দেবীভাগবত পুরাণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন:
{{About|শাক্ত পুরাণ|কৃষ্ণ-বিষয়ক পুরাণ|ভাগবত পুরাণ}}
[[চিত্র:Br Mus Durga.JPG|thumb|300px|মহিষাসুরমর্দিনী, ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রক্ষিত]]
{{italic title}}
[[চিত্র:Durga Slays Mahisasura.jpg|thumb|300px|মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা, প্রাচীন মন্দিরগাত্রে উৎকীর্ণ]]
{{হিন্দুশাস্ত্র}}
'''দেবীভাগবত পুরাণ''' ([[সংস্কৃত]]: देवी भागवतपुराण) [[হিন্দুধর্ম|হিন্দু]] [[শাক্তধর্ম|শাক্তধর্মের]] অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ। এই গ্রন্থ '''শ্রীমদ দেবীভাগবতম্''' বা '''দেবীভাগবতম্''' নামেও পরিচিত। শাক্তধর্মে এই গ্রন্থের স্থান [[দেবীমাহাত্ম্যম্]] গ্রন্থের পরেই।<ref>''The Triumph of the Goddess - The Canonical Models and Theological Visions of the Devi-Bhagavata PuraNa,'' Brwon Mackenzie. ISBN 0-7914-0363-7 </ref> দেবীভাগবত পুরাণ একটি [[উপপুরাণ]] হলেও অনেক পণ্ডিত এটিকে মহাপুরাণ বলে উল্লেখ করেছেন। মূল গ্রন্থেও একে মহাপুরাণ বলা হয়েছে।<ref>"Thus ends the eighth chapter of the first Skandha in the Mahapurana Srimad Devi Bhagavatam of 18,000 verses by Maharsi Veda Vyasa" [http://www.astrojyoti.com/devibhagavatamindex.htm Srimad Devi Bhagavatam at Astrojyoti]</ref> "বঙ্গীয় শাক্তসম্প্রদায় দেবীভাগবত নামান্তরে শ্রীভাগবত মহাপুরাণকে প্রকৃত ভাগবত পুরাণ বলে দাবী করেন এবং বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মূল ভাগবত পুরাণকে উপপুরাণের পর্যায়ে গণ্য করেন।"<ref name = sanskritsahityeritihas> "সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস", ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, কলকাতা, ২০০০ (২০০৯ মুদ্রণ), পৃ. ১২২-২৩</ref> তবে এই মতের সপক্ষে বিশেষ যুক্তি বা প্রমাণ পাওয়া যায় না।<ref name = bharatkosh>"দেবীভাগবত", কল্যাণী দত্ত, ''ভারতকোষ'' চতুর্থ খণ্ড, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, ১৯৭০, পৃ. ৮৯-৯০</ref>
'''''দেবীভাগবত পুরাণ''''' ([[সংস্কৃত ভাষা|সংস্কৃত]]: देवी भागवतपुराण, ''{{IAST|Devī Bhāgavatapurāṇa}}'') বা '''''শ্রীমদ্‌দেবীভাগবতম্‌''''' হল [[সংস্কৃত ভাষা|সংস্কৃত ভাষায়]] রচিত একটি [[হিন্দুধর্ম|হিন্দু]] [[পুরাণ]]।{{Sfn|Dalal|2014|p=117}} ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে এই পুরাণটিকে [[পুরাণ#মহাপুরাণ|মহাপুরাণ]] (প্রধান পুরাণ) মনে করা হয়। আবার কোনো কোনো মতে, এটি হল একটি [[পুরাণ#উপপুরাণ|উপপুরাণ]] (অপ্রধান পুরাণ)। তবে সকল সম্প্রদায়ের কাছেই ''দেবীভাগবত পুরাণ'' একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরাণগ্রন্থ।{{Sfn|Dalal|2014|p=117}}
 
''দেবীভাগবত পুরাণ'' সর্বমোট বারোটি ‘স্কন্ধ’ (বিভাগ) ও ৩১৮টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত।{{Sfn|Rocher|1986|p=168}} হিন্দুধর্মের [[শাক্তধর্ম|শাক্ত সম্প্রদায়ে]] [[মহাশক্তি|মহাশক্তিকে]] ব্রহ্মাণ্ডের আদি স্রষ্টা ও [[ব্রহ্ম]] (সর্বোচ্চ সত্য) মনে করা হয়। এই সম্প্রদায়ে ''[[শ্রীশ্রীচণ্ডী|দেবীমাহাত্ম্যম্‌]]'' ও ''দেবীভাগবত পুরাণ'' দুটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।{{Sfn|C Mackenzie Brown|1990|pp=44-45, 129, 247-248 with notes 57-60}}{{Sfn|John Stratton Hawley|Donna Marie Wulff|1998|pp=6-14}}{{Sfn|Tracy Pintchman|2015|pp=183-188}} ''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থে দেবীসত্ত্বাকে সকল জীবসত্ত্বার উৎস, সৃষ্টিকারিণী, পালনকারিণী ও ধ্বংসকারিণী এবং মোক্ষদাত্রী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।{{Sfn|Dalal|2014|p=117}}{{Sfn|David Kinsley|1988|pp=133-139}} হিন্দুধর্মের অন্যান্য সবকটি প্রধান পুরাণে মহাশক্তির উল্লেখ ও বন্দনা করা হলেও, এই গ্রন্থে তাঁকে আদি দৈবসত্ত্বা বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং তাঁকে কেন্দ্র করেই এই পুরাণের সকল বিষয় আবর্তিত হয়েছে।{{Sfn|Alf Hiltebeitel|Kathleen M. Erndl|2000|pp=24-36, 48 (RS Sherma)}}{{Sfn|K P Gietz|1992|p=330 with note 1809, 497 with note 2764}} এই পুরাণের মূলগত দর্শনটি [[অদ্বৈত বেদান্ত|অদ্বৈত বেদান্তের]] অনুরূপ। সেই সঙ্গে এতে মহাশক্তির ভক্তিমূলক উপাসনার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।{{Sfn|Tracy Pintchman|2015|pp=128-132}}{{Sfn|June McDaniel|2004|pp=89-91, 159-161}}{{Sfn|C Mackenzie Brown|1990|pp=142-144}}
আনুমানিক খ্রিষ্টীয় একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে [[বঙ্গ|বঙ্গদেশের]] স্মার্ত শাক্ত সম্প্রদায় এই পুরাণ রচনা করেন।<ref name = sanskritsahityeritihas/> স্বামী বিজ্ঞানানন্দের মতে, খ্রিষ্টীয় নবম-একাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে এই পুরাণ রচিত হয়।<ref name = bharatkosh/> ১২টি স্কন্দ, ৩১৮টি পরিচ্ছেদ এবং প্রায় ১২,০০০ শ্লোকে বিন্যস্ত<ref name=a/> এই পুরাণের উদ্দেশ্য "তন্ত্রমতে আরাধ্যা মণিদ্বীপবাসিনী পাশাঙ্কুশধারিণী বরাভয়প্রদায়িনী পরব্রহ্মস্বরূপিণী কুমারী মহামায়া মহাশক্তির মাহাত্ম্যবর্ণনা"।<ref name = sanskritsahityeritihas/> ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, "আলোচ্য পুরাণে বর্ণিত শক্তিসাধনায় বেদবাহ্য তন্ত্রের প্রভাব স্পষ্ট নয়, পুরাণকার শ্রুতি, স্মৃতি ও তান্ত্রিক ধর্মের সমন্বয়সাধনের চেষ্টা করেছেন।"<ref name = sanskritsahityeritihas/>
 
==ইতিহাস==
অনেকে এই পুরাণকে [[বেদব্যাস]] কৃত মহাপুরাণ মনে করেন।<ref name=a>Shastri, P. (1995). ''Introduction to the Puranas'', New Delhi: Rashtriya Sanskrit Sansthan, pp.132-38</ref> গ্রন্থকারের উক্তি থেকে জানা যায়, ব্যাস অষ্টাদশ পুরাণ রচনার পর [[মহাভারত]] রচনা করেন এবং পুরাণের অনেক কাহিনি মহাভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন।<ref name = sanskritsahityeritihas/>
[[File:A Saraswati Statue in park.jpg|thumb|''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থে দেবী [[সরস্বতী (দেবী)|সরস্বতীকে]] (উপরের চিত্রে) সর্বোচ্চ মহাশক্তির সৃষ্টিশক্তির স্বরূপ ও [[ব্রহ্মা|ব্রহ্মার]] শক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।{{Sfn|C Mackenzie Brown|1990|pp=49, 130, 134, 139}}]]
''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থের রচনাকাল নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে।{{Sfn|Rocher|1986|p=172}} রামচন্দ্রন প্রমুখ অল্প কয়েকজন গবেষক মনে করেন, এটি একটি প্রাচীন পুরাণ এবং খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর আগে রচিত।{{Sfn|Rocher|1986|p=172}} যদিও এই মত সর্বজনগ্রাহ্য নয়। অধিকাংশ গবেষকের মতে, এই গ্রন্থ খ্রিস্টীয় ৯ম থেকে ১৪শ শতাব্দীর মধ্যভাগে রচিত হয়েছিল।{{Sfn|Rocher|1986|p=172}}{{Sfn|Alf Hiltebeitel|Kathleen M. Erndl|2000|p=139, '''Quote:''' (...) portrayals of the Goddess in the later Devi Bhagavata (c. ninth century CE) bear crucial differences from those of the Goddess in the Devi Mahatmya.}} রাজেন্দ্র হাজরার মতে, এই গ্রন্থটি খ্রিস্টীয় ১১শ বা ১২শ শতাব্দীতে রচিত হয়। অন্যদিকে ল্যালি বলেছেন যে, খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের শেষ দিকে এই গ্রন্থ আকার নিতে শুরু করে এবং পরবর্তীকালে পরিবর্ধিত হয়। খ্রিস্টীয় ১১শ শতাব্দীতে এই গ্রন্থটির প্রথম সম্পূর্ণ পাঠের অস্তিত্ব ছিল।{{Sfn|Rocher|1986|p=172}}<ref>{{cite book|author=P. G. Lalye|title=Studies in Devī Bhāgavata|url=http://books.google.com/books?id=XVwpAAAAYAAJ|year=1973|publisher=Popular Prakashan|pages=101–105}}</ref> ট্রেসি পিঞ্চম্যানের মতে, এই গ্রন্থ খ্রিস্টীয় ১০০০ থেকে ১২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে রচিত হয়।{{Sfn|Tracy Pintchman|2015|p=128}}
 
''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থের ৭ম স্কন্ধের দশটি অধ্যায়ের (৩১ থেকে ৪০) ৫০৭টি শ্লোক ''[[মহাভারত]]'' গ্রন্থের ''[[ভগবদ্গীতা]]'' অংশের মতো পৃথক গ্রন্থাকারেও পঠিত হয়।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|pp=1-4}} এই অংশটির নাম ''দেবীগীতা''।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|p=4}} সি ম্যাকেঞ্জি ব্রাউনের মতে, এই অংশটি হয় মূল গ্রন্থ রচনাকালেই রচিত হয়, নয়তো পরে রচিত হয়ে প্রক্ষিপ্ত আকারে এই পুরাণে সংযোজিত হয়।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|p=4}} তাঁর মতে, এই অংশটি সম্ভবত খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দীতে রচিত হয়েছিল। এমনও হতে পারে, এটি তার পরে রচিত। কিন্তু খ্রিস্টীয় ১৬শ শতাব্দীর আগেই এই অংশটি রচিত হয়।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|p=4}}
ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্ণনা অনুযায়ী, দেবীভাগবত পুরাণের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু হল: "[[ব্রহ্মা]] ও [[বিষ্ণু]] অপেক্ষা দেবীর অধিক মাহাত্ম্য, ব্যাসপুত্র [[শুকদেব|শুকের]] সংসারের প্রতি উদাসীনতা, শুককে ব্যাসলিখিত দেবীভাগবত পাঠের নির্দেশ, রাজা [[জনক|জনকের]] কাছে শুকের আগমন, জনক কর্তৃক চতুরাশ্রম পালনের প্রয়োজনীয়তার উপদেশ, [[মহালক্ষ্মী]], [[সরস্বতী (দেবী)|সরস্বতী]] ও [[মহাকালী]]রূপে সাত্ত্বিক-রাজস-তামস গুণের আশ্রয়ে নির্গুণা নিত্যা, যোগমায়ার আবির্ভাব, [[শিব]] কর্তৃক দেবীর প্রশংসা, দেবীযজ্ঞ, বিষ্ণুর বামনাবতার, দেবীর আরাধনা, কুমারী-পূজা, [[রামায়ণ]]সার, বাসুদেব-দেবকী ও [[পাণ্ডব]]দের কাহিনী, চ্যবন ও [[প্রহ্লাদ|প্রহ্লাদের]] আখ্যান, বিষ্ণুর অবতার-কাহিনী ([[নরনারায়ণ]], [[দত্তাত্রেয়]], [[পরশুরাম]], [[রাম]], [[বামন]], [[নৃসিংহ]], [[কৃষ্ণ]], [[অর্জুন (পাণ্ডব)|অর্জুন]] প্রভৃতি), দেবী কর্তৃক [[মহিষাসুর]] ও [[শুম্ভনিশুম্ভ]] বধ, [[হরিশ্চন্দ্র]] কাহিনী, চ্যবন-সুকন্যা কাহিনী, বিষ্ণুর মুখে শিব ও [[দাক্ষায়ণী|সতী]] সম্পর্কে নানা উপাখ্যান, পরমা প্রকৃতি থেকে [[রাধা]], [[লক্ষ্মী]], [[দুর্গা]], [[সরস্বতী]], [[সাবিত্রী]], [[কালী]], [[গঙ্গা (দেবী)|গঙ্গা]], [[ষষ্ঠী]], [[মঙ্গলচণ্ডী]], [[তুলসী]], [[মনসা]] প্রভৃতির উদ্ভব, [[রাধাকৃষ্ণ]]-তত্ত্ব, [[কলিযুগ|কলিযুগের]] বৈশিষ্ট্য, সদাচার, [[নবরাত্র|নবরাত্রব্রত]] ([[দুর্গাপূজা]]), ১০৮ পীঠস্থান, মঙ্গলচণ্ডীর পূজা, রাম কর্তৃক দুর্গার [[অকালবোধন]], পঞ্চযজ্ঞ, হোম, সমাজধর্ম, শিল্প প্রভৃতি।"<ref name = sanskritsahityeritihas/>
 
''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থের ৯ম স্কন্ধে একাধিক শ্লোকে ‘মেচ্ছ’ (বর্বর) ও ‘যবন’ (বিদেশি) শব্দদুটি পাওয়া যায়।{{Sfn|C Mackenzie Brown|1990|p=166}} এই শব্দদুটির মাধ্যমে সম্ভবত পার্বত্য আদিবাসীদের বোঝায়। কিন্তু হাজরা প্রমুখ গবেষকদের মতে, যে সব শ্লোকে ‘ম্লেচ্ছ’ কথাটির উল্লেখ আছে, সেই সব শ্লোকের বিস্তারিত বিবরণগুলি পাঠ করলে বোঝা যায়, সেই সব শ্লোকগুলির রচয়িতা [[ইসলাম]] ধর্ম ও ভারতে ইসলামের প্রসার সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। প্রধান গবেষকদের মতে, ৯ম স্কন্ধের এই অংশগুলির রচনাকাল খ্রিস্টীয় ১২শ থেকে ১৫শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়। এই অংশগুলি গ্রন্থের মূল অংশটির পরবর্তীকালে রচিত।{{Sfn|C Mackenzie Brown|1990|p=166}}
প্রথম স্কন্দে ২০টি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম তিনটি অধ্যায়ে ঋষি শৌনক সূতকে ব্যাসকৃত অষ্টাদশ পুরাণ অধ্যয়নের জন্য অভিনন্দিত করেছেন এবং তাঁর অনুরোধে সূত দেবীভাগবত পুরাণ পাঠ শুরু করছেন। ৪র্থ থেকে ১৯শ অধ্যায়ে শুকদেবের কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। শেষ অধ্যায়ে [[শান্তনু]] ও [[সত্যবতী|সত্যবতীর]] বিবাহ থেকে [[ধৃতরাষ্ট্র]], [[পাণ্ডু]] ও [[বিদুর|বিদুরের]] জন্ম পর্যন্ত মহাভারতের কাহিনি বিবৃত হয়েছে।<ref name=a>Shastri, P. (1995). ''Introduction to the Puranas'', New Delhi: Rashtriya Sanskrit Sansthan, pp.132-38</ref> দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম স্কন্দ যথাক্রমে ১২, ৩০, ২৫, ৩৫, ৩১ ও ৪০টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত। সপ্তম স্কন্দের শেষ নয়টি অধ্যায় (৩১-৪০) ''দেবীগীতা'' নামে পরিচিত। এটি [[পার্বতী]] ও তাঁর পিতা [[হিমবান|হিমবানের]] সংলাপ। এই অংশের আলোচ্য বিষয় দেবীর বিশ্বরূপ, [[উপনিষদ|উপনিষদের]] বিভিন্ন অংশ, অষ্টাঙ্গযোগ, জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ ও ভক্তিযোগের ব্যাখ্যা, দেবীর বিভিন্ন মন্দিরের অবস্থান এবং দেবীপূজার রীতিনীতি। অষ্টম, নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ স্কন্দ যথাক্রমে ২৪, ৫০, ১৩, ২৪ ও ১৪টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত।
 
''দেবীভাগবত পুরাণ'' মহাশক্তি-কেন্দ্রিক কোনো প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্র নয়। ''[[মার্কণ্ডেয় পুরাণ]]'' গ্রন্থের অন্তর্গত ''[[শ্রীশ্রীচণ্ডী|দেবীমাহাত্ম্যম্‌]]'' অংশে খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীতেই মহাশক্তিকে সর্বোচ্চ দৈবসত্ত্বার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।{{Sfn|Collins|1988|p=36}}{{Sfn|Rocher|1986|pp=191-192}} ভারতের [[মথুরা]] ও [[বঙ্গ|বাংলার]] বিভিন্ন অঞ্চলে পুরাতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে যে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তার থেকে বোঝা যায় খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দী থেকেই মহাশক্তি উপাসনা প্রচলিত ছিল।{{Sfn|John Stratton Hawley|Donna Marie Wulff|1998|p=2, 9-10, 26 with note 2}}{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|pp=1-4}} শাক্ত সম্প্রদায়ে ''দেবীমাহাত্ম্যম্‌'' ও ''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থদুটি বিশেষ প্রভাবশালী। এই দুই গ্রন্থেই দেবীশক্তির শ্রেষ্ঠত্ব ও ভক্তিমূলক শক্তি-উপাসনার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।{{Sfn|Philip Lutgendorf|2003|pp=251-252}}
পঞ্চম স্কন্দের ২য় থেকে ১৮শ অধ্যায়ে দেবী কর্তৃক [[মহিষাসুর]] বধের বর্ণনা রয়েছে। এই বর্ণনা [[দেবীমাহাত্ম্যম্]] তথা [[মার্কণ্ডেয় পুরাণ|মার্কণ্ডেয় পুরাণে]] বর্ণিত মহিষাসুর বধের বর্ণনারই বিস্তারিত রূপ। বাংলায় বাৎসরিক [[দুর্গাপূজা|দুর্গাপূজার]] পৌরাণিক প্রেক্ষাপট এই উপাখ্যান।
 
সমগ্র পুরাণ সাহিত্য ও ''মহাভারত'' গ্রন্থের সঙ্গে এই পুরাণটিও প্রথামতে [[ব্যাস (ঋষি)|ব্যাসের]] রচনা। ‘দেবীভাগবত’ নামটি ‘দেবী’ ও ‘ভাগবত’ শব্দদুটির সংযুক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট। এই শব্দবন্ধের অর্থ ‘দেবীশক্তির ভক্ত’। খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দে রচিত বৈদিক সাহিত্যেই ‘দেব’ ও ‘দেবী’ শব্দদুটি পাওয়া যায়। সেখানে ‘দেব’ শব্দটি পুংলিঙ্গ ও ‘দেবী’ শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ।{{Sfn|Klostermaier|2010|p= 496}} মনিয়ার উইলিয়ামস এই নামদুটির অর্থ করেছেন, “স্বর্গীয়, দিব্য, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পার্থিব সত্ত্বা, গৌরবোজ্জ্বল সত্ত্বা।”{{Sfn|Klostermaier|2010|p=101-102, 492}} ব্যুৎপত্তিগতভাবে সংস্কৃত ‘দেবী’ লাতিন ''dea'' ও গ্রিক ''thea'' শব্দের অনুরূপ।{{Sfn|John Stratton Hawley|Donna Marie Wulff|1998|p=2}} ‘ভাগবত’ শব্দের অর্থ ‘ঈশ্বরের ভক্ত’।{{Sfn|Lochtefeld|2002|p=94}}
 
== পাদটীকা ==