বিত্তিপাড়া বধ্যভূমি

কুষ্টিয়া জেলার বধ্যভূমি

বিত্তিপাড়া বধ্যভূমি বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের বিত্তিপাড়া গ্রামের একটি বধ্যভূমি।[১][২][৩] কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যতগুলো বধ্যভূমি রয়েছে, বিত্তিপাড়া তার মধ্যে একটি।[৪] এটি কুষ্টিয়া জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি।[৩] বধ্যভূমিটি ২০০৩ সালে শনাক্তকরণ হয়।[৫]

বিত্তিপাড়া সম্পাদনা

বিত্তিপাড়া বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলার ব্যবসায়িক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিত্তিপাড়া বাজারে কুষ্টিয়া জেলার সর্ববৃহৎ পানের হাট বসে।

ব্রিটিশ সরকারের আমলে বিত্তিপাড়ায় ইংরেজদের একটি কুঠিবাড়ী ছিল, যার অস্তিত্ব এখন আর নেই। ইংরেজরা গরিব প্রজাদের এখানে এনে নীল চাষ অথবা জমির খাজনা না দিলে শাসন ও নির্যাতন করত। যা সাহেবদের নীলকুঠি হিসেবে পরিচিত ছিল।[৪]

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এখানকার চিত্র এমন ছিল না, মাত্র কয়েকটি হাতেগোনা মুদি দোকান ও ঝুঁপড়ি চায়ের দোকান ছিল।[১]

বধ্যভূমির ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৭১ সালে পাকহানাদার বাহিনী বিত্তিপাড়া গ্রামের বিত্তিপাড়া বাজার তাদের ক্যাম্প করার জন্য বেছে নেয়। বিভিন্ন গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষদের ধরে এনে এখানে নির্যাতন করত পাক সেনারা। এই জায়গাটি পাকহানাদার, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর অন্যতম টর্চার ক্যাম্প হয়ে ওঠে। কুষ্টিয়া শহর থেকে স্বাধীনতাপ্রিয় ব্যক্তিদের ধরে এনে এখানে অত্যাচার করা হতো। দেশের উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সংযোগ স্থাপন করা একমাত্র সড়ক কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক। এ রাস্তা দিয়ে দিনে-রাতে যত পরিবহন যাতায়াত করত, সবগুলো থামিয়ে চেক করা হতো। সন্দেহ হলে যে কোনো ব্যক্তিকে বা কোনো মেয়েকে পছন্দ হলে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হতো। অত্যাচারের পর মারা গেলে লাশ পুতে ফেলা হতো।[৪][২]

মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকবার আক্রমণ করেও ক্যাম্পটির কিছু করতে পারেনি। ১৯ ডিসেম্বর ক্যাম্পটি মিত্র বাহিনীর দখলে আসে। ক্যাম্পটি দখলের পর কয়েকজন নির্যাতিত জীবিত পুরুষ ও নারীকে পাওয়া যায়।[৪]

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে জন স্টোন হাউস ও ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম-এর উপস্থিতিতে দুই পিকআপ বোঝাই মানুষের মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার করা হয়।[৪][৫][৬]

কুষ্টিয়ার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল আলম টুকু বলেছেন,

শনাক্তকরণ সম্পাদনা

বিত্তিপাড়া বধ্যভূমি ২০০৩ সালে বধ্যভূমি হিসেবে শনাক্ত করা হয় এবং সেখানে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়।‌[২] ২০২১ সালে খুলনা বিভাগের বধ্যভূমির তালিকায় স্থান পেয়েছে।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বশীর আহমেদ (২০২২-১২-১২)। "শোকের নদী বিত্তিপাড়া"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১৩ 
  2. আনিসুজ্জামান ডাবলু, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (২০১৭-০৩-২৫)। "এখনো অরক্ষিত কুষ্টিয়ার বিত্তিপাড়া বধ্যভূমি"চ্যানেল আই অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১৭ 
  3. এমএ রকিব, কুষ্টিয়া (২০১৯-১২-১৪)। "কুষ্টিয়ার বৃহৎ বধ্যভূমি বিত্তিপাড়া"দৈনিক জনকন্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১৭ 
  4. মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া (২০২৪-০৩-২৯)। "বিত্তিপাড়া বধ্যভূমি, যেখানে উদ্ধার হয়েছিল ২ পিকআপভর্তি মাথার খুলি"যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১৭ 
  5. ইবি, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি (২০২১-১২-১০)। "তালিকায় উঠল বিত্তিপাড়া ভধ্যভূমি"আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১৭ 
  6. রাজ্জাক মাহমুদ রাজ, ইবি, কুষ্টিয়া (২০২১-১২-০৯)। "বিত্তিপাড়া বধ্যভূমি থেকে উদ্ধার করা হয় দুই পিকআপ ভর্তি মানুষের কঙ্কাল"এফএনএস। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৪-১৭