বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়
বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় (১৯০৪ - ১৯৮০) একজন ভারতীয় শিল্পী। তিনি কলকাতার বেহালায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন।
বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায় | |
---|---|
![]() | |
জন্ম | ৭ই ফেব্রুয়ারি, ১৯০৪ |
মৃত্যু | ১১ই নভেম্বর, ১৯৮০(৭৬ বছর) ভারত |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
পরিচিতির কারণ | চিত্রশিল্পী |
আন্দোলন | প্রাসঙ্গিক আধুনিকতা |
জন্ম ও শিক্ষা জীবনসম্পাদনা
বিনোদ বিহারীর জন্ম কলকাতার বেহালায়। অবশ্য আদি বাড়ি ছিল হুগলির গরলগাছায়। পিতা বিপিন বিহারী মুখোপাধ্যায়। মায়ের নাম অপর্ণা। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে বিনোদ বিহারী ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ । পরিবারের অন্য সদস্যরা ছিলেন - ব্রজবিহারী (বড়দা), বিমানবিহারী (ছোড়দা), বনবিহারী (মেজদা), বঙ্কুবিহারী (সেজদা), বিজনবিহারী (ন’দা) । একমাত্র বোন শৈল। বাড়ির পরিবেশ ছিল উদার, সংস্কারমুক্ত, প্রগতিবাদী । রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন পরিবারের সবাই। চোখের গভীর সমস্যা নিয়ে জন্মেছিলেন। এক চোখে ছিল ক্ষীন দৃষ্টিশক্তি আর অন্য চোখে কিছুই দেখতে পেতেন না। । শৈশবে বিনোদ বিহারীর শারীরিক দুর্বলতা, জীবন-সংশয়ের ভয় গ্রাস করছিল গোটা পরিবারকে। ডাক্তারের পরামর্শে ছোট্ট বিনোদের খাওয়াদাওয়া, চলাফেরা ছিল নিয়ন্ত্রিত। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এলেও তিনি ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির শিকার হয়েছিলেন। সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল, মডার্ন ইনস্টিটিউশন, ব্রাহ্ম বয়েজ-এর মতো স্কুলে ভর্তি হলেও বেশি দিন টিকে থাকেননি। পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার সুযোগও পাননি। ইংরেজি, বাংলা শেখা শুরু বাড়িতে। বই পেলেই পড়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু ইংরেজ ডাক্তার মেনার্ড সাহেব চোখ পরীক্ষা করে নিদান দিলেন, লেখাপড়া করলে চোখের যেটুকু আছে, তাও থাকবে না। সুতরাং, চোখের সমস্যা ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে বিনোদবিহারীকে স্কুলের নিয়ম থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল। বিকেল হলে মাঠে খেলতে যাওয়ার বদলে বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। পড়াশোনার বদলে কেবল ছবি আঁকাই ছিল তার কাজ। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে পড়তে যান। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে কলাভবনে ভর্তি হন। অবনীন্দ্রনাথ ও নন্দলাল বসুর প্রিয় শিষ্য ছিলেন বিনোদ বিহারী। রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মনীন্দ্রভূষণ গুপ্ত, রামকিঙ্কর বেইজ প্রমুখেরা বিনোদ বিহারীর সমসাময়িক ছিলেন ।
কর্মজীবন ও শিল্পকলায় দক্ষতাসম্পাদনা
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কলাভবনের শিক্ষক এবং সেই সঙ্গে এখানকার ছোটো মিউজিয়ামের কিউরেটর ও লাইব্রেরিয়ান হন। টেমপেরা তার প্রিয় মাধ্যম হলেও তেল রং ও ম্যুরালেও দক্ষতা ছিল।
১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতন বাসের এই পর্বে বিনোদবিহারী এক দিকে যেমন ছাত্রী লীলা মনসুখানিকে বিয়ে করেছেন, তেমনই শান্তিনিকেতনের বিদ্যালয় জীবন ও তার চার দিক নিয়ে তার সেরা ছবিগুলি এঁকেছেন। সন্তোষালয়, শান্তিনিকেতন বাড়ি, কলাভবনের ছাত্রাবাস, পুরনো অতিথিশালা, চীন ও হিন্দিভবনে এমন সব ভিত্তিচিত্র (মুরাল) সৃষ্টি করেছেন, যা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হিসেবে গণ্য হয়। এর মধ্যেই ১৯৩৭ - ৩৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি জাপান ভ্রমণ করেন। ভারতীয় শিল্পকলায় জাপানি ভাবধারা আনয়নে বিনোদ বিহারী পথিকৃৎ । তার শিল্পপ্রতিভার কিছু নিদর্শন আছে শান্তিনিকেতনের কলাভবনে ও হিন্দিভবনের ফ্রেস্কোগুলিতে (frescoes)। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে কলাভবন ছেড়ে নেপাল সরকারের অনুরোধে ওই দেশের শিক্ষা বিভাগের উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে কাঠমান্ডু যান। সেখানকার সরকারি মিউজিয়ামের কিউরেটর ও ছিলেন তিনি । পরে ১৯৫১ - ৫২ খ্রিস্টাব্দে মুহূর্তে একটি শিল্পশিক্ষাকেন্দ্র ও শিশুশিক্ষা নিকেতন গড়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে চোখের ছানি কাটাতে গিয়ে চিকিৎসা বিভ্রাটের কারণে সম্পূর্ণভাবে অন্ধ হয়ে যান। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে আবার কলাভবনে ফিরে আসেন। এখানে কিছুদিন অধ্যাপনার পর অধ্যক্ষ পদে বৃত হন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে এমেরিটাস অধ্যাপক হিসাবে কিছু দিন কলাভবনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । শেষ জীবনে সম্পূর্ণ নির্জনবাস করেছেন।
প্রকাশিত গ্রন্থসমৃহসম্পাদনা
চিত্র-সমালোচক ও লেখক হিসাবেও বিনোদ বিহারীর খ্যাতি ছিল। দৃষ্টিহীন জীবনে স্ত্রী লীলা ও কন্যা মৃণালিনী সর্বদা পাশে থেকেছেন। ছিলেন কলাভবনের শিক্ষক ও ছাত্ররা। ছবি আঁকা, স্কেচ করা রঙিন কাগজ কেটে অপূর্ব সব ছবি তৈরি করা যেমন ছিল তেমন ডিক্টেশন দিয়েছেন চিত্রকথা, ‘চিত্রকর’, ‘আধুনিক শিল্পশিক্ষা', ‘কীর্তিকর’ ও ‘শিল্প-জিজ্ঞাসা’র মত গ্রন্থ রচনার।" কর্তাবাবা" হল তার আত্মজীবনী মূলক রচনা।
সম্মাননাসম্পাদনা
ভারত সরকার ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ‘পদ্মবিভূষণ’ ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মান ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার 'চিত্রকর' গ্রন্থটির জন্য ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার ভূষিত করে । বিনোদ বিহারীর জীবনী, কাজ আর অন্ধত্বকে জয় করে বাঁচা নিয়ে বিশ্ব বরেণ্য চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে তথ্যচিত্র তৈরি করেন - "দ্য ইনার আই "
মৃত্যুসম্পাদনা
১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ১১ নভেম্বর দিল্লির একটি নার্সিংহোমে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- সুবোধচন্দ্র ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত কলকাতার সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত সংসদ বাংলা চরিতাভিধান প্রথম খণ্ড পঞ্চম সংস্করণ তৃতীয় মুদ্রণ পৃষ্ঠা ৪৭৫ দ্রষ্টব্য ।
- আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন সংস্করণ বিশেষ বিভাগ - "পত্রিকা" ১ আগস্ট ২০১৮।
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
- exhibition at national gallery of modern art New Delhi
- Versatile genius by Partha Chatterjee on the centenary year
- on the centenary year
- Remembering an artist of note ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে
- colurs of retina
- Art of Bengal
- at vadodra gallary
- life sketch
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |