"বিচ লাজানিয়া" (মূলত "টি-সিরিজ ডিস ট্র্যাক" নামে পরিচিত) হলো সুয়েডীয় ইউটিউবার এবং কৌতুকাভিনেতা পিউডিপাইয়ের একটি গান, যা ওলন্দাজ সংগীত প্রযোজক পার্টি ইন ব্যাকইয়ার্ডের সহযোগিতায় নির্মাণ করা হয়েছে। এই গানটি ভারতীয় সংগীত লেবেল টি-সিরিজের বিদ্রুপ করে, টি-সিরিজের ইউটিউব চ্যানেল গ্রাহকসংখ্যার দিক থেকে পিউডিপাইকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অনুমানে এক প্রতিক্রিয়া হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছিল। এই গানটি পিউডিপাই বনাম টি-সিরিজ দ্বন্দ্বের প্রথম দিকের একটি ঘটনা ছিল, যেখানে দুটি চ্যানেল ইউটিউবে সর্বাধিক সাবস্ক্রাইবকৃত চ্যানেলের খেতাবের জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল।[১][২][৩][৪]

"বিচ লাজানিয়া"
পিউডিপাই এবং পার্টি ইন ব্যাকইয়ার্ড কর্তৃক একক
মুক্তিপ্রাপ্ত৫ অক্টোবর ২০১৮
বিন্যাস
ধারা
লেবেলস্ব-প্রকাশিত
গান লেখক
প্রযোজক
পিউডিপাই একক গানের কালক্রম
"বিচ লাজানিয়া"
(২০১৮)
"রিওয়াইন্ড টাইম"
(২০১৮)
পার্টি ইন ব্যাকইয়ার্ড একক গানের কালক্রম
"মিম থিম"
(২০১৮)
"বিচ লাজানিয়া"
(২০১৮)
"রিওয়াইন্ড টাইম"
(২০১৮)

এই গানটি ২০১৮ সালের ৫ই অক্টোবর তারিখে এক সংগীত ভিডিওর মাধ্যমে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এবং ২০১৮ সালের ৬ই নভেম্বর তারিখে এই গানের পুনঃনামকরণ করে একই দিনে বিভিন্ন সংগীত মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছিল। ২০২০ সালের জুন মাস অনুযায়ী, এই গানটি ইউটিউবে ২৫ কোটি বারেরও বেশি বার দেখা হয়েছে। এটি পিউডিপাইয়ের ইউটিউব চ্যানেলে সর্বাধিক প্রদর্শিত ভিডিও।[৫][৬]

পটভূমি সম্পাদনা

পিউডিপাই বনাম টি-সিরিজ সম্পাদনা

২০১৮ সালের মধ্য-থেকে-শেষের দিকে, ভারতীয় সংগীত লেবেল টি-সিরিজের ইউটিউব চ্যানেলে গ্রাহক সংখ্যা দ্রুত সুয়েডীয় ইউটিউবার এবং কৌতুকাভিনেতা পিউডিপাইয়ের (যিনি উক্ত সময়ে ইউটিউবে সর্বাধিক সাবস্ক্রাইবকৃত ব্যবহারকারী ছিলেন) কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।[৭][৮] এর ফলস্বরূপ, বিভিন্ন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব, অন্যান্য ইউটিউবারগণ এবং তাদের ভক্তরা নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী সাধারণ মানুষদের এই দুই ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে উৎসাহিত করার মাধ্যমে তাদের সমর্থন দেখিয়েছিলেন। এই দ্বন্দ্বের সময়, উভয় চ্যানেল কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় ৬০ মিলিয়ন থেকে ১০০ মিলিয়ন গ্রাহককে উল্লেখযোগ্য হারে সাবস্ক্রাইবার অর্জন করেছিল। দুটি চ্যানেল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং তারপরে এপ্রিল মাসে বেশ কয়েকবার সাবস্ক্রাইবার সংখ্যায় একে অপরকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। অবশেষে যখন পিউডিপাই "সাবস্ক্রাইব টু পিউডিপাই" কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছিলেন তখন টি-সিরিজ সর্বাধিক সাবস্ক্রাইবকৃত ইউটিউব চ্যানেলে পরিণত হয়ে যায়।[১][৯][১০][১১][১২][১৩]

গানের বিষয়বস্তু সম্পাদনা

এই গানের শিরোনামটি রেডিটে জনপ্রিয় হওয়া একটি দ্রুত প্রচারিত ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের স্ক্রিনশট থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে ভাঙা ইংরেজিতে এক ভারতীয় ব্যক্তি এক নারী হতে নগ্ন ছবির দাবি করে এবং তিনি তার বার্তাগুলোর কোন উত্তর না পেয়ে উক্ত নারীকে "বিচ লাজানিয়া" হিসেবে সম্বোধন করেছেন। এই গানে, পিউডিপাই টি-সিরিজ এবং তাদের ভিডিও সামগ্রীর অপমান করার পাশাপাশি সমসাময়িক ভারতীয় বাঁধাধরা নিয়মগুলোকে উল্লেখ করেছে এবং এই সংস্থার বিরুদ্ধে ভুয়া সাবস্ক্রিপশন অর্জনের জন্য গ্রাহক বট ব্যবহার করার অভিযোগ করেছে।[১৪]

বিতর্ক সম্পাদনা

মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে পিউডিপি বনাম টি-সিরিজের এই দ্বন্দ্ব বাড়ার সাথে সাথে সংবাদ সংস্থাগুলো এই দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে "বিচ লাজানিয়া"কে অনেকাংশে দায়ী করেছিল। ভোকস এই গানটিকে "প্রত্যক্ষ এবং ঊহ্য স্বাজাতিক" ধারণার সংগীত বলে অভিযুক্ত করেছিলেন, একই সাথে তারা বলেছিল যে এই গানের মাধ্যমে টি-সিরিজের উপর তার চ্যানেলের পক্ষে পিউডিপাইয়ের ভক্তদের সমর্থন ব্যাপ্ত হয়েছে।[১৫] রোলিং স্টোন জানিয়েছে যে এই গানটিতে পিউডিপাইয়ের বিরুদ্ধে ভারতবিরোধী তিরস্কার ব্যবহারের অভিযোগ ছিল। তারা আরও বলেছেন, "অনেকে যুক্তি দেখিয়েছেন যে ... তার ভিডিওগুলোতে "বিদ্রূপাত্মকভাবে" ইহুদী-বিরোধী অথবা বর্ণবাদী রসিকতা ব্যবহার ভক্তদের আরও ব্যাপকভাবে চরমপন্থী বিষয়বস্তু সন্ধান করতে আগ্রহী করে তুলতে পারে"। যদিও কানাডীয় অ্যান্টি-হেট নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক ইভা বালগার্ড এই বিষয়টিকে বিতর্কিত করেছিলেন, যিনি তারা উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, "পিউডিপাইয়ের সাথে খুব কমই (হয়তো কখনই নয়) আমার সাক্ষাৎ হয়েছেচ, এর ফলস্বরূপ আমি তাকে খুব কাছ থেকে অনুসরণ করি না... তিনি [অল্ট-রাইট ইউটিউবার এবং পডকাস্টার] স্টেফান মলিনিক্সের মতো ব্যক্তির মতো মৌলবাদীর পথের ধারে কাছেও নন।"[১৬]

ভারতে নিষিদ্ধ সম্পাদনা

২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে, পিউডিপাই টি-সিরিজের বিরুদ্ধে "কনগ্র্যাচুলেশনস" নামে দ্বিতীয় একটি ডিস ট্র্যাক প্রকাশের পর উভয় গানেই ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। টি-সিরিজ দৃঢ়ভাবে জানিয়েছিল যে এই গানগুলো হচ্ছে মানহানিকর, অসম্মানজনক, অপমানজনক এবং আক্রমণাত্মক। একই সাথে তারা আরও জানায় যে, এই গানে "বারবার অবমাননাকর, অশ্লীল এবং বর্ণবাদী প্রকৃতিরও মন্তব্য করা হয়েছে"। দিল্লি হাইকোর্ট এই দুটি গানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করেছিল, সাথে তারা উল্লেখ করে যে, "বিচ লাজানিয়া মুক্তির পরে টি-সিরিজের সাথে যোগাযোগ করার পর পিউডিপাই তার এই ভিডিও পোস্ট করার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন এবং "আশ্বাস দিয়েছিলেন যে তিনি এ ধরনের [আর] কোনও পরিকল্পনা করছেন না।"[১৭][১৮][১৯]

২০১৯ সালের আগস্ট মাসে, টি-সিরিজ এবং পিউডিপাই আদালতের বাইরে তাদের আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন বলে জানা গিয়েছে।[২০]

অন্যান্য সংস্করণ সম্পাদনা

টীকা

  1. পার্টি ইন ব্যাকইয়ার্ড পিউডিপাইয়ের সাথে মিলে মূল গানটিও নির্মাণ করেছিলেন।
  2. "বিচ লাজানিয়া ভলিউম ২" হিসেবে পিউডিপাইয়ের ইউটিউব চ্যানেল আপলোড করা হয়েছিল।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. স্পেংলার, টড (৩ ডিসেম্বর ২০১৮)। "PewDiePie Zooms Past 73 Million YouTube Subscribers as Fans Rally to Keep Him Ahead of T-Series" [পিউডিপাই ৭৩ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার অর্জন করেছে; তার ভক্তরা তাকে টি-সিরিজ হয়ে এগিয়ে রাখার জন্য জনসভা করছে]। ভ্যারাইটি। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০ 
  2. বিশ্বাস, সৌতিক (২০ ডিসেম্বর ২০১৮)। "PewDiePie v T-Series: The battle to be king of YouTube" [পিউডিপাই বনাম টি-সিরিজ: ইউটিউবের রাজা হওয়ার লড়াই]। বিবিসি নিউজ। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০ 
  3. "PewDiePie releases a T-Series diss track "Bitch Lasagna"" [পিউডিপাই "বিচ লাজানিয়া" নামে টি-সিরিজের জন্য একটি বিদ্রূপাত্মক গান প্রকাশ করেছেন]। ডেক্সার্টো। ৫ অক্টোবর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০ 
  4. "Самого популярного ютьюб-блогера в мире догоняет канал с болливудскими роликами. Это война!" [বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইউটিউবার বলিউডের গানের ইউটিউব চ্যানেলের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন]। মেদুজা (রুশ ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০ 
  5. পিউডিপাই (৫ অক্টোবর ২০১৮)। "bitch lasagna" [বিচ লাজানিয়া]। ইউটিউব (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০ 
  6. "PewDiePie videos – Sorted by Most popular" [পিউডিপাই ভিডিও – সর্বাধিক জনপ্রিয় অনুসারে বাছাই করা]। ইউটিউব। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০ 
  7. হাডলস্টোন জুনিয়র, টম। "This Bollywood YouTube Channel Is on the Verge of Bumping 'PewDiePie' from His Top Spot" [বলিউড ইউটিউব চ্যানেল পিউডিপাইকে সরিয়ে ইউটিউবে শীর্ষস্থান দখলের দ্বারপ্রান্তে]। সিএনবিসিএনবিসি ইউনিভার্সাল। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০ 
  8. রাকিন, ইথান। "PewDiePie Could Lose His King of YouTube Crown to a Channel Called T-Series" [পিউডিপাই তার ইউটিউব মুকুটটি টি-সিরিজ নামে পরিচিত একটি চ্যানেলে হারাতে পারেন]। বিজনেস ইনসাইডার সিঙ্গাপুর। ৮ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০ 
  9. ট্রেনহোম, রিচার্ড; রায়ান, জ্যাকসন (১১ মার্চ ২০১৯)। "PewDiePie Dethroned by T-Series as YouTube's Most Subscribed Channel" [ইউটিউবের সবচেয়ে সাবস্ক্রাইবকৃত চ্যানেল হিসেবে টি-সিরিজ পিউডিপাই পেছনে ফেলেছেন]। সিএনইটিসিবিএস ইন্টেরাক্টিভ। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০২০ 
  10. Hamilton, Isobel Asher (১৮ মার্চ ২০১৯)। "PewDiePie Briefly Lost His Crown as the Biggest YouTuber on the Planet"Business Insider। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯ 
  11. "PewDiePie Concedes Defeat to YouTube Rival T-Series"BBC। ১ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯ 
  12. Flynn, Meagan (২৯ এপ্রিল ২০১৯)। "'I didn't want hate to win': PewDiePie ends 'subscribe' meme after Christchurch shooter's shout-out"The Washington Post। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯ 
  13. Alexander, Julia (২৮ এপ্রিল ২০১৯)। "PewDiePie calls for an end to the 'Subscribe to PewDiePie' meme after New Zealand shooting"The Verge। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯ 
  14. "Party in Backyard & PewDiePie – Bitch Lasagna"Genius। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯ 
  15. Romano, Aja (২০১৮-১২-১৪)। "How the "Subscribe to PewDiePie" meme could determine the future of YouTube"Vox। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-০৮ 
  16. Dickson, E. J. (১৫ মার্চ ২০১৯)। "Why Did the Christchurch Shooter Name-Drop YouTube Phenom PewDiePie?"Rolling Stone। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯ 
  17. Babele, Aryan (১২ এপ্রিল ২০১৯)। "Delhi High Court orders YouTube to remove PewDiePie "diss tracks" on T-Series"Medianama। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১৯ 
  18. Stenn, Lili (১৫ এপ্রিল ২০১৯)। "PewDiePie's T-Series Diss Tracks Banned in India"Rogue Rocket। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১৯ 
  19. Sanchz, Daniel (১১ এপ্রিল ২০১৯)। "India Clamps Down on PewDiePie Racism — High Court Orders YouTube to Remove Two Offensive Videos"Digital Music News। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯ 
  20. Ghosh, Shona (১৩ আগস্ট ২০১৯)। "PewDiePie and T-Series quietly settled a court battle over 'racist' diss tracks following their epic YouTube battle"Business Insider। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৯