আশুতোষ মুখোপাধ্যায়: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
৪১ নং লাইন:
 
== শিক্ষা ==
আগাগোড়া মেধাবী ছাত্র আশুতোষ মুখার্জী ১৮৭৯ সালে [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি [[১৮৮৪]] সালে [[প্রেসিডেন্সি কলেজ]] থেকে ডিগ্রি ও [[১৮৮৫]] সালে গণিতে এম.এ পাস করেন। এর পরের বছরে তিনি পদার্থবিদ্যায় এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৮৮৪ সালে ঈশান বৃত্তি লাভ করেন এবং ১৮৮৬ সালে [[প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি]] ([[পি.আর.এস.]]) অর্জন করেন। আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ জ্যামিতির ওপর তাঁরতার কাজের স্বীকৃতি প্রদান করে।
 
== জীবিকা ও পেশা ==
আশুতোষ মুখার্জী স্বাধীনচেতা মানুষ ছিলেন। তাঁরতার জীবনের প্রধান লক্ষ্য ছিল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারক হওয়া। ১৮৮৮ সালে তিনি বি.এল. ডিগি্র লাভ করেন এবং তখন থেকেই আইন ব্যবসা শুরু করেন। আইন পেশার পাশাপাশি তিনি তাঁরতার অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৮৮০ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে বিভিন্ন জার্নালে তিনি উচ্চতর গণিতের ওপর প্রায় বিশটির মতো প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।
 
[[ইন্ডিয়ান অ্যাসোশিয়েসন ফর দি কালটিভেশন অব সায়েন্স]]-এর সাথে তিনি সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং ১৮৮৭ থেকে ১৮৯১ সালের মধ্যে তিনি গণিতের ওপর একাধিক লেকচার প্রদান করেন। তাঁরতার দুটি অসাধারণ অ্যাকাডেমিক অবদান হলো ১৮৯৩ সালে প্রকাশিত জিওমেট্টি অব কোণিক্স এবং ১৮৯৮ সালে প্রকাশিত ল অব পারপিচুইটিস। ১৯০৮ সালে তিনি [[ক্যালকাটা ম্যাথেমেটিক্যাল সোসাইটি]] প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি ল’ এর ওপর ডক্টরেট ডিগি্র লাভ করেন এবং ১৮৯৮ সালে ট্যাগোর ল প্রফেসর হন। ১৯০৪ সালে তিনি তাঁরতার কাঙক্ষত কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হন।
 
এর আগে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ও ১৮৮৯ সালে এর সিন্ডিকেটের সদস্যের পদ অলংকৃত করেন। তিনি ১৮৯৯ থেকে ১৯০৩ সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ১৯০২ সালে লর্ড কার্জন তাঁকেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করেন। ১৯০৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর পদে অধিষ্ঠিত হন এবং ১৯১৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।
 
তাঁরতার ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে থাকাকালীন সমগ্র সময়টি বাংলায় স্বদেশীদের [[বঙ্গভঙ্গ]] বিরোধী আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। জাতীয়বাদীরা সমালোচনা করে যে, [[কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়]] কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থায় জনসম্পদের উন্নয়ন ও জাতি গঠনের পারিপার্শ্বিক অবস্থা ছিল না। [[সতীশচন্দ্র মুখার্জী|সতীশচন্দ্র মুখার্জীর]] মতে এ পুঁথিগত, কেতাবি ও অবৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থা ব্রিটিশ রাজের জন্য কেবল কারণিক তৈরি করছিল। ফলে ১৮৯৫ সালে সতীশচন্দ্র মুখার্জীর প্রতিষ্ঠিত ভগবত চতুস্পতি-এর মাধ্যমে শুরু হয় জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন। এটি মূলত ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নিয়ে অগ্রসর হয়। ১৯০২ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি [[ডন সোসাইটি|ডন সোসাইটিতে]] রূপান্তরিত হয়। ১৯০২ থেকে ১৯০৬ সালের মধ্যে এটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল হিসেবে কাজ করে।
 
== শিক্ষাবিদ ==
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত শিক্ষা জাতীয় উদ্দেশ্য লাভে ব্যর্থ হয়। ১৯০৪ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইন-এ জাতীয় শিক্ষার পরিধি আরও একটু সীমিত হয়ে যায়। কারণ এ আইনের বলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ সরকার মনোনীত ইউরোপীয়দের হাতে চলে যায়। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল প্রশাসন ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে যে কোন ধরনের জাতীয়তাবাদী আদর্শের অণুপ্রবেশ বন্ধ করা। তাদের আরও চেষ্টা ছিল স্বদেশী বুদ্ধিজীবী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কলেজ সমূহকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অন্তর্ভুক্ত হতে না দেওয়া। ১৯০৪ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ জাতীয়তাবাদী চেতনাকে দারুণভানে উজ্জীবিত করে তোলে।
 
ঠিক এসময়ে সরকারের প্রয়োজন ছিল আশুতোষ মুখার্জীর মতো একজন ব্যক্তিত্ব। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মপ্রচেষ্টাকে আশুতোষ সমর্থন করেন নি। তাঁরতার মতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় একটি অ্যাকাডেমিক ঐতিহ্য স্থাপন করেছে যা আমাদের রক্ষা করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত পাশ্চাত্য শিক্ষাকেও জাতীয় স্বার্থে ব্যবহার করা সম্ভব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কার চেয়েছিলেন, বিপ্লব চান নি। সরকার অণুভব করেছিল যে, আশুতোষ মুখার্জীর তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপদ থাকবে, রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে না।
 
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর মধ্যে থেকেই প্রায় সব জাতীয়তাবাদমূলক বিষয়কে কার্যকর করেছিলেন। তিনি কলেজ স্ট্রীট ও রাজাবাজার ক্যাম্পাসে কলা ও বিজ্ঞান শাখার জন্য নতুন বিভাগসমূহ স্থাপন করেন এবং ‘দেশী ভাষা’ ও ‘প্রাচীন ভারতের ইতিহাস’ বিভাগ দুটি চালু করেন। বিদেশী ও ভারতীয় বহু খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ প্রফেসর হিসেবে বিভিন্ন বিভাগে নিযুক্ত হন। তিনি নিজে ব্যক্তিগতভাবে সমস্ত বিভাগের সিলেবাস প্রণয়নে তত্ত্বাবধান করেন। তিনি ছাত্রদের কল্যাণের জন্য যেমন উদ্বিগ্ন থাকতেন, তেমনি শিক্ষা ও পরীক্ষার ব্যাপারেও তিনি তাদের আগ্রহ সৃষ্টিতে অণুপ্রেরণা দিতেন।