কাজী আরেফ আহমেদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
অ হালনাগাদ, তথ্যসূত্র |
NahidSultan (আলোচনা | অবদান) উইকিপিডিয়া উৎস ও ইউটিউব লিংক বাতিল |
||
১৪ নং লাইন:
| spouse = রওশন জাহান সাথী
}}
'''কাজী আরেফ আহমেদ''' (জন্ম: [[৮ এপ্রিল]] [[১৯৪২]] - মৃত্যু: [[১৬ ফেব্রুয়ারি]] [[১৯৯৯]]) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তিনি [[১৯৬২]] সালে ছাত্রলীগের গোপন সংগঠন 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের
==জন্ম ও শিক্ষা==
২৭ ⟶ ২৬ নং লাইন:
[[পূর্ব পাকিস্তান|পূর্বপাকিস্তান]] ছাত্রলীগের মধ্যে সুস্পষ্ট দু’টি ধারা বিদ্যমান ছিল। একটি ছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে নিজস্ব রাজনীতির ধারা এবং অপর অংশের ঝোঁক ছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতি। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নিজস্ব রাজনীতির ধারার তিনজন ছাত্রনেতা [[১৯৬২]] সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গোপন সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ গঠন করেন। তিন সদস্যের এই ক্ষুদ্র সত্তা পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের ‘নিউক্লিয়াস’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নিউক্লিয়াসের তিনজন সদস্য ছিলেন [[সিরাজুল আলম খান]], [[আব্দুর রাজ্জাক (রাজনীতিবিদ)|আব্দুর রাজ্জাক]] ও কাজী আরেফ আহমেদ। এরা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরের প্রগতিশীল অংশের মধ্যে থেকে প্রতিশ্রুতিশীল কর্মী সংগ্রহ করে সারাদেশে একটি সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলেন। নিউক্লিয়াসের কাজ ছিল, 'বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে যাবতীয় নীতি-কৌশল প্রনয়ণ করা এবং স্বাধীকার আন্দোলনকে সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাওয়া। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সর্বময় কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা ছিল এই তিন ছাত্রনেতার কাছে। দেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচি বিশেষত শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত ছয় দফা, ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের এগারো দফার আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলনকে গণরূপদানের মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলা। একইসাথে জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করা ছিল নিউক্লিয়াসের<ref name=":1">ষাট দশকের ছাত্ররাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি লেখক কে বি এম মফিজুর রহমান খান</ref> অন্যতম কাজ। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি, ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ [[বাধীনতার ইশতেহার|স্বাধীনতার ইশতেহার]] পাঠ, জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন, জয়বাংলা বাহিনী গঠন এবং তার কুচকাওয়াজ ও বঙ্গবন্ধুকে সামরিক অভিবাদন জানানো, সবই ছিল স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ। বিপ্লবী পরিষদের সকল কর্মকাণ্ডের প্রতি বঙ্গবন্ধু [[শেখ মুজিবুর রহমান|শেখ মুজিবর রহমানে]]<nowiki/>র প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন ছিল।
নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্তে [[১৯৬৪]] সালে কাজী আরেফ আহমেদের পৈত্রিক নিবাস পুরনো ঢাকার [[১৪/৩ অভয় দাস লেনে]]<nowiki/>র বাড়িতে একটি সাইক্লোস্টাইল মেশিন স্থাপন করা হয়। এ মেশিনে মূদ্রিত ‘জয়বাংলা’ ও ‘বিপ্লবী বাংলা’<ref name=":1" /> নামে স্বাধীনতার ইশতেহার<ref name=":1" /> প্রচার করা হতো। নির্দেশ ছিল যে এ ইশতেহার পড়ার পর পুড়িয়ে বা ছিঁড়ে ফেলতে হবে। নিউক্লিয়াস সদস্যদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাকের অন্যতম দায়িত্ব ছিলো শেখ মুজিবুর রহমান ও [[বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ|আওয়ামী লীগে]]<nowiki/>র সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে নিউক্লিয়াসের
==ছয়দফা ও এগারো দফা==
[[১৯৬৬]] সালে [[শেখ মুজিবুর রহমান]] লাহোরে বাঙালীর মুক্তি সনদ “[[ছয় দফা আন্দোলন|ছয়দফা]]” ঘোষণা করলে বাঙালির স্বাধিকারের বিষয়টা সামনে চলে আসে। ছয়দফা ঘোষণার পর তৎকালিন আওয়ামী লীগে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। আওয়ামী লীগের একটি অংশ এ ছয়দফাকে সমর্থন জানাতে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পূর্ব আলোচনা ছাড়া কেন ছয়দফা ঘোষণা করা হলো, সে বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন কেউ কেউ। পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদানের আগেই ছাত্রলীগ ঢাকা মাহনগর কমিটি সর্বসন্মতিক্রমে ছয়দফার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে এবং মহানগর কমিটির সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ বিবৃতি দিয়ে ছয়দফার প্রতি সকলকে সমর্থন প্রদানের আহ্বান জানান। তিনি ছয়দফার সমর্থনে ঢাকার রাজপথে মিছিল বের করেন। ছয়দফা ঘোষণার আগেই স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সাংগঠনিক কাঠামো সারাদেশে বিস্তার লাভ করে। অল্প সময়ের মধ্যেই ছয়দফা গোটা জাতির মুক্তি সনদ হিসেবে বাঙালির প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়। ছয়দফার আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী [[আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা|আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলা]] দায়ের করে। বঙ্গবন্ধুকে প্রধান এবং আরো ৩৫ জনকে আসামী করে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলা চলাকালে [[১৯৬৯]]'র ১৫ ফেব্রুয়ারিতে আগরতলা মামলার অভিযুক্ত [[সার্জেন্ট জহুরুল হক]]
ছাত্রআন্দোলনকে বেগবান করতে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে একটি মঞ্চে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিউক্লিয়াস। [[১৯৬৯ এর গণ-অভ্যূত্থান|১৯৬৯]] সালে জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে তোলা হয় [[এগারো দফা কর্মসূচী|১১ দফাভিত্তিক]] ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে সারাদেশে প্রচণ্ড আন্দোলন গড়ে ওঠে। ২১শে জানুয়ারি ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে আসাদ নিহত হন। আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে সেদিনই আবারো মিছিল বের করা হয়। এ মিছিল পরিণত হয় গণজোয়ারে। উত্তাল আন্দোলনে ঢাকা কেঁপে ওঠে। জনতার আন্দোলনের চাপে আগরতলা মামলা সরকার প্রত্যাহার করে এবং ২২শে ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ সকল অভিযুক্তরা মুক্তি পায়। অবশেষে ২৪ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট স্বৈরশাসক আইয়ুব খান পদত্যাগ করে। তারপরের রাজনীতি পুরোটাই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে নিউক্লিয়াস। স্বাধীকার আদায়ের সংগ্রাম খুব দ্রুত রূপ নিতে থাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে। কাজী আরেফ আহমেদ তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে এ সংগ্রামকে সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়। আইয়ূব খানের পতনের পর [[জেনারেল ইয়াহিয়া খান]] পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসেন। তিনি সাধারণ নির্বাচন দেয়ার ঘোষণা দেন। শেখ মুজিবর রহমান ছয়দফার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। এ সময়ে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্যগণ নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যাপকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নির্বাচনের ফলাফল নিরঙ্কুশভাবে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়। বাঙালি জাতি [[ছয় দফা আন্দোলন|ছয় দফা]]<nowiki/>র পক্ষে ব্যাপকভাবে সমর্থন জানায়।
৩৮ ⟶ ৩৭ নং লাইন:
==জাতীয় পতাকায় অবদান==
স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের মূল লক্ষ্য ছিল এই দেশকে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে নিউক্লিয়াস। শ্রমিক লীগের পক্ষ থেকে পল্টন ময়দানে শেখ মুজিবকে [[৭ জুন ১৯৭০]]<ref>{{বই উদ্ধৃতি|title=কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস|last=|first=|publisher=রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব|year=|isbn=|location=|pages=}}</ref> তারিখে অভিবাদন জানানোর এক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ছাত্রলীগও একটি বাহিনী গঠন করে ঐ দিন বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানানোর কর্মসুচিতে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নেয়। নিউক্লিয়াস এ বাহিনী গঠনের দায়িত্ব প্রদান করে কাজী আরেফ আহমেদকে। এ বাহিনীর নাম দেওয়া হয় জয়বাংলা বাহিনী। এ বাহিনীর অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় আ স ম আব্দুর রবকে। নিউক্লিয়াসের পক্ষ থেকে বাহিনীর জন্য একটি পতাকা বানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অভিবাদনকালে বঙ্গবন্ধু এ পতাকা [[জয়বাংলা বাহিনী]]<nowiki/>কে প্রদান করবে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব অর্পিত হয় কাজী আরেফ আহমেদের উপর।[[৬ জুন ১৯৭০]], কাজী আরেফ আহমেদ তৎকালিন ইকবাল হলের (বর্তমানে [[সার্জেন্ট জহুরূল হক হল|সার্জেন্ট জহুরুল হক হল]]) ১১৬ নম্বর কক্ষে তৎকালিন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সিরাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের সহসভাপতি [[আ.স.ম. আবদুর রব|আ স ম আব্দুর রব,]] ছাত্রনেতা মনিরুল ইসলাম (মার্শাল মনি) ডেকে নিয়ে পতাকা তৈরির কথা বলেন। [[আ.স.ম. আবদুর রব|আ স ম আব্দুর রব]] এ কক্ষেই থাকতেন। কাজী আরেফ জানান যে, এখন এটি জয় বাংলা বাহিনীর [[বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা|পতাকা]] হিসেবে ব্যবহার করা হবে। পরবর্তীতে এটিকে জাতীয় পতাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে। এসময়ে মনিরুল ইসলাম ও [[আ.স.ম. আবদুর রব|আ স ম আবদুর রব]] একমত হন যে পতাকার জমিন অবশ্যই গাঢ় সবুজ (বটলগ্রিন) হতে হবে। শাহজাহান সিরাজ বলেন যে, লাল রঙের একটা কিছু পতাকায় থাকতে হবে। এরপর কাজী আরেফ আহমেদ পতাকার নকশা তৈরি করেন। গাঢ় সবুজ জমিনের উপর প্রভাতের লাল সূর্যের অবস্থান। পতাকার নকশা দেখে সবাই একমত হন। এসময়ে কাজী আরেফ আহমেদ প্রস্তাব করেন যে, লাল সূর্যের মাঝে সোনালী রঙে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র দিতে হবে। না হলে পাকিস্তানীরা যেমন আমাদের আন্দোলন নিয়ে অপপ্রচার করে, পতাকা নিয়েও তাই করবে। সে সময়ে পাকিস্তানিরা বাঙালিদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতে ‘ভারতের হাত আছে’, ‘ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের কাজ’, ‘ভারতীয় এজেন্টদের কাজ’ ইত্যাদি অপপ্রচার চালাতো। এ ছাড়া পাকিস্তানিরা বাঙালিদের আন্দোলনকে নস্যাত করতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, পূর্ব পাকিস্তান এবং মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য নিয়ে একটি কাল্পনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অপপ্রচার করতো। এ অপপ্রচারের কাজে তারা প্রশাসনযন্ত্রকেও ব্যবহার করতো। কাল্পনিক এ রাষ্ট্রের তারা নাম দিয়েছিল ‘[[ইউনাইটেড স্টেটস অফ বেঙ্গল’]] বা ‘বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র’। এ ধরণের অপপ্রচার থেকে রক্ষা পেতে পতাকার লাল সূর্যের মাঝে সোনালী আঁশ ও পাকা ধানের রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র রাখার কথা বলেন কাজী আরেফ আহমেদ। এ বিষয়ে তাঁরা সবাই একমত হন এবং তারপর পতাকা নিয়ে আলাপ করতে সিরাজুল আলম খানের কাছে যান। স্বভাবতই স্বাধীনতা কার্যক্রমের একজন ঊর্ধতন নেতা হিসেবে তাঁর অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। পতাকা তৈরিসহ সকল কার্যক্রমের বিষয়ে [[সিরাজুল আলম খান]]<nowiki/>কে জানানো হলো। তিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, যে নামেই পতাকা প্রদর্শন করো না কেন, সে পতাকাকে জনগণের ভবিষ্যৎ স্বাধীন [[বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা|বাংলাদেশের পতাকা]] হিসেবে ভেবে নিতে কোন বাঁধা থাকবে না। ইতোমধ্যে সেখানে আসেন ছাত্রনেতা [[কামরুল আলম খান খসরু,]] [[স্বপন কুমার চৌধুরী,]] [[হাসানুল হক ইনু]], ইউসুফ সালাহউদ্দিন আহমেদ ও নজরুল ইসলাম। এরা সবাই [[স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদে]]<ref name=":1" /> র সদস্য ছিলেন।কামরুল আলম খান খসরু, স্বপন কুমার চৌধুরী, [[হাসানুল হক ইনু]], ও নজরুল ইসলামকে পাঠানো হলো পতাকা সেলাই করে আনতে। ছাত্রলীগ অফিস তখন বলাকা ভবনে ছিল। এ ভবনে অনেক দর্জির দোকান ছিল। তাই তারা গেলেন [[নিউমার্কেটে]]। রাত অনেক, দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে নিউমার্কেটের অ্যাপেলো নামক দোকানে থেকে গাঢ় সবুজ ও লাল রঙের লেডিহ্যামিল্টন কাপড় কিনে অপর এক রঙের দোকানিকে জাগিয়ে তুলে সেনালী রং ও তুলি কিনে নিয়ে গেলেন বলাকা ভবনে। সেখানে পাক টেইলার্সকে ডেকে তুলে পতাকা সেলাই করা হয়। যে দর্জি এ পতাকাটি সেলাই করলেন তিনি ছিলেন একজন অবাঙালী। তিনি জনতেনও না, যে [[পতাকা]] তিনি সেলাই করছেন, সেটিই হবে তাদের সাথে পৃথক হওয়ার বড় শক্তি। দেশ স্বাধীনের পর ওই দর্জি পাকিস্তান চলে যান। পতাকা সেলাইয়ের পর সমস্যা দেখা দেয় লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশের ম্যাপ আঁকা নিয়ে। প্রয়োজন দেখা দেয় একজন শিল্পীর। এ সমস্যার সমাধানের জন্য ডেকে আনা হয় শিবনারায়ন দাসকে। শিবনারায়ন দাস তখন [[কুমিল্লা জেলা|কুমিল্লা]]<nowiki/>য় ছাত্ররাজনীতি করতেন। তিনিও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ভাল পোস্টার লিখতে এবং রঙ-তুলির কাজ জানতেন। ছাত্রলীগ সলিমুল্লাহ হল শাখার সম্মেলনের ব্যানার ফেস্টুন লেখার জন্য তাঁকে কুমিল্লা থেকে ঢাকা আনা হয়েছে। তাঁকে সলিমুল্লাহ হল থেকে ডেকে আনা হয়। তিনি জানালেন মানচিত্রের ওপর শুধু রং করতে পারবেন, মানচিত্র আঁকতে পারবেন না তিনি। এ সমস্যার সমাধানের জন্য [[হাসানুল হক ইনু]] ও [[ইউসুফ সালাউদ্দীন]] আহমদ চলে গেলেন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এনামুল হকের (হাসানুল হক ইনু’র কাজিন) ৪০৮ নম্বর কক্ষে। তাঁর কাছ থেকে অ্যাটলাস নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র বের করে তার ওপর ট্রেসিং পেপার রেখে আঁকা হয় মানচিত্র। সেই মানচিত্র নিয়ে তাঁরা ফিরে এলেন ইকবাল হলে। শিবনারায়ন দাস তাঁর হাতে পতাকার লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশের [[বাংলাদেশের মানচিত্র|মানচিত্র]] আঁকলেন। রাতেই এ পতাকা অনুমোদনের জন্য নিউক্লিয়াসের বৈঠক হয় ইকবাল হলে। বৈঠকে পতাকাটি অনুমোদিত হয়। এরপর [[শেখ মুজিবুর রহমান|বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের]] অনুমোদন গ্রহণের প্রয়োজন হয়। এ কাজে যথারীতি দায়িত্ব দেওয়া হয় [[আব্দুর রাজ্জাক (রাজনীতিবিদ)|আব্দুর রাজ্জাক]]<nowiki/>কে। তিনি ঐ রাতেই বঙ্গবন্ধুর বাসায় গিয়ে পতাকা দেখান এবং তাঁর সম্মতি নেন।
পরদিন ৭ জুন, সকাল থেকেই মুসলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। কর্দমাক্ত মাঠে জয়বাংলা বাহিনী কুচকাওয়াজের সাথে এগিয়ে আসছিলো। বাহিনীর সবার পড়নে ছিল সাদা প্যান্ট, সাদা শার্ট, মাথায় লাল-সবুজ টুপি এবং হাতে লাল-সবুজ ব্যান্ডে লেখা ‘[[জয়বাংলা বাহিনী’|জয়বাংলা বাহিনী]]<ref name=":1" />[[জয়বাংলা বাহিনী’|’]]। মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মনি, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমেদ। বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে পলিথিনে পেঁচিয়ে কাজী আরেফ পতাকা নিয়ে অবস্থান নিলেন । [[আ.স.ম. আবদুর রব|আ স ম আব্দুর রব]] কুচকাওয়াজের তালে মঞ্চের কাছে এসে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পতাকা গ্রহণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বঙ্গবন্ধু কাজী আরেফ আহমেদের হাত থেকে পতাকাটি নিয়ে উপস্থিত জনতাকে দেখান। এরপর আ স ম আব্দুর রবের কাছে পতাকাটি হস্তান্তর করেন। আ স ম আব্দুর রব কুচকাওয়াজের তালে মঞ্চের সামনে দিয়ে চলে যান। এই পতাকাটিই [[২ মার্চ ১৯৭১]], ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের বটতলায় লাখো ছাত্র-জনতার সমাবেশে [[আ.স.ম. আবদুর রব|আ স ম আব্দুর রব]] উত্তোলন করেন। ২৩ মার্চ ছিল [[পাকিস্তানের পতাকা দিবস]]। এদিন সেনানিবাস ব্যতীত, ঘরে ঘরে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজ পতাকা উড়ানো হয়।
৬৪ ⟶ ৬১ নং লাইন:
==জাতীয় সমন্বয় কমিটি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠা==
[[জিয়াউর রহমান|জেনারেল জিয়াউর রহমানে]]<nowiki/>র সময়ে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজম বাংলাদেশে আসে।[[১৯৯১]] সালের [[২৯ ডিসেম্বর|২৯শে ডিসেম্বর]] [[গোলাম আযম]]<nowiki/>কে জামায়াতে ইসলামের আমির ঘোষণা করলে, ফুসে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সংগঠন ও সুধীজন। গড়ে ওঠে বেশকয়েকটি অরাজনৈতিক সংগঠন। তারমধ্যে [[একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি|‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন’ ও ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’]] অন্যতম। এরা পৃথক ব্যানারে রাজাকার-আলবদর ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ শুরু করে। কাজী আরেফ আহমেদ বিশ্বাস করতেন যে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর ঐক্য ব্যতীত ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ রক্ষা করা সম্ভব নয়, সম্ভব নয় মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো ধরে রাখা। তাই তিনি [[জাহানারা ইমাম|শহীদ জননী জাহানারা ইমাম]]<nowiki/>কে সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন ‘[[মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’।]] সে সময় ঘাতক-দালাল বিরোধী লড়াইয়ে ব্যাপক সাড়া জাগানো সংগঠন "[[মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র কমান্ড"]] গঠনে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি গোলাম আজমসহ একাত্তরের ঘাতক-দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। এ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় [[২৬শে মার্চ ১৯৯২ তারিখে]] ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে [[গণআদালত’|‘গণআদালত’]] বসে। এ আদালত গোলাম আজমকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং প্রতিকী ফাঁসি দেয়। এই গণআদালত সংঘটন ও এ আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন আদায়ে কাজী আরেফ মুখ্যভূমিকা পালন করেন। ঘাতক-দালাল ও রাজাকার-আলবদরদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা সে আন্দোলন ও জনমতের কারণেই ২০০৯ সালে আওয়ামী ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সংঘটিত অপরাধের বিচারকার্য পরিচালনা করতে পেরেছে।
==কালীদাসপুরে হত্যাকান্ড==
[[১৯৯৯]] সালের [[১৬ই ফেব্রুয়ারি]] [[কুষ্টিয়া জেলা|কুষ্টিয়া]]<nowiki/>র [[কালিদাসপুরের]] স্কুলমাঠে সন্ত্রাস বিরোধী জনসভায় বক্তব্যরত অবস্থায় সন্ত্রসীদের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের এই অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ আহমেদ। সেদিন আরো নিহত হন কুষ্টিয়া জেলা জাসদ সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী সহ আরো তিনজন।
==তথ্যসূত্র==
{{সূত্র তালিকা}}
[[বিষয়শ্রেণী:১৯৪২-এ জন্ম]]
|