বিভাবতী বসু

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রদূত এবং শরৎচন্দ্র বসুর সহধর্মিণী

বিভাবতী বসু একজন গান্ধীবাদী সমাজকর্মী ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম সহায়ককারী মহিলা কর্মী ছিলেন। তিনি দেশনেতা ও ব্যারিস্টার শরৎচন্দ্র বসুর সহধর্মিণী।[১]

কৃতিত্ব সম্পাদনা

১৮৯৬ সালে কলকাতায় জন্ম হয় বিভাবতী বসুর। পিতা অক্ষয়কুমার দে বিশ্বাস ও মাতার নাম সুবালা। উনিশ শতকের প্রখ্যাত বাগ্মী শ্যামাচরণ দে ছিলেন অক্ষয়কুমারের জ্যাঠামশাই। দে বিশ্বাস পরিবার ছিল উত্তর কলকাতার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবার। তাঁদের পৈতৃক গৃহ ছিল কলেজ ষ্ট্রীটে। সে বাড়িতে সে সময়ের বহু গণ্যমান্য ব্যক্তির নিত্য আসা যাওয়া থাকত। বিভাবতীর এক খুড়তুতো ভাই হলেন প্রখ্যাত কবি ও অধ্যাপক বিষ্ণু দে। ১৯০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর কটক নিবাসী জানকীনাথ ও প্রভাবতী বসুর দ্বিতীয় পুত্র শরৎচন্দ্র বসুর সঙ্গে বিভাবতীর বিবাহ হয়। এ বিবাহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের আট সন্তান- চার পুত্র ও চার কন্যা। সুভাষচন্দ্র তাকে মেজোবৌদি বলে সম্বোধন করতেন। কলকাতার বাইরে গেলেই প্রিয় মেজবৌদিকে পত্র লিখতেন সুভাষচন্দ্র। সেসব সারাজীবন আগলে রেখেছিলেন তিনি। বিভাবতী গান্ধীবাদী আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯২১ খৃষ্টাব্দে গান্ধীজির বিদেশী দ্রব্য বর্জন আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। চরকা কেটে, খদ্দরের কাপড় তৈরি করে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করতেন। তার স্বামী শরৎ বসু ও দেবর নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর বহু গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় রাজনৈতিক কাজের সাথী ছিলেন তিনি। বাড়ির পুরুষদের অনুপস্থিতিতে পুলিশ তাদের উডবার্ন রোডের বাড়ি তল্লাশি কর‍তে এলে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন। ১৯৩৪ সালে অসুস্থ সুভাষচন্দ্রকে সরকার বিদেশে পাঠাবার ব্যবস্থা করলে তিনিই সমস্ত ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৪১ সালে নেতাজী অন্তর্ধানে যাওয়ার ব্যাপারেও যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৪১ এ শরৎচন্দ্র বসু গ্রেফতার হলেন। তাঁকে সুদূর দক্ষিণ ভারতে কুনুরে শৈল শহরে পাঠিয়ে দিল ব্রিটিশ সরকার। বহুকাল পরিবারকে জানানোও হয়নি শরৎচন্দ্রের ভৌগোলিক অবস্থান। উডবার্ন পার্কের বাড়ির উপর ছিল কড়া পুলিশি নজর। ১৯৪৫ এ শরৎচন্দ্র মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত তাঁকে অনেক কষ্টে সন্তানদের নিয়ে কয়েক বছর কাটাতে হয়েছিল। ১৯৪৮ ও '৪৯ সালে শরৎচন্দ্রের সঙ্গে তিনি ইউরোপের বেশ কিছু দেশ ভ্রমণ করেন। ভ্রমণ করেন মিশরেও। বসু পরিবারের মহিলা সদস্যাদের মধ্যে ভিয়েনা ভ্রমণ কালে তিনিই প্রথম, সুভাষ পত্নী এমিলিয়ে শেংকেল ও কন্যা অনিতাকে বসু পরিবারের মধ্যে গভীর আন্তরিকতার সঙ্গে বরণ করে নেন। ১৯৫০ সালে স্বামী শরৎচন্দ্রের মৃত্যুর পর প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িত হন।[২] কিছুকাল পশ্চিমঙ্গ বিধান সভার সদস্যা ছিলেন। তাঁর কনিষ্ঠা কন্যা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডঃ চিত্রা ঘোষ মা বিভাবতী বসুর জীবনের উপর Mother of My Heart: The Story of Bivabati Bose (Thema publishers) বইটি রচনা করেন।

মৃত্যু সম্পাদনা

২৩ জুন, ১৯৫৪ সালে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় পরলোক গমন করেন বিভাবতী বসু। তার স্মৃতিতে কলকাতার উডবার্ন পার্কের নতুন নামকরণ করা হয় বিভাবতী সরণি।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Sarat Bose"myheritage.com। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৭ 
  2. দ্বিতীয় খন্ড, অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০৪)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ২১৯–২২০। 
  3. কলকাতা পুরশ্রী। কলকাতা: কলকাতা পৌরসংস্থা। ২০ জুন, ২০০৯। পৃষ্ঠা ৭।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)