প্রতাপাদিত্য: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
আত্নভিমান (আলোচনা | অবদান)
সংশোধন, সম্প্রসারণ, পরিষ্কারকরণ, রচনাশৈলী, বানান সংশোধন, বিষয়বস্তু যোগ, হালনাগাদ করা হল
Reverted to revision 7111992 by ZI Jony(talk) (mobileUndoβ)
ট্যাগ: পূর্বাবস্থায় ফেরত পুনর্বহালকৃত মোবাইল সম্পাদনা মোবাইল ওয়েব সম্পাদনা উচ্চতর মোবাইল সম্পাদনা দ্ব্যর্থতা নিরসন পাতায় সংযোগ
৪ নং লাইন:
|title = যশোর সম্রাট
|birth_date = ১৫৬১
|birth_place = [[যশোর]], [[বাংলা]], [[ভারতীয় উপমহাদেশ]] (বর্তমান বাংলাদেশ)
|death_date = ১৬১১ (বয়স ৫০)
|death_place = [[বেনারস]], [[মুঘল সাম্রাজ্য|মুঘল ভারত]] (বর্তমানে [[উত্তরপ্রদেশ]], [[ভারত]])
১৩ নং লাইন:
|}}
 
'''মহারাজা প্রতাপাদিত্য রায়''' ({{lang-bn|প্রতাপাদিত্য}}) (১৫৬১–১৬১১ খ্রি) বঙ্গদেশের যশোহর সাম্রাজ্যের নৃপতি, যিনি তৎকালীন মুঘল সাম্রাজ্যসাম্রাজ্যের এবং সর্বপরি চিরকাল পূর্বজদের ন্যায় বাংলাকে দিল্লীর শাসন থেকে মুক্ত করার জন্যবিরুদ্ধে সর্বপ্রথম এক স্বাধীন সাম্রাজ্যের নৃপতি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। মুঘল শাসনাধীন ভারতে প্রথম স্বাধীন "স্বরাজ" এর আদর্শ স্থাপন করেন এই বাঙ্গালী সম্রাট ।<ref name="Ray1929">{{বই উদ্ধৃতি|লেখক=Nagendra Nath Ray|শিরোনাম=Pratapaditya|ইউআরএল=https://books.google.com/books?id=JRsdAAAAMAAJ|বছর=1929|প্রকাশক=B. Bhattacharyya at the Sree Bhagabat Press}}</ref> ষোড়শ শতকের সূচনায় যখন সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে বিস্তার হতে থাকে মুঘল সাম্রাজ্য, সেই অমানিশার ক্রান্তিলগ্নে পূর্ব ভারতে স্বতন্ত্র সনাতনী শাসনের আলোকবর্তিকা প্রজ্জ্বলিত রেখেছিল বাঙ্গালার ৮ টি স্বাধীন হিন্দুরাজ্য। এই রাজ্যসমূহের মধ্যে যশোর রাজ্যের অগ্নিকুলগৌরব রায়শ্রেষ্ঠ মহারাজাধিরাজ প্রতাপাদিত্যের নেতৃত্বে বাঙালিরাহিন্দুর ক্ষমতা ক্রমশ রূপ নেয় , ভারতীয় মুঘল সাম্রাজ্যের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হয়ে সমগ্র বৃহৎবঙ্গে শাসন বিস্তার করে তিনি নির্মাণ করেন অখণ্ড সনাতনী যশোর সাম্রাজ্য । তাঁর অখণ্ড যশোর সাম্রাজ্য কেন্দ্রে ধূমঘাট থেকে শুরু করে পশ্চিমে বিহারের [[পাটনা]], দক্ষিণে উড়িষ্যার [[পুরী]] ও পূর্বে চট্টগ্রামের কাছে [[সন্দ্বীপ]] পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। প্রতাপাদিত্য তার পিতার মৃত্যুর পরে যশোরের সকল সম্পদের একমাত্র উত্তরসূরী হয়েছিলেন।<ref name="ReferenceB">{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.jessore.gov.bd/site/page/492efee0-1c4b-11e7-8f57-286ed488c766/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%80%E0%A6%A8%20%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%20%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF|শিরোনাম=স্বাধীন রাজা প্রতাপাদিত্য|ওয়েবসাইট=www.jessore.gov.bd|ভাষা=en|সংগ্রহের-তারিখ=2019-03-05|আর্কাইভের-তারিখ=২০১৯-০৩-১৮|আর্কাইভের-ইউআরএল=https://web.archive.org/web/20190318013516/http://www.jessore.gov.bd/site/page/492efee0-1c4b-11e7-8f57-286ed488c766/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%80%E0%A6%A8%20%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%20%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF|ইউআরএল-অবস্থা=অকার্যকর}}</ref>
 
== প্রথম জীবন ==
২৩ নং লাইন:
বাল্যকালে প্রতাপ যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। তিনি তরবারী, তীর চালনা ও মল্লযুদ্ধে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। জন্মাবধি সুন্দরবনের সাথে প্রতাপের নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তিনি সুন্দরবনের জঙ্গলে ব্রাঘ্র, হরিণ, গন্ডার (পূর্বে ছিল) প্রভৃতি শিকার করতেন। প্রতাপ বন্ধুবান্ধবসহ অরণ্যে প্রবেশ করে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন। এই সময় বালক প্রতাপের উচ্ছৃঙ্খলতায় বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায় বড়ই বিপদে পড়লেন। অবশেষে উভয়ে পরামর্শ করে স্থির করলেন যে, বিবাহ দিলে প্রতাপের মতির পরিবর্তন হতে পারে। এই জন্য তারা উভয়ে উদ্যোগী হয়ে প্রতাপের বিবাহ দিলেন। ঘটকারিকায় প্রতাপের তিন বিবাহের কথা উল্লেখ আছে। সর্বপ্রথম প্রতাপের বিবাহ হয় পরমকুলীন, জগদানন্দ রায়ের (বসু) কন্যার সাথে। ১৫৭৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতাপ সম্মানিত অব্যল্য জিতামিত্র নাগের কন্যা শরৎকুমারীর সাথে মহাসমারোহে বিবাহ করেছিলেন। এই শরৎকুমারীই তাহার পাটরাণী বা প্রধান মহিষী ছিলেন। প্রতাপের তৃতীয় বিবাহ হয়েছিল প্রতাপের রাজা হবার অনেক পরে। বিবাহ হইল পরমাসুন্দরী, গুণবতী, প্রণয়িনী রূপে স্ত্রী পেলেন, কিন্তু তার ঔদ্ধত্য ও মৃগয়াভিযান কমিল না। বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায় পূনরবার পরামর্শ কেও প্রাতাপকে রাজনৈতিক শিক্ষার জন্য রাজধানী আগ্রায় পাঠায়। উদ্দেশ্য ছিল বাদশাহ আকবরের দরবারে যশোর রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করতে গেলে রাজবাড়ীর উপদ্রব দ্রবীভুত হবে এবং তার অনুপস্থিতিকালে ভ্রাতৃদ্বয় কিছুকাল নিশ্চিন্তে রাজ্য শাসন করতে পারবেন। ১৫৭৮ খ্রিষ্টাব্দের শেষভাগে প্রতাপ সূর্যকান্ত ও শংকরের সহিত রাজা বসন্ত রায়ের পত্র নিয়ে আগ্রার দরবারে উপমীত হন। প্রতাপ পত্র নিয়ে টোডর মল্লের সহিত সাক্ষাৎ করেন এবং তিনিই সুযোগমত প্রতাপকে বাদশাহের সহিত পরিচিত করিয়ে দেন। তিনি বাদশাহ আকবরকে প্রতাপের কথা খুব ভালভাবেই জানালেন। প্রতাপ সেখানে বিশাল ভারত সাম্রাজ্যের পরিচালনার বিষয়, বিভিন্ন বীর, বিশেষ করে রাজপুত বীরদেব কীর্তি কলা সন্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলেন। রাজধানী আগ্রায় তিনি প্রায় তিন বৎসর ছিলেন। ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দে টোডর মল্ল বঙ্গের জায়গীরদার দিগের বিদ্রোহ দমন করার জন্য বঙ্গে আগমন করেন এবং পরবর্তী বৎসর বঙ্গের শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়ে অতি সুন্দরভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। টোডর মল্লের অনুপস্থিতিকালে প্রতাপ কৌশল অবলম্বন করে যশোর রাজ্যের সনদ নিজ হাতে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। প্রতাপ রাজধানীতে থাকার সময় তার পিতা ও পির্তব্য তার কাছে রাজস্ব পাঠাতেন। প্রতাপ দুই তিনবারের টাকা সরকারে জমা না দিয়ে আত্নসাৎ করেন। যথাসময়ে সরকার হতে রাজস্বের অনুসন্ধান করা হলে প্রতাপ বসন্ত রায়ের নামে দোষারোপ করেন। তার দোষে রাজস্ব রাজধানীতে পাঠানো হয় না। বঙ্গে বিদ্রোহের পর এ সংবাদ শুভসূচক বোধ হল না। বিক্রমাদিত্যের হাত হতে যশোর রাজ্য বিচ্যুত করার আদেশ হলে গুনগ্রাহী সম্রাট প্রতাপের প্রতি সুদৃষ্টি করেছিলেন এবং উদীয়মান যুবকের নামে যশোর রাজ্যের দ্বিতীয় সনদ লিখে দিয়েছিলেন। প্রতাপ সঞ্চিত অর্থ থেকে বাকী রাজস্ব পরিশোধ করে দিয়েছিলেন। ১৫৬১ সালে তিনি সিংহাসনে আরোহণ করেন।<ref name="ReferenceA">Bangiya Sabarna Katha Kalishetra Kalikatah by Bhabani Roy Choudhury, Manna Publication. {{ISBN|81-87648-36-8}}</ref> শ্রী হরি তার রাজ্যেকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ৮ ভাগের ৫ ভাগ প্রতাপাদিত্যকে এবং ৮ ভাগের ৩ ভাগ তার ভাই বসন্ত রায়কে প্রদান করেন।
 
বসন্ত রায় ভাই ছিলেন লক্ষীকান্ত (যিনি পরবর্তীকালে লক্ষীকান্ত রায়চৌধুরী নামে পরিচিত হন)।যাকে তিনি প্রতিপালন করেন। তিনি তাকে প্রতাপের সাথে জমিদারি এবং প্রশাসনিক বিষয় শিক্ষা দেন।<ref name="ReferenceA" /> প্রতাপাদিত্য যশোরের প্রশাসনে যোগদান করেন এবং নিজেকে একজন যোগ্য শাসক হিসেবে প্রমাণ করেন। প্রতাপাদিত্যের অভিষেক কালে বারোভুঁইয়াদের অনেকে যশোর গিয়েছিলেন এবং প্রতাপাদিত্যের কাছে বঙ্গের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য একত্রে কাজ করার প্রতিশ্রুতি করেছিলেন। প্রতাপাদিত্য দেখছিলেন যে, সম্রাট আকবর আগ্রার রাজদরবার, রাজনীতি ও রাজপরিবারের আত্মকলহ- এসব বিষয়ে ব্যস্ত রয়েছেন এবং এর ফলে সমগ্র ভারতবর্ষে বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠেছে। এই সুযোগে প্রতাপ সৈন্যগঠন ও সীমান্ত রক্ষার জন্য সৈন্যবাহিনীকে প্রস্তুত করতে শুরু করেন। মূলত আত্মরক্ষা ও আত্মপ্রাধান্য স্থাপন, পাঠানদের পক্ষ সমর্থন, অন্যান্যবঙ্গদেশে হিন্দু রাজাদেরশক্তির থেকে নিজের সাম্রাজ্যকে রক্ষাপুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং মুঘল ছাড়াও মগ ও ফিরিঙ্গি দস্যুদের পাশবিক নির্যাতন থেকে প্রজাদের রক্ষা করার জন্য প্রতাপ চেষ্টা করছিলেন। এই লক্ষ্যেই তিনি নতুন রাজধানী গোছাচ্ছিলেন এবং মুঘলদের বিতাড়নের উপায় নিয়ে বঙ্গের অন্য ভুঁইয়াদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিলেন। ভুঁইয়াদের সবাইমধ্যে কেউ কেউ প্রতাপের এই বিদ্রোহী চেতনার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে।করলেও অনেকেই দূরত্ব বজায় রাখে।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি|ইউআরএল=http://www.bangladesherkhabor.net/History-Heritage/11611|শিরোনাম=রাজা প্রতাপাদিত্য|ওয়েবসাইট=Bangladesher Khabor|ভাষা=bn|সংগ্রহের-তারিখ=2019-03-03}}</ref> প্রতাপ রাজ্যের অধীশ্বর হবার পর রাজধানী স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেন। ১৫৮৩ সালে রাজা বিক্রমাদিত্যের মৃত্যুর পর যশোর নগরের ৮/১০ মাইল দক্ষিণে যমুনা নদী ও ইছামতী নদীর সংগম স্থলে সুন্দরবন ঘেষে ধুমঘাট নামক স্থানে এক নতুন নগরী প্রতিষ্ঠা করেন। তথায় প্রতাপাদিত্যের রাজাভিষেক সম্পন্ন হয়। ধুমঘাটের ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে তীরকাটি জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত। ধুমঘাটের দুর্গ নির্মাণের প্রধান ভার ছিল পাঠান সেনাপতি কমল খোজার উপর। প্রবাদ আছে যে, প্রতাপের রাজ্যভিষেক উৎসবে এক কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।রাজ্য বিভাজনের পরও বসন্ত রায় অনেক দিন রাজ্যের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন।<br />
বাংলার বার ভূঁইয়াদের অন্যতম প্রতাপাদিত্য সিংহাসনে আহরণ করেই সৈন্যবল বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করেন। সুচতুর প্রতাপ প্রথম থেকেই মোঘলদের সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে চলতে থাকেন। তিনি মোঘলদের আহ্বানে সামন্তরাজ হিসাবে কয়েকবার যুদ্ধযাত্রা করেছিলেন। তিনি মোঘলদের সাথে যেসব যুদ্ধযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তার মধ্যে মানসিংহের সাথে উড়িষ্যা অভিযান উল্লেখযোগ্য। উড়িষ্যা থেকে তিনি গোবিন্দ দেব বিগ্রহ এবং উৎকলেস্বর থেকে শিব লিংগ এনে গোপালপুর ও বেদকাশী নামক স্থানে স্থাপন করেন।
 
৩৮ নং লাইন:
== জলদস্যু দমন ==
 
মহারাজা প্রতাপাদিত্য রাজদন্ড গ্রহণ করে বঙ্গোপসাগরের উপকূল ভাগে মগ ও পর্তূগীজ জলদস্যুদের অত্যাচার দমনে মনোনিবেশ করেন। মগ ও ফিরিংদের অত্যাচারে ভারতের ভূস্বর্গ বঙ্গ দেশে অরাজকতার সৃষ্টি হল। মগেরা কোন শাসন মানত না। মগেরা যে মুল্লুকে যেত সে এলাকাকে একেবারে ধ্বংস করে ছাড়ত। তৎকালে দক্ষিণ বঙ্গ জলদস্যুদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। তারা এদেশের নারী পুরুষ ধরে নিয়ে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করতো। বন্দীদেরকে হাতের তালুতে ছিদ্র করে সরু বেত ঢুকিয়ে হালি করে জাহাজের পাটাতনের নিচে বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হতো। ভাগীরথী থেকে সুদুর চট্টগ্রাম পর্যন্ত তারা এরুপ উপদ্রব চালাত। এসব জলদস্যুদের হার্মাদ বলা হত। প্রতাপাদিত্য এদের বশীভূত করেন। অনেকেই তার সেনাবাহিনীতে যোগদান করেছিল।
 
 
== সামরিক অভিযান ==
৭০ ⟶ ৬৯ নং লাইন:
== হিজলির যুদ্ধ ও উড়িষ্যা বিজয় ==
 
১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দে কাররানী আফগানরা উড়িষ্যা জয় করে ও পুরী অঞ্চলে তাদের ডেরা বানায় । ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে রাজমহলের যুদ্ধে মুঘলদের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর বিহারের কাররানী আফগানরা সিপাহসালার কাতলু খানের সাথে উড়িষ্যায় পালিয়ে যায় ও স্বাধীন আফগান রাজ্য '''সালতানাত-এ-উড়িষ্যাহ''' (سلطانا به اودیشا) প্রতিষ্ঠা করে । বলা বাহুল্য এই আফগান শাসনে উড়িষ্যাবাসী হিন্দুদিগের শোচনীয় অবস্থা হয়েছিল । ইতঃপূর্বে পাঠানদের দ্বারা [[পুরী]] [[জগন্নাথ মন্দির]] ও বিগ্রহ বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এখন পাঠান সুলতানের হুকুমে মুশরিকদের ইবাদতস্থান এই জগন্নাথ মন্দির পুরোপুরিভাবে বন্ধ ও বার্ষিক জগন্নাথ [[রথযাত্রা]]র ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়
 
এই কঠিন অবস্থায় পুরী মন্দিরের একজন রক্ষক বিজয়রাম ভঞ্জ বাঙ্গালার স্বাধীন রাজ্যহিন্দুরাজ্য যশোরে আসেন ও মহারাজের কাছে জগন্নাথ মন্দিরের দুর্দশার কথা সবিস্তারে বর্ণনা করেন ।এই প্রতিবেশী স্বধর্মীয়দিগের ওপর এই অত্যাচারের সংবাদে মহারাজ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন, শ্রীক্ষেত্র জগন্নাথ মন্দির দখলের পুনরুদ্ধারের জন্য তিনি ১৫৮৯ খ্রিস্টাব্দে উড়িষ্যা আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেন। আষাঢ়’র শুরুতেই উড়িষ্যা আক্রমনের জন্য নৌবাহিনী সঞ্চালন শুরু হতে থাকে, নৌসেনাপতি সূর্যকান্ত গুহরায় ও মদনমোহন মল্ল মিলে কোষা, মাচোয়া, বেপারি, জালিয়া ও সর্বাধিক বিধ্বংসক ঘুরাব ইত্যাদি বিভিন্ন দুর্দম বঙ্গদেশীয় নৌকাবাহিনী সজ্জিত করে উড়িষ্যার দিকে অগ্রসর হতে থাকেন ।
 
এসময় উড়িষ্যায় শাসন করতেন ‘মসনদ-এ-আলা’ (علا در مسند) ঈশা খান লোহানী, যিনি মূর্তিপূজকদের প্রজাবৎসল হিসেবেওপর অত্যাচারের জন্য অত্যন্ত সুখ্যা্তি কুখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন । যশোরের রাজার আক্রমনের খবর শুনে ঈশা খান উড়িষ্যার উত্তর সীমান্তে হিজলি বন্দরে সেনা সাজিয়ে রাখেন। আষাঢ়’র এক বৃষ্টিমুখর দিনে হিজলিতে ঈশা খানের সাথে মহারাজ প্রতাপাদিত্যের সম্মুখ সাক্ষাৎ হয় । সুবর্ণরেখা নদীর পশ্চিম তীরে পাঠান সেনার সাথে যশোর সেনার এক বিধ্বংসী নৌযুদ্ধ হয় । অপরাহ্নের সাথেই মহারাজ প্রতাপাদিত্য ঈশা খান কে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত করেন ও ঈশা খান যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণত্যাগ করে ।
 
বিজয়ী রায়শ্রেষ্ঠ প্রতাপাদিত্য পুরীক্ষেত্রে প্রবেশ করেন ও দীর্ঘ ১৪ বছরের অচলাবস্থার পর পুনরায় জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদঘাটন ও নিত্যপূজাচর্চার সূচনা হয় । পুরীতে মহারাজ প্রতাপাদিত্যের প্রত্যক্ষ শাসন স্থাপিত হয় ও উড়িষ্যা সালতানাত যশোর রাজ্যের অধীনে একটি সামন্তরাজ্যে পরিণত হয়, উড়িষ্যার শাহজাদা জামাল খান ও সিপাহসালার কামাল খান যশোর সেনায় সেনাপতিরূপে যোগদান করে ।<ref>"Pratapaditya"- Nikhilnath Roy. P- 50</ref><ref>"Raja Pratapaditya Charitra, RR Basu, P-59</ref>
 
উড়িষ্যা জয়ের স্মারক হিসেবে পিতৃব্য বসন্তনারায়ণ রায়ের অনুরোধে প্রতাপাদিত্যে পুরী থেকে উৎকলেশ্বর শিবলিঙ্গ ও গোবিন্দদেব বিগ্রহ আনয়ন করেন । যশোরের গোপালপুরে গোবিন্দদেব মূর্তি প্রতিষ্ঠা হয় ও বসন্ত রায়ের উদ্যোগে বেদকাশীতে মন্দির নির্মাণ করে উৎকলেশ্বর মূর্তি স্থাপিত হয় । বেদকাশীস্থিত উৎকলেশ্বর শিবমন্দিরের শিলালিপিতে উল্লিখিত রয়েছে –
৮৪ ⟶ ৮৩ নং লাইন:
== সাতগাহের যুদ্ধ ==
 
উড়িষ্যায় পাঠানদের পরাজিত করার পর মহারাজ প্রতাপাদিত্যের আত্মবিশ্বাস ও সাম্রাজ্য বিস্তারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরো বেড়ে যায়, উপরন্তু ভারতীয়দেরভারত বরাবরইথেকে বাঙালাবিধর্মীয় দখলেরশাসকদের আকাঙ্খারউচ্ছেদ বিরুদ্ধেঘটিয়ে তারস্বতন্ত্র প্রতিশোধধর্মরাজ্য নেওয়ারপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন জীবিতপুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠে । সেহেতুঅতঃপর তাঁর দৃষ্টি স্থিত হয় পশ্চিমের মুঘল সাম্রাজ্যের দিকে । ভারতবর্ষকে তিনি মুঘল শাসনের কারাগার থেকে মুক্ত করার জন্য দৃঢ়সংকল্প হন ।
 
পূর্ব ভারতে মুঘলদের বাণিজ্যের অন্যতম অর্থকরী কেন্দ্র ছিল সাতগাহ নৌবন্দর । প্রতাপাদিত্য এই বন্দর দখল করে মুঘলদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার সিদ্ধান্ত নেন, উপরন্তু সাতগাহর মতো ঐশ্চর্যশালী বন্দর যশোর রাজ্যের সমৃদ্ধির কারন হবে । সুতরাং ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে ৬৪ দাঁড়বিশিষ্ট ১০০টি ঘুরাব যুদ্ধনৌকা সহযোগে ও [[পর্তুগিজ]] সেনাপতি ফ্রান্সিসকো রডার বিধ্বংসী কামানবাহিনীর সাথে প্রতাপাদিত্য সাতগাহ আক্রমণ করেন ।
 
সাতগাহের মুঘল নবাব এই অতর্কিত আক্রমনের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না । [[হুগলি নদী]]র পশ্চিম তীরে মুঘল সেনা যশোর সৈন্যবাহিনীকে বাধা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়, কিন্তু যশোরের দুর্মদ ঘুরাব নৌবাহিনীর আক্রমণ ও অগণিত গোলাবর্ষণে সকল ভারতীয় মুঘলদের সলিলসমাধি ঘটে । প্রতাপাদিত্য সাতগাহ বিজয় করে এটিকে যশোর সাম্রাজ্যের প্রধান বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ।<ref>Ray, Nikhil Nath, Pratapaditya</ref>
 
== রায়গড় এর যুদ্ধ ==
 
বঙ্গাধিপ প্রতাপাদিত্যের সাম্রাজ্যের গৌরব দিন দিন সমগ্র দখলদার ভারতবর্ষে বিস্তৃত হচ্ছিল। সাতগাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হারানো ছিল ভারতীয় মুঘল সাম্রাজ্যের কাছে এক বিশাল ক্ষতি । অতঃপর মুঘল বাদশাহ [[আকবর]] প্রতাপের ক্ষমতা নির্মূল করিবার জন্য আজিম খাঁ নামক অপর এক সিপাহসালারকে বহু রণনিপুণ সেনা সমভিব্যাহারে বাঙ্গালা আক্রমণে প্রেরণ করেন। আজিম নির্বিঘ্নে [[পাটনা]] ও [[রাজমহল]] অতিক্রম করিয়া আসিলেন, প্রতাপের পূর্ব নির্দেশমতে কেউ তাকে বাধা দিল না । পরিস্থিতি শান্ত বিবেচনা করে সিপাহসালার আজিম খান রায়গড়ের কাছে বাঙ্গালার শ্যামল প্রান্তরে শিবির খাটিয়ে নিরুদ্বেগে বিশ্রাম সুখ উপভোগ করতে থাকেন।
 
{{quote|“সংবাদমশিবং শ্ৰুত্বা আকব্বরমহীপতিঃ । প্রেষয়ামাস সেনান্যমাজিমখানসংজ্ঞকং ॥ বিংশসহস্র সৈন্যানি ঘাতয়িত্বা ক্ষণং তদা । আজিমং পাতয়ামাস তীব্রাঘাতেন ভূতলে”}}
১০২ ⟶ ১০১ নং লাইন:
== রাজমহলের যুদ্ধ ==
 
রায়গড় যুদ্ধে বিজয়ের ফলে মহারাজ প্রতাপাদিত্যের সামরিক আধিপত্য বাঙালার বাহিরে সমগ্র ভারতেভারতবর্ষে প্রচারিত হয়ে পরে, সমগ্র উপমহাদেশে রাষ্ট্র হয়ে যায় যে সমগ্র [[হিন্দুস্তান]]কে দাপটের মধ্যে রাখা মুঘল বাদশাহ বাঙ্গালার নৃপতির কাছে একের পর এক যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হচ্ছে । এদিকে বন্দি ২০০০০ মুঘল সেনাও যশোর বাহিনীতে যোগদান করে সাম্রাজ্যের শক্তিবৃদ্ধি করে ।
 
এহেন অবস্থায় তিনি পূর্ব ভারতের মুঘল রাজধানী [[রাজমহল]] আক্রমনের সিদ্ধান্ত নেন । আসন্ন যুদ্ধের জন্য কূটনৈতিক পরিকল্পনা শুরু করেন বীর সেনাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী । ৫০০০ অশ্বারোহী বাহিনী সুসংযত করেন সেনাপতি প্রতাপসিংহ দত্ত, এদিকে সেনাপতি কালীদাস ঢালী ২০০০০ ঢালী বাহিনী নির্মাণ করেন ।
১৩৯ ⟶ ১৩৮ নং লাইন:
== খাগারঘাটের যুদ্ধ ==
 
প্রতাপাদিত্য দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। এবারের যুদ্ধক্ষেত্র খাগড়াঘাট খাল এবং যমুনার সংগম স্থান। জনুয়ারি, ১৬১২ সালে ভারতীয় মুঘল বাহিনী যশোর বাহিনীকে আক্রমণ করে এবং তাদের দুর্গের অভ্যন্তরে অবস্থান নিতে বাধ্য করে। যশোর বাহিনীর বিপুল গোলাবর্ষণের মাধ্যমে মুঘল বাহিনীর অগ্রসরকে বাধা দেয়। কিন্তু এক অতর্কিত আক্রমণে মোগলবাহিনী দুর্গ দখল করে নেয়। প্রতাপাদিত্য বাধ্য হয়ে দুর্গের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে যান।<ref name=":0" /> দ্বিতীয়বারের মতো পরাজয়ের পর প্রতাপাদিত্যের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। রাজা মান সিং লক্ষ্মীকান্ত কে সিংহাসনে বসার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।<ref name="DurgaDarshan" /> ভবানন্দ মজুমদার নামে প্রতাপাদিত্যের এক কর্মচারীকে সিংহাসনে বসানো হয়। পরবর্তীকালে তিনি নদীয়া রাজপরিবারের পত্তন করেন।<ref name="Bhattacharya1896">{{বই উদ্ধৃতি |শেষাংশ=Bhattacharya |প্রথমাংশ=Jogendra Nath |তারিখ=1896 |শিরোনাম=Hindu Castes and Sects |ইউআরএল=https://archive.org/stream/hinducastesands00bhatgoog/hinducastesands00bhatgoog_djvu.txt |অবস্থান=Calcutta |প্রকাশক=Thacker, Spink and Co. |সংগ্রহের-তারিখ=6 February 2015}}</ref>
 
== প্রতাপাদিত্যের উড়িষ্যা বিজয় ==
১৭৬ ⟶ ১৭৫ নং লাইন:
=== কাশীতে চৌষট্টি ঘাট নির্মাণ ===
 
সমগ্র বাঙ্গালা বিহার ও উড়িষ্যা একত্রে বৃহৎবঙ্গজুড়ে রায়শ্রেষ্ঠ প্রতাপাদিত্যের যশোর সাম্রাজ্যের বিস্তার হয় । সমগ্র পূর্বভারতে বাঙালা হিন্দু সাম্রাজ্যের গৌরবের মঙ্গলময় শঙ্খধ্বনি বেজে ওঠে। বিহার জয়ের স্মারক হিসেবে সেনাপতি শঙ্কর চক্রবর্ত্তী মিথিলার [[দ্বারভাঙ্গা]] প্রদেশের হায়াঘাটে জগজ্জননী ভগবতী মন্দির স্থাপন করেন । মহারাজ প্রতাপাদিত্য পূণ্যক্ষেত্র কাশীধামে নির্মাণ করেন বিখ্যাত চৌষট্টি ঘাট ও চৌষট্টি যোগিনী কালীমন্দির ।
 
== সামরিক বাহিনী ==
২০৮ ⟶ ২০৭ নং লাইন:
=== নৌবাহিনী ===
 
প্রতাপাদিত্যের নৌবাহিনী তৎকালীন ভারতের সবচেয়ে বড় নৌবাহিনী ছিল । তাঁর নৌবাহিনী এতই শক্তিশালী ছিল যে তিনি ভারতদেশীয় মুঘলদের সম্মুখ নৌযুদ্ধের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেছিলেন:
 
{{quote|"খরার দেশের সেনা, এবার জলার দেশে আয়"}}
২১৭ ⟶ ২১৬ নং লাইন:
== মৃত্যু ==
 
খাগড়াঘাট যুদ্ধের পর মুঘলরা এক সন্ধি প্রস্তাব করে। মুঘলরা এই বিপুল যুদ্ধে জয়লাভ করলেও উভয় পক্ষের সেনারা ক্লান্ত এবং অবসন্ন ছিল। চুক্তিতে প্রতাপাদিত্যের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।<ref name=":4" /> প্রতাপাদিত্য গিয়াস খানের নিকট পরাজিত হবার পর তাকে শৃঙ্খলিত করে গিয়াস খান নিজে ইসলাম খানের দরবারে হাজির করেন। ঢাকায় তাকে আটক করে রাখা হয়।<ref name=":0" /> প্রতাপাদিত্যের জীবনের শেষ দিনগুলি সম্পর্কে খুব ভালো কোনো প্রামাণ্য দলিল পাওয়া যায়নি। কিছু মুঘল দলিলে পাওয়া যায় যে তাকে বন্দি অবস্থায় দিল্লি নেয়ার পথে তিনি বেনারস থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বাংলায় ফেরার পথে তিনি মারা যান।<ref name=":0" /> তেজস্বিতা, ধর্মনিষ্ঠা ও স্বাধীনতা স্থাপনের চেষ্টা প্রতাপকে এ অঞ্চলের লোকদের নিকটই শুধু নয়, সমগ্র বাঙালারভারতবর্ষের মানুষের কাছে অমর করে রেখেছে।
 
গুরম্নদেব রামদাস স্বামী তাই লিখেছেন-