বিন্টুরং
বিন্টুরং (ইংরেজি: Binturong, বৈজ্ঞানিক নাম: Arctictis binturong) একটি বৃহদাকৃতির দূষ্প্রাপ্য ও ভিভারিডি পরিবারভূক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঘন বনাঞ্চলের বৃক্ষে এদের আবাসস্থল। এছাড়াও, বিন্টুরংকে প্রায়শঃই "বিয়ারক্যাট" বা ভালুকবিড়াল বলা হয়। কারণ এ প্রাণীটি ভাল্লুক এবং বিড়াল- উভয়ের মত দেখতে।[২] বিন্টুরংকে এশিয়ান বিয়ারক্যাট, পলয়ান বিয়ারক্যাট নামেও অভিহিত হয়ে থাকে। একমাত্র সদস্য হিসেবে এ প্রজাতির প্রাণী বর্তমান রয়েছে। বিন্টুরং ভল্লুক নয় এবং প্রকৃত নামের অর্থ হারিয়ে গেছে।[৩]
ভাল্লুকবিড়াল | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | Mammalia |
বর্গ: | কার্নিভরা |
পরিবার: | Viverridae |
উপপরিবার: | Paradoxurinae |
গণ: | Arctictis Temminck, 1824 |
প্রজাতি: | A. binturong |
দ্বিপদী নাম | |
Arctictis binturong (Raffles, 1821) | |
Binturong range |
বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৪]
আবাসস্থল
সম্পাদনাবর্ষণসিক্ত বনের বন্য পরিবেশ এদের আবাসস্থল। বাংলাদেশ, ভুটান, কম্বোডিয়া, গণচীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে বিন্টুরং প্রাণীটিকে দেখা যায়।[৫]
বৈশিষ্ট্যাবলী
সম্পাদনাবিন্টুরংয়ের ঘন ও কালো রঙের লোম রয়েছে। বাঁকানো, লম্বা লেজ এবং মুখে লম্বাটে ও সাদা রঙের লোম আছে। তারা হাতের বিকল্প হিসেবে লেজ ব্যবহার করে কোন কিছুকে আঁকড়িয়ে ধরে। ছোট্ট শাবকগুলো কখনও কখনও তাদের লেজ দিয়ে গাছে ঝুলে থাকতে পারে। এগুলো লম্বায় প্রায় ৫ ফুট (১.৫ মিটার) পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এদের ওজন প্রায় ৩০ কেজির মতোন হয়ে থাকে। অন্যান্য কয়েক প্রজাতির প্রাণীর ন্যায় বিন্টুরং গন্ধ শুঁকে অন্যান্য বিন্টুরংয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। এদের জীবনকাল প্রায় ৩০ বছরের মতো হয়ে থাকে।
বিন্টুরং ফল খেতে ভালবাসে। এছাড়াও, ছোট ছোট প্রাণীকে গন্ধ শুঁকে অনুসরণের মাধ্যমে শিকার করে জীবনধারণ করে। রাতে তারা খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। বলাবাহুল্য যে এ প্রজাতির প্রাণী নিশাচরজাতীয়।
স্বভাব
সম্পাদনাবিন্টুরং বেশ লাজুক এবং আড়ালে আবডালে থাকতে ভালবাসে। গহীন বনের গাছের খোঁড়ল, ডাল-পালা ও পাতার মধ্যে খুব সহজেই এরা মিশে থাকতে পারে। প্রধানত বৃক্ষচর হলেও মাটিতে স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারে। লেজের ডগা আংটার মত বাঁকা বলে খুব সহজে ডালে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে। দিনের বেশিরভাগ সময় লেজ আর মাথা পেটের দিকে গুটিয়ে গুটিশুটি মেরে পড়ে থাকে। দিনের বেলা কদাচিৎ ডাকে। তাছাড়া এরা ডাল থেকে ডালে লাফ দিতে পারে এবং ভূমিতেও লাফ দেয়।
বংশবিস্তার
সম্পাদনাস্ত্রীজাতীয় বিন্টুরংয় গড়পড়তা ৮১ দিনে গর্ভধারণের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করে। তবে, ৯১ দিন পর্যন্ত এটি গর্ভধারণ করতে পারে।[৬] প্রায় শতাধিক স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রাণীদের অন্যতম হিসেবে এটি বাচ্চাপ্রসবের জন্যে বিলম্ব ঘটাতে পারে। এ বিলম্ব মূলতঃ উপযুক্ত পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। সচরাচর ২টি বাচ্চা প্রসব করলেও মাঝে মাঝে ৬টি বাচ্চা প্রসব করতে পারে। জৈবিক চাহিদার সক্ষমতা অর্জনের জন্যে প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রীজাতীয় বিন্টুরংয়ের ৩০.৪ মাস এবং পুংলিঙ্গধারী বিন্টুরংয়ের ২৭.০ মাস সময়ের প্রয়োজন। যৌন সক্ষমতা ১৫ বছর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।[৬]
এ পর্যন্ত ৬টি প্রজাতি শনাক্ত করা গেছে।[৫] সেগুলো হলো -
- A. b. albifrons
- A. b. binturong
- A. b. kerkhoveni
- A. b. memglaensis
- A. b. penicillatus
- A. b. whitei - পলয়ান বিন্টুরং
তন্মধ্যে - আবাসস্থলের ব্যাপক প্রতিকূলতা ও ধ্বংসযজ্ঞ এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রয়োগ হবার প্রেক্ষাপটে পলয়ান বিন্টুরং সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছেছে। এছাড়াও, এটির লোম এবং পোষা প্রাণী হিসেবে ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধিও এর প্রধান কারণ।[৭]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Mustelid Specialist Group (2008). Arctictis binturong. 2008 IUCN Red List of Threatened Species. IUCN 2008. Retrieved on 2008-10-15.
- ↑ Mustelid Specialist Group (2008). Arctictis binturong. 2008 IUCN Red List of Threatened Species. IUCN 2008. Retrieved on 2008-10-15[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Mammals: Binturong"। Zoological Society of San Diego। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১৭।
- ↑ বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০, ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা-১১৮৪৯৬
- ↑ ক খ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;msw3
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ ক খ Wemmer, Chris; James Murtaugh (May, 1981). "Copulatory Behavior and Reproduction in the Binturong, Arctictis binturong". Journal of Mammalogy (American Society of Mammalogists) 62 (2): 342–352
- ↑ Widmann, P., De Leon, J. & Duckworth, J.W. (2008)। "Arctictis binturong ssp. whitei"। বিপদগ্রস্ত প্রজাতির আইইউসিএন লাল তালিকা। সংস্করণ 2010.4। প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন। সংগ্রহের তারিখ June 09 2011। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)