দেবীভাগবত পুরাণ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
|||
১ নং লাইন:
{{About|শাক্ত পুরাণ|কৃষ্ণ-বিষয়ক পুরাণ|ভাগবত পুরাণ}}
{{italic title}}
{{হিন্দুশাস্ত্র}}
'''''দেবীভাগবত পুরাণ''''' ([[সংস্কৃত ভাষা|সংস্কৃত]]: देवी भागवतपुराण, ''{{IAST|Devī Bhāgavatapurāṇa}}'') বা '''''শ্রীমদ্দেবীভাগবতম্''''' হল [[সংস্কৃত ভাষা|সংস্কৃত ভাষায়]] রচিত একটি [[হিন্দুধর্ম|হিন্দু]] [[পুরাণ]]।{{Sfn|Dalal|2014|p=117}} ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে এই পুরাণটিকে [[পুরাণ#মহাপুরাণ|মহাপুরাণ]] (প্রধান পুরাণ) মনে করা হয়। আবার কোনো কোনো মতে, এটি হল একটি [[পুরাণ#উপপুরাণ|উপপুরাণ]] (অপ্রধান পুরাণ)। তবে সকল সম্প্রদায়ের কাছেই ''দেবীভাগবত পুরাণ'' একটি গুরুত্বপূর্ণ পুরাণগ্রন্থ।{{Sfn|Dalal|2014|p=117}}
''দেবীভাগবত পুরাণ'' সর্বমোট বারোটি ‘স্কন্ধ’ (বিভাগ) ও ৩১৮টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত।{{Sfn|Rocher|1986|p=168}} হিন্দুধর্মের [[শাক্তধর্ম|শাক্ত সম্প্রদায়ে]] [[মহাশক্তি|মহাশক্তিকে]] ব্রহ্মাণ্ডের আদি স্রষ্টা ও [[ব্রহ্ম]] (সর্বোচ্চ সত্য) মনে করা হয়। এই সম্প্রদায়ে ''[[শ্রীশ্রীচণ্ডী|দেবীমাহাত্ম্যম্]]'' ও ''দেবীভাগবত পুরাণ'' দুটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।{{Sfn|C Mackenzie Brown|1990|pp=44-45, 129, 247-248 with notes 57-60}}{{Sfn|John Stratton Hawley|Donna Marie Wulff|1998|pp=6-14}}{{Sfn|Tracy Pintchman|2015|pp=183-188}} ''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থে দেবীসত্ত্বাকে সকল জীবসত্ত্বার উৎস, সৃষ্টিকারিণী, পালনকারিণী ও ধ্বংসকারিণী এবং মোক্ষদাত্রী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।{{Sfn|Dalal|2014|p=117}}{{Sfn|David Kinsley|1988|pp=133-139}} হিন্দুধর্মের অন্যান্য সবকটি প্রধান পুরাণে মহাশক্তির উল্লেখ ও বন্দনা করা হলেও, এই গ্রন্থে তাঁকে আদি দৈবসত্ত্বা বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং তাঁকে কেন্দ্র করেই এই পুরাণের সকল বিষয় আবর্তিত হয়েছে।{{Sfn|Alf Hiltebeitel|Kathleen M. Erndl|2000|pp=24-36, 48 (RS Sherma)}}{{Sfn|K P Gietz|1992|p=330 with note 1809, 497 with note 2764}} এই পুরাণের মূলগত দর্শনটি [[অদ্বৈত বেদান্ত|অদ্বৈত বেদান্তের]] অনুরূপ। সেই সঙ্গে এতে মহাশক্তির ভক্তিমূলক উপাসনার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।{{Sfn|Tracy Pintchman|2015|pp=128-132}}{{Sfn|June McDaniel|2004|pp=89-91, 159-161}}{{Sfn|C Mackenzie Brown|1990|pp=142-144}}
==ইতিহাস==
[[File:A Saraswati Statue in park.jpg|thumb|''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থে দেবী [[সরস্বতী (দেবী)|সরস্বতীকে]] (উপরের চিত্রে) সর্বোচ্চ মহাশক্তির সৃষ্টিশক্তির স্বরূপ ও [[ব্রহ্মা|ব্রহ্মার]] শক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।{{Sfn|C Mackenzie Brown|1990|pp=49, 130, 134, 139}}]]
''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থের রচনাকাল নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ আছে।{{Sfn|Rocher|1986|p=172}} রামচন্দ্রন প্রমুখ অল্প কয়েকজন গবেষক মনে করেন, এটি একটি প্রাচীন পুরাণ এবং খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীর আগে রচিত।{{Sfn|Rocher|1986|p=172}} যদিও এই মত সর্বজনগ্রাহ্য নয়। অধিকাংশ গবেষকের মতে, এই গ্রন্থ খ্রিস্টীয় ৯ম থেকে ১৪শ শতাব্দীর মধ্যভাগে রচিত হয়েছিল।{{Sfn|Rocher|1986|p=172}}{{Sfn|Alf Hiltebeitel|Kathleen M. Erndl|2000|p=139, '''Quote:''' (...) portrayals of the Goddess in the later Devi Bhagavata (c. ninth century CE) bear crucial differences from those of the Goddess in the Devi Mahatmya.}} রাজেন্দ্র হাজরার মতে, এই গ্রন্থটি খ্রিস্টীয় ১১শ বা ১২শ শতাব্দীতে রচিত হয়। অন্যদিকে ল্যালি বলেছেন যে, খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দের শেষ দিকে এই গ্রন্থ আকার নিতে শুরু করে এবং পরবর্তীকালে পরিবর্ধিত হয়। খ্রিস্টীয় ১১শ শতাব্দীতে এই গ্রন্থটির প্রথম সম্পূর্ণ পাঠের অস্তিত্ব ছিল।{{Sfn|Rocher|1986|p=172}}<ref>{{cite book|author=P. G. Lalye|title=Studies in Devī Bhāgavata|url=http://books.google.com/books?id=XVwpAAAAYAAJ|year=1973|publisher=Popular Prakashan|pages=101–105}}</ref> ট্রেসি পিঞ্চম্যানের মতে, এই গ্রন্থ খ্রিস্টীয় ১০০০ থেকে ১২০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে রচিত হয়।{{Sfn|Tracy Pintchman|2015|p=128}}
''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থের ৭ম স্কন্ধের দশটি অধ্যায়ের (৩১ থেকে ৪০) ৫০৭টি শ্লোক ''[[মহাভারত]]'' গ্রন্থের ''[[ভগবদ্গীতা]]'' অংশের মতো পৃথক গ্রন্থাকারেও পঠিত হয়।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|pp=1-4}} এই অংশটির নাম ''দেবীগীতা''।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|p=4}} সি ম্যাকেঞ্জি ব্রাউনের মতে, এই অংশটি হয় মূল গ্রন্থ রচনাকালেই রচিত হয়, নয়তো পরে রচিত হয়ে প্রক্ষিপ্ত আকারে এই পুরাণে সংযোজিত হয়।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|p=4}} তাঁর মতে, এই অংশটি সম্ভবত খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দীতে রচিত হয়েছিল। এমনও হতে পারে, এটি তার পরে রচিত। কিন্তু খ্রিস্টীয় ১৬শ শতাব্দীর আগেই এই অংশটি রচিত হয়।{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|p=4}}
''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থের ৯ম স্কন্ধে একাধিক শ্লোকে ‘মেচ্ছ’ (বর্বর) ও ‘যবন’ (বিদেশি) শব্দদুটি পাওয়া যায়।{{Sfn|C Mackenzie Brown|1990|p=166}} এই শব্দদুটির মাধ্যমে সম্ভবত পার্বত্য আদিবাসীদের বোঝায়। কিন্তু হাজরা প্রমুখ গবেষকদের মতে, যে সব শ্লোকে ‘ম্লেচ্ছ’ কথাটির উল্লেখ আছে, সেই সব শ্লোকের বিস্তারিত বিবরণগুলি পাঠ করলে বোঝা যায়, সেই সব শ্লোকগুলির রচয়িতা [[ইসলাম]] ধর্ম ও ভারতে ইসলামের প্রসার সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। প্রধান গবেষকদের মতে, ৯ম স্কন্ধের এই অংশগুলির রচনাকাল খ্রিস্টীয় ১২শ থেকে ১৫শ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়। এই অংশগুলি গ্রন্থের মূল অংশটির পরবর্তীকালে রচিত।{{Sfn|C Mackenzie Brown|1990|p=166}}
''দেবীভাগবত পুরাণ'' মহাশক্তি-কেন্দ্রিক কোনো প্রাচীন ভারতীয় শাস্ত্র নয়। ''[[মার্কণ্ডেয় পুরাণ]]'' গ্রন্থের অন্তর্গত ''[[শ্রীশ্রীচণ্ডী|দেবীমাহাত্ম্যম্]]'' অংশে খ্রিস্টীয় ৬ষ্ঠ শতাব্দীতেই মহাশক্তিকে সর্বোচ্চ দৈবসত্ত্বার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।{{Sfn|Collins|1988|p=36}}{{Sfn|Rocher|1986|pp=191-192}} ভারতের [[মথুরা]] ও [[বঙ্গ|বাংলার]] বিভিন্ন অঞ্চলে পুরাতাত্ত্বিক খননকার্য চালিয়ে যে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তার থেকে বোঝা যায় খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দী থেকেই মহাশক্তি উপাসনা প্রচলিত ছিল।{{Sfn|John Stratton Hawley|Donna Marie Wulff|1998|p=2, 9-10, 26 with note 2}}{{Sfn|Cheever Mackenzie Brown|1998|pp=1-4}} শাক্ত সম্প্রদায়ে ''দেবীমাহাত্ম্যম্'' ও ''দেবীভাগবত পুরাণ'' গ্রন্থদুটি বিশেষ প্রভাবশালী। এই দুই গ্রন্থেই দেবীশক্তির শ্রেষ্ঠত্ব ও ভক্তিমূলক শক্তি-উপাসনার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।{{Sfn|Philip Lutgendorf|2003|pp=251-252}}
সমগ্র পুরাণ সাহিত্য ও ''মহাভারত'' গ্রন্থের সঙ্গে এই পুরাণটিও প্রথামতে [[ব্যাস (ঋষি)|ব্যাসের]] রচনা। ‘দেবীভাগবত’ নামটি ‘দেবী’ ও ‘ভাগবত’ শব্দদুটির সংযুক্তির মাধ্যমে সৃষ্ট। এই শব্দবন্ধের অর্থ ‘দেবীশক্তির ভক্ত’। খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দে রচিত বৈদিক সাহিত্যেই ‘দেব’ ও ‘দেবী’ শব্দদুটি পাওয়া যায়। সেখানে ‘দেব’ শব্দটি পুংলিঙ্গ ও ‘দেবী’ শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গ।{{Sfn|Klostermaier|2010|p= 496}} মনিয়ার উইলিয়ামস এই নামদুটির অর্থ করেছেন, “স্বর্গীয়, দিব্য, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পার্থিব সত্ত্বা, গৌরবোজ্জ্বল সত্ত্বা।”{{Sfn|Klostermaier|2010|p=101-102, 492}} ব্যুৎপত্তিগতভাবে সংস্কৃত ‘দেবী’ লাতিন ''dea'' ও গ্রিক ''thea'' শব্দের অনুরূপ।{{Sfn|John Stratton Hawley|Donna Marie Wulff|1998|p=2}} ‘ভাগবত’ শব্দের অর্থ ‘ঈশ্বরের ভক্ত’।{{Sfn|Lochtefeld|2002|p=94}}
== পাদটীকা ==
|