গুণ্ডিচা মন্দির: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
InternetArchiveBot (আলোচনা | অবদান)
১টি উৎস উদ্ধার করা হল ও ০টি অকার্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হল। #IABot (v2.0beta15)
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে। কোন সমস্যায় এর পরিচালককে জানান।
৩০ নং লাইন:
 
==মন্দির ও মন্দিরশৈলী==
গুণ্ডিচা মন্দির জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি বা বাগানবাড়ি নামেও পরিচিত৷ মন্দিরটি একটি সুরম্য বাগানের মাঝে অবস্থিত এবং তা চারিদিকে উঁচু পরিখাবেষ্ঠিত৷ এটি শ্রী[[জগন্নাথ]]দেবের [[জগন্নাথ মন্দির, পুরী|মূল মন্দির]] তথা "শ্রীমন্দির"-এর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ মন্দির দুটি "বড় দণ্ড" তথা পুরীর রাজপথের দুই প্রান্তে অবস্থিত এবং এই পথেই শ্রীজগন্নাথদেবের [[পুরীর রথযাত্রা|রথযাত্রাটি]] সম্পন্ন হয়ে থাকে৷
 
মন্দিরটি হালকা ধূসর [[বেলেপাথর]] দ্বারা নির্মিত এবং শিল্পগতভাবে [[দেউল (স্থাপত্য)|দেউলযুক্ত]] একটি নিপুন [[কলিঙ্গ স্থাপত্য শৈলী]]র অন্যতম প্রকৃৃষ্ট উদাহরণ৷<ref name = "gov"/> যুগ্ম স্থাপত্যটি চারটি খণ্ডে বিভক্ত যথা: "[[বিমান (স্থাপত্য)|বিমান]]" (মূল স্থাপত্য যা পবিত্রমূর্তি ও গর্ভগৃহ ধারণ করে), "[[জগমোহন (স্থাপত্য)|জগমোহন]]" (সমাবেশ দালান), "[[মণ্ডপ (স্থাপত্য)|নাটমণ্ডপ]]" (উৎসব মঞ্চ) এবং "ভোগমণ্ডপ" (দেবতাকে ভোগ উৎসর্গের দালান)৷ এছাড়াও মন্দিরটির সাথে একটি সরু পথের মাধ্যমে পাচনশালা যুক্ত৷<ref name="shree"/> মন্দিরটি একটি সুন্দর বাগানের মাঝে অবস্থিত,<ref name = "gov"/> যা জগন্নাথদেবের বাগানবাড়ী বা ঈশ্বরের গ্রীষ্মকালীন বাগান অপগম নামেও পরিচিত৷<ref name= "Sehgal1999">{{citeবই bookউদ্ধৃতি|lastশেষাংশ= Sehgal |firstপ্রথমাংশ= Sunil |titleশিরোনাম= Encyclopaedia of Hinduism, Volume 4|urlইউআরএল=https://books.google.com/books?id=sDmwCcLza2AC&pg=PA1077|accessdateসংগ্রহের-তারিখ=4 December 2012|yearবছর=1999|publisherপ্রকাশক= Sarup & Sons|isbnআইএসবিএন=9788176250641|pageপাতা=1077}}</ref> বাগানসহ সমগ্র মন্দিরচত্বরটি উঁটু পরিখাবেষ্ঠিত৷
 
মন্দিরটির গর্ভগৃৃহের মঞ্চটি সমতল এবং তল থেকে ৪ ফুট উঁচুতে অবস্থিত৷ ১৯ ফুট দীর্ঘ ক্লোরাইড গ্রুপ ও [[ফাইলোসিলিকেট খনিজ]] নির্মিত রত্নবেদীর ওপর বার্ষিক অনুষ্ঠানের সময় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি স্থাপন করা হয়৷<ref name="shree"/> মন্দিরটির দুটি ফটক রয়েছে৷ পশ্চিমপ্রান্তে অবস্থিত দরজাটি মন্দিরের মূল দরজা এবং এই দরজা দিয়েই মূর্তিগুলি রথযাত্রার সময় মন্দিরে প্রবেশ করে৷ মন্দিরের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত দরজাটি "নাকচন দরজা" নামে পরিচিত এবং এই দরজা দিয়ে রথযাত্রার শেষ দিনে মূর্তিগুলিকে পুণরায় রথে চাপিয়ে মূলমন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া হয়৷<ref name="shree"/>
 
আষাঢ় মাসের রথযাত্রার নয়দিন যাবৎ এই গুণ্ডিচা মন্দিরেই জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রার আরাধনা করা হয়৷ কিন্তু বছরের অন্যান্য সময়ে মন্দিরটি প্রায় শূণ্য থাকে৷ দেশী দর্শনার্থী বা পর্যটকরা নির্ধারিত প্রবেশমূল্য দিয়ে মন্দিরটি দর্শনের অনুমতি পেয়ে থাকেন৷ বিদেশীদের ক্ষেত্রে, তারা সাধারণত এই মন্দিরে ঢোকার অনুমতি না পেলেও রথযাত্রা চলাকালীন সকলের প্রবেশ অবাধ থাকে৷<ref>{{citeসংবাদ newsউদ্ধৃতি|lastশেষাংশ=Panda|firstপ্রথমাংশ=Namita|titleশিরোনাম=Ready for the Trinity|urlইউআরএল=http://www.telegraphindia.com/1120622/jsp/odisha/story_15644438.jsp|accessdateসংগ্রহের-তারিখ=4 December 2012|newspaperসংবাদপত্র=The Telegraph|dateতারিখ=22 June 2012}}</ref> মন্দিরটি পুরী জগন্নাথ মন্দিরের পরিচালনা পর্ষদ তথা শ্রীজগন্নাথ মন্দির কার্যালয়ের অধীনস্ত৷ একটি তুলনামূলক ছোটো সেবায়েতগোষ্ঠী সারাবছর মন্দিরটির রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে৷<ref name="shree"/>
 
==রথ যাত্রা==
[[হিন্দু বর্ষপঞ্জী]] অনুসারে [[আষাঢ়]] মাসের [[চন্দ্রকলা|শুক্ল]] [[পক্ষ|পক্ষের]] দ্বিতীয় দিনে নিয়ম মতো রথযাত্রা অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়৷<ref>{{citeসাময়িকী journalউদ্ধৃতি|lastশেষাংশ=Panda|firstপ্রথমাংশ=Swarnaprava|titleশিরোনাম=Rathayatra of Puri|journalসাময়িকী=Orissa Review|dateতারিখ=July 2006|pagesপাতাসমূহ=25–27|urlইউআরএল=http://orissa.gov.in/e-magazine/Orissareview/july2006/engpdf/25-27.pdf|accessdateসংগ্রহের-তারিখ=4 December 2012}}</ref> [[রথযাত্রা]]র ঠিক একদিন আগে থেকে [[জগন্নাথ]], [[বলরাম]] ও [[সুভদ্রা]]র থাকার উপযুক্ত করে তোলার জন্য ধর্মীয়ভাবে গুণ্ডিচা মন্দির পরিচ্ছন্নকরণ চলে৷<ref name=Jagannath/><ref name= "Sharma2008">{{citeবই bookউদ্ধৃতি|lastশেষাংশ= Sharma |firstপ্রথমাংশ= Dr. Shiv |titleশিরোনাম=O India - A Travel Guide|urlইউআরএল=https://books.google.com/books?id=COHI7LlpkSAC&pg=PA326&dq=Architecture+of+Gundicha+Temple&hl=en&sa=X&ei=B7W9ULbdNNDrrQeJgIGQBw&redir_esc=y#v=onepage&q=Architecture%20of%20Gundicha%20Temple&f=false|accessdateসংগ্রহের-তারিখ=4 December 2012|yearবছর=2008|publisherপ্রকাশক= Diamond Pocket Books (P) Ltd |pageপাতা=|pagesপাতাসমূহ=327}}</ref>
 
রথযাত্রা শুরু হওয়ার প্রথম দিন আলাদা আলাদা রথে চড়িয়ে দেবমূর্তি তিনটি মূল মন্দির থেকে গুণ্ডিচা মন্দিরে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এটিই জগন্নাথ [[পুরী]] বা মাহেশ্বরী পুরীর বিশ্বচর্চিত বিখ্যাত রথযাত্রা৷ তিনটি মূর্তিকে তিনটি আলাদা উঁচু রথে চড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷ রথে প্রতীকীভাবে [[ঘোড়া]] কাষ্ঠনির্মিত মূর্তি থাকলেও রথের রশি সমবেত ভক্তগণরাই টেনে নিয়ে যান৷ প্রতিটি মূর্তির জন্য যেই রথগুলিকে রথযাত্রার অনুষ্ঠানে সামিল করা হয় তা হল: কেন্দ্রীয় রথ, যার নাম "নন্দীঘোষ", স্বয়ং শ্রী[[জগন্নাথ]] এই রথে অধিষ্ঠিত থাকেন, দ্বিতীয় রথটি হলো জগন্নাথজ্যেষ্ঠ শ্রী[[বলরাম|বলরামের]], যার নাম "তালধ্বজ" এবং তৃতীয় রথটি তাদের কনিষ্ঠ ভগিনী [[সুভদ্রা]]র জন্য, যার নাম "দর্পদলন"৷ রথতিনটি সন্ধ্যায় রাতের অন্ধকার নামার পূর্বেই "বড় দণ্ড" বা পুরীর রাজপথ ধরে রথ তিনটি মূল জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে তিন কিলোমিটার দূর গুণ্ডিচা মন্দিরে পৌঁছোয়৷ প্রথম দিনে মূর্তি তিনটি রথেই থাকে এবং রথযাত্রার দ্বিতীয় দিন প্রথা মতো তাদের গুণ্ডিচা মন্দিরে প্রবেশ করানো হয়৷ তারাা প্রবেশের পর থেকে আগামী সাতদিন যাবৎ গুণ্ডিচা মন্দিরেই অবস্থান করেন৷<ref name=Jagannath>{{Citeওয়েব webউদ্ধৃতি|urlইউআরএল=http://odisha.gov.in/e-magazine/Orissareview/2013/jul/engpdf/87-89.pdf|titleশিরোনাম=The Car Festival of Lord Jagannath, Unique in many respect|accessdateসংগ্রহের-তারিখ=4 December 2012|publisherপ্রকাশক=Official Website of Government of Odisha|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20161104000727/http://odisha.gov.in/e-magazine/Orissareview/2013/jul/engpdf/87-89.pdf|আর্কাইভের-তারিখ=৪ নভেম্বর ২০১৬|অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ}}</ref><ref>[http://www.shreekhetra.com/temples2.html details of the temple]</ref>
 
==রথযাত্রার ধর্মানুষ্ঠান==
;আরাধনা
ঐতিহ্যগতভাবে মূল জগন্নাথ মন্দিরে অব্রাহ্মণ দলিত সম্প্রদায়ের সেবায়েতরা পূজা করে থাকেন এবং ব্রাহ্মণরা এই পেশা থেকে দূরে থাকেন, গুণ্ডিচা মন্দিরের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হয় এবং এক্ষেত্রে ব্রাহ্মণরাই তিনমূর্তির পূজা করে থাকেন৷ জগন্নাথ দেবের মূলমন্দিরে বিষ্ণুপ্রিয়া শ্রী[[লক্ষ্মী]]র দূত হিসাবে যেমন "দেবদাসী"রা জগন্নাথ দেবের আরতি করেন এবং তাদের পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে থাকেন ঠিক তেমনই গুণ্ডিচা মন্দিরের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম হয় না৷ রথ যাত্রার সময় মূলমন্দিরের লক্ষ্মীমূর্তিটিকে প্রথা মতো সংগ্রহশালার পেছনের কক্ষটিতে রাখা হয়৷ গুণ্ডিচা মন্দিরে দেবদাসীদের করা অনুষ্ঠান এবং তাদের অংশগ্রহণ একটি পৃৃৃথক প্রসঙ্গকে সূচিত করে৷ অপর একটি অপ্রত্যহকৃত নিয়মটি হলো, শীতক হিসাবে দিনে দুবার মূর্তি তিনটিকে [[চন্দন]] লেপিত করা হয়৷ ঠিক এরকমই গুণ্ডিচা দেবীর জন্য প্রত্যহ করা হয়ে থাকে৷<ref name="Carman 1985">{{citeবই bookউদ্ধৃতি|last1শেষাংশ১= Carman |first1প্রথমাংশ১= John B. |last2শেষাংশ২= Marglin |first2প্রথমাংশ২= Frédérique Apffel |titleশিরোনাম= Purity and Auspiciousness in Indian Society |urlইউআরএল= https://books.google.com/books?id=GXDV4vVT15IC&pg=PA77|yearবছর=1985|publisherপ্রকাশক= BRILL|isbnআইএসবিএন=9789004077898|pageপাতা=77|refসূত্র=harv}}</ref> ঐ মন্দিরে থাকাকালীন মূর্তি তিনটিকে প্রত্যহ নতুন নতুন বস্ত্রে সজ্জিত করা হয়৷<ref name="Sharma2008"/>
 
;হেরা পঞ্চমী
৫১ নং লাইন:
[[File:Rath Yatra Puri 2007 11071 crop.jpg|thumb|250px|right|শ্রী জগন্নাথের মূল মন্দির থেকে নন্দীঘোষ রথে চেপে রওনা হওয়ার দৃশ্য]]
[[File:Main gate of gundicha.jpg|left|thumb|370x370px|গুণ্ডিচা মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বার]]
[[চন্দ্রকলা|শুক্ল]] [[পক্ষ|পক্ষের]] পঞ্চমী তিথিতে গুণ্ডিচা মন্দিরে রথযাত্রার একটি বিশেষ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যা [[হেরা পঞ্চমী]] নামে পরিচিত৷ হেরা শব্দের আক্ষরিক অর্থ দর্শন করা বা দেখা৷<ref name= Telegraph>{{citeসংবাদ newsউদ্ধৃতি|firstপ্রথমাংশ=|titleশিরোনাম=Lakshmi anger rocks Gundicha temple|urlইউআরএল=http://www.telegraphindia.com/1120626/jsp/odisha/story_15655745.jsp|accessdateসংগ্রহের-তারিখ=4 December 2012|newspaperসংবাদপত্র=The Telegraph|dateতারিখ=June 26, 2012}}</ref> এই অনুষ্ঠানটিতে অংশ নেওয়ার জন্য রথযাত্রার পূণ্যতিথিতে আসা প্রচুর ভক্ত অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন৷ [[জগন্নাথ]] দেব গুণ্ডিচা মন্দির পরিদর্শনে এলেও তার স্ত্রী শ্রী[[লক্ষ্মী]] পুরীর মূল মন্দিরেই অবস্থান করেন৷ হেরা পঞ্চমীর দিন লক্ষ্মী প্রচণ্ড মূর্তি ধারণ করে এবং গুণ্ডিচা মন্দিরে সুবর্ণ মহালক্ষ্মী মূর্তি রূপ ধারণ করে৷ তাঁকে একটি [[পালকি]]তে করে মূলমন্দির থেকে ভক্ত সমাগমের সাথে গুণ্ডিচা মন্দিরে আনয়ন করা হয়৷ যেই ব্রাহ্মণ লক্ষ্মীমূর্তিকে স্বাগত জানান তিনিই তাঁকে জগন্নাথ মূর্তির নিকট নিয়ে যান এবং বাকী দিনগুলি তার পূজার্চনা করেন৷ মন্দিরের নির্দিষ্ট বেদীতে লক্ষ্মী-জগন্নাথ মূর্তি দুটি মুখোমুখি রাখা হয়, এসময়ে ভক্তগন দলে দলে যুগলমূর্তি দর্শনে মন্দিরে ভীড় জমান৷ মনে করা হয় এই সময়ে শ্রীলক্ষ্মী তাকে মন্দিরে ফেরত যেতে বললে জগন্নাথ তাকে "আজ্ঞা মালা" (সম্মতি জানীয়ে মাল্য দান) দান করেন, যা লক্ষ্মীদেবী গ্রহণ করে তা সহ সন্ধ্যার মধ্যে মূল মন্দিরে প্রবেশ করেন৷ দেবী লক্ষ্মীর অনুরোধ সত্ত্বেও জগন্নাথ দেব মূলমন্দিরে ফেরত যেতে রাজী না হওয়ার তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং তার এক সহচরীকে জগন্নাথের রথের একটি অংশ ভেঙে দিতে আদেশ করেন৷ জগন্নাথের রথ "নন্দীঘোষ"কে সামান্য খুঁতযুক্ত করার নিয়মটিকে "রথভঙ্গ" বলে উল্লেখ করা হয়৷<ref name =Telegraph/><ref name=Srimandir>{{citeসাময়িকী journalউদ্ধৃতি|lastশেষাংশ=Kanungo|firstপ্রথমাংশ=Siddharth|titleশিরোনাম=The car festival of Lord Jagannath unique in many respect|journalসাময়িকী=Srimandir|pagesপাতাসমূহ=61|urlইউআরএল=http://orissa.gov.in/e-magazine/Srimandir/srimandirenglish/Epdf/Ech16.pdf|accessdateসংগ্রহের-তারিখ=4 December 2012}}</ref> এবং এই সময়ে দেবী লক্ষ্মী গুণ্ডিচা মন্দিরের নিকটবর্তী একটি [[তেঁতুল]] গাছ থেকে পর্যালোচনা করেন৷ এরপর তিনি সেখান থেকে গোপনে অপর একটি পথে পুরীর মূল মন্দিরে ফেরত যান, পথটি "হেরা গোহরী" পথ নামে পরিচিত৷ সাধারণের কাছে এটি দেবী লক্ষ্মীর অভিমানের বহিঃপ্রকাশ বলে খ্যাত৷<ref name = Telegraph/><ref name=Srimandir/>
 
;দক্ষিণ মোড়
"দক্ষিণ মোড়" (দক্ষিণ দিকে বাঁক নেওয়া) অনুষ্ঠানটি "হেরা পঞ্চমী"র পরের দিন অর্থাৎ রথযাত্রার ষষ্টদিনে পালন হয়৷ [[জগন্নাথ]]-[[বলরাম]]-[[সুভদ্রা]] মূর্তি তিনটিকে এইদিন মন্দিরের বাইরে আনা হয় এবং গুণ্ডিচা মন্দিরের পশ্চিম দিকের মূল দ্বারটির মুখোমুখি রাখা হয়৷ বহুদা যাত্রা বা রথ নিয়ে মূল জগন্নাথ মন্দিরে ফেরত যাওয়ার আয়োজন শুরু হয়ে যায় এবং গুণ্ডিচা মন্দিরের পূর্ব প্রান্তের "নাকচন দ্বার"-এ দক্ষিণমুখী হয়ে থাকে৷ দক্ষিণ মুখী হওয়ার কারণ মূল মন্দিরটি গুণ্ডিচা মন্দিরের দক্ষিণে অবস্থিত৷ জনশ্রুতি আছে [[স্বর্ণলঙ্কা|লঙ্কার]] [[রাক্ষস]] রাজা [[বিভীষণ]] এই দিনে এতদূর থেকে জগন্নাথ দেবের দর্শন পান৷ ভক্তগণ মনে করে যে ব্যক্তি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন তিনি বিষ্ণুশরণে মুক্তির পথ খুঁজে পান৷<ref name="Dakshina">{{citeসংবাদ newsউদ্ধৃতি|titleশিরোনাম=Holiday high at aunt's abode|urlইউআরএল=http://www.telegraphindia.com/1120627/jsp/odisha/story_15660530.jsp|accessdateসংগ্রহের-তারিখ=4 December 2012|newspaperসংবাদপত্র=The Telegraph|dateতারিখ=27 June 2012}}</ref>
 
;রাস লীলা
''দক্ষিণ মোড়'' অনুষ্ঠানটি জগন্নাথ দেবের তিনদিন ব্যপী [[বৈষ্ণবীয় রাসযাত্রা|রাসলীলার]] শুভ সূচনাকে নির্দেশিত করে৷<ref name="Dakshina"/> এই রীতিটির বিবরণ [[ভাগবত পুরাণ]] এবং [[গীতগোবিন্দম্|গীত গোবিন্দমে]] এরকম পাওয়া যায় যে শ্রী[[কৃষ্ণ]] তার সখী [[রাধা]] ও অন্যান্য গোপীদের সাথে [[বৃন্দাবন|বৃৃন্দাবনে]] প্রমোদনৃৃত্য করতেন৷ জগন্নাথের গুণ্ডিচা মন্দিরে অবস্থানের শেষ তিনদিন ধরে তাঁকে মন্দিরের রাসমন্ডপে নিয়ে আসা হয় যেখানে তিনদিন ধরে তার সামনে গীতগোবিন্দমের মন্ত্রোচ্চারণ করে তাঁকে তুষ্ট করা হয়৷ রাসলীলার সময়ে জগন্নাথকে শ্রীকৃৃষ্ণ রূপে চিন্তা করে কৃষ্ণ ও গোপীদের ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়৷ পুরাতন দিনে [[দেবদাসী]]রা গীতগোবিন্দের মন্ত্রোচ্চারণ করলেও বর্তমানে মন্দিরের সেবায়েতরাই এই কাজ করে থাকেন৷ বৈষ্ণবরা জগন্নাথের অবস্থানকালে গুণ্ডিচা মন্দিরকে পবিত্র বৃন্দাবন হিসাবে মান্যতা দেয়৷<ref>{{citeবই bookউদ্ধৃতি|lastশেষাংশ=Ghosh|firstপ্রথমাংশ=Pika|titleশিরোনাম=Temple To Love: Architecture And Devotion In Seventeenth-Century Bengal|yearবছর=2005|publisherপ্রকাশক=Indiana University Press|pagesপাতাসমূহ=49|urlইউআরএল=https://books.google.com/books?id=yiTSsaOd0xkC&pg=PA49&dq=gundica&hl=en&sa=X&ei=Oju-UMngK4aPrgfUqoDoDw&ved=0CDgQ6AEwAw#v=onepage&q=gundica&f=false}}</ref>
 
;সন্ধ্যাদর্শন ও মহাপ্রসাদ
রীতি অনুসারে যখন জগন্নাথ দেব গুণ্ডিচা মন্দিরে অবস্থান করেন তখন মূল মন্দিরের রান্নাঘরে সমস্তরকম রান্নাবান্না ও [[জগন্নাথের মহাপ্রসাদ]] তৈরী বন্ধ থাকে৷ মহাপ্রসাদ হলো দেবতার উদ্দেশ্যে নিবেদিত খাদ্যদ্যব্যাদি যা নিবেদনৈর পর ভক্তবৃৃৃন্দের মধ্যে বিতরণ করা হয়৷ এই মহাপ্রসাদে ভাত, ডাল, বিভিন্ন তরকারী সহ নিরামিষ সমস্ত পদ থাকে৷ এসময়ে গুণ্ডিচা মন্দিরের রান্নাঘর সংস্কার করা হয় ও তিন দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে মহাপ্রসাদ রান্না করা হয়৷ উল্টোরথের শেষের দ্বিতীয় দিন তিনমূর্তিকে বিশেষ করে জগন্নাথ দর্শন করার ও আরতি করার বিশেষ ও শুভদিন হিসাবে গণ্য করা হয়, যা সন্ধ্যারতি ও সন্ধ্যাদর্শন নামে পরিচিত৷ এই দিন অগণিত পূণ্যার্থী মন্দির চত্বরে উপস্থিত হয়ে মহাভোগ প্রসাদরূপে গ্রহণ করেন৷<ref>{{citeসংবাদ newsউদ্ধৃতি|lastশেষাংশ=Mohanty|firstপ্রথমাংশ=Subhashish|titleশিরোনাম=Lord's food served at Gundicha|urlইউআরএল=http://www.telegraphindia.com/1110707/jsp/orissa/story_14207420.jsp|accessdateসংগ্রহের-তারিখ=4 December 2012|newspaperসংবাদপত্র=The Telegraph|dateতারিখ=7 July 2011}}</ref><ref>{{citeসংবাদ newsউদ্ধৃতি|titleশিরোনাম=Sandhya darshan: Lakhs throng Gundicha temple|urlইউআরএল=http://newindianexpress.com/states/odisha/article553976.ece|accessdateসংগ্রহের-তারিখ=4 December 2012|newspaperসংবাদপত্র=The New Indian Express|dateতারিখ=29 June 2012}}</ref>
 
;বহুদা যাত্রা
[[File:Gundicha temple puri.JPG|thumb|গুণ্ডিচা মন্দিরের নাকচন দ্বার]]
গুণ্ডিচা মন্দিরে সাতটি পূর্ণদিবস যাপন করে [[জগন্নাথ]], [[বলরাম]] ও [[সুভদ্রা]]র পুরীর [[জগন্নাথ মন্দির, পুরী|মূলমন্দিরে]] ফেরত যাওয়ার ঘটনাকে স্থানীয়রা "বহুদা যাত্রা" বলে যা বাংলায় "উল্টোরথ" নামেও পরিচিত৷<ref name="Public Trust of India">{{citeওয়েব webউদ্ধৃতি|titleশিরোনাম=Lords Leave Sri Gundicha Temple As Chariots Start Rolling|urlইউআরএল=http://www.publictrustofindia.com/inner.php?nid=4542|publisherপ্রকাশক=Public Trust of India|accessdateসংগ্রহের-তারিখ=4 December 2012|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://archive.is/20130201015026/http://www.publictrustofindia.com/inner.php?nid=4542|আর্কাইভের-তারিখ=১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩|অকার্যকর-ইউআরএল=হ্যাঁ}}</ref>"পাহাণ্ডি" অনুষ্ঠানের সময়ে [[শঙ্খ|শঙ্খধ্বনি]], [[কাঁসর|কাঁসরের শব্দ]] ও [[করতাল|খোল-করতাল]] সহযোগে মূর্তিগুলিকে গুণ্ডিচা মন্দিরের নাকচন দ্বার দিয়ে বাইরে নিয়ে আসা হয়৷<ref>{{citeসংবাদ newsউদ্ধৃতি|lastশেষাংশ=Mohapatra|firstপ্রথমাংশ=Debabrata|titleশিরোনাম=Bahuda Yatra euphoria smothers terror threat|urlইউআরএল=http://articles.timesofindia.indiatimes.com/2012-06-29/bhubaneswar/32471778_1_gundicha-temple-return-car-festival-lord-jagannath|accessdateসংগ্রহের-তারিখ=4 December 2012|newspaperসংবাদপত্র=Times of India|dateতারিখ=29 June 2012}}</ref> [[ওড়িশি]] এবং [[গোটিপুয় নাচ|গোটিপুয়]] নৃত্য শিল্পীরা মূর্তির সামনে সুরের তালের তাদের সংশ্লিষ্ট নৃৃত্য প্রদর্শন করে৷ আবার "বানাটি" নামক ঐতিহ্যবাহী যুদ্ধরীতি শিল্পটিও (মার্শাল আর্টস) প্রদর্শন করা হয় মূর্তির সামনে৷ দেবমূর্তিগুলি যেই রথে করে আনা হয়েছিলো সেই রথেই আবার তোলা হয় এবং আগের মতোই ভক্তগণ সেই রথের দড়ি টেনে পৌঁছে দেয় মূল মন্দিরে৷ রথারোহিত অবস্থাতে জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রার দর্শন পাওয়াকে ভক্তগণ মঙ্গলকর হিসাবে মনে করে থাকেন৷<ref name="Public Trust of India"/>
 
==পৌরাণিক কাহিনী==
৭১ নং লাইন:
জগন্নাথ দেব এবং তার ভ্রাতা, ভগিনীকে নিয়ে রথ যাত্রা এবং গুণ্ডিচা মন্দিরে সাতদিন অবস্থান করা এবং আবার মূলমন্দিরে ফিরে আসা নিয়ে নানা মুনির নানা মত৷
 
একটি ঘটনা জগন্নাথ মন্দিরর নির্মাতা মহারাজ [[ইন্দ্রদ্যুম্ন|ইন্দ্রদ্যুম্নের]] স্ত্রী গুণ্ডিচা দেবীকে উদ্দেশ্য করে রয়েছে৷ রাণী গুণ্ডিচার নামেই সংশ্লিষ্ট মন্দিরটি নির্মিত৷ দেবশিল্পী [[বিশ্বকর্মা]] জগন্নাথ মূর্তি তৈরী করার সময় রাণী গুণ্ডিচা বন্ধ দরজার বাইরে থেকে বারণ অমান্য করে উঁকি মারেন৷ অর্ধেক তৈরী জগন্নাথ মূর্তি দেখে মুগ্ধ হয়ে তিনি তার স্বামীকে মূর্তি স্থাপনার জন্য একটি সুদর্শন মন্দির তৈরী করে বাৎসরিক রথযাত্রার ব্যবস্থা করতে বলেন৷ আরেকটি মতে জগন্নাথদেব তার জন্য তেরী মন্দির দেখে সন্তুষ্ট হন এই রাণী গুণ্ডিচাকে আশ্বস্ত করেন যে তিনি তাঁর বাড়ীতে আসবেন৷, যেটি বর্তমানে গুণ্ডিচা মন্দির নামে খ্যাত৷<ref name = "gov">{{citeওয়েব webউদ্ধৃতি |urlইউআরএল=http://orissa.gov.in/tourism/sonepur.htm |titleশিরোনাম= Tourism in Sonepur}}</ref><ref name="shree">[http://www.shreekhetra.com/sreegundicha.html Shree Kshestra]</ref><ref name= "Ghosh2005"/>
 
অপর একটি জনশ্রুতি অনুসারে, যখন জগন্নাথ দেব (যিনি শ্রী[[বিষ্ণু]]র অবতার [[কৃষ্ণ|কৃষ্ণেরই]] অংশ) গুণ্ডিচা মন্দিরে সাত দিন থাকার সময়ে ইচ্ছা করে পরিকল্পনা মাফিক তার স্ত্রী দেবী [[লক্ষ্মী]]কে মূল মন্দিরের সংগ্রহকক্ষে বন্দিনী করে রেখে আসেন৷ আবার গুণ্ডিচা মন্দিরে তিনি তাঁর প্রিয় গোপীগণের দ্বারা আহ্লাদিত হন, ঠিক যেমন তিনি এবং তার গোপীশ্রেষ্ঠা [[রাধা]] [[বৃন্দাবন|বৃন্দাবনে]] রাসলীলা করতেন৷ এই অনুষ্ঠানের সময়ে মন্দিরের সেবারত [[দেবদাসী]]দের গোপী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে৷ জগন্নাথ তার কামার্ত অবলীলা সাঙ্গ করে তার মূল মন্দিরে ফেরত এলে লক্ষ্মীদেবী তার সাথে মন্দিরের সিংহদুয়ারে সাক্ষাৎ করেন এবং তার ওপর কিছু অলৌকিক শক্তি প্রয়োগ করেন৷ ফলে জগন্নাথ গুণ্ডিচা মন্দিরে পলায়নের ঘটনা এবং সেখানে তার সাথে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা ভুলে তার স্ত্রীয়ের সাথে পুণর্মিলিত হন এর স্বামীস্নেহ ভোগ করেন৷<ref name= "Ghosh2005">{{citeবই bookউদ্ধৃতি|lastশেষাংশ= Ghosh |firstপ্রথমাংশ= Pika |titleশিরোনাম= Temple To Love: Architecture And Devotion In Seventeenth-Century Bengal
|urlইউআরএল= https://books.google.com/books?id=yiTSsaOd0xkC&pg=PA49|yearবছর=2005|publisherপ্রকাশক= Indiana University Press|isbnআইএসবিএন=9780253344878|pagesপাতাসমূহ=49–50|refসূত্র=harv}}</ref>
 
অপর একটি ঘটনা রয়েছে গুণ্ডিচা নামের পেছনে৷ "গুণ্ডিচা" ছিলেন স্থানীয় দেবী, যিনি দেবী [[দুর্গা]]র রূপ হিসাবে পরিগণিত হন এবং [[গুটিবসন্ত]] রোগ নিরামক৷ [[ওড়িয়া ভাষা]]তে "গুণ্ডি" শব্দটির অর্থ গুটিবসন্ত, যা [[বাংলা]] "গুটি" শব্দটি থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়৷ এবং বাংলার গুটিবসন্ত নিরাময়ের দেবী "গুটিকা ঠাকুরাণী" এবং ওড়িয়া "গুণ্ডিচা"কে একই ব্যক্তিত্ব বলে মনে করা হয়৷<ref name="Carman 1985"/> গুণ্ডিচাকে কৃৃষ্ণ-জগন্নাথের মাসি বলেও অভিহিত করা হয়, ভাই-বোনের সাথে তিনি তার মাসির বাড়িতে বছরে একবার দেখা করতে আসেন৷<ref name="shree"/>