চাকো যুদ্ধ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
অ বট কসমেটিক পরিবর্তন করছে; কোনো সমস্যা? |
বট নিবন্ধ পরিষ্কার করেছে, কোন সমস্যা? |
||
১৬ নং লাইন:
|casualties1=আনুমানিক ৫৭,০০০
|casualties2=আনুমানিক ৪৩,০০০
}}'''চাকো যুদ্ধ''' ([[স্পেনীয় ভাষা|স্পেনীয় ভাষায়]]: Guerra del Chaco) ছিল ১৯৩২ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত বিতর্কিত [[গ্রান চাকো]] অঞ্চলের কর্তৃত্বের উপর [[বলিভিয়া]] ও [[প্যারাগুয়ে|প্যারাগুয়ের]] মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধ। যুদ্ধে উভয় দেশেরই অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
গ্রান চাকো [[আন্দেস পর্বতমালা|আন্দেস পর্বতমালার]] পাদদেশে অবস্থতি একটি বিস্তৃত, কিন্তু অনুর্বর ও বসবাসের অযোগ্য নিম্নভূমি। বলিভিয়া এর আগে [[চিলি|চিলির]] কাছে [[১৮৮৩]] সালে এবং [[ব্রাজিল|ব্রাজিলের]] কাছে [[১৯০৩]] সালে দেশের অংশবিশেষ হারিয়েছিল, তাই পরবর্তীতে যেকোন ধরনের অঞ্চল হারানোর ব্যাপারে বলিভীয়রা ছিল খুবই স্পর্শকাতর। এক অর্থে চাকো যুদ্ধের বীজ বপিত হয়েছিল ১৮৭৯-৪৮ সালের [[প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধ|প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধে]], যাতে চিলি বলিভিয়াকে পরাজিত করে বলিভিয়ার সমগ্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী অঞ্চল দখল করে নেয় এবং বলিভিয়াকে একটি স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্রে পরিণত করে। বলিভিয়া এই অবস্থা থেকে মুক্তি লাভের জন্য [[রিও দে লা প্লাতা]] নদী ব্যবস্থার মাধ্যমে [[আটলান্টিক মহাসাগর|আটলান্টিক মহাসাগরের]] সাথে সংযুক্ত হবার চেষ্টা করতে থাকে। আর এই পথেই গ্রান চাকো নিম্নভূমির অবস্থান। উপরন্তু, আন্দেস পর্বতমালার পাদদেশে গ্রান চাকোর প্রান্তে তেল আবিষ্কৃত হওয়ায় বলিভীয়রা গ্রান চাকো অঞ্চলে বড় ধরনের তেলের মজুদ খুঁজে পাবার ব্যাপারেও আশাবাদী ছিল। তাই তারা গ্রান চাকোর একটি কৌশলগত অবস্থানে একটি দুর্গ নির্মাণ করে, যে জায়গাটি আগে প্যারাগুয়ের দখলে ছিল। এর উত্তরে প্যারাগুয়ের সেনারা আবার জায়গাটি পুনর্দখল করে।
বলিভিয়া প্যারাগুয়ের চেয়ে সামরিক জনবল ও অস্ত্রশস্ত্রে অনেক বেশি উন্নত ছিল। জার্মান জেনারেল হান্স ফন কুন্টের অধীনে তাদের সেনাবাহিনী ছিল সুপ্রশিক্ষিত। বলিভিয়া মার্কিন ব্যাংকগুলি থেকে ঋণ নিয়ে অনেক আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও জোগাড় করে। কিন্তু প্যরাগুয়ানরা নিম্ন জলাভূমি ও জঙ্গল এলাকায় যুদ্ধ করতে বেশি পারদর্শী ছিল, যেখানে অনেক বলিভীয় সেনা সাপের কামড়ে ও বিভিন্ন রোগে, বিশেষত [[ম্যালেরিয়া|ম্যালেরিয়ায়]], ভুগে মারা যায়।
[[১৯২৮]] সালের [[৫ই ডিসেম্বর]] প্যারাগুয়ে অনেকগুলি ছোট ছোট সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটায় এবং এগুলি থেকে দুই দেশের মধ্যে বড় মাত্রার যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। দুই পক্ষই বিতর্কিত অঞ্চলটিতে সেনা মোতায়েন বাড়াতে থাকে এবং দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ [[১৯৩২]] সাল নাগাদ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। ১৯৩২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে গোটা চাকো অঞ্চল জুড়ে প্যারাগুয়ের বিভিন্ন দুর্গকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ চলতে থাকে। [[১৯৩৩]] সালের [[১০ই মে]] প্যারাগুয়ে সরকারীভাবে বলিভিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। জেনারেল [[হোসে এস্তিগার্রিবিয়া|হোসে এস্তিগার্রিবিয়ার]] নেতৃত্বে ১৯৩৪ সালে প্যারাগুয়ানরা তাদের অনেক হারানো দুর্গ পুনর্দখল করতে সক্ষম হয় এবং ১৯৩৫ সালে বলিভিয়ার সীমান্তের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তবে বলিভীয়রা প্রতি-আক্রমণ করে তাদের বাধা দেয়। গ্রান চাকো অঞ্চলটি পূর্ণাঙ্গ আধুনিক যুদ্ধের জন্য মোটেই উপযোগী ছিল না, ফলে দীর্ঘ ৪ বছর ধরে কোন ফল ছাড়াই যুদ্ধ চলে। [[১৯৩৫]] সালের [[১২ই জুন]] দুই পক্ষ যুদ্ধ থামায়। এই যুদ্ধে ৫০ হাজারের মত বলিভীয় এবং ৪০ হাজারের মত প্যারাগুয়ান প্রাণ হারান। যুদ্ধ শেষে [[১৯৩৯]] সালের [[২১শে জুলাই]] [[মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র]], [[ব্রাজিল]], [[আর্জেন্টিনা]], [[উরুগুয়ে]] ও [[চিলি|চিলির]] মধ্যস্থতায় [[চাকো শান্তিচুক্তি|চাকো শান্তিচুক্তিতে]] প্যারাগুয়ে বিতর্কিত উত্তর চাকো (Chaco Boreal ''চাকো বোরেয়াল'') অঞ্চলের তিন-চতুর্থাংশ এলাকা ফিরে পায়। বলিভিয়া [[পারাগুয়াই নদী|পারাগুয়াই নদীতে]] পুয়ের্তো বুশ বন্দরের আশেপাশের অঞ্চলে অধিকার পায়, এবং সেই সাথে দক্ষিণ আটলান্টিক উপকূলেও যাবার সুযোগ পায়। আর্জেন্টিনা ছিল মূল মধ্যস্থতাকারী দেশ। প্যারাগুয়েতে আর্জেন্টিনীয় বিনিয়োগকারীরা এর ফলে অনেক সুযোগ সুবিধা পান।
চাকো যুদ্ধের কয়েক বছর পরে আবিষ্কৃত হয় যে অঞ্চলটিতে খনিজ তেলের কোন মজুদ নেই। চাকো যুদ্ধের সময় বলিভিয়ার অনেক আদিবাসী আমেরিকানদেরকে দিয়ে জোর করে যুদ্ধ করানো হয়, যারা যুদ্ধ করার ব্যাপারে তেমন আগ্রহী ছিল না। যুদ্ধ-পরবর্তী বলিভীয় সমাজব্যবস্থায় এর প্রভাব পড়ে। একই সময় চলছিল অর্থনৈতিক মহামন্দা (the Great Depression)। যুদ্ধকালীন খরচ দরিদ্র দেশ দুইটির অর্থনীতিতে ভয়াবহ ধ্বস নামায়, যার ফল বহু বছর ধরে দেশ দুইটিকে ভোগ করতে হয়।
|