আলীবর্দী খান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
নাম সংশোধন
ট্যাগ: মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
২১ নং লাইন:
}}
 
'''নবাব আলীবর্দী খান''' (জন্ম: ১০ মে ১৬৭১ – মৃত্যু: ৯ এপ্রিল ১৭৫৬) ছিলেন ১৭৪০ থেকে ১৭৫৬ সাল পর্যন্ত [[বঙ্গ|বাংলা]], [[বিহার]] ও [[ওড়িশা|উড়িষ্যার]] নবাব। তিনি দীর্ঘ ১৬ বছর বাংলার নবাব ছিলেন এবং তাঁরতার শাসনামলের অধিকাংশ সময়ই [[মারাঠা সাম্রাজ্য|মারাঠা]] আক্রমণকারী ও আফগান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যয়িত হয়<ref name=bpedia>Mohammad Shah, [http://www.banglapedia.org/httpdocs/HT/A_0197.HTM Alivardi Khan] {{ওয়েব আর্কাইভ|ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20110701153501/http://www.banglapedia.org/httpdocs/HT/A_0197.HTM |তারিখ=১ জুলাই ২০১১ }}, [[Banglapedia]]: The National Encyclopedia of Bangladesh, [[Asiatic Society]] of Bangladesh, [[Dhaka]], ''Retrieved: 2011-05-24''</ref>। একজন অসমসাহসী ও রণনিপুণ সেনাপতি হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন<ref name="১">ড. মুহম্মদ আব্দুর রহিম, ''(বাংলাদেশের ইতিহাস)'', ''নবাব আলীবর্দী খান'', পৃ ২৮৮–৩০৩</ref> এবং কর্মদক্ষ ও দূরদর্শী শাসক হিসেবে তাঁরতার খ্যাতি ছিল<ref name="১"/><ref name="২">{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Markovits |প্রথমাংশ=Claude |তারিখ=2004 |শিরোনাম=A History of Modern India, 1480-1950 |ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=uzOmy2y0Zh4C&pg=PA194 |প্রকাশক=Anthem Press |পাতাসমূহ=194– |আইএসবিএন=978-1-84331-004-4}}</ref>।
 
== জন্ম ও প্রাথমিক জীবন ==
 
আলীবর্দী খানের প্রকৃত নাম [[মির্জা মুহম্মদ আলী]] । তাঁরতার পিতার নাম [[মির্জা মুহম্মদ]] ।
তিনি [[মুঘল সাম্রাজ্য|মুঘল দরবার]] কর্তৃক [[খান]] উপাধি পেয়েছিলেন। আরব বংশোদ্ভূত [[মির্জা মুহম্মদ বেগ]] [[মুঘল সাম্রাজ্য|মুঘল]] সম্রাট [[আওরঙ্গজেব|আওরঙ্গজেবের]] তৃতীয় পুত্র [[আজম শাহ|আজম শাহের]] দরবারের একজন কর্মকর্তা ছিলেন<ref name="১"/>। আলীবর্দী খানের মা [[ইরান|ইরানের]] [[খোরাসান|খোরাসানের]] এক [[তুর্কি]] উপজাতি থেকে এসেছিলেন। তাঁরতার পিতামহ [[আওরঙ্গজেব|আওরঙ্গজেবের]] সৎ ভাই ছিলেন। মির্জা মুহম্মদ আলী পূর্ণবয়স্ক হবার পরপরই [[আজম শাহ]] তাঁকেতাকে পিলখানার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন<ref name="১"/>।
 
[[১৭০৭]] সালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর তাঁরতার পুত্রদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় এবং এ যুদ্ধে [[আজম শাহ]] পরাজিত ও নিহত হন<ref name="১"/>। [[আজম শাহে]] এর মৃত্যুর পর তাঁরতার চাকরি চলে যায় এবং [[মির্জা মুহাম্মদ]] আলীর পরিবার দারুণ সমস্যার সম্মুখীন হয়<ref name="১"/>। ১৭২০ সালে ভাগ্যান্বেষণে তিনি সপরিবারে [[বঙ্গ|বাংলায়]] চলে আসেন। তিনি বাংলার তৎকালীন নবাব [[মুর্শিদ কুলি খান|মুর্শিদ কুলি খানের]] অধীনে চাকরির জন্য চেষ্টা করেন। কিন্তু মির্জা মুহম্মদ আলী মুর্শিদ কুলির জামাতা [[সুজাউদ্দিন খান|সুজাউদ্দিন খানের]] আত্মীয় ছিলেন এবং মুর্শিদ কুলি তাঁরতার জামাতার প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। এজন্য তিনি [[মির্জা মুহম্মদ আলী]] কে গ্রহণ করেন নি<ref name="১"/>।
 
== সুজাউদ্দিন খানের অধীনে কর্মজীবন ==
 
মুর্শিদ কুলি খান কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়ে মির্জা মুহাম্মদ আলী [[ওড়িশা|উড়িষ্যায়]] গমন করেন। উড়িষ্যার প্রাদেশিক শাসনকর্তা (নায়েব নাযিম) [[সুজাউদ্দিন খান]] তাঁকেতাকে সম্মানের সাথে গ্রহণ করেন<ref name="১"/>। সুজাউদ্দিন তাঁকেতাকে মাসিক ১০০ টাকা বেতনে রাজস্ব বিভাগের চাকরিতে নিয়োগ দান করেন। অল্পদিনের মধ্যেই তাঁরতার কাজ ও বিশ্বস্ততায় খুশি হয়ে সুজাউদ্দিন তাঁকেতাকে পদোন্নতি দেন। তিনি মির্জা মুহম্মদ আলীকে সবন্তপুরের থানাদারের পদ এবং ৬০০ অশ্বারোহী সৈন্যের মনসবদারি প্রদান করেন<ref name="১"/>। তদুপরি সুজাউদ্দিন তাঁকেতাকে [[ওড়িশা|উড়িষ্যা]]র কিছু জমিদারির তদারকিও দান করেন। মুহম্মদ আলী [[ওড়িশা|উড়িষ্যাতে]] তাঁরতার কার্যে বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দেন এবং উড়িষ্যায় শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপনে সুজাউদ্দিনকে সাহায্য করেন<ref name="১"/>।
 
=== রাজমহলের ফৌজদারি লাভ ===
 
১৭২৭ সালে [[মুর্শিদ কুলি খান|মুর্শিদ কুলি খানের]] মৃত্যুর পর মির্জা মুহম্মদ আলী বাংলার মসনদ লাভে সুজাউদ্দিন খানকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেন। ফলশ্রুতিতে সুজাউদ্দিন মির্জা মুহম্মদ আলীকে চাকলা আকবরনগরের ([[রাজমহল]]) ফৌজদার হিসেবে নিয়োগ দেন। নতুন ফৌজদারের শাসনাধীনে রাজমহলের জনগণ শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভ করে<ref name="১"/>। সুজাউদ্দিন খান ১৭২৮ সালে মির্জা মুহম্মদ আলীকে '''আলীবর্দী খান''' উপাধিতে ভূষিত করেন। এসময় থেকেই মির্জা মুহম্মদ আলী 'আলীবর্দী খান' নামে পরিচিতি লাভ করেন<ref name="১"/>। দেশ পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে আলীবর্দী সুজাউদ্দিনের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। নবাব তাঁরতার প্রতি এমন নির্ভরশীল হয়ে পড়েন যে, বছরে অন্তত একবার রাজমহল থেকে রাজধানী [[মুর্শিদাবাদ|মুর্শিদাবাদে]] তাঁরতার ডাক পড়ত<ref name="১"/>।
 
=== বিহারের নায়েব নাযিমের পদলাভ ===
 
১৭৩২ সালে মুঘল সম্রাট [[মুহাম্মদ শাহ]] [[বিহার]]কে বাংলার অধীনে নিয়ে আসেন। কিন্তু নবাব সুজাউদ্দিন সম্পূর্ণ অঞ্চল নিজের অধীনে না রেখে আলীবর্দীকে [[বিহার|বিহারের]] নায়েব নাযিম হিসেবে নিয়োগ দেবার সিদ্ধান্ত নেন। ১৭৩৩ সালে তিনি আলীবর্দীকে বিহারের নায়েব নাযিম নিযুক্ত করেন<ref name="১"/> এবং তাঁকেতাকে পাঁচ হাজার অশ্বারোহী সৈন্যের মনসবদারি প্রদান করেন। এর কিছুদিন আগেই আলীবর্দীর কনিষ্ঠা কন্যা [[আমিনা বেগম]] তাঁরতার কনিষ্ঠ ভাতিজা [[জৈনুদ্দিন আহমদ|জৈনুদ্দিন আহমদের]] সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং আমিনা বেগমের গর্ভে [[সিরাজউদ্দৌলা|সিরাজউদ্দৌলার]] জন্ম হয়<ref name="১"/>। আলীবর্দীর নিজের কোন পুত্র সন্তান ছিল না। আলীবর্দী [[সিরাজউদ্দৌলা|সিরাজউদ্দৌলাকে]] তাঁরতার উত্তরসূরি ঘোষণা করেন<ref name="১"/>।
 
==== অবাধ্য জমিদারদের দমন ====
 
আলীবর্দীর দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে বিহার প্রদেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছিল<ref name="১"/>। বিহারের জমিদাররা নবাবের অবাধ্য ছিলেন এবং তাঁদেরতাদের অনেকেই লুটতরাজে লিপ্ত হতেন। আলীবর্দী তাঁদেরতাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন এবং তাঁদেরকেতাদেরকে পরাজিত করে নবাবের বশ্যতা স্বীকার ও নিয়মিত রাজস্ব প্রদান করতে বাধ্য করেন<ref name="১"/>। টিকারির জমিদার রাজা সুন্দর সিংহ বশ্যতা স্বীকার করে আলীবর্দীর সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন এবং [[গোলাম মুস্তফা খান|মুস্তফা]] নামক তাঁরতার অধীনস্থ একজন আফগান নায়ক (সেনা কর্মকর্তাকে) আলীবর্দীর চাকরির জন্য ছেড়ে দেন<ref name="১"/>। মুস্তফা পরবর্তীতে আলীবর্দীর সেনাপতি রূপে খ্যাতি অর্জন করেন।
 
==== মুঙ্গেরের বিদ্রোহী উপজাতিদের দমন ====
৫৩ নং লাইন:
{{মূল নিবন্ধ|গিরিয়ার যুদ্ধ (১৭৪০)}}
 
১৭৩৯ সালের ১৩ মার্চ নবাব সুজাউদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁরতার পুত্র [[সরফরাজ খান]] নবাব হন। তিনি আলীবর্দী খানকে বিহারের প্রাদেশিক শাসনকর্তা হিসেবে বহাল রাখেন। ৪-৫ মাস আলীবর্দীর সঙ্গে নতুন নবাবের স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় থাকে। এরপর তাঁদেরতাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি দেখা দেয়। সরফরাজের দুর্বল চরিত্র এবং তাঁরতার নতুন উপদেষ্টাদের প্রভাব এজন্য বিশেষভাবে দায়ী ছিল<ref name="১"/>। ক্রমে এ মনোমালিন্য তীব্র সংঘর্ষে রূপ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত ১৭৪০ সালের ৯ এপ্রিল [[গিরিয়ার যুদ্ধ (১৭৪০)|গিরিয়ার যুদ্ধে]] আলীবর্দী সরফরাজকে পরাজিত ও নিহত করে বাংলার মসনদে আসীন হন<ref name="১"/>।
 
== নবাবি লাভ ==
 
বাংলার নবাবি লাভের পর আলীবর্দী খান বাংলার শাসনব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ রদবদল আনয়ন করেন<ref name="১"/>। ১৭৪০ সালের নভেম্বরে মুঘল সম্রাট তাঁকেতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদ প্রদান করেন। নবাব পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর আলীবর্দী বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন এবং পরবর্তী এক যুগ তাঁকেতাকে দেশীয় ও আফগান বিদ্রোহী, মারাঠা আক্রমণকারীসহ বিভিন্ন শক্তির বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকতে হয়<ref name="১"/>।
 
=== দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলির বিদ্রোহ ===
{{মূল নিবন্ধ|দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খান|দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলির বিদ্রোহ|বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪১)|রায়পুরের যুদ্ধ}}
 
নবাব সুজাউদ্দিনের সময় থেকে [[ওড়িশা|উড়িষ্যা]] প্রদেশের প্রাদেশিক শাসনকর্তা ছিলেন সরফরাজ খানের জামাতা দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খান রুস্তম জঙ্গ<ref name="১"/>। তিনি আলীবর্দীর কর্তৃত্ব স্বীকার করতে অস্বীকার করেন এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করেন<ref name="১"/>। আলীবর্দী [[ফুলওয়ারীর যুদ্ধ|ফুলওয়ারীর যুদ্ধে]] তাঁকেতাকে পরাজিত করে উড়িষ্যা থেকে বিতাড়িত করেন<ref name="১"/>। দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি প্রথমে [[হায়দাররাবাদ|হায়দারাবাদের]] নিজামের কাছে এবং পরে মারাঠাদের [[নাগপুর রাজ্য|নাগপুর রাজ্যের]] রাজা রঘুজী ভোঁসলের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাঁরতার উৎসাহে রঘুজী ১৭৪১ সালের আগস্টে বাংলা আক্রমণ করেন এবং উড়িষ্যা দখল করে নেন। কিন্তু ১৭৪১ সালের ডিসেম্বরে [[রায়পুরের যুদ্ধ|রায়পুরের যুদ্ধে]] আলীবর্দী [[মির্জা আগা বাকের|মির্জা বাকেরের]] নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী ও মারাঠা বাহিনীকে পরাজিত করে উড়িষ্যা পুনরুদ্ধার করেন<ref name="১"/>। এর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলির বিদ্রোহের অবসান ঘটে, কিন্তু বাংলায় বিধ্বংসী মারাঠা আক্রমণের সূচনা হয়।
 
=== বাংলায় মারাঠা আক্রমণ ===
{{মূল নিবন্ধ|বর্গির হাঙ্গামা|কাটোয়ার যুদ্ধ (১৭৪২)|কাটোয়ার যুদ্ধ (১৭৪৫)|বর্ধমানের যুদ্ধ (১৭৪৭)}}
 
১৭৪১ সাল থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত সময়ে মারাঠারা বাংলায় পরপর ছয়টি আক্রমণ পরিচালনা করে<ref name="১"/>। তাদের প্রথম পাঁচটি আক্রমণ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়<ref name="১"/> এবং প্রতিবারই আলীবর্দী তাদেরকে বাংলা থেকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হন। [[কাটোয়ার যুদ্ধ (১৭৪২)|কাটোয়ার প্রথম যুদ্ধ]], [[কাটোয়ার যুদ্ধ (১৭৪৫)|কাটোয়ার দ্বিতীয় যুদ্ধ]] এবং [[বর্ধমানের যুদ্ধ (১৭৪৭)|বর্ধমানের দ্বিতীয় যুদ্ধে]] আলীবর্দী মারাঠা বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করেন<ref name="১"/> এবং এর মধ্য দিয়ে তাঁরতার রণকুশলতার পরিচয় দেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সেনাপতিদের অযোগ্যতা, অকর্মণ্যতা ও বিশ্বাসঘাতকতা, সৈন্যদের যুদ্ধক্লান্তি এবং নিজের অসুস্থতা প্রভৃতি নানা কারণে ১৭৪৯ থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত পরিচালিত ষষ্ঠ মারাঠা আক্রমণের সময় আলীবর্দী বাংলার মূল ভূখণ্ড থেকে মারাঠাদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হলেও উড়িষ্যা মারাঠাদের দখলে থেকে যায়<ref name="১"/>। অন্যদিকে, মারাঠারাও তাদের বারংবার পরাজয়ের ফলে হতাশ হয়ে পড়ে এবং শান্তি স্থাপনের প্রস্তাব প্রেরণ করে<ref name="১"/>। ফলে নবাব শেষ পর্যন্ত ১৭৫১ সালের মে মাসে মারাঠাদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মধ্য দিয়ে উড়িষ্যা ও দক্ষিণ [[মেদিনীপুর]] মারাঠাদের হস্তগত হয়<ref name="১"/> এবং নবাব মারাঠাদেরকে বাংলা ও বিহার আক্রমণ থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে তাদেরকে বার্ষিক [[চৌথ]] কর দিতে সম্মত হন<ref name="১"/>। দীর্ঘ দশ বছরব্যাপী মারাঠা আক্রমণের ফলে বাংলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়, অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দেশজুড়ে তীব্র বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়<ref name="১"/>।
 
=== আফগান বিদ্রোহ ===
{{মূল নিবন্ধ|আফগান বিদ্রোহ (১৭৪৫–১৭৪৮)|কালাদিয়ারার যুদ্ধ}}
 
মারাঠা আক্রমণের সুযোগে ১৭৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নবাবের উচ্চাভিলাষী আফগান সেনাপতি [[গোলাম মুস্তফা খান]] বিদ্রোহ করেন এবং [[মুর্শিদাবাদ]] ও [[বিহার]] দখলের চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন এবং ১৭৪৫ সালের ৩০ জুন [[ভোজপুরের যুদ্ধ|ভোজপুরের যুদ্ধে]] বিহারের প্রাদেশিক শাসনকর্তা [[জৈনুদ্দিন আহমদ]] তাঁকেতাকে পরাজিত ও নিহত করেন<ref name="১"/>। এরপর আফগান বিদ্রোহীরা মারাঠাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে। ১৭৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিহারে দুই আফগান সেনানায়ক সমশের খান ও সরদার খান বিদ্রোহ করেন এবং জৈনুদ্দিন আহমদকে হত্যা করে তাঁরতার স্ত্রী ও পুত্রদেরকে বন্দি করেন। [[মীর হাবিব|মীর হাবিবের]] নেতৃত্বে মারাঠা হানাদারেরাও তাঁদেরতাদের সঙ্গে যোগ দেয়<ref name="১"/>। অবশেষে আলীবর্দী ১৭৪৮ সালের ১৬ এপ্রিল [[কালাদিয়ারার যুদ্ধ|কালাদিয়ারার যুদ্ধে]] তাঁদেরতাদের পরাজিত করলে বিদ্রোহের অবসান ঘটে<ref name="১"/>।
 
=== ইংরেজ বণিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ ===
 
এসময় মুঘল সম্রাট কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত [[ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]]র বণিকরা বাংলায় ব্যবসা-বাণিজ্য করত। তারা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার জন্য দেশীয় ও অন্যান্য ইউরোপীয় বণিকদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হত। এজন্য ১৭৪৫ সালে আলীবর্দী আইন জারি করে ইংরেজ, ফরাসি ও ওলন্দাজ বণিকদের তাঁরতার রাষ্ট্রে যুদ্ধে লিপ্ত হতে এবং তাদের উপনিবেশগুলোতে দুর্গ নির্মাণ করতে নিষেধ করেন<ref name="১"/>। ১৭৪৮ সালে ইংরেজ বণিকরা বাংলায় আর্মেনীয় ও মুঘল বণিকদের কয়েকটি জাহাজ আটক করে। জাহাজগুলো ছেড়ে দেয়ার জন্য আলীবর্দী [[কলকাতা]]র ইংরেজ শাসনকর্তা বারওয়েলকে নির্দেশ দেন। তা অমান্য করায় আলীবর্দী ইংরেজ বণিকদের বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেন<ref name="১"/>। বাধ্য হয়ে ইংরেজরা আর্মেনীয় ও মুঘল বণিকদের জাহাজগুলো ছেড়ে দেয় এবং দেড় লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়<ref name="১"/>। এরপর আলীবর্দী তাদের বাণিজ্যিক সুবিধাদি ফিরিয়ে দেন।
 
== আলীবর্দীর শাসনব্যবস্থা ও কৃতিত্ব ==
৮২ নং লাইন:
যদিও আলীবর্দীর শাসনামলের অধিকাংশ সময়ই নানা যুদ্ধ-বিগ্রহে ব্যয়িত হয়, তবুও এরই মধ্যে তিনি বাংলার শাসনব্যবস্থার উন্নতি সাধন করেন। দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি ও আফগানদের বিদ্রোহ দমন করে তিনি অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করেন এবং মারাঠা আক্রমণ প্রতিহত করে বাংলার জনসাধারণকে রক্ষা করেন<ref name="১"/>। আলীবর্দী ধর্মীয় উদার নীতি গ্রহণ করেছিলেন এবং এর ফলে বহু হিন্দু উচ্চ রাজপদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন<ref name="১"/>। মারাঠা আক্রমণের ফলে বিশেষত পশ্চিম বাংলার প্রজাদের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল এবং কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের অবনতি ঘটেছিল<ref name="১"/>। মারাঠাদের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের পর আলীবর্দীর শাসনব্যবস্থা ও উৎসাহের ফলে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের দ্রুত উন্নতি হয় এবং বাংলা আবার ঐশ্বর্যশালী হয়ে ওঠে<ref name="১"/>।
 
ব্যক্তিগত জীবনে আলীবর্দী ধর্মনিষ্ঠ ও সচ্চরিত্রের অধিকারী ছিলেন<ref name="১"/> এবং শত্রুর প্রতি সদয় আচরণের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন<ref name="১"/>। আলীবর্দীর শাসনামলে বাংলায় [[ফার্সি]] সাহিত্য প্রসার লাভ করে। আলীবর্দী শিক্ষা-দীক্ষার প্রসারে উৎসাহী ছিলেন এবং তাঁরতার শাসনামলে বাংলায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা বিস্তৃতি লাভ করেছিল<ref name="১"/>।
 
== মৃত্যু ==
 
দীর্ঘদিন যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত থাকার দরুন আলীবর্দীর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়েছিল। ১৭৫৬ সালের ১০ এপ্রিল তিনি [[মুর্শিদাবাদ|মুর্শিদাবাদে]] হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন<ref name="১"/>। বর্তমান ভারতের [[পশ্চিমবঙ্গ]] রাজ্যের মুর্শিদাবাদের খোশবাগে তাঁরতার সমাধি অবস্থিত।
 
== আরও দেখুন ==