ব্রোঞ্জ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্প্রসারণ
NahidSultanBot (আলোচনা | অবদান)
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে
৪ নং লাইন:
সাধারণত ''ব্রোঞ্জে'' তামার ভাগ থাকে অন্তত ৬০ শতাংশ; এর সাথে টিনের ভাগ থাকে ১২% ও তার সাথে মিশেল থাকে আরও অন্যান্য নানা ধাতু (উপরে উল্লিখিত) ও এমনকী নানা অধাতব পদার্থ ও [[ধাতুকল্প|ধাতুকল্পও]], যেমন - [[আর্সেনিক]], [[ফসফরাস]], [[সিলিকন]], প্রভৃতি। অর্থাৎ, [[ধাতুবিজ্ঞান|ধাতুবিজ্ঞানের]] ভাষায় ''ব্রোঞ্জ'' একটি নির্দিষ্ট সংকর ধাতু নয়, বরং তামা ও টিনের সাথে বিভিন্ন অনুপাতে অন্যান্য পদার্থের মিশ্রণে তৈরি একগুচ্ছ সংকর ধাতুকে একত্রে 'ব্রোঞ্জ' বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
 
প্রাগৈতিহাসিক মানুষ [[নব্যপ্রস্তরযুগ|নব্যপ্রস্তরযুগের]] শেষে এসে যখন ধাতুর ব্যবহার শেখে, সেই সময় থেকে [[লোহা|লোহার]] ব্যবহার বহুল প্রচলিত হওয়ার আগে পর্যন্ত, সবচেয়ে শক্ত অথচ কমনীয় এবং ব্যবহারযোগ্য পদার্থ হিসেবে ব্রোঞ্জের ব্যবহারই হয়ে উঠেছিল সর্বাধিক প্রচলিত। এই সময়কেই ইতিহাসে [[ব্রোঞ্জ যুগ]] বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। [[নিকট প্রাচ্য|নিকট প্রাচ্যে]] খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে [[সুমের|সুমের সভ্যতার]] উত্থানের সাথে সাথে ব্রোঞ্জ যুগের সূচনা বলে ধরা হয়; [[চীন]] এবং [[ভারতীয় উপমহাদেশ|ভারতীয় উপমহাদেশেও]] মোটামুটি ঐ একই সময়ে ব্রোঞ্জের ব্যবহার শুরু হয়। এরপর তা ধীরে ধীরে [[ইউরেশিয়া|ইউরেশিয়ার]] বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ নিকট প্রাচ্যে লোহার ব্যবহার শুরু হলে ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে তা ধীরে ধীরে সমগ্র ইউরেশিয়াতেই ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ব্রোঞ্জ যুগের অবসান হয়ে [[লৌহ যুগ|লৌহ যুগের]] সূচনা হয়। তবে তখনও ব্রোঞ্জের ব্যবহার আজকের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণেই চালু ছিল।
 
==ব্যুৎপত্তি==
১০ নং লাইন:
# ত্রয়োদশ, চতুর্দশ শতাব্দীতে [[ইতালি|ইতালিতে]] 'ব্রোঞ্জো' বলে একটি শব্দ প্রচলিত ছিল, যার মানে 'ঘন্টা তৈরির পদার্থ' বা 'পিতল'। এই শব্দটিই পরে [[ফরাসি ভাষা|ফরাসি ভাষায়]] 'ব্রোঞ্জ'রূপে অধিগৃহীত হয়। [[মধ্যযুগ|মধ্যযুগীয়]] [[লাতিন ভাষা|লাতিনে]] শব্দটি 'ব্রোঞ্জিয়াম' (''bronzium'') হিসেবে উল্লিখিত হত। এর থেকেই শব্দটি পরবর্তীকালে বিভিন্ন আধুনিক ভাষায় প্রচলিত হয়ে ওঠে। এই মতটিই বর্তমানে সর্বাধিক গ্রাহ্য।
# আরেকটি মত হল, [[ফার্সি ভাষা|পারসিক ভাষায়]] পূর্বে 'ব্রিঞ্জি' (برنج) বলে একটি শব্দ প্রচলিত ছিল, যার অর্থ 'পিতল' বা 'তামাজাত পদার্থ' (আধুনিক ফার্সিতে এর রূপ ''বেরেঞ্জ'' )।<ref>Karl Lokotsch, ''Etymologisches Wörterbuch der europäischen Wörter orientalischen Ursprungs''. (Heidelberg: Carl Winter’s Universitätsbuchhandlung, 1927), p. 1657.</ref> এই শব্দটি থেকেই পরবর্তীকালে [[সার্বো-ক্রোয়েশীয়-বসনীয় ভাষা|সার্বো-ক্রোয়েশীয় ভাষায়]] 'পিরিনাচ' (পিতল)<ref>Wolfgang Pfeifer, ed., ''Etymologisches Wörterbuch des Deutschen'', s.v. "Bronze" (Munich: Deutscher Taschenbucher Vertrag, 2005).</ref>, [[জর্জীয় ভাষা|জর্জীয় ভাষায়]] 'বিরিঞ্জাও' (আধুনিক অর্থে 'ব্রোঞ্জ') ও [[আর্মেনীয় ভাষা|আর্মেনীয় ভাষায়]] 'প্লিঞ্জ' (তামা) শব্দগুলির উৎপত্তি। আধুনিক 'ব্রোঞ্জ' শব্দটিও এই সূত্রেই প্রচলিত হয়ে ওঠে।
# এই প্রসঙ্গে আরও একটি প্রচলিত মত হল, মধ্যযুগীয় বা [[বাইজান্টাইন গ্রিক ভাষা|বাইজান্টাইন গ্রিক ভাষায়]] দ্বাদশ শতাব্দীতে একটি প্রচলিত শব্দ ছিল 'ব্রন্তেসিওন' বা 'ব্রিন্দিসি'তে প্রাপ্য। দক্ষিণ ইতালির [[অ্যাড্রিয়াটিক সাগর]] কূলে অবস্থিত এই ব্রিন্দিসি শহরটি ছিল ব্রোঞ্জের জন্য বিখ্যাত। সেই ব্রন্তেসিওন শব্দটিই প্রথমে রূপান্তরিত হয়ে পরিণত হয় 'ব্রনৎসিওন'এ; এর থেকেই পরবর্তীকালে 'ব্রোঞ্জ' শব্দটি গড়ে ওঠে।<ref>Henry and Renée Kahane, "Byzantium's Impact on the West: The Linguistic Evidence", ''Illinois Classical Studies'' 06 (2) 1981, p. 395. </ref><ref>M.P.E. Berthelot, "Sur le nom du bronze chez les alchimistes grecs", in ''Revue archéologique'', 1888, pp. 294-8.</ref>
 
==আকরিক==
৩৫ নং লাইন:
# ''উচ্চপ্রসারণশীল সংকর'' - এই ধরণের ব্রোঞ্জ সংকরে টিনের পরিমাণ থাকে সর্বাধিক ৯%। এরা নমনীয় ও উচ্চপ্রসারণশীল হয়ে থাকে, অর্থাৎ পিটিয়ে এদের নানারকম আকৃতি দান করা যায়। এরা কম ভঙ্গুর এবং বিভিন্ন ধরনের ধাতব পেটাই সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এরা সাধারণত উচ্চগলনাঙ্কবিশিষ্ট হয়ে থাকে।<ref name="DIN CEN" />
# ''ঢালাই জাতীয় সংকর'' - এরা অপেক্ষাকৃত কম নমনীয় ও নিম্ন গলনাঙ্কবিশিষ্ট হয়ে থাকে। কিন্তু এদের কাঠিন্য তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হয়। ব্রোঞ্জের এই সব সংকরে টিনের ভাগ থাকে ৯% - ১৩%।<ref name="DIN CEN">DIN CEN/TS 13388 Kupfer und Kupferlegierungen – Übersicht über Zusammensetzungen und Produkte</ref>
# ''বেল বা ঘন্টায় ব্যবহৃত সংকর'' - এই ধরনের ব্রোঞ্জে টিনের পরিমাণ হয় ২০% - ২২%।
 
এছাড়াও ব্রোঞ্জের উপর পরিবেশের প্রভাব রোধ করতে (অর্থাৎ, স্বাভাবিক আবহাওয়ায় তার যাতে জারণক্ষমতা কম থাকে), গলনাঙ্ক বাড়াতে বা কমাতে, প্রসারণশীলতা ও নমনীয়তা বৃদ্ধি বা হ্রাসের উদ্দেশ্য এর সাথে সামান্য পরিমাণ ফসফরাস, নিকেল, সিসা বা দস্তাও বিভিন্ন সময়ে যোগ করা হয়ে থাকে।