চিনান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
অ সংশোধন |
|||
২৫ নং লাইন:
| pushpin_mapsize = 250
| pushpin_map_caption = চীনে অবস্থান
| coordinates = {{
| subdivision_type = দেশ / রাষ্ট্র
| subdivision_name = [[গণচীন]]
৬৬ নং লাইন:
| population_urban = 4,693,700
| population_metro = 11,000,000
| population_metro_footnotes = <ref name="oecd2015">{{
| population_density_urban_km2 = auto
| population_density_metro_km2 = auto
১২২ নং লাইন:
}}
{{stack end}}
'''চিনান''' ({{lang|zh-hans|济南市}}) পূর্ব [[চীন|চীনের]] [[শানতুং]] প্রদেশের রাজধানী শহর। ভৌগোলিকভাবে শহরটি চীনের জাতীয় রাজধানী [[বেইজিং]] শহর থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণে, [[হুয়াং হো নদী]]র (পীত নদীর) ঠিক দক্ষিণে, থাই পর্বতের উত্তর পাদদেশে অবস্থিত। হুয়াং হো নদীটি শানতুং পাহাড়ি অঞ্চলের উত্তরাংশে প্রধান পরিবহন পথ। চিনান নামটির অর্থ "চি নদীর দক্ষিণে"। অতীতে এখানে চি নামের একটি নদী প্রবাহিত হত। এখন সেই নদীটি হুয়াং হো নদীর গতিপথের সাথে মিলে গেছে। বৃহত্তর চিনান মহানগরীর অধীনে আটটি পৌরজেলা এবং দুইটি কাউন্টি অবস্থিত। প্রশাসনিকভাবে শহরটিকে চীনের একটি উপ-প্রাদেশিক শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী মূল চিনান শহরে ৪০ লক্ষ এবং বৃহত্তর চিনান মহানগরীতে ১ কোটি ১০ লক্ষ লোকের বাস।
প্রাকৃতিক প্রস্রবণ দ্বারা বিধৌত চিনান এলাকাটিতে প্রাচীনকালেই লোকবসতি স্থাপিত হয়। চিনান শহর এলাকাটিতে সম্ভবত চৌ রাজবংশের শাসনামলে খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতকের আগেই একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতকে এখানে লিশিয়া নামের একটি প্রধান শহর ছিল যা ছি রাজ্যের অংশ ছিল। এরপরে এটি ৭৫০ থেকে ৪৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত লু রাজ্যের অংশ ছিল। চৌ রাজবংশের শাসনামলে (১০৪৬-২৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) শহরটি উন্নতি লাভ করে এবং এটি প্রাচীন চীনের একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র ও ধর্মকেন্দ্রে পরিণত হয়। এরপরে খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে শহরটি সেনাপতি-শাসিত জেলা চিনানের লিছেং কাউন্টির প্রশাসনিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতকের শুরুতে সেনাপতিশাসিত অঞ্চলটির প্রশাসনিক কেন্দ্রকে চিনান শহরের বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত করা হয়। খ্রিস্টীয় ৪র্থ থেকে ৭ম শতকের মধ্যে শহরের দক্ষিণের পাহাড়গুলিতে বহু বৌদ্ধ গুহা মন্দির নির্মাণ করা হয়। সুই (৫৮১-৬১৮) ও থাং (৬১৮-৯০৭) রাজবংশের শাসনামলে চিনান একটি প্রধান শহর হিসেবে বজায় থাকে; সেসময় এটিকে ছি জেলা ও চিনান সেনাপতি-শাসিত জেলা নামে ডাকা হত। ১১১৬ সালে এটি চিনান উচ্চতর জেলাতে পরিণত হয় এবং ১৯১১ সাল পর্যন্ত এই নাম বজায় থাকে। ১৩শ শতকে ইউরোপের ভেনিস শহর থেকে আগত পর্যটক মার্কো পোলো শহরটিতে ভ্রমণ করেন এবং সেটিকে তার রচনাতে ছিংলি নামে উল্লেখ করেন। মিং রাজবংশের শাসনামলে (১৩৬৮-১৬৪৪) শহরটিকে নব্যসৃষ্ট শানতুং প্রদেশের রাজধানীর মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯১১ সালে শহরটিকে পুরাতন লিছেং নামের কাউন্টিতে পরিণত করা হয়। কিন্তু ১৯২৯ সালে এটিকে আবার একটি পৌরসভা বানানো হয় এবং সেখানে প্রাচীন শহরটিকে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়।
১৮৫২ সালে শহরের আধুনিকায়ন শুরু হয়। সেসময় হুয়াং হো নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে শহরের ঠিক উত্তর দিয়ে পুরাতন চি নদীর খাত দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু করে। ফলে চিনান শহরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন পথের সুবিধা ভোগ করা শুরু করে। ১৯০৪ সালে জার্মানদের নির্মিত একটি রেলপথ চিনান শহরকে ছিংতাও শহরের সাথে যুক্ত করে, ফলে শহরটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত হয়। ১৯০৬ সালের পরে শহরের আধুনিক বাণিজ্যিক এলাকাটি ও উত্তরের লিখোউ শহরতলীটি গড়ে তোলা হয়। ১৯১২ সালে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর থিয়েনচিন থেকে ফুখোউ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হয় এবং চিনান শহরটি সেই রেলপথের একটি সংযোগস্থল বা জাংশনে পরিণত হয়; ফলে শহরের আরও উন্নতি ঘটে। শহরটি চিনফু (jinpu) ও চিয়াওচি (jiaoji) রেলপথ দুইটি সংযোগস্থলে অবস্থিত। এরপরে চিনান শহরটি দ্রুত উত্তরের সমৃদ্ধ কৃষিভিত্তিক অঞ্চলের জন্য একটি প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ও পণ্যদ্রব্য মজুদের কেন্দ্রে পরিণত হয়। এখানে তুলা, খাদ্যশস্য, চিনাবাদাম ও তামাকের বড় বাজার ছিল। এর পাশাপাশি এখানে বস্ত্র, ময়দাপেষণ, তৈলপেষণ, কাগজ, সিমেণ্ট ও দেশলাইয়ের কারখানা গড়ে ওঠে। এর ফলশ্রুতিতে চিনান শহরটি ছিংতাও শহরের পরেই শানতুং প্রদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হয়।
১৩২ নং লাইন:
শিল্পকারখানা ছাড়াও চিনান বর্তমানে শানতুং প্রদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র। এখানে কৃষি, চিকিৎসা ও প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় ছাড়াও বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এদের মধ্যে ১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত শানতুং বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। শহরের মুসলমান অধ্য্যুষিত এলাকাতে ১২৯৫ সালে নির্মিত একটি প্রাচীন মসজিদ আছে, যার নাম চিনানের বৃহৎ দক্ষিণী মসজিদ। আধুনিক শানতুং জাদুঘরে প্রদেশটির বহু ঐতিহাসিক নিদর্শনের বিশাল সংগ্রহ আছে, যাতে নব্যপ্রস্তর যুগের সংস্কৃতি থেকে শুরু করে মিং রাজবংশের শাসনামলের বিভিন্ন নিদর্শনের দেখা মেলে।
এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক (১৪৪টির মত) খনিজ পানির উষ্ণ প্রস্রবণ আছে। এজন্য চিনানকে অনেক সময় "প্রস্রবণের শহর" নামে ডাকা হয়। অনেক চীনা পর্যটক প্রস্রবণগুলির স্বচ্ছ পানির কাছে তীরে চীনা বিয়াস গাছের ছায়ায় বসে নিরিবিলিতে চা খেতে পছন্দ করে। এদের মধ্যে উদ্যানে ঘেরা পাওথু প্রস্রবণ ও পাইমাই প্রস্রবণ দুইটি সবচেয়ে বিখ্যাত। বেশিরভাগ প্রস্রবণ উত্তরে প্রবাহিত হয়ে শহরের কেন্দ্রে মিলিত হয়ে একটি সুদৃশ্য হ্রদ গঠন করেছে, যার নাম তামিং হ্রদ।
হ্রদটি চিনান শহরের সাংস্কৃতিক জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হ্রদে ভূনকশাকৃত দ্বীপ এবং হ্রদের তীরে মন্দির ও ছোট ছোট বাড়ি আছে। এই হ্রদের উপরে বা হ্রদসংলগ্ন নাগরিক উদ্যানে বহু স্থানীয় লোকাকৃত্যমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনেক পর্যটক মোটরচালিত বিলাসবহুল নৌকাতে করে হ্রদটি ভ্রমণ করে থাকে। চিনানের লোকেরা জলপদ্ম খুব পছন্দ করে। প্রতি বছর জুলাই মাসে তামিং হ্রদে জলপদ্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, যেখানে সারা হ্রদ জুড়ে বিভিন্ন আকৃতি ও বর্ণের বহু বিচিত্র প্রকারের জলপদ্ম ছড়িয়ে রাখা হয়।
এছাড়া এখানে ঐতিহাসিক অনেক স্থান আছে। চীনের সবচেয়ে পবিত্র পর্বতগুলির একটি, যার নাম থাই শান, শহরের কাছেই অবস্থিত। থাই শান পর্বতকে ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কো (জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা) বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়। এটি সমগ্র চীনের পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানগুলির একটি। এছাড়া চিনান শহরের কাছে হাজার বুদ্ধের খাড়া পর্বতগাত্র, চার দুয়ারী প্যাগোডা এবং বুদ্ধের মন্দিরের উপত্যকা এই শহরের কাছে অবস্থিত। চিনান শহরের রন্ধনশৈলী চীনের আটটি প্রধান রন্ধনশৈলীর একটি হিসেবে স্বীকৃত। জ্বলন্ত কয়লায় সেঁকা মাংসের কাবাব, মচমচে ও মিষ্টি ভাজা পিঠা উল্লেখযোগ্য। প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলের কাছে অবস্থিত হওয়ায় এখানে প্রচুর সামুদ্রিক মাছও পাওয়া যায়।
চিনান শহরকেন্দ্র থেকে ৩৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ইয়াওছিয়াং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি অবস্থিত। বিমানবন্দরটি মহাসড়কের মাধ্যমে শহরকেন্দ্রের সাথে যুক্ত। চীনের অনেক বড় শহরগুলির দিকে অভ্যন্তরীণ উড্ডয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গন্তব্যস্থল যেমন ওসাকা, সিউল, ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরের সাথে আকাশপথে পরিবহনের ব্যবস্থা আছে এখানে।<ref>http://www.cits.net/china-travel-guide/jinan/transportation.html</ref>
==তথ্যসূত্র==
|