ছাত্রগন হাদিসগুলো লিখে নিতেন। তিনি তা লিখতেন না। তাঁরতার সহপাঠীগণ তাঁকেতাকে হাদিস না লিখে রাখার কারণ জিজ্ঞেস করলে কোন উত্তর দেননি। অতঃপর সহপাঠীগণ তাঁকেতাকে হাদিস লেখার জন্য জোর তাগিদ দিলে তিনি উত্তর দিলেন- "আপনাদের লেখা কপিগুলো নিয়ে আসুন। তারা কপিগুলো নিয়ে আসলে তিনি ধারাবাহিকভাবে তাদের সামনে হাদিসগুলো পাঠ করে শোনান। সেই মজলিসে তাদের লেখা অনুসারে প্রায় পনের হাজার (১৫,০০০) হাদিস মুখস্থ পাঠ করে শোনান।
ইমাম বুখারী (রঃ) বলেনঃ আমার অন্তরে এক লক্ষ সহীহ হাদীছ ও দুই লক্ষ যঈফ হাদীস মুখস্ত রয়েছে। মুহাদ্দিছ ইবনে খুযায়মা (রঃ) বলেনঃ পৃথিবীতে ইমাম বুখারী অপেক্ষা অধিক অভিজ্ঞ এবং হাদীছের হাফেয আর কেউ জন্ম গ্রহণ করে নি।
 
৪৭ ⟶ ৪৫ নং লাইন:
==বাগদাদে তাঁর স্মরণ শক্তির পরীক্ষা==
 
তৎকালীন সমগ্র ইসলামী রাজ্যে যখন মুহাদ্দিছ হিসেবে ইমাম বুখারীর কথা ছড়িয়ে পড়ল তখন সেই যুগের বড় বড় মুহাদ্দিসগণ তাঁকেতাকে পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাই তিনি যখন বাগদাদে আগমণ করলেন তখন চারশত মুহাদ্দিস একত্রিত হয়ে ১০০টি সহীহ হাদীছ নির্বাচন করে তার সনদ ও মতন পাল্টিয়ে দিয়ে ১০ ভাগে বিভক্ত করে দশজন মুহাদ্দিসের হাতে সোপর্দ করলেন। অতঃপর তাঁরতার জন্য হাদীসের মজলিস স্থাপন করা হলো। তিনি যখন আসন গ্রহণ করলেন তখন প্রথমে একজন মুহাদ্দিস ১০টি হাদীস নিয়ে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে একটি একটি করে সবগুলো হাদীস পাঠ করে শেষ করলেন। প্রতিটি হাদীস পড়া শেষ হলেই ইমাম বুখারী বললেনঃ এ ধরণেরধরনের কোন হাদীস আমার জানা নেই। এমনিভাবে ১০ জন বিখ্যাত মুহাদ্দিস ১০০টি হাদীছ তাঁরতার সামনে পাঠ করলেন। সকল হাদীছের ক্ষেত্রেই তিনি বার বার একই কথা বললেন।
 
পরিশেষে তিনি সকলকে ডেকে উলটপালট কৃত হাদীসগুলোর প্রত্যেকটি হাদীসকে তার আসল সনদের দিকে ফিরিয়ে দিলেন এবং ঠিক করে দিলেন। হাদীছগুলোর সনদ থেকে কোন রাবীর (হাদিস বর্ণনাকারী ) নাম বাদ পড়েনি এবং মতনসমূহ থেকে একটি শব্দও ছুটে যায় নি। এমনকি হাদীসগুলো সঠিকভাবে সাজানোতে মুহাদ্দিছগণ তাঁরতার কোন ভুল-ত্র“টি ধরতে পারেন নি। বলা হয় যে, সমরকন্দে যাওয়ার পরও তাঁকেতাকে একই নিয়মে পরীক্ষা করা হয়েছিল। এতে সেই যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিসেবে সকলেই তাঁকেতাকে স্বীকৃত প্রদান করলেন।
 
==ইমাম বুখারীর উস্তাদ ও ছাত্রগণ==
:
 
ইমাম বুখারী (রঃ) থেকে অসংখ্য মুহাদ্দিস [[সহীহ বুখারী]] বর্ণনা করেছেন। খতীব বাগদাদী (রঃ) বুখারীর অন্যতম রাবী ফিরাবরির বরাত দিয়ে বলেন যে, তার সাথে প্রায় সত্তর হাজার লোক ইমাম বুখারী থেকে সরাসরি সহীহ বুখারী পড়েছেন।
 
'''তাঁরতার উল্লেখযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন '''
 
১) ইমাম মুসলিম রঃ,
৬৫ ⟶ ৬৩ নং লাইন:
৬) ছালেহ বিন মোহাম্মদ রঃ,
৭) আবু বকর বিন খুয়ায়মা রঃ,
৮) ইয়াহইয়া ইবনে মুহাম্মদ রঃ,
 
তিনি যাদের কাছে হাদীস শুনেছেন তাদের মধ্যে বিশিষ্টজন ,<ref>ছোটদের ইমাম বোখারী- আ.মো. আব্দিল্লাহিল মাহমুদ</ref>
৭৫ ⟶ ৭৩ নং লাইন:
ইমাম বখারীর পূর্বে শুধু সহীহ হাদীস সমূহ একত্রিত করে কেউ কোন গ্রন্থ রচনা করেন নি। সহীহ বুখারী সংকলনের পূর্বে আলেমগণ সহীহ ও যঈফ হাদীছগুলোকে এক সাথেই লিখতেন। কিন্তু ইমাম বুখারীই সর্বপ্রথম যঈফ হাদীছ থেকে সহীহ হাদীছগুলোকে আলাদা করে লেখার কাজে অগ্রসর হন।
 
তিনি তাঁরতার বিশিষ্ট উস্তাদ ইসহাক বিন রাহওয়াই হতে এই মহৎ কাজের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তিনি স্বয়ং বর্ণনা করেন যে, এক দিন আমি ইসহাক ইবনে রাহওয়াইয়ের মসজিদে বসা ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ যদি হাদীসের এমন একটি গ্রন্থ করতো, যাতে শুধু সহীহ হাদীসগুলোই স্থান পেতো তাহলে খুবই সুন্দর হতো। মজলিসে উপস্থিত সকলেই তাঁরতার কথা শুনলেও এ কাজে কেউ অগ্রসর হওয়ার সাহস পায় নি। ইসহাকের কথাগুলো ইমাম বুখারীর অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল। তিনি সেই দিন হতেই এই মহান দায়িত্ব পালন করবেন বলে মনে মনে স্থির করলেন।
তাঁরতার জীবনীতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, তিনি একবার স্বপ্নে দেখলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র শরীরে মাছি বসছে। তিনি এতে কষ্ট পাচ্ছেন। আর ইমাম বুখারী হাতে পাখা নিয়ে তাঁরতার পবিত্র শরীর থেকে মাছিগুলো তাড়িয়ে দিচ্ছেন। তিনি এই স্বপ্নের কথা সেই যুগের একাধিক আলেমের কাছে প্রকাশ করলে সকলেই বললেন যে,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছের সাথে যে সমস্ত জাল ও বানোয়াট হাদীস ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে এতে রাসুল (সঃ) কষ্ট পাচ্ছেন । আলেমদের ব্যাখা শুনে শুধু সহীহ হাদীস সম্বলিত একটি কিতাব রচনার প্রতি তাঁরতার আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পায়।
 
==সহীহ বুখারী রচনায় ইমাম বুখারীর শর্ত ও সতর্কতা:==
 
ইমাম বুখারী তাঁরতার কিতাবে কেবল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসগুলোই বর্ণনা করেছেন। কোন হাদীসকে সহীহ হিসেবে সাব্যস্ত করার জন্য এবং তা সহীহ বুখারীতে লিপিবদ্ধ করার জন্য তিনি সুস্পষ্ট করে কোন শর্তের কথা উল্লেখ না করলেও আলেমগণ তাঁরতার কাজের উপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিত শর্তগুলো বের করেছেনঃ
 
১) হাদীসের রাবী (হাদিস বর্ণনাকারী ) তার উপরের রাবীর সমসাময়িক হতে হবে এবং উভয়ের মাঝে সাক্ষাত হওয়া প্রমাণিত হতে হবে। অর্থাৎ সাক্ষাৎ করা এবং হাদীসগুলো শুনা প্রমাণিত হওয়া জরুরী। এই শর্তে তিনি অন্যান্য মুহদ্দিসদের বাদ দিয়েছেন। এই ক্ষেত্রে [[ইমাম মুসলিম|ইমাম মুসলিমের]] মর্ত হচ্ছে উভয়ের মাঝে সাক্ষাৎ সম্ভব হলেই চলবে। জীবনে কমপক্ষে একবার সাক্ষাত হয়েছে বলে প্রমাণিত হওয়া এবং নির্দিষ্ট কোন হাদীস শুনা জরুরী নয়।
৯২ ⟶ ৯০ নং লাইন:
৫) হাদীছের সনদ মুত্তাসিল হওয়া। অর্থাৎ মাঝখান থেকে কোন রাবী (হাদিস বর্ণনাকারী ) বাদ না পড়া।
 
কোন হাদীসে কেবল উপরোক্ত শর্তগুলো পাওয়া গেলেই ইমাম বুখারী স্বীয় কিতাবে তা লিখে ফেলেন নি। বরং প্রতিটি হাদীস লেখার আগে তিনি গোসল করে দুই রাকআত নফল নামায পড়েছেন এবং ইস্তেখারা (কোন বিষয়ে দ্বিমত হলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার নামাজ) করেছেন। তাঁরতার অন্তরে যদি হাদীসটি সম্পর্কে কোন প্রকার সন্দেহ জাগতো তাহলে সে হাদীসটি শর্ত মোতাবেক সহীহ হওয়া সত্ত্বেও তিনি সহীহ বুখারীতে লিখতেন না। এইভাবে মসজিদে নববীতে বসে তিনি তা লেখা শুরু করেন এবং একটানা ১৬ বছর এই কাজে দিন রাত পরিশ্রম করেন।
 
লেখা শেষ করেই তাড়াহুড়া করে তা মানুষের জন্য প্রকাশ করেন নি; বরং কয়েকবার তিনি তাতে পুনঃদৃষ্টি প্রদান করেছেন, ভুল-ত্রুটি সংশোধন করেছেন এবং পরিমার্জিত করেছেন।এভাবে এই পুনঃদৃষ্টি তিনবার করেছেন। সর্বশেষ লিখিত কপিটিই বর্তমানে মুসলিম জাতির নিকট অমূল্য রত্ম হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। ইমাম বুখারীর উস্তাদ ও বন্ধুগণের নিকট কিতাবটি পেশ করলে তাদের সকলেই তা পছন্দ করেছেন। যারা এই কিতাবটির প্রশংসা করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আহমাদ বিন হাম্বাল, আলী ইবনুল মাদীনী, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন এবং আরও অনেকেই। তারা সকলেই এর সকল হাদীসকে সহীহ বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন।মুসলিম বিশ্ব ও আলেম সমাজ এই [[সহীহ বুখারী|বুখারি শরীফ]]কে [[কুরআন|আল-কুরআনের]] পরেই সন্মান করে থাকেন ।
১০৩ ⟶ ১০১ নং লাইন:
==তাঁর জীবনীর সাথে সম্পৃক্ত একটি স্মরণীয় ঘটনা==
 
তাঁরতার জীবনীতে উল্লেখ করা হয় যে, তিনি একবার একটি থলের ভিতর একহাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে হাদীস অন্বেষণের সফরে বের হলেন। সফর অবস্থায় কোন এক চোর এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো দেখে ফেলে এবং তা চুরি করার জন্য ইমাম বুখারীর পিছনে লাগে। কিন্তু চোর তা চুরি করার সকল প্রকার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যর্থ হয়। পথিমধ্যে ইমাম বুখারী পানি পথে ভ্রমণের জন্য জাহাজে আরোহন করলে চোরও তাঁরতার সাথে যাত্রা শুরু করে। সেখানেও সে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরিশেষে চোর মুদ্রাগুলো চুরি করার নতুন এক কৌশল অবলম্বন করে। সে এই বলে চিৎকার করতে থাকে যে, এই জাহাজে উঠার পর আমার একহাজার স্বর্ণমুদ্রা চুরি হয়ে গেছে। মুদ্রাগুলো একটি থলের ভিতর ছিল। সে থলেটির ধরণওধরনও বর্ণনা করল, যা সে ইতিপূর্বে ইমামের কাছে দেখেছিল। চিৎকার ও কান্নাকাটির মাধ্যমে চোরটি জাহাজের মাঝি-মাল্লাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।মাঝি-মাল্লাগণ এক এক করে সকল যাত্রীর পকেট ও শরীর চেক করা শুরু করল। এই দৃশ্য দেখে ইমাম বুখারী চিন্তা ও হতাশায় পড়ে গেলেন। চোরের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তিনি ভাবলেন এখন যদি আমাকে তল্লাশি করা হয় তাহলে তো আমার কাছে একহাজার স্বর্ণমুদ্র পাওয়া যাবে আর আমিই চোর হিসাবে সাব্যস্ত হবো। আমি অভিযোগ অস্বীকার করলেও আমার কথায় কেউ কর্ণপাত করবে না। আর আমি যদি আজ চোর হিসেবে ধরা পড়ি তাহলে সারা দুনিয়ায় খবর ছড়িয়ে পড়বে যে, মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল বুখারী এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা চুরি করেছে। আমার সারা জীবনের সাধনা ব্যর্থ হবে। আমি যে সমস্ত সহীহ হাদীস সংগ্রহ করেছি, তাও লোকেরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং পবিত্র ইলমে হাদীসের অবমাননা হবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি স্বর্ণমুদ্রার মায়া ত্যাগ করে রাসূলের হাদীসের মর্যাদ অক্ষুন্ন রাখতে স্বর্ণের থলেটি পানিতে ফেলে দিলেন । এরপর সকলের মাল-পত্র ও শরীর তল্লাশির এক পর্যায়ে ইমাম বুখারীর শরীরও তল্লাশি করা হলো। জাহাজের কারও কাছে কোন থলের ভিতর এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেল না।পরিশেষে জাহাজের লোকেরা চোরকেই মিথ্যাবাদী হিসেবে সাব্যস্ত করে সকলকে হয়রানি করার শাস্তি প্রদান করলো । পরে চোর তাঁরতার সাথে একান্তে মিলিত হয়ে বললঃ জনাব আপনার সাথের এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা আপনি কোথায় রেখেছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ তোমার চক্রান্ত বুঝতে পেরে আমি তা পানিতে ফেলে দিয়েছি।
 
 
==আলেমদের মূল্যায়নে সহীহ বুখারী==
১১০ ⟶ ১০৭ নং লাইন:
 
সংক্ষিপ্তভাবে কিতাবটি সহীহ বুখারী হিসাবে প্রসিদ্ধতা অর্জন করলেও এর পূর্ণ নাম হচ্ছে আল জামেউস সহীহহুল মুসনাদু মিন উমরি রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহি ওয়া আইয়ামিহি। তবে কারও মতে দীর্ঘ নামটির মধ্যে শব্দের তারতম্য রয়েছে। এই কিতাবে তিনিই সর্বপ্রথম হাদীসসমূহকে আধুনিক পদ্ধতিতে সুবিন্যাস্ত করেন। কিতাবটি রচনার জন্য তিনি মদীনা মুনাওয়ারায় গমণ করেন। মসজিদে নববীতে বসে একটানা ১৬ বছর কঠোর পরিশ্রম এবং ঐকান্তিক সাধনার ফলশ্র“তিতে সম্পাদিত এই গ্রন্থটি সর্বযুগের সকল আলেমের নিকট সমাদৃত হয়। বিশ্বের সকল মুসলমানদের কাছে পবিত্র আল কুরআনের পরেই [[সহীহ বুখারী|সহীহ বুখারী শরীফ]] সর্বাধিক পবিত্র গ্রন্থ ।
 
 
এ যাবৎ সহীহ বুখারীর অসংখ্য ব্যাখ্যা গ্রন্থ বের হয়েছে । এই ব্যাখ্যা গ্রন্থগুলোর মধ্যে আল্লামা হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী কর্তৃক রচিত ফতহুল বারী সর্বশ্রেষ্ট স্থান দখল করে আছে।
১১৭ ⟶ ১১৩ নং লাইন:
:
 
ইমাম বুখারীর শেষ জীবন খুব সুখ-শান্তিতে অতিবাহিত হয় নি। বুখারার তৎকালীন আমীরের সাথে তাঁরতার মতবিরোধ হয়েছিল। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এই যে, যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস হিসাবে যখন ইমাম বুখারীর সুনাম ও সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ল তখন বুখারার আমীর স্বীয় ইমাম বুখারিকে রাজ দরবারে এসে সন্তানদেরকে সহীহ বুখারী পড়ানোর জন্য প্রস্তাব করলো। ইমাম বুখারী তাঁরতার মসজিদ ও সাধারণ লোকদেরকে ছেড়ে দিয়ে রাজ দরবারে গিয়ে আলাদাভাবে আমীরের ছেলেদেরকে বুখারী পড়ানোকে ইলমে হাদীসের জন্য বিরাট অবমাননাকর ভেবে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। তিনি পরিস্কারপরিষ্কার বললেন,আমীর যদি সত্যিকার অর্থে ইলমে হাদীসের প্রতি অনুরাগী হন, তাহলে তিনি যেন তাঁরতার সন্তানদেরকে আমার পাঠ্যস্থান মসজিদে পাঠান ।
এতে আমীর ইমাম বুখারীর প্রতি রাগান্বিত হয়ে তাঁকেতাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করলেন এবং বুখারীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার জন্য আমীরের নিজস্ব কিছু আলেম ঠিক করলেন। আমীরের আদেশ এবং ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে তিনি জন্মভূমি বুখারা ত্যাগ করে নিশাপুরে চলে যান। নিশাপুরেও অনুরূপ দুঃখজনক ঘটনা ঘটলে পরিশেষে সমরকন্দের খরতঙ্গ নামক স্থানে চলে যান। বুখারা থেকে বের হওয়ার সময় ইমাম আল্লাহর কাছে এই দুআ করেন যে, হে আল্লাহ্! সে আমাকে যেভাবে অপমান করে বের করে দিলো তুমিও তাকে অনুরূপ লাঞ্চিত করো। মাত্র এক মাস পার হওয়ার পূর্বেই খুরাসানের আমীর খালেদ বিন আহমাদের বিরুদ্ধে জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাকে ক্ষমতা ছাড়া করলো। পরবর্তীতে বাগদাদের জেলে থাকা অবস্থায় সে মৃত্যু বরণ করে।
 
==ইমাম বুখারী সম্পর্কে আলেমদের কিছু অভিমত:==
১২৬ ⟶ ১২২ নং লাইন:
২) ইমাম আবু নুআইম আহমাদ বিন হাম্মাদ (রহঃ) বলেনঃ ইমাম বুখারী হচ্ছেন এই উম্মতের ফকীহ। ইয়াকুব বিন ইবরাহীমও অনুরূপ বলেছেন।
 
৩) আলী বিন হাজার বলেনঃ তাঁরতার মত আর কেউ আছে বলে আমার জানা নেই।
 
৪) কুতাইবা বলেনঃ পৃতিবীর পূর্ব ও পশ্চিম হতে আমার নিকট অনেক লোক এসেছে কিন্তু মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আল বুখারী যতবার এসেছে আর কেউ এত বেশীবার আগমণ করে নি।
১৩৭ ⟶ ১৩৩ নং লাইন:
 
৮) ইমাম আলী ইবনুল মাদীনী (রহঃ) বলেনঃ ইমাম বুখারীর সমকক্ষ আর কেউ ছিল না।
 
 
 
==তাঁর এবাদত-বন্দেী ও পরহেজগারীতার কিছু বিবরণ==
 
হাদিস চর্চায় সদা ব্যস্ত থাকলেও এবাদত বন্দেগীতে তিনি মোটেও পিছিয়ে ছিলেন না। তাঁরতার জীবনীতে উল্লেখিত হয়েছে যে, তিনি প্রতি বছর রামাযান মাসের প্রতিদিনের বেলায় একবার কুরআন খতম করতেন। আবার তারাবীর নামাযের পর প্রতি তিন রাত্রিতে একবার খতম করতেন। মুহাম্মদ বিন আবু হাতিম আল ওয়াররাক বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত মোতাবেক তিনি শেষ রাতে তের রাকআত তাহাজ্জুদ নামায পড়তেন। এমনকি তার মৃত্যুর কবর থেকে সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হয়। লোক দলে দলে তার কবরের মাটি নিতে থাকে। কোনভাবে তা নিবৃত্ত করতে না পেরে কাঁটা দিয়ে ঘিরে তার কবর রক্ষা করা হয়।পরে জনৈক ওলী মানুষের আকিদা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় সে ঘ্রাণ বন্ধ করার জন্য দোয়া করেন, ফলে তা আল্লাহর রহমতে বন্ধ হয়ে যায়।
 
 
 
== রচনাবলী ==
ইমাম বুখারী রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টিরও বেশি। এগুলোর কিছু বিলুপ্ত হয়ে গেছে কিংবা পান্ডুলিপি আকারে সংরক্ষিত রয়েছে। আর কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁরতার রচিত গ্রন্থাবলীর মাঝে সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ হলো বুখারী শরীফ। নীচেনিচে তাঁরতার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম দেয়া হলোঃ
# '''''কাজায়া আস-সাহাবা ওয়া আত-তাবিয়ীন'6'''' (আরবীতেঃقضايا الصحبة و التابعين)
#
১৮৭ ⟶ ১৭৯ নং লাইন:
 
== বুখারী শরীফ ==
মূল নিবন্ধঃ [[সহীহ বুখারী]]
 
ইমাম বুখারীর জীবনের শ্রেষ্ঠতম কর্ম হচ্ছে এই হাদীসগ্রন্থের রচনা। তিনি স্বীয় শিক্ষক ইসহাক বিন রাহওয়াইহ থেকে এই গ্রন্থ রচনার প্রেরণা লাভ করেন। একদিন ইসহাক একটি এমন গ্রন্থের আশা প্রকাশ করেন, যাতে লিপিবদ্ধ থাকবে শুধু সহিহ হাদীস। ছাত্রদের মাঝে ইমাম বুখারী তখন এই কঠিন কাজে অগ্রসর হন। ২১৭ হিজরী সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি [[মক্কা]]র হারাম শরীফে এই গ্রন্থের সংকলন শুরু করেন। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২৩৩ হিজরী সনে এর সংকলনের কাজ সমাপ্ত হয়। বুখারী শরীফের সংকলনকালে তিনি সর্বদা [[রোজা]] রাখতেন এবং প্রতিটি হাদীস গ্রন্থ সন্নিবেশিত করার আগে গোসল করে দু' রাকাত নফল [[নামাজ]] আদায় করে মুরাকাবা ও ধ্যানের মাধ্যমে হাদীসের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতেন।<ref>[http://dawatul-haq.com/article.php?id=165 দা্‌ওয়াতুল হক]{{অকার্যকর সংযোগ|তারিখ=ডিসেম্বর ২০১৮ |bot=InternetArchiveBot |ঠিক করার প্রচেষ্টা=yes }}</ref> এই গ্রন্থে তিনি সকল সহিহ হাদীস সংকলন করেননি। বরং সহিহ হাদীসের মাঝে যেগুলো তার নির্ধারিত শর্তে উন্নীত হয়েছে, সেগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি স্বয়ং বলেন, "আমি জা'মে কিতাবে সহিহ হাদিস ব্যতিত অন্যকোন হাদিস ওল্লেখ করিনি। তবে কলেবর বড় হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেক সহিহ হাদিসকে বাদ দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমি আমার কিতাবে প্রতিটি হাদিস লেখার পূর্বেই গোসল করেছি এবং দু রাকাআত নামায আদায় করে নিয়েছি। অপর বর্ণনা হতে জানা যায় যে, ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর স্বীয় কিতাবের শিরোনাম সমূহ রাসুলে করিম (সা) এর রওজা এবং মসজিদে নববির মধ্যস্থলে বসে লিখেছিলেন এবং প্রত্যেক শিরোনামের জন্য দুরাকায়াত নফল নামাজ আদায় করেছেন। ইমাম বুখারীর প্রায় ৬ লাখ হাদীস মুখস্থ ছিল। বুখারী শরীফের পুরো নাম হলোঃ আল-জামি আল-সাহীহ আল-মুসনাদ মিন উমুরি রাসূলিল্লাহ (সাঃ) ওয়া সুনানিহি ওয়া আইয়ামিহি। বুখারি শরীফ প্রণয়ের স্থানঃ আবুল ফজল মোহাম্মদ বিন তাহেরের বর্ণনা মতে, ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর গ্রন্থখানি বুখারাতে বসে রচনার কাজ শেষ করেছেন। আবার কারো মতে মক্কা মুয়াজ্জামায় আবার কারো মতে বসরাতে। তবে উল্লেখিত সকল বর্ণনা নির্ভুল। কেননা তিনি উল্লেখিত স্থানগুলোর সকল নগরীতে অবস্থান করেছেন। স্বয়ং ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেছেন, আমি আমার সহিহ বুখারি সঙ্গে নিয়ে বসরা শহরে ৫ বছর অবস্থান করেছি এবং আমার কিতাব প্রণয়ের কাজ শেষ করি। আর প্রতি বছরই হজ্ব পালন করি এবং মক্কা হতে বসরাতে ফিরে আসি। তিনি ৬ লাখ হাদিস হতে যাচাই বাছাই করে সর্বসাকুলে ১৬ বছর নিরলস সাধনা করে এ প্রসিধ্য গ্রন্থখানি প্রণয়ন করেন। এখানে মোট হাদিস আছে সাত হাজার একশত পচাত্তর খানি(৭,১৭৫)। আর পুনরুক্ত ছাড়া আছে চার হাজারের (৪,০০০) মতো। আর কারো মতে, বুখারিতে পুনরুক্ত হাদিস আছে মাত্র একখানি যা রুমালের বর্ণনা।
 
== মৃত্যু ==
জীবনকালের শেষদিকে একবার বুখারার তৎকালীন শাসনকর্তা "খালিদ বিন আহমাদ যুহলী" হাদীসশাস্ত্রে ইমাম বুখারীর পান্ডিত্য দেখে তাকে দরবারে এসে শাসনকর্তার সন্তানদেরকে হাদীস শেখাতে বলেন। ইমাম বুখারী এটাকে হাদীসের জন্য অবমাননাকর মনে করেন। ফলে উভয়ের মাঝে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। তখন তিনি মাতৃভূমি বুখারা ত্যাগ করে [[সমরকন্দ|সমরকন্দের]] খরতঙ্গে চলে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ২৫৬ [[ইসলামি বর্ষপঞ্জি|হিজরীর]], ১লা [[শাওয়াল]] মোতাবেক [[আগস্ট ৩১|৩১শে আগস্ট]], [[৮৭০]] খ্রিস্টাব্দের [[শুক্রবার]] দিবাগত রাতে মৃত্যুবরণ করেন। পরদিন [[শনিবার]] যোহরের [[নামাজ|নামাজের]] পর খরতঙ্গেই তাঁকেতাকে সমাধিস্থ করা হয়।
 
== তথ্যসূত্র ==
২০১ ⟶ ১৯৩ নং লাইন:
[[মুসলিম বিন হাজ্জাজ|মুসলিম (রহঃ)]]
 
[[আবু দাউদ|আবু দাউদ (রহঃ)]]
 
[[ইমাম নাসাই|ইমাম নাসাই (রহঃ)]]
২০৮ ⟶ ২০০ নং লাইন:
 
[[ইবনে মাজাহ। ইবনে মাজাহ (রহঃ)]]
 
 
 
== বহিঃসংযোগ ==