কার্ল মার্ক্স: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
InternetArchiveBot (আলোচনা | অবদান)
০টি উৎস উদ্ধার করা হল ও ১টি অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হল।) #IABot (v2.0
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
৩৫ নং লাইন:
 
=== প্যারিস ও ব্রাসেল্‌স ===
[[১৮৪৩]] সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে মার্ক্স [[প্যারিস|প্যারিসে]] আসেন। এ শহর তখন জার্মান, ব্রিটিশ, পোলীয় ও ইতালীয় বিপ্লবীদের সদর দফতর হয়ে উঠেছিল। তিনি প্যারিসে গিয়েছিলেন মূলত জার্মান বিপ্লবী ''Arnold Ruge'' এর সাথে ''[[জার্মান-ফরাসি বার্ষিকী|Deutsch-Französische Jahrbücher]]''-এর উপর কাজ করতে। সে সময় [[ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস]] প্যারিসে গিয়েছিলেন মার্ক্সকে [[১৮৪৪]] সালের বাস্তবতায় ইংল্যান্ডে কর্মজীবী মানুষের অবস্থা অবহিত করতে। এর আগে [[১৮৪২]] সালে মার্ক্সের সাথে এঙ্গেল্‌সের এ নিয়ে কথা হয়েছিল। সে পরিচয়ের ভিত্তিতেই এঙ্গেল্‌স এ ধরণেরধরনের উদ্যোগ নেন। এভাবেই ১৮৪৪ সালের [[২৮শে অক্টোবর]] মার্ক্স ও এঙ্গেল্‌স প্যারিসের ''Café de la Régence''-তে তাদের বন্ধুত্ব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা ঘটান। এটা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক বন্ধুত্বের একটি।
 
''[[জার্মান-ফরাসি বার্ষিকী]]'' বা ''Deutsch-Französische Jahrbücher''-এর পতন হওয়ার পর মার্ক্স প্যারিসের সবচেয়ে প্রগতিশীল জার্মান পত্রিকায় ("লিগ অফ দ্য জাস্ট" নামক গোপনীয় সমাজ এটা প্রকাশ করতো) একটি প্রবন্ধ লিখেন। এই প্রবন্ধের বিষয় ছিল "ইহুদি প্রশ্ন" এবং [[হেগেল]]। লেখালেখির বাইরে মার্ক্সের সময় কাটতো [[ফরাসি বিপ্লব|ফরাসি বিপ্লবের]] ইতিহাস, Pierre-Joseph Proudhon এর রচনা এবং গ্রাম্য প্রোলেতারিয়াদের কথা পড়ে। এ সময় প্রোলেতারিয়াদের অবস্থা নিয়ে তার বিশেষ আগ্রহ সম্পর্কে উইলিয়াম এইচ সিউয়েল জুনিয়র তার ''ওয়ার্ক অ্যান্ড রিভলিউশন ইন ফ্রান্স'' গ্রন্থে বলেন,
{{উক্তি|''... মার্ক্সের হঠাৎ করে প্রোলেতারীয় কারণ সম্বন্ধীয় মতবাদের প্রতি সমর্থনের সাথে এর আগে ফ্রান্সের সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সমাজের সাথে তার নিবিঢ় যোগাযোগের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করা যায়।''}}
 
মার্ক্স তরুণ হেগেলিয়ানদের সাথে তার সম্পর্কের পূনর্মূল্যায়ন করেন। [[১৮৪৩]] সালে বাউয়ারের নাস্তিকতার জবাবে রচিত "অন দ্য জিউইশ কোয়েশ্চ্‌ন" এই পুনর্মূল্যায়নেরই অংশ। এ সময়ই আরেকটি প্রবন্ধ লিখেন যার বিষয় ছিল রাজনৈতিক মুক্তি, ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্ম কিভাবে মানুষের মুক্তির বিরোধিতা করে এবং বেসামরিক ও মানবাধিকার বিষয়ে সমকালীন দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা। প্রত্যয়ী সাম্যবাদী এঙ্গেল্‌স মার্ক্সের অর্থনৈতিক গবেষণাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যান এবং কর্মজীবী শ্রেণীর অবস্থার প্রতি তার উৎসাহ সৃষ্টি করেন। এভাবেই মার্ক্স সাম্যবাদী হয়ে উঠেন, ''ইকোনমিক অ্যান্ড ফিলোসফিক্যাল মেনুস্ক্রিপ্ট‌্‌স অফ ১৮৪৪'' (১৯৩০-এর দশকের আগে প্রকাশিত হয়নি) রচনার মাধ্যমে সাম্যবাদ বিষয়ে তার মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেন, [[পুঁজিবাদ|পুঁজিবাদী]] সমাজে বিচ্ছিন্ন (এলিয়েনেটেড) কর্মজীবী শ্রেণীর বিপরীতে [[সাম্যবাদ|সাম্যবাদী]] সমাজে সম্পৃক্ত (আন-এলিয়েনেটেড) কর্মজীবী শ্রেণীর কথা বলেন। তার মতে, এ ধরণেরধরনের সাম্যবাদী সমাজে সবাই নিজেদের স্বাধীনভাবে গড়ে তুলতে পারে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারে।
 
[[১৮৪৫]] সালের জানুয়ারিতে যখন ''Vorwärts'' প্রুশিয়ার রাজা [[ফ্রিডরিক উইলিয়াম ৪]]-কে হত্যার প্রচেষ্টাকে অনুমোদন দেয় তখন প্যারিস থেকে কার্ল মার্ক্স সহ সব বিপ্লবীকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি এঙ্গেল্‌সের সাথে [[ব্রাসেল্‌স]] চলে যান। এখানেই ঐতিহাসিক বস্তুবাদকে সম্পূর্ণ করার জন্য ইতিহাস অধ্যয়ন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তার ''দ্য জার্মান আইডিওলজি''-তে (১৮৪৫) বলেন, প্রতিটি ব্যক্তির স্বভাব-প্রকৃতি তাদের উৎপাদন নির্ধারণকারী বস্তুর শর্তের উপর নির্ভর করে। এর মাধ্যমেই উৎপাদনের নকশা প্রণয়ন করেন এবং শিল্পকেন্দ্রিক পুঁজিবাদের পতন ও তার বদলে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার ভবিষ্যদ্বাণী করেন।
৬৬ নং লাইন:
মার্ক্স [[জেনি ফন ভেস্টফালেন]]-কে বিয়ে করেন। জেনি ছিলেন এক প্রুশীয় ব্যারনের শিক্ষিত কন্যা। তাঁদের সম্পর্কের বিষয়টি গোপন রাখতে হয়েছিল, কারণ এই বিয়েতে মার্ক্স পরিবারের সম্মতি ছিল না। [[১৮৪৩]] সালের [[১৯শে জুন]] Bad Kreuznach-এর Kreuznacher Pauluskirche-এ তাদের বিয়ে হয়।
 
১৮৫০-এর দশকের প্রথমার্ধে মার্ক্স পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। তখন তাঁরাতারা লন্ডনের সোহো'র ডিন স্ট্রিটে একটি তিন রুমের ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকতেন। এরই মধ্যে তাঁদের চার সন্তানের জন্ম হয়। লন্ডনে বসবাস শুরু করার পর আরও তিন সন্তান হয়। এই সাত জনের মধ্যে কেবল তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বেঁচে ছিল। মার্ক্সের আয়ের উত্স ছিল কেবল এঙ্গেল্‌সের দেয়া ভর্তুকি ও ''নিউ ইয়র্ক ডেইলি ট্রিবিউন''-এর বিদেশি সংবাদদাতা হিসেবে পাওয়া বেতন। জেনি এক কাকা ও মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্র কিছু অর্থ পান। এই অর্থই মার্ক্স পরিবারকে [[কেন্টিশ টাউন|কেন্টিশ টাউনের]] ''৯ গ্র্যাফ্টন টেরেস'' এ অপেক্ষাকৃত ভালো ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাসা নিতে সাহায্য করে। আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো না হলেও মার্ক্স তাঁরতার স্ত্রী ও সন্তানদের বুর্জোয়া সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আবশ্যক সব উপকরণ সরবরাহ করতেন।
 
জেনির গর্ভে মার্ক্সের যেসব সন্তান হয়েছিল তারা হল: [[জেনি ক্যারোলিন]] (১৮৪৪-১৮৮৩), [[লরা মার্কস|জেনি লরা]] (১৮৪৫-১৯১১), ''এডগার'' (১৯৪৭-১৮৫৫), ''হেনরি এডওয়ার্ড গাই'' (১৮৪৯-১৮৫০), ''জেনি এভেলিন ফ্রান্সেস'' (১৮৫১-১৮৫২), ''জেনি জুলিয়া এলিনর'' (১৮৫৫-১৮৯৮) এবং আরও কয়েকজন যারা নাম রাখার আগেই মারা যায়।
৭২ নং লাইন:
=== মৃত্যু ===
[[চিত্র:KarlMarx Tomb.JPG|thumb|upright|left|লন্ডনের হাইগেট সেমিটারিতে কার্ল মার্ক্সের সমাধি স্তম্ভ]]
[[১৮৮১]] সালের ডিসেম্বরে জেনি মারা যাওয়ার পর মার্ক্স এক ধরণেরধরনের catarrh-য় আক্রান্ত হন। এই রোগ তাকে জীবনের শেষ ১৫ মাস অসুস্থ করে রাখে। এই রোগ পরবর্তীতে [[ব্রঙ্কাইটিস]] ও সব শেষে pleurisy তে পরিণত হয়। এই pleurisy-র কারণেই [[১৮৮৩]] সালের [[১৪ই মার্চ]] তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় মার্ক্সের কোন জাতীয়তা তথা দেশ ছিল না, তাকে [[১৭ই মার্চ]] লন্ডনের [[হাইগেট সেমিটারি]]-তে সমাহিত করা হয়। তার সমাধি ফলকে দুটি বাক্য লেখা আছে। প্রথমে লেখা, কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোর শেষ লাইন "দুনিয়ার মজদুর এক হও" (Workers of all land unite), এরপরে লেখা ১১তম ''থিসিস অন ফয়ারবাখ''-এর এঙ্গেলীয় সংস্করণের বিখ্যাত উক্তি, "এতোদিন দার্শনিকেরা কেবল বিশ্বকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যাই করে গেছেন, কিন্তু আসল কাজ হল তা পরিবর্তন করা।" (The Philowophers have only interpreted the world in various ways - The point however is to change it)
 
[[১৯৫৪]] সালে [[গ্রেট ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টি]] কার্ল মার্ক্সের সমাধিতে একটি সৌধ স্থাপন করে যার শীর্ষে আছে মার্ক্সের মুখমণ্ডলের ভাস্কর্য। ''লরেন্স ব্র্যাডশ'' এই মুখাবয়বটির স্থপতি। প্রকৃত সমাধিটি সমতল।